অন্টারিওর শ্রমিকদের এক-তৃতীয়াংশই মেডিক্যাল ও ডেন্টাল চিকিৎসার সুবিধা পান না
মে ১০, ২০১৫
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর কর্মচারীদের এক-তৃতীয়াংশই তাদের কর্মস্থল থেকে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল চিকিৎসা-সুবিধা পান না। আর স্বল্প আয়ের কর্মচারী ও মহিলারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে যান। মঙ্গলবার প্রকাশিতব্য একটি রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।
টরন্টোর একটি স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক থিঙ্কট্যাংক ওয়েলেসলি ইনস্টিটিউটের পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অনিশ্চিত ও স্বল্প আয়ের কর্মচারীদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের জন্য তাদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনওরকম স্বাস্থ্যগত পরিকল্পনা নেই। সমীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ওইসব কর্মচারীরা প্রায়শ সরকারী ব্যয়ের স্বাস্থ্য-সুবিধা পাওয়ারও যোগ্য বিবেচিত হন না। এর ফলে হেল্থ কাভারেজের ক্ষেত্রে গুরুতর ব্যবধান থেকে যাচ্ছে।
ইনস্টিটিউটের নীতি বিশ্লেষক এবং রিপোর্টের সহ-প্রণেতা স্টিভ বার্নস বলেন, “আমরা জানি যে, এসব স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে গুরুতর স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।”
“বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের সুবিধা দানের ব্যবস্থা যেভাবে পরিচালনা করছি তাতে সরকারী ও বেসরকারী কর্মসূচির জোড়াতালির অর্থ হলো যারা স্বল্প আয় করে সেইসব লোকের বাইরে থেকে যাওয়া।”
সমীক্ষায় দেখা গেছে, সার্বিকভাবে প্রদেশের ৩৫ শতাংশ কর্মচারী তাদের নিয়োগদাতার পক্ষ থেকে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল চিকিৎসা-সুবিধা পান না। স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে এই অঙ্কটা আরও বেশি মারাত্মক। ১০ হাজার ডলারের কম আয় করেন এমন মানুষদের প্রায় ৮৫ শতাংশই কর্মস্থলে কোনও স্বাস্থ্য-সুবিধা পান না। আর ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার আয় করেন এমন লোকেদের প্রায় ৭০ শতাংশ সরকারী স্বাস্থ্য-সেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছেন।
বার্নস বলেন, “যদি আমরা সরকারী স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার বাইরের লোকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাদান ও ব্যবধান কমিয়ে আনার ব্যাপারে অব্যাহতভাবে নিয়োগদাতাদের ওপর নির্ভর করে থাকি তাহলে এই ব্যবধান ভবিষ্যতে আরও বিরাট আকার ধারণ করবে।”
লেবার অ্যান্ড ইনকাম ডাইনামিক্স সম্পর্কিত স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডার ২০১১ সালের জরিপের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে ওই সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় আরও জানা গেছে যে, অন্টারিওতে নারী কর্মচারীরা পুরুষ কর্মচারীদের তুলনায় কম সংখ্যায় মেডিক্রাল ও ডেন্টাল চিকিৎসা সুবিধা পেয়ে থাকে। পুরুষ কর্মচারীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ যেখানে ওইসব সুবিধা পায় সেখানে নারী কর্মচারীদের মধ্যে মোটামুটি ৫৮ শতাংশ ওইসব সুবিধা লাভ করে।
স্কারবরোর ৬৩ বছর বয়সী একজন একক মা লিন বিমিশ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অথবা অনিশ্চিত কাজে। তার কখনই কোনও মেডিক্যাল বা ডেন্টাল পরিকল্পনা ছিলো না। বছরের পর বছর ধরে এসব খরচ নিজের কাঁধে নেয়ার পর এখন তিনি পরিবর্তন চান। “অনেক একক মা রয়েছেন যারা নিজের খরচে সবকিছু করেন… তাদের কর্মপ্রয়াসের জন্য তাদের সালাম জানাই। তারা কর্মস্থল থেকে বাড়তি কোনও সুবিধা পান না। আমার মনে হয়, এই অবস্থার পরিবর্তে অবশ্যই কিছু একটা থাকা দরকার।”
একটি শ্রমিক অধিকার গ্রুপ ওয়ার্কার্স অ্যাকশন সেন্টারের করা আগের এক জরিপে দেখা গিয়েছিলো যে, অনিশ্চিত চাকরিতে নিয়োজিত ৭১ শতাংশ মানুষের কোন স্বাস্থ্য সুবিধা নেই। সংগঠনের সমন্বয়ক ডিনা ল্যাড বলেন, স্বাস্থ্যসুবিধার কাভারেজ দেয়ার জন্য আলাদা একটি সার্বজনীন পদ্ধতি থাকা দরকার।
আর ওয়েলেসলি ইনস্টিটিউটের নীতিগত সমাধানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় একটি ফার্মা কেয়ার কর্মসূচি গড়ে তোলার প্রস্তাব। তারা যুকাত দেখান যে, অন্টারিও প্রাদেশিক সরকারের উচিৎ সবার জন্য নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার নীতিতে ফিরে যাওয়া। এতে আরও বলা হয়, অন্টারিও সরকারের উচিৎ সরকারী ডেন্টাল কাভারেজ আরও সম্প্রসারিত করা যাতে নি¤œ আয়ের মানুষ ও বয়স্কদের জন্য সরকারী স্বাস্থ্য ইউনিটের মাধ্যমে সেবা দেয়ার অর্থ সংগ্রহ করা যায়।
এই সমীক্ষাটি অন্টারিও সরকারের দারিদ্র্য হ্রাস পরিকল্পনায় নতুন উদ্দীপনা দেবে। ২০১৪ সালের বাজেটে প্রাদেশিক সরকার হেলইদ স্মাইলস প্রোগ্রামের জন্য যোগ্যতা সম্প্রসারিত করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় কর্মজীবী বাবা-মার
শিশুদের জন্য দন্ত্য চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এতে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলোর আরও প্রায় ৫ লাখ শিশুকে স্বাস্থ্য সুবিধার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এরিক হসকিন্স কানাডায় সার্বজনীন ওষুধ সেবা দেয়া পক্ষেও সোচ্চার ছিলেন এবং তিনি যুক্তি দেখান যে, এটি হবে সাশ্রয়ী এবং তা অসমতা দূর করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন সামনে রেখে টরন্টোর উইমেন্স কলেজ হাসপাতালের ডা. ডেনিয়েল মার্টিন বলেন, প্রাদেশিক সরকারগুলোর জন্য তাদের কেন্দ্রীয় প্রতিপক্ষকে ফার্মা কেয়ার নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলার এখনই সময়। তিনি বলেন,“আমি খুবই আশাবাদী এবং খুবই বলীয়ান অনুভব করছি একারণে যে, আমার মনে হয়, ওই বিষয়টি নিয়ে একটি জানালা খুলে দেয়ার মত প্রকৃত সুযোগ এসেছে।” – টরস্টার নিউজ সার্ভিস