কানাডা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত দেশ : এই মর্যাদা অর্জনের পিছনে কৃতিত্ব প্রধানত ইমিগ্রেন্টদের

ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি রয়েছে শতকরা ৩৬ ভাগের : মূলধারার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এই হার শতকরা ২৪

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম শিক্ষিত দেশ। আর এর কৃতিত্ব প্রধানত ইমিগ্রেন্টদের প্রাপ্য।

নতুন আসা ইমিগ্রেন্টরা শুধু যে নিজেরাই উচ্চ শিক্ষিত তাই নয়, তারা এ দেশে আসার পর তাদের ছেলে-মেয়েদেরকেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন। আর এ কারণেই ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার মূলধারার কানাডিয়ানদের তুলনায় বেশী। সম্প্রতি সরকারের এক অভ্যন্তরীন অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। খবর টরস্টার নিউজের।

ঐ অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ৩৬% ছেলে-মেয়ের (যাদের বয়স ২৫-৩৫ এর মধ্যে) ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে। আর এই একই বয়সের মূলধারার কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে ২৪% জনের।

সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট এসেছে যে কয়টি দেশ থেকে তার মধ্য আছে চীন ও ভারত। আর এই দেশগুলো থেকে আসা ইমিগ্রেন্টে পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্য ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারীর সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশী। ফিলিপাইন থেকেও কানাডায় প্রচুর সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট এসেছেন। ঐ সকল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্য ইউনির্ভর্সিটি ডিগ্রিধারীর সংখ্যা শতকরা প্রায় ৩৩ ভাগ।

কানাডা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত দেশ। আর এর কৃতিত্ব প্রধানত ইমিগ্রেন্টদের। সরকারের এক অভ্যন্তরীন অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ছবি: ম্যাকলিন’স

পশ্চিম ইউরোপ থেকে এসেছেন এমন ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যও উচ্চ শিক্ষার হার মূলধারার কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের তুলনায় বেশী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে ৩০ থেকে ৩৭ % পশ্চিম ইউরোপের ছেলে-মেয়ে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী। এর পরের অবস্থানে আছে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে আসা ইমিগ্রেন্ট পরিবার। এই সকল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারীর হার ২৩ থেকে ২৮%।

যে সকল পরিবারে পিতা-মাতা উচ্চ শিক্ষিত হয়, সে সকল পরিবারের সন্তানেরাও সাধারণভাবে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে থাকে। কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারেও তাই দেখা গেছে। এখানকার নতুন ইমিগ্রেন্ট পরিবারের পিতা-মাতাদের মধ্যে মূলধারার কানাডিয়ান পরিবারের পিতা-মাতার তুলনায় উচ্চ শিক্ষিতের হার বেশী।

সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে পিতা-মাতার প্রত্যাশা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লক্ষ্য করা গেছে, কানাডায় আসা এশিয়ান ইমিগ্রেন্টে পরিবারের পিতা-মাতাদের মধ্যে এই প্রত্যাশাটা মূলধারার কানাডিয়ান পরিবারের পিতা-মাতার চেয়ে বেশী মাত্রায় বিদ্যমান।

অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পারিবারিক আয় তেমনটা ভূমিকা পালন করে না। দেখা গেছে নতুন ইমিগ্রেন্ট পরিবারের অধিকাংশই আর্থিক সমস্যা মোকাবেলা করে আসছে কানাডায়। কিন্তু তারপরও এই সকল ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার বেশী।

উল্লেখ্য যে, অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন এ্যান্ড ডেভলাপমেন্টে কানাডাকে দ্বিতীয় স্থানের মর্যাদা দিয়েছে উচ্চ শিক্ষিতের দেশ হিসাবে। কানাডায় সার্বিকভাবে ৬০% অধিবাসীর পোস্ট-সেকেন্ডারী ডিগ্রি রয়েছে। প্রথম স্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। এই হিসাব ২০১৬ সালের। টপ টেনে এর পরের অবস্থানে (উপর থেকে নিচে) আছে জাপান, লিথুনিয়া, যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রেলিয়া, সুইজাল্যান্ড, নরওয়ে এবং ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা।

ইমিগ্রেশন কানাডার মুখপাত্র গার্নেট পিকট বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন পলিসির দীর্ঘ মেয়াদী পারফরমেন্স কি এবং কানাডায় ইমিগ্রেন্ট পরিবারের সন্তানেরা শিক্ষায় ও অর্থনীতিতে কতটুকু সাফল্য ও অবদান রাখছে তা দেখার জন্য এই অনুসন্ধান চালানো হয়।

অন্য এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে ২০১১ থেকে ২০১৬ সালে আসা ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে শতকরা ৫৪.২ জনের ব্যাচলর ডিগ্রি রয়েছ। ১৯৯০ এর দশকে এই হার ছিল শতকরা ৩০.৫ ভাগ।

ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে যেখানে শতকরা ৫৪.২ জন এর ব্যাচেলর ডিগ্রি রয়েছে, সেখানে নন-ইমিগ্রেন্ট অর্থাৎ মূলধারার কানাডিয়ানদের মধ্যে এই হার শতকরা ২৭.৯ ভাগ। এই অনুসন্ধানটি চালান এসোসিয়েশন অব কানাডিয়ারন স্টাডিজ এর গবেষক জ্যাক জেকব। পেশায় তিনি কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির স্যোশলজি এ্যান্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স এর অধ্যাপক।

জ্যাক জেকব এর  অনুসন্ধানে দেখা গেছে কানাডায় দৃশ্যমান সংখ্যা লঘুদের মধ্যে ৪৬.৫% মহিলা ও ৪৫% পুরুষের ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ানদের মধ্যে এই হার যথাক্রমে ৩৩.৮% ও ২৫%।

জ্যাকব বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশী ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী রয়েছে কানাডায়। দৃশ্যত এর পিছনে অবদান রয়েছে ইমিগ্রেন্টদের বিশেষ করে যারা ২১ শতকের গোড়া থেকে কানাডায় এসেছেন তাদের।

জ্যাকব আরো বলেন, সেই দিন চলে গেছে যখন বলা হতো ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে শিক্ষার অভাব রয়েছে। আর প্রথম প্রজন্মের দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ইমিগ্রেন্ট এবং ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ ইমিগ্রেন্টরা তেমন সুবিধা করতে না পারলেও তাদের সন্তানেরা অনেক ভাল করছে।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর স্যোসলজি বিভাগের অধ্যাপক মনিকা বয়েড বলেন, ইমিগ্রেন্ট পিতা-মাতার আকাংখা অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে তাদের সন্তানদের সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে যদি ঐ পিতা-মাতারা নিজেরাও উচ্চ শিক্ষিত হন এবং কানাডায় এসে নিজ প্রফেশনে প্রবেশ করে ভাল আয় রোজগার করেন।

ইমিগ্রেশন কানাডার মুখপাত্র গার্নেট পিকট বলেন সামগ্রিকভাবে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা কর্মক্ষেত্রেও ভাল করছে বা অধিক ভাল করছে তাদের সমবয়সী কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের তুলনায়। কারণ, তাদের রয়েছে অধিকতর উচ্চ শিক্ষার সনদ যা তাদেরকে সাধারণ চাকরীর পরিবর্তে প্রফেশনাল জব পেতে সাহায্য করে। ইমিগ্রেন্ট ডিপার্টমেন্টের গবেষণায় বলা হয়, কর্ম ক্ষেত্রে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ছেলে-মেয়েদের আয় তাদের সমবয়সী কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের তুলনায় ৯ থেকে ১৩% বেশী।