মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মনেও বর্ণবাদী পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে

মার্চ ১৩, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এক নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে, এমনকি মাত্র পাঁচ বছর বয়সী শে^তাঙ্গ শিশুও তার মতো অন্য শে^তাঙ্গ শিশুদের পক্ষ নিয়ে বর্ণবাদী মনোভাব প্রকাশ করতে পারে।

টরন্টোতে গবেষকরা সাড়ে তিন ’শর বেশি শে^তাঙ্গ শিশুকে নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা চালিয়েছেন। তারা পরোক্ষ পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করেছেন। এ ধরণের পক্ষপাতিত্ব আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায় এবং এটি ব্যক্তিবিশেষের কাছে অজ্ঞাত। খবর সিবিসি নিউজের।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার পরীক্ষা implicit association test (IAT) নামে হার্ভার্ডের গবেষকদের তৈরি করা পক্ষপাতিত্ব পরীক্ষণের একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির একটি শিশুবান্ধব সংস্করণের সাহায্যে পরীক্ষা দেয়।

অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি শিশুকে কমপিউটারের পর্দায় অনেকগুলো ছবি ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়। প্রতিটি ছবিই ছিল কৃষ্ণাঙ্গ অথবা শে^তাঙ্গ বালকের। প্রতিটি ছবি দেখিয়ে শিশুদেরকে মাউস ব্যবহার করে জানাতে বলা হয় যে, ছবিটি তার মনে ভাললাগা বা মন্দ লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করছে কি না।

পাঁচ থেকে আট এবং নয় থেকে ১২ বছর বয়সী উভয় গ্রুপের শিশুরাই কৃষ্ণাঙ্গদের চেয়ে শে^তাঙ্গ বালকদের প্রতি অনেক বেশি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে।

সার্বিকভাবে গবেষকরা দেখেছেন যে, শিশুরা কৃষ্ণাঙ্গ বালকদের ছবির ব্যাপারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে এমন কোনও দৃষ্টান্ত নেই।

গবেষণা দলের প্রধান জেনিফার স্টিল সিবিসি নিউজকে বলেন, “তারা শে^তাঙ্গ বালকদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে, তবে কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে এমনটা নয়।”

পাঁচ বছর বয়সী শে^তাঙ্গ শিশুও অন্য শে^তাঙ্গ শিশুদের পক্ষ নিয়ে বর্ণবাদী মনোভাব প্রকাশ করতে পারে। ছবি: সাটারস্টক

অহংবোধের প্রবণতা

গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী শিশুরা বিশেষ করে আট বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে অহংবোধ প্রবল থাকে, তারা বিশ^াস করে তারা অন্যদের চেয়ে উত্তম Ñ আর এটাই হতে পারে পক্ষপাতিত্বের একটি কারণ।

শে^তাঙ্গ শিশুরা যদিও কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেনি তার পরও, স্টিল বলছেন, তারা অন্য শে^তাঙ্গ শিশুদের প্রতি অগ্রাধিকারের আভাস দিয়েছে।

তিনি বলেন, “এটি অবশ্যই বর্ণবাদী পক্ষপাত, তবে এটি আমাদেরকে পক্ষপাতিত্বের ধরণ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেয় এবং আমরা যদি বহুবিচিত্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলেমেয়ে রয়েছে এমন একটি শ্রেণিকক্ষের সবার প্রতি শিশুদে ইতিবাচক মনোভাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিই তাহলে তাদের জন্য কোনটা সহায়ক হবে অথবা যথাযথ পদক্ষেপ কী হতে পারে সে বিষয়ে আমাদেরকে কিছুটা আলোকপাত করার সুযোগ দিতে পারে।”

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এএমপি টেস্টে একটু বেশি বয়সের শিশুরা Ñ যাদের বয়স নয় থেকে ১২ Ñ শে^তাঙ্গ শিশুদের প্রতি ইতিবাচক পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেনি। গবেষকরা মনে করছেন, এর কারণ হলো ওই বয়সের শিশুরা অন্যদের মধ্যে যে ভিন্নতা রয়েছে সেটাকে উপলব্ধি করতে পারে এবং যারা অভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যেমন, সামাজিক স্বার্থের দিক থেকে তাদের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতে শুরু করেছে। কিন্তু এর অর্থ নিশ্চিতভাবেই এটা নয় যে, মাত্র কয়েক বছর আগেই তারা যে পরোক্ষ পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে তা পরে আর কখনও ফিরে আসবে না।

জেনিফার স্টিল এখন কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের মধ্যে পক্ষপাতিত্বের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরোক্ষ পক্ষপাতিত্ব নির্মূল করার জন্য নেতিবাচক মনোভাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাওয়া যথাযথ পদক্ষেপ নয়। তিনি বলেন, “তার পরিবর্তে বরং ভিন্ন বর্ণ বা ভিন্ন জাতিগত গ্রুপ অথবা ভিন্ন পশ্চাৎপট থেকে আসা মানুষদের ব্যাপারে শিশুদের মনে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টাই, আমার মনে হয়, সম্ভবত সবচেয়ে সেরা উপায়।”

আর কিছু বিশেষজ্ঞ যখন বিশ^াস করেন যে, শিশুদেরকে বর্ণান্ধ হতে এবং মানুষকে জাতিগত শ্রেণিতে না ফেরার শিক্ষা দেওয়াই বর্ণবাদে পক্ষপাতিত্ব নির্মূলের উপায় হতে পারে, তখন স্টিল এবং তার মত অন্যরা যুক্তি দেখান যে, এ ধরণের শিক্ষার ফলে শিশুরা বুঝতেই পারবে না কোনটা বৈষম্য এবং কোনটা নয়।

ইয়র্ক বিশ^বিদ্যালয়ের জেনিফার স্টিল বলেন, “ইতিবাচক রোল মডেলের মাধ্যমে আমরা শিশুদের দেখাতে পারি যে, ভিন ভিন্নœ পশ্চাৎপটের সবগুলো থেকে আসা মানুষের মধ্যেই সফল ও চমৎকার সব মানুষ রয়েছে।”

ডিউক বিশ^বিদ্যালয়ের মনস্তত্ব ও ¯œায়বিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সারাহ গেইদার বলেন, শিশুদের সঙ্গে “আলোচনার অভাবই (তাদের মধ্যে) পক্ষপাতিত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণ।” তবে, তিনি বলেন, শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাওয়াটাও খুব একটা সুস্থ বিষয় নয়, কারণ এর মধ্যেও নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “আপনি যদি বর্ণান্ধ হওয়ার শিক্ষাদানের পদ্ধতি গ্রহণ করতে না চান তাহলে তা এমন প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে যে, আপনি কি শে^তাঙ্গ শিশুদেরকে এমন শিক্ষা দিতে চান যে, সম্ভবত তারা আমাদের সমাজে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি? এটি হলো সেই সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়ে সচেতনতা যা থেকে আমরা নির্ণয় করবো যে, শিশুদের সঙ্গে কীভাবে আলোচনা করতে হবে। কেউই এটা শুনতে পছন্দ করে না যে, তারা পক্ষপাতদুষ্ট এবং সুবিধাপ্রাপ্ত।” আর এটা করার অর্থ হলো, তিনি বলেন, দুর্ঘটনাক্রমে পক্ষপাতিত্ব বেড়ে যেতে পারে।

স্টিল বলেন, অল্প বয়সেই শিশুদেরকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা জরুরী।

তিনি বলেন, “সৌভাগ্যক্রমে, বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুদেরকে বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচিত করে তোলার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আর ইতিবাচক রোল মডেলের মাধ্যমে আমরা তাদের দেখাতে পারি যে, ভিন ভিন্নœ পশ্চাৎপটের সবগুলো থেকে আসা মানুষের মধ্যেই সফল ও চমৎকার সব মানুষ রয়েছে। আর তাদেরকে এবিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সচেতন করে তোলা অত্যন্ত মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ।” -সিবিসি