দীর্ঘ দিনের মন্দাবস্থার পর টরন্টোতে অভিবাসন বাড়ছে

জুন ৩, ২০১৮

দীর্ঘ সময় ধরে মন্দাবস্থা চলার পর নবাগত অভিবাসীদের গন্তব্যস্থল হিসাবে অন্টারিওর পুনরুত্থান ঘটছে। ছবি : অনলাইন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মন্দাবস্থা চলার পর কানাডায় নবাগত অভিবাসীদের গন্তব্যস্থল হিসাবে অন্টারিওর পুনরুত্থান ঘটছে।
গত বছর কানাডায় আসা দুই লাখ ৮৬ হাজার ৪৮০ জন নতুন অভিবাসীর মধ্যে এক লাখ ১১ হাজার ৯২৫ জন অর্থাৎ ৩৯ শতাংশ এই প্রদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। অথচ ২০১৪ সালে এই প্রদেশে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া অভিবাসীর সংখ্যা ছিলো সবচেয়ে কম। সে বছর কানাডায় আসা দুই লাখ ৬০ হাজার ৪১১ জন নতুন অভিবাসীর মধ্যে মাত্র ৩৮ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৯৫ হাজার ৮২৮ জন টরন্টোতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয়। অতীতে এদেশে আসা নতুন অভিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি টরন্টোকেই ঠিকানা হিসবে বেছে নিতো। খবর টরন্টো স্টার এর।
অন্টারিওতে যারা স্থায়ী আবাস গাড়ছেন তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বেছে নিয়েছেন বৃহত্তর টরন্টো অঞ্চল। ২০১৭ সালে এদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৫০০জন যা শতকরা হিসাবে আগের দুবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৪০ ভাগ বেশি। শুধু গত জানুয়ারি মাসেই অন্টারিওতে স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে এসেছেন ১০ হাজার ৮৭০জন। এক বছর আগে একই সময়ে এসেছিলেন ৭,৩১৫জন। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসেছেন শতকরা হিসাবে ৪৮ দশমিক ৬০ ভাগ বেশি অভিবাসী। এর মধ্যে বৃহত্তর টরন্টোতে থিতু হয়েছেন ৮,৬০০ জন যা ২০১৭-র জানুয়ারির চেয়ে ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর টরন্টো ও অন্টারিওতে অভিবাসীদের ঢল নামার কারণ হচ্ছে আলবার্টায় অর্থনীতির নি¤œগতি। এই কারণে আলবার্টায় অভিবাসী আগমনের সংখ্যা বেশ কমে গেছে। ২০১৬ সালে যেখানে ৪৯ হাজার ২০০ অভিবাসী এসেছিলো সেখানে চলতি বছর সেটা কমে এসেছে ৪২ হাজার ১০০ জন। এতে করে জাতীয় পর্যায়ে আসা মোট অভিবাসীর মধ্যে আলবার্টার হিস্যা ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে কমে ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আলবার্টায় অভিবাসী আগমনের সাম্প্রতিক এই মন্দাবস্থা দেখা দিয়েছে এক দশক পর। গত এক দশকে সেখানে অভিবাসী আগমনের ধারা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায় এবং অতীতের মাত্র ১০ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশে ওঠে।
কানাডার ইন্সটিটিউট ফর আইডেন্টিটিস অ্যান্ড মাইগ্রেশন-এর জ্যাক জেডওয়াব বলেন, “বর্তমানে অন্টারিও বিশেষ করে বৃহত্তর টরন্টো আবারও নতুন অভিবাসীদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে আলবার্টা এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া তেমন ভালো করতে পারছে না।” তিনি বলেন, “আলবার্টায় অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় সামর্থের মধ্যে আবাসন সুবিধা পাওয়া খুব কঠিন। অন্যদিকে বৃহত্তর টরন্টো এখনও অভিবাসীদের স্থায়ী বসবাসের জন্য ঐতিহাসিক আকর্ষণ।” কানাডার অভিবাসনের কেন্দ্র হিসাবে অন্টারিওর প্রাধান্য কনজারভেটিভ দলের কেন্দ্রীয় সরকারের সময় হুমকির মুখে পড়ে। ২০০৫ সালে অন্টারিওতে অভিবাসী আগমনের হিস্যা ছিল সর্বাচ্চ ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। সেবছর কানাডায় আসা দুই লাখ ৬২ হাজার ২৪৩ জন অভিবাসীর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার ৫২৮ জন এই প্রদেশকে বসবাসের জন্য বেছে নেয়।
২০০৫ সালের পরের বছরগুলোতে স্টিফেন হারপারের সরকার নবাগতদের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত তিনটি বৃহৎ শহর মন্ট্রিয়েল, টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারের বাইরে বসবাসের জন্য নতুন আসা অভিবাসীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে অভিবাসনের বিষয়টিকে অঞ্চলভিত্তিক করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক সুবিধা এবং জনসংখ্যার বৈচিত্র সমভাবে সমগ্র কানাডায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং বৃহৎ নগরীগুলোর অবকাঠামোর ওপর চাপ কমিয়ে আনা।
অন্টারিওর অভিবাসন মন্ত্রী লরা আলবানেস-এর মুখপাত্র সারা আমাশ বলেন, অভিবাসীরা যে এই প্রদেশটিকে বেছে নিচ্ছে তাতে সরকার বিস্মিত নয়, কারণ এটি এখনও কানাডার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি।
ই-মেলে পাঠানো বক্তব্যে সারা আমাশ বলেন, “২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্টারিওর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কানাডার জাতীয় প্রবৃদ্ধি এবং শিল্পোন্নত সাতটি দেশের প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। আমাদের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হচ্ছে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে রেকর্ড সংখ্যক নতুন চাকরি সৃষ্টি হচ্ছে এবং বেকারত্বের হার প্রায় দুই দশক ধরে সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে।”