ড্যানফোর্থের বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় শিশু দারিদ্রতার হার তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে
এই এলাকার শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ শিশু দরিদ্র অবস্থায় বাস করছে
জানুয়ারী ৬, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টোতে প্রতি ৪ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু বাস করে দরিদ্র পরিবারে। ২০১৬ সালের আদম শুমারীর উপর ভিত্তি করে রচিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরী করে Social Planning Toronto নামের একটি অলাভজনক সংগঠন।
এথনিক বা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু পরিবারের শিশুরা কানাডিয়ান পরিবারের শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ হারে দারিদ্রতায় ভুগছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শতকরা হিসাবে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর মধ্যে ২৩.৩% শিশু দারিদ্রতায় ভুগছে। কানাডিয়ান পরিবারগুলোতে এই হার ১১.৪%। আর টরন্টোতে বসবাসরত আদীবাসী পরিবারগুলোতে শিশু দারিদ্রতার হার ৮৪%। খবর টরন্টো স্টার এর।
অন্যদিকে নতুন আসা ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশুদের মধ্যে দারিদ্রতার হার প্রায় ৫০%। এরা কানাডায় এসেছেন গত ৫ বছরের মধ্যে এবং এদের মধ্যে অনেকেই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। কানাডিয়ান পরিবারের শিশুদের তুলনায় নতুন আসা এই পরিবারের শিশুদের মধ্যে দারিদ্রতার হার দ্বিগুণ।
টরন্টোতে শিশু দারিদ্রতার এই হার যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ এই জন্য যে, সংখ্যার বিচারে এরা মোটেও কম নয়। সর্বশেষ আদম শুমারির তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় টরন্টোতে অর্ধেকেরও বেশী (৫১.৫%) অধিবাসী দৃশ্যমান সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের সদস্য।
টরন্টো সিটির আদর্শবাণী হলো ‘Diversity Our Strength’. এই সিটিতে কানাডীয় ছাড়াও বহু দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। Social Planning Toronto প্রশ্ন তুলে- দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবারের শিশুদেরকে দরিদ্রতার মধ্যে রেখে টরন্টোর সেই আদর্শবাণীর আদর্শ আমরা কতটা রক্ষা করতে পারছি?
টরন্টোতে ট্যাক্স প্রদানের পর যে সকল পরিবারের আয় বছরে ৩১,৩০১ হাজার ডলার (দুই সদস্যের পরিবার) এবং ৪৪,২৬৬ হাজার ডলার (চার সদস্যের পরিবার) তাদেরকে দরিদ্র বলে বিবেচনা করা হয় স্ট্যাটিসটিকস কানাডার মাপকাঠিতে। ২০১৫ সালের হিসাব এটি।
Social Planning Toronto এর প্রতিবেদনটি ফেডারেল স্কিল্ড প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশ থেকে টরন্টোতে আসা নতুন ইমিগ্রেন্ট দ্রাবিড় খান ও তার স্ত্রী যুথিকা হোসেন এর কাছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক নিরানন্দের বার্তা প্রেরণ করে। টরন্টো স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুথিকা হোসেন বলেন, “আমরা এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত এবং কঠোর পরিশ্রম করার জন্যও প্রস্তুত। আমাদের শুধু একটু সহযোগিতা প্রয়োজন টরন্টোতে আমাদের ট্রানজিশন পিরিয়ডটা কিছুটা মসৃন করার জন্য।”
যুথিকা দেশে একটি ব্যাংক এ কাজ করতেন। তার স্বামী দ্রাবিড় খান বাংলাদেশে একটি বড় রিটেইল চেইনে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতেন। গত মে মাসে টরন্টো আসার পর দ্রাবিড় একটি এম্পয়মেন্ট ব্রিজিং প্রোগ্রামে ভর্তি হন। কিন্তু টরন্টোতে তাদের এক বছর বয়সী মেয়ের জন্য এফোর্ডএ্যাবল চাইল্ড কেয়ার এর সুযোগ না থাকায় যুথিকা আবার দেশে ফিরে যান ব্যাংকের চাকরীতে যোগ দেয়ার জন্য যাতে করে আয়টা অব্যাহত থাকে। দেশে অনেক আত্মীয় আছেন যারা ছোট মেয়েটার দেখাশুনা করতে পারবেন।
কিন্তু দেশে বেশী দিন থাকা হয়নি যুথিকার। গত আগস্ট মাসে আবার টরন্টো চলে আসতে হয় তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম নেয়ার দিন ঘনিয়ে আসাতে। এই সময় দ্রাবিড় ন্যূনতম মজুরিতে স্টেপল এ একটি কাজ নেন ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য। কিন্তু গত অক্টোবরে যুথিকার সন্তান সিজারিয়ান সেকশন এর মাধ্যমে হওয়াতে দ্রাবিড়কে ঐ কাজটি ছেড়ে দিতে হয় স্ত্রীকে সহযোগিতা করার জন্য।
সাউথ এশিয়ান ওমেন’স রাইটস অরগানাইজেশন এর কর্মকর্তা সুলতানা জাহাঙ্গির বলেন, “এ্যাফোর্ডএ্যাবল চাইল্ড কেয়ার টরন্টোতে একটি প্রধান ইস্যু যা ইমিগ্রেন্টরা মোকাবেলা করছেন”
সাউথ এশিয়ান ওমেন’স রাইটস অরগানাইজেশন টরন্টোর অকরিজ/ক্রিসেন্ট (বাঙ্গালী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ ও ফার্মেসী এলাকা) টাউন এলাকায় নতুন ইমিগ্রেন্টদেরকে সেবা প্রদান করে থাকে। এই এলাকায় প্রচুর সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত তরুন বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্ট থাকেন। টরন্টো স্টার এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই এলাকায় শিশু দারিদ্রতার হার টরন্টোতে তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এই এলাকার শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ শিশু দরিদ্র অবস্থায় বাস করছে।
টরন্টোতে যে সকল শিশু দারিদ্রতার মধ্যে বাস করছে তারা বিভিন্ন মৌলিক সহায়তা ও সেবা যেমন শিক্ষা, ভাল বাসস্থান, সামাজিক ও বিনোদনমূলক সুযোগ, চাইল্ড কেয়ার ইত্যাদিতে সমান সুযোগ সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। Social Planning Toronto এর প্রতিবেদনে এ কথা বলা করা হয়।
দারিদ্র বিমোচন কৌশলের অংশ হিসাবে টরন্টো সিটি কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে কয়েকটি পদক্ষেপ অনুমোদন করে যার মধ্যে আছে এক্সেস টু হাউজিং, ভাল চাকরী এবং সুরক্ষিত নয় এমন লোকদের জন্য সহযোগিতা ও সেবা প্রদান করা।
Social Planning Toronto এর প্রতিবেদনে আহ্বান জানানো হয় যাতে এই সেবাগুলো প্রদানের জন্য ২০১৮ সালের সিটি বাজেটে অন্তত ৬৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, দারিদ্রতা অনিবার্য নয়। এটি শিশু এবং যুবকদের জন্য বাস্তবতা হওয়া উচিত নয়। দারিদ্রতা রোধ এবং হ্রাস করা সম্ভব।