বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি ও নবাগতদের ওপর এর প্রভাব

এপ্রিল ৮, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় অধিকতর উন্নত জীবনের প্রত্যাশা নিয়ে দশ বছর আগে কিউবা ছেড়ে এসেছিলেন মিলভিয়া রুয়ানো।

নিজের জন্মভূমির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “(সেখানে) অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়, সেজন্য আপনাকে আরও ভালো কোনও দেশ খুঁজে নিতে হবে। কানাডা একটি ভালো দেশ।”

২০১৯ সালে আবার ন্যূনতম মজুরি আরেক ধাপ বেড়ে ১৪ থেকে ১৫ ডলারে দাঁড়াবে। ছবি : কানাডিয়ানইমিগ্রেন্ট.সিএ

কিউবায় একজন কলেজ শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন কাটালেও দুই সন্তানের মা এই নারী বলেন, টরন্টোতে ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করেও তিনি বেশি আয় করতে পারছেন।

তিনি বলেন, “আমি অনেক টাকা বানাতে পারছি এমন নয়, কিন্তু তার পরও আমি একটি চমৎকার জীবন পেয়েছি। আমাকে শুধু কীভাবে অর্থ ব্যয় করছি সে বিষয়ে একটু সতর্ক থাকতে হয়… প্রতি মাসেই আমাকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমার বাজেট নির্ধারণ করতে হয়।”

টরন্টোর কিওয়ানিস বয়েজ অ্যান্ড গার্লস ক্লাবের পুষ্টি কর্মসূচির সমন্বয়কারী হিসাবে রুয়ানো গত বছরের শেষ পর্যন্ত ঘণ্টায় ১৩ ডলার পর্যন্ত আয় করতেন। গত জানুয়ারি থেকে অন্টারিওর ন্যূনতম মজুরি ১১.৬০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৪ ডলারে উন্নীতকরণ কার্যকর হবার পর বর্তমানে রুয়ানোর বেতন প্রতিঘণ্টায় এক ডলার করে বেড়েছে।

প্রতি ঘণ্টায় ১৪ ডলার হিসাবে সপ্তাহের পুরো ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে আয় দাঁড়ায় মাসে ২,২৪০ ডলার। নগর টরন্টোর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী এই নগরীতে মাসে বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ গড়ে ১,৮২৯ ডলার। তার মানে হলো, ন্যূনতম আয়ের একজন মানুষের সারা মাসের অন্য সব ব্যয় মেটানোর জন্য হাতে থাকে চারশ’ ডলারের মতো।

ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর কারণে ব্যবসায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া

মন্ত্রী আলবানিস ও অন্টারিও সরকার যদিও বলছে যে, মজুরি বাড়ানোর ফলে এই প্রদেশে কল্যাণকর পরিবর্তনের সূচনা হবে বলে তারা আশা করছেন, কিন্তু তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে উল্ল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিরূপ প্রক্রিয়াও জানতে পারছেন, কারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন হারে মজুরি দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এর পরও আগামী ২০১৯ সালে আবার ন্যূনতম মজুরি আরেক ধাপ বেড়ে ১৪ থেকে ১৫ ডলারে দাঁড়াবে। ন্যূনতম মজুরি সম্পর্কিত ১৪৮ নং আইনের প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান কানাডিয়ান সেন্টার ফর ইকোনোমিক অ্যানালিসিস-এর (ঈঅঘঈঊঅ) প্রেসিডেন্ট ও সিইও পল স্মেটানিন বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক যে, এই আইনটি (ব্যবসার ক্ষেত্রে) মারাত্মক আঘাত হেনেছে।” তিনি বলেন, “এটা অতি দ্রুত ও তড়িঘড়ি করে কার্যকর করা হয়েছে। আপনি জাল পেতেছেন টুনা মাছ ধরার আশায় কিন্তু দেখা গেল সবই ডলফিন উঠেছে। এটা আইনের অনিচ্ছাকৃত ফলশ্রুতি।”

এসব পরিণাম সম্পর্কে স্মেটানিন বলেন, ব্যবসায়ীরা কর্মচারীদের উচ্চ হারে মজুরি দেওয়ার পরিবর্তে নতুন পদ্ধতি চালু করতে পারেন যেমন অটোমেশন। তিনি বলেন, এর ফলে এখনও কর্মসংস্থান হয়নি এমন নবাগতদেরকে বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হবে কারণ যেসব মালিক কর্মী ছাটাইয়ের কথা ভাবছেন তাদের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা কম।

ইংল্যান্ড থেকে আসা অভিবাসী নাথান হিউজেস-বেরি মজুরির হার বৃদ্ধির আগেই একটি কাজ পেয়েছিলেন, কিন্তু ১ জানুয়ারি এগিয়ে আসার পর তার নিয়োগদাতা কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয় করেছেন।

তিনি বলেন, “মজুরি যখন বাড়লো তখন তারা কর্মচারীদের কাজের সময় কমিয়ে দিলো। তাই আমি ভাবছি আমাকে অন্য কোথাও এর চেয়ে ভালো কোনও কাজ যোগাড় করতে হবে।”

নাথান বলেন, তার আরও বেশ কজন বন্ধুও একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। ভাগ্যক্রমে তিনি নিজে অন্য একটি কফি শপে, এভরিডে গুরমেট-এ, পূর্ণকালীন কাজ পেয়ে গেছেন যেখানে মা ও ছেলে মালিক এবং তারা তাকে ঘণ্টাপ্রতি ১৫ ডলার করে মজুরি দেন।

এই বারিসতা (কফি প্রস্তুত ও পরিবেশনকারী) বলেন, “ওই মালিকদের তত্ত্ব হলো, তারা কর্মচারীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে চান কারণ তারা কাজটা আনন্দময় করতে চান এবং যে কাজ করছি তার বিনিময়ে যথাযথভাবে মজুরি পাচ্ছি।”

ন্যূনতম মজুরি পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করা

মন্ত্রী আলবানিস চান অন্টারিওর ব্যবসায়ীদের মনোভাব যেন এমনই হয়।

অনেক ব্যবসায়ীই যে এই মানসিক অবস্থান মেনে নিতে পারেননি সেটা স্বীকার করে মন্ত্রী অবশ্য জোর দিয়ে বলেন যে, অন্টারিওর অর্থনীতি খুবই ভালো করছে এবং এই পরিবর্তনের এখনই সবচেয়ে ভালো সময়। তিনি আরও বলেন, তার সরকার পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করতে সহায়তার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কাজ করবে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশও ন্যূনতম মজুরি বাড়াবে। প্রথম দফায় ১১.৩৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১২.৬৫ ডলার হবে আগামী ১ জুলাই ২০১৮ থেকে। আর এটা ২০২১ সালে ১৫.২০ ডলারে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবছর কিছু পরিমাণে বাড়তে থাকবে।

ন্যূনতম মজুরি বাড়ার ব্যাপারে যে বিতর্ক চলছে সে বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে রুয়ানো বলছেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট। তিনি আশা করেন না যে, এই বৃদ্ধির ফলে তিনি ধনী হয়ে যাবেন কিন্তু এটি তার জীবন সহজতর করবে। তিনি বলেন, “আমি আরও এক ডলার বেশি উপার্জন করছি বলেই যে বেড়াতে বেরিয়ে পড়বো তেমনটি হবার নয়, তবে এটি আমার বিভিন্ন বিল পরিশোধে সহায়ক হবে। এটা সহায়কই হবে। আমি সন্তুষ্ট।”  – কানাডিয়ানইমিগ্রান্ট.সিএ