টরন্টোতে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বাড়ছে
মে ৫, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টো পুলিশের হেইট ক্রাইম ইউনিটের সর্বশেষ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে হেইট ক্রাইমের সংখ্যা লাফিয়ে ২৮ শতাংশ বেড়ে যায়।
গত বছর সব মিলিয়ে মোট ১৮৬টি “বিদ্বেষমূলক ঘটনা” ঘটেছে যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিলো সম্পদের ক্ষতিসাধন থেকে শুরু করে গুন্ডামি এবং দেওয়ালে বিদ্বেষমূলক চিত্র বা মন্তব্য আঁকার মত ঘটনা। খবর সিবিসি নিউজ।
গত এক দশক ধরে হেইট ক্রাইমের সংখ্যা ওঠানামা করেছে এবং দেখা গেছে যে প্রতি বছর গড়ে ১৪৭টি করে এধরণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের হিসাব বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি হেইট ক্রাইম ঘটেছিলো ২০০৯ সালে। সেবার সংঘটিত হেইট ক্রাইমের সংখ্যা ছিলো ১৭৪টি।
তাহলে গত বছর হেইট ক্রাইম বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
রিপোর্টে হেইট ক্রাইম বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে “আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ, সামাজিক শিক্ষা কর্মসূচি, হেইট ক্রাইম সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ এবং এধরণের ঘটনা সম্পর্কে বেশি বেশি করে রিপোর্ট করার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শেষ দুটি বিষয় আসলে টরন্টো পুলিশ সার্ভিস বোর্ডের সাবেক সদস্য এবং নগরীর কাউন্সিলর মিজ. শেলি ক্যারলের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।
সিবিসি টরন্টোকে ক্যারল বলেন, ক্রিমিনাল কোডে হেইট ক্রাইমকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেটি বুঝতে অফিসারদের সহায়তায় “প্রশিক্ষণ সত্যিকারভাবেই বড় ভূমিকা রেখেছে।” তিনি বলেন, নতুন বোঝাপড়ায় সমৃদ্ধ অফিসাররা আরও ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম যে কোন কোন ঘটনা হেইট ক্রাইমের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে।
বেশীরভাগ হেইট ক্রাইম ঘটছে ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে
বেশিরভাগ হেইট ক্রাইম সংঘটনের পছনে এখনও সবচেয়ে বড় কারণ হলো ধর্মীয় বিদ্বেষ। ২০১৭ সালে সংঘটিত হেইট ক্রাইমের ২৮ শতাংশ ঘটেছে ইহুদিদের টার্গেট করে এবং ১৮ ভাগ ঘটেছে মুসলিমদের টার্গেট করে।
স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার বিব্রতকর পরিসংখ্যান প্রকাশের এক বছর পর পুলিশে রিপোর্ট করা হয়েছে এমন হেইট ক্রাইমের সার্বিক বৃদ্ধি কিন্তু কমেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থার রিপোর্টে জানান হয়েছিলো যে, ২০১৪-২০১৫ সালের মধ্যে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ৬০ শতাংশ হেইট ক্রাইম ঘটেছে।
টরন্টোর হেইট ক্রাইমের পরিসংখ্যান অবশ্য একটু কমই নাটকীয়। এতে দেখা যায়, ২০১৫ সালে মুসলমানরা ২৬ বার হেইট ক্রাইমের শিকার হয়েছেন যা ২০১৬ সালে ২২টিতে নেমে এসেছে এবং ২০১৭ সালে আবার বেড়ে ৩৩টিতে দাঁড়িয়েছে।
তারপরও, এধরণের ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট না হওয়ার উদ্বেগ রয়ে গেছে যা পুলিশের হেইট ক্রাইম ইউনিট তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে স্বীকার করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, “হেইট ক্রাইম সম্পর্কে রিপোর্ট করার সংখ্যা কম হওয়া বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জ। অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা বিব্রত হওয়া, প্রতিশোধের শিকার হওয়ার ভয় কিংবা অভিযোগ করতে গেলে তাদেরকে কীভাবে নেওয়া হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার কারণে হেইট ক্রাইম সম্পর্কে রিপোর্ট করতে অনিচ্ছুক হতে পারেন।
টরন্টোতে হেইট ক্রাইমের ব্যাখ্যা করা হয়েছে
রিপোর্টে হেইট ক্রাইমের ধরন, স্থান ও জড়িতদের পরিচয় যা হেইট ক্রাইম সংঘটনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
বেশিরভাগ হেইট ক্রাইমের ঘটনা ঘটেছে সড়কে, গলিপথে অথবা কোনও গাড়িতে। এর পরেই সবচেয়ে সম্ভাব্য স্থানের মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। নগরীর কেন্দ্রস্থলের ৫২ ডিভিশন এবং উত্তর-পশ্চিম এলাকায় অধিকাংশ হেইট ক্রাইমের ঘটনা ঘটেছে।
১৮ শতাংশ হেইট ক্রাইম হয়েছে নগরীর কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের বিরুদ্ধে এবং এসব ঘটনায় কেবল সম্পদের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। কিন্তু মুসলমান এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যেসব হেইট ক্রাইম ঘটেছে তাতে তারা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের কারণে গ্রেফতার করা ব্যক্তির সংখ্যাও সামান্য বেড়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে ১৯ জন গ্রেফতার হয়েছিলো সেখানে ২০১৭ সালে গ্রেফতার হয় ২৩জন।