অন্টারিওতে বৈষম্যের মামলায় ৩০ লাখ ডলার প্রদান

এপ্রিল ৫, ২০১৪

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : টরন্টোÑঅন্টারিওতে বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন মামলায় মানবাধিকার সম্পর্কিত আইনী সহায়তা কেন্দ্র প্রায় ৩০ লাখ ডলার আর্থিক জরিমানা সংগ্রহ করেছে। বৈষম্যের এসব মামলার মধ্যে ছিলো একজন প্রতিবন্ধী নারীকে তার বাড়িওলা কর্তৃক যন্ত্রণা দেয়ার মত ঘটনা থেকে শুরু করে একজন গাড়ির ইজারাদার কর্তৃক কাউকে ‘‘প্রতারক… চোর’’ বলে অভিহিত করার মত বিষয়। আইনী সহায়তা কেন্দ্রের সদ্য প্রকাশিত ২০১২-১৩ সালের বার্ষিক রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত মামলার নথিতে কিছু কিছু অভিযোগের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে যাতে অন্টারিওর বাসিন্দারা এখানকার মানবাধিকার কোড অনুযায়ী আইনগত সহায়তা চেয়েছেন।

একজন মহিলা একটি ভ্যানের জন্য কিস্তি দিতে দেরি করায় লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে নোংরা চিঠি পেয়েছেন। চিঠিতে মহিলার প্রতি অশোভন উক্তি করে বলা হয়েছে ‘‘এভাবেই প্রতারণা এবং জিনিস চুরি করে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’’

অন্টারিওর মানবাধিকার ট্রাইব্যুনাল ওই লিজিং কোম্পানিকে বৈষম্যের দায়ে ১৫ হাজার ডলার জরিমানা করেছে। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছে, ‘‘কোম্পানিটি যে চিঠি দিয়েছে তাতে এমন ধারণা উস্কে দেয়া হয়েছে যেন, যেসব আদিবাসী মিথ্যা বলে, প্রতারণা করে বা চুরি করে তারা কানাডীয় সমাজের বৈধ সদস্য নয়।’’

সেন্টারের তুলে ধরা অন্য একটি ঘটনায়, একজন বাড়িওলা বাংলাদেশ থেকে নতুন আসা একজন অভিবাসীর জন্য সারা বছরের বাড়িভাড়া দাবি করেন, যদিও অন্টারিওর নিয়ম অনুযায়ী কেবল দু’মাসের অগ্রিম নেয়ার বিধান রয়েছে। সেন্টারের প্রকাশিত আরেকটি ঘটনায় পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের প্রক্রিয়াধীন একজনের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। সেন্টার ফর এডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ-এর লিঙ্গান্তর কর্মসূচিতে জমা দেয়ার জন্য ওই ব্যক্তি তার তত্ত্বাবধায়কের কাছে কর্মস্থলে তিনি এখনও পুরুষ নামই ব্যবহার করছেন এই মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র চাওয়ার পর তাকে হেনস্থা করা হয় এবং পরে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার নিয়োগকর্তার সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি ক্ষতিপূরণ লাভ করেন এবং পাওনা বেতন ছেড়ে দেন।

রিপোর্টে বলা হয়, প্রতিবন্ধি একজন মৃগীরোগী মহিলাকে বাড়ির নতুন মালিক মৌখিকভাবে হয়রানি করার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন। মহিলাটি ১৩ বছর ধরে ওই বাড়িতে বসবাস করছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়, একদিন রাতে গোসল করার সময় মহিলাটি মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পান। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর বাড়িওলা মহিলাটিকে ওইদিন রাতের বেলা পড়ে গিয়ে বড় ধরণের শব্দ হওয়ার ঘটনায় উচ্চকণ্ঠে ভর্ৎসনা করেন।

বৈষম্যের জন্য বাড়িওলাকে ১০হাজার ডলারের  আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।

বেশি বয়সের কারণ দেখিয়ে ৫৩ বছর বয়সী একজন দ্বাররক্ষীকে নিয়োগ না দেয়ায় লোকটি টরন্টো কমিউনিটি হাউজিং করপোরেশনের বিরুদ্ধে বয়স নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল তা নাকচ করে দেয়।

রিপোর্টে বলা হয়, সেন্টারের আইনজীবী ও আইনী প্রতিনিধিরা ১৩হাজার ৫৫৮জন ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা এবং ২,২৫০জনকে আইনী সেবা দিয়েছেন।

বৈষম্যের সবচেয়ে সাধারণ বিষয় ছিলো শারীরিক অক্ষমতা বা ধারণাগত অক্ষমতা ৩৩%, নারী-পুরুষের বৈষম্য ১৯% এবং জাতিগত বা বর্ণ বৈষম্য ১৩%।

সেন্টারের পক্ষ থেকে মক্কেলদেরকে বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ দেয়া হয়Ñ যার পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে ৫৫লাখ ডলারের সমান।

-টরন্টো সান