কানাডায় শ্রমিক ঘাটতি জটিলতর হয়েছে : প্রায় চার লাখ চাকরির পদ শূন্য
এপ্রিল ৮, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে চাকরির ক্ষেত্রে প্রতি ২৫ টি পদের মধ্যে প্রায় একটি শূন্য। ক্রমবিকাশমান অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে কানাডা শ্রমিক ঘাটতির যে সঙ্কটের মোকাবিলা করছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওই পরিসংখ্যান তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কানাডিয়ান ফেডারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্ট বিজনেস (CFIB) এর নতুন তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, কানাডায় যত ধরণের কাজ রয়েছে তার সবগুলোতে নিয়োগের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী এদেশে নেই। খবর হাফিংটন পোস্ট।
শূন্য পদ পূরণে সহায়তা সম্পর্কিত সিএফআইবির সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের শেষ তিন মাসে কানাডায় চাকরির শূন্য পদ ছিলো ৩,৯৯,০০০। শূন্য পদ বৃদ্ধির সংখ্যা ছিলো ৩৮,০০০ বা ১০.৫ শতাংশ যা মাত্র তিন মাসে বেড়েছে। শূন্যপদ বেড়ে যাওয়ার এই প্রবণতার শীর্ষে রয়েছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া যখানে সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী শূন্য পদের সংখ্যা হলো মোট চাকরির সংখ্যার ৩.৯ শতাংশ এবং এই বৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র তিন মাস আগের ৩.৬ শতাংশ থেকে। কুইবেকের শূন্য পদের সংখ্যাও ৩.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
কানাডায় শ্রমবাজার যখন ইতিহাসের সবচেয়ে জোরালো অবস্থানে রয়েছে ঠিক সেই সময়েই দেশটিতে শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
১৯৭৬ সালের পর গত ফেব্র“য়ারিতে বেকারত্বের হার যখন ৫.৮ শতাংশ ছিলো তখন সেটি ছিলো কানাডার জাতীয় পর্যায়ের সর্বনি¤œ হার। এটি ছিলো এমন এক লক্ষণ যে কানাডার অর্থনীতি এর পরেই সব শূন্যতা পূরণ করে ফুলে ফেঁপে উঠতে যাচ্ছে।
দক্ষতার বৈষম্য
এর পরও কানাডায় ১১ লাখের বেশি মানুষ বেকার রয়েছে। এই বেকারত্বের কিছু হলো কাঠামোগত আর কিছু লোক আছে যারা প্রায়শ চাকরি পাল্টানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকেÑ তবে এর কিছুটা এজন্য যে কানাডায় এখন যে ধরণের চাকরির পদ সৃষ্টি হচ্ছে তার সঙ্গে প্রাপ্য শ্রমশক্তির দক্ষতার বৈষম্য রয়েছে।
সিএফআইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও মুখ্য অর্থনীতিবিদ টেড মলে’ বলেন, বর্তমান সমস্যার নিরসনের জন্য উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যেসব শিল্পের বিকাশ নেতিবাচক সেগুলোর শ্রমিকদেরকে নতুন করে বিকাশমান শিল্পে সরিয়ে নেওয়া হলে সেটা সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান শ্রমিক সঙ্কট বিশেষভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। গত মঙ্গলবার তিনি হাফিংটন পোস্টকে বলেন, “পাঁচ জনের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যখন একজন মানুষ কম থাকে তখন এর অর্থ হলো ২০ শতাংশ শ্রমশক্তি কমে যাওয়া। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও সেবাদানের সক্ষমতার ওপর গুরুতর আঘাত লাগে।”
কিন্তু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য যেটা সমস্যার কারণ সেটিই আবার শ্রমিকের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, কারণ শ্রমিকের ঘাটতির কারণে তার মজুরির পরিমাণ বাড়তে পারে। মলে’ জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে তারা অন্যদের চেয়ে বেশি হারে শ্রমিকের মজুরি বাড়াচ্ছে। যাদের শ্রমিকের
ঘাটতি রয়েছে তারা আগামী বছরে মজুরির পরিমাণ ২.৮ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যেখানে শ্রমিকের ঘাটতি না থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো মজুরি বাড়াবে মাত্র ২.৩ শতাংশ।
ব্যক্তিগত সেবা ও নির্মাণ শিল্পে সবচেয়ে বেশি কর্মখালি
সিএফআইবির সমীক্ষায় কর্মখালির পেশাভিত্তিক চিত্র দেখিয়েছে যাতে দেখা গেছে যে, ব্যক্তিগত সেবা ও নির্মাণ শ্রমিকের পেশায় শ্রমিকের চাহিদা সর্বোচ্চ। ওই দুই পেশায় কর্মখালির পরিমাণ যথাক্রমে ৪.৫ ও ৩.৭ শতাংশ।
কানাডীয়রা কাজের জন্য দূরে যেতে চায় না
মলে’ বলেন, শ্রমিকদের ব্যাপক হারে স্থানান্তরের মাধ্যমে শ্রমিক ঘাটতির সমস্যার অনেকটা সমাধান হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, কোনও অঞ্চল যদি ভালো করে তাহলে সেখান থেকে সম্পদ সরিয়ে নিয়ে যে অঞ্চল ভালো করছে না সেখানে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
কিন্তু কানাডীয়রা নিজেদেরকে ভ্রাম্যমান শ্রমিক হিসাব দেখতে চায় না বলেই মনে হয়। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০-এর দশক থেকে কানাডায় আন্তঃপ্রদেশ অভিবাসন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কানাডীয়রা তাদের পরিবার ও সামাজিক পরিমন্ডলকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে যে কারণে তারা কাজের জন্য অন্য কোথাও যেতে খুব কমই আগ্রহী।
মলে’ বলেন, নীতিনির্ধারকরা এই সমস্যার নিরসনে স্থানান্তরে যাওয়ার বিষয়টি সহজ করতে পারেন। যেমন, শ্রমিকের কাজের ওপর সার্টিফিকেট ও তার মান প্রতিটি প্রদেশে গ্রহণযোগ্য করে দেওয়া যেতে পারে।