বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় প্রবাসীরা ন্যাশনাল হিরো : শামস্-উল ইসলাম, এমডি- অগ্রণী ব্যাংক
ড্যানফোর্থের অগ্রণী রেমিটেন্স হাউসের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রবাসীদের এগিয়ে আসারআহবান
এপ্রিল ২২, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ : টরন্টোর বাঙ্গালী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রবাসীদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান অগ্রণী ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শামস্-উল ইসলাম। গত ২০ এপ্রিল শুক্রবার স্কারবরোতে প্রিমিয়াম সুইটস এর নতুন শাখায় (95 Lebovic Avenue, Unit D02, Scarborough) আয়োজিত এক বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন প্রিমিয়াম সুইটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম ইকবাল। তিনি কানাডায় সফররত অগ্রণী ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলামকে স্থানীয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জনাব ইকবাল বলেন, টরন্টোতে আগ্রণী ব্যাংক এর একটি রেমিটেন্স হাউস রয়েছে। কিন্তু নানাবিধ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীগণ এই রেমিটেন্স হাউস সম্পর্কে তেমনটা অবহিত নন। তারা জানেন না এই হাউসের মাধ্যমে কি কি সুযোগ সুবিধা ও সেবা পাওয়া যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শামস্-উল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং কি ভাবে এই হাউসটিকে প্রবাসীদের সেবায় আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মত বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জনাব ইকবাল বলেন, অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যাংকগুলোর একটি। এই ব্যাংকটি প্রবাসীদের সেবায় বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈঠকে অন্যান্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন টিম হর্টন এর ওনার/অপারেটর জনাব ইকবাল রুশদ , মিসেস নাবিলা রুশদ , জাস্ট টেম্পটেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মাসুদ আহমেদ ও পরিচালক মিসেস তান্নি মাসুদ, রিয়েল এস্টেট ডেভলাপার এবং বাংলাবাজার সুপারমার্কেট এর স্বত্বাধিকারী জনাব খন্দকার কামাল হুসেইন, প্রফেশনাল একাউন্টেন্ট ও স্যোসাল ওয়ার্কার মোস্তাক আহমেদ ও মিসেস মোস্তাক, মেঘপাই গ্রুপ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব আরিফুর রহমান এবং পরিচালক মিসেস আরিফুর রহমান, রিয়েল এস্টেট ডেভলাপার ও এডিটি সিকিউরিটি ডিলার জনাব মোহাম্মদ হাসান, আওয়ামী লীগ অব কানাডার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ এ গাফফার, আওয়ামী লীগ অব কানাডার জেনারেল সেক্রেটারী আজিজুর রহমান প্রিন্স, অনারারী কনসুল (অনারারী কনসুলেট অব বাংলাদেশ ইন কুইবেক) জনাব ড. এমডি জামিলুর রহিম, প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক জনাব খুরশিদ আলম। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়াম সুইটস এর প্রেসিডেন্ট ও কো-ফাউন্ডার মিসেস রোমিনা ইকবাল এবং অগ্রণী ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলামের এর স্ত্রী মিসেস শামসুল ইসলাম।
পরিচয় পর্বের পর অগ্রণী ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শামস্-উল ইসলাম উপস্থিত ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অগ্রণী ব্যাংক আপনাদেরই ব্যাংক। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কে নানান ধরণের সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিটেন্স সংগ্রহের বেলায়ও অগ্রণী ব্যাংক নাম্বার ওয়ান ব্যাংক। আমাদের কোন ক্যাপিটাল ডিফিসিয়েন্সীও নেই। কিন্তু কানাডায় আমাদের রেমিটেন্স হাউস আশানুরূপ কাজ করতে পারছে না। এ জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জনাব ইসলাম বলেন, এই ব্যাংক যেহতু আপনাদেরই ব্যাংক তাই এর পৃষ্ঠপোষকতায় আপনাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।
কানাডা থেকে যারা বাংলাদেশে টাকা পাঠান তাদের কাছ থেকে আমরা যে ফি নেই সেটা তুলনামূলকভাবে বেশী বলে অভিযোগ শুনতে পাই আমরা। কিন্তু কথাটা বাস্তব অর্থে সত্যি নয়। হতে পারে যারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ব্যবসা করেন তাদের তুলনায় আমাদের ফি বেশী। কিন্তু হুন্ডি তো আইনসম্মত নয়। হুন্ডির টাকায় কি হয়? ঐ টাকা দিয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র কিনে, ইয়াবা কিনে। বাংলাদেশে যে জঙ্গী রয়েছে তাদের পেমেন্টটা কি ভাবে হয়? এই হুন্ডির টাকা দিয়েই হয়। তাই আপনারা যদি মনে করেন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে বেশী টাকা পাব, ফি কম দিতে হবে তবে সেই বিষয়টি মূলত আপনাদের বিপক্ষেই যাবে। আপনারা যদি জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে না চান, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে না চান তবে আপনাদেরকে টাকা পাঠাতে হবে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল এর মাধ্যমে। সেটা অগ্রণী ব্যাংক হোক বা অন্য যে কোন ব্যাংকই হোক।
জনাব ইসলাম বলেন, কানাডায় অন্যান্য যে সকল বৈধ রেমিটেন্স কোম্পানীগুলো আছে, আমরা কিন্তু তাদের চেয়ে বেশী রেট দিয়ে থাকি দেশে টাকা পাঠানোর সময়। আর ৫ ডলার ফি তো বেশী নয়। এটি একেবারেই নামমাত্র। আমরা অনেক সময় ৩ বা ৪ ডলারও নেই যদি ডলারের পরিমাণ ৫ শ এর কম হয়।
এখানকার অবৈধ রেমিটেন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে হবে না। বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তুলনা যুক্তিসঙ্গত নয়। বৈধ এর সঙ্গে বৈধ এর তুলনা করতে হবে।
জনাব ইসলাম আরো বলেন, বাংলাদেশে এখনো বিনিয়োগের অনেক সুযোগ আছে। যেমন ওয়েজ আর্নার ডেভলাপমেন্ট বন্ড। এটি খুবই আকর্ষনীয়। এখনো এই বন্ডে ১২% ইন্টারেস্ট দেয়া হয়। পৃথিবীর কোন দেশে নেই এই মাত্রার ইন্টারেস্ট বা মুনাফা। এই সুযোগ শুধু বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জন্য। আপনারা এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এই বন্ড আপনারা আমাদের ড্যানফোর্থের রেমিটেন্স হাউস (Address: 2978 Danforth Avenue, Toronto, ON, M4C 1M6 Canada Telephone: 416-551-7348) থেকেই ক্রয় করতে পারেন। মেয়াদ শেষ হলে মূল অর্থ দেশে টাকায় অথবা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রায় উত্তলন করা যায়। এই অর্থ নিজে না নিতে চাইলে আপনার মনোনিত যে কেউ তা উত্তলন করতে পারেন। আর ষান্মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা উত্তোলন করা না হলে, মেয়াদপূর্তিতে মূল অংকের সাথে ষান্মাসিক ভিত্তিতে ১২% চক্রবৃদ্ধি হারে উক্ত মুনাফা প্রদেয় হবে। এতে মুনাফার হার হয় ১৫.০৯%।
আমাদের আরো আছে ইউ.এস.ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। এই বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে মূল অর্থ ডলারে বিদেশে ফেরত নেয়া যায়। মেয়াদান্তে মুনাফা ৭.৫%।
আর ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এর ক্ষেত্রে মূল অর্থ এবং মুনাফা ডলারে বিদেশে ফেরত নেওয়া যায়। মেয়াদান্তে মুনাফা ৬.৫%। তাছাড়া বন্ডের মাধ্যমে কেউ আট কোটি টাকা বা এর বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে তাঁকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) ঘোষণা করে সরকার।
আজকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গতিশীলতা লক্ষণীয়। বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে অর্থনৈতিক ভাবে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে। আর এর পিছনে আপনাদের অনেক অবদান রয়েছে। আপনারা ন্যাশনাল হিরো। দেশের এই অগ্রযাত্রায় আমরা আপনাদের আরো সহযোগিতা চাচ্ছি। আর যারা হুন্ডিতে অর্থ পাঠান তাদের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা আমাদের বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠান। এতে দেশ উপকৃত হবে। আপনারাও উপকৃত হবেন।
আজকে আপনাদের কাছে আমাদের এই বক্তব্য তুলে ধরার জন্য প্রিমিয়াম সুইটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এইচ এম ইকবাল এবং তার স্ত্রী প্রিমিয়াম সুইটস এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেডিডেন্ট রোমিনা ইকবাল আমাদের যে সুযোগ করে দিলেন তার জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং আমরা আমাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি তাদেরকে।
জনাব শামস্-উল ইসলাম তার বক্তব্য শেষ করার পর উপস্থিত ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর পর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন টরন্টোর স্বনামধন্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টিম হর্টন এর জনাব ইকবাল রুশদ (Owner/Operator, Franchisee)। তিনি বলেন, অগ্রণী রেমিটেন্স এর স্থানীয় প্রতিনিধিকে সক্রিয় হতে হবে। তাকে এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। চাইতে হবে সহযোগিতা। এখানে হিউজ মার্কেট রয়েছে। যা সহযোগিতার প্রয়োজন তা আমরা অবশ্যই করবো এবং অত্যন্ত সানন্দ চিত্তেই করবো। কারণ, আগ্রণী ব্যাংক আমাদের জাতীয় ব্যাংক। আপনারা আসেন, আমাদের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এম্পয়ীদের কাছে আপনাদের প্রচারপত্র বিলি করুন। তাদেরকে জানান আপনাদের কি কি সেবা রয়েছে।
জনাব ইকবাল রুশদ আরো বলেন, আমরা যারা বড় ব্যবসায়ী রয়েছি তারা কখনো হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতে পারি না। আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় তা করা। আমাদেরকে ব্যাংকের মাধ্যমেই অর্থ লেনদেন করতে হয়।
বৈঠকে পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ গাফফার। তিনি বলেন, ড্যানফোর্থে অগ্রণী রেমিটেন্স এর একটি হাউস থাকলেও লোকজন তেমনভাবে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত নন। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার। কমিউনিটির মিডিয়া বা ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই রেমিটেন্স হাউস এবং এর সেবা সম্পর্কে লোকজনকে অবহিত করতে হবে। তবেই লোকজন এর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
বৈঠকের আয়োজন ও সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন প্রিমিয়াম সুইটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এইচ এম ইকবাল। সবশেষে অতিথিদেরকে প্রিমিয়াম সুইটস এর পক্ষ থেকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়।