কানাডায় নাগরিকত্ব লাভ এর আইন অনেক সহজ করেছে লিবারেল সরকার

বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমপি নেথানিয়েল আরস্কিন স্মিথ :

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮

টরন্টোর বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক এলাকা থেকে নির্বাচিত লিবারেল দলের এমপি নেথানিয়েল আরস্কিন স্মিথ সম্প্রতি স্থানীয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ NOW’ এর পাঠক জরীপে সেরা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আরো কিছু বিষয়ে আলোচিত হয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে। টরন্টোর বাঙ্গালী কমিউনিটিতেও তিনি একজন পরিচিত মুখ। বাঙ্গালীদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাকে নিয়মিত দেখা যায়। গত বছর বাংলাদেশ সফরেও গিয়েছিলেন নেথানিয়েল স্মিথ। তার সেই সফরের অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক সময়ে কানাডার ইমিগ্রেশন আইন ইমিগ্রেন্টবান্ধব করা, ইসলামোফোবিয়া, ইয়ূথ কানাডিয়ানদেরকে রাজনীতি সচেতন করা ও রাজনীতে সম্পৃক্ত করা, রোহিঙ্গা নির্যাতনকারী অং সান সু চি’র কানাডিয়ান নাগরিকত্ব বাতিল করার প্রসঙ্গসহ আরো কিছু বিষয়ের উপর তার একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সাক্ষাৎকার নেন প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের সম্পাদক খুরশিদ আলম। সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের করে যাওয়া  ইমিগ্রেশন আইন ‘বিল সি-২৪’ এর বেশ কিছু বিতর্কিত ধারা সংশোধন করার জন্য লিবারেল সরকার ‘বিল সি-৬’ নামের যে বিল সংসদে পেশ করেছিল সেটি নানান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গত ১৯ জুন রাজ সম্মতি পায় এবং আইনে পরিনত হয়। এর ফলে কানাডায় হাজার হাজার ইমিগ্রেন্ট এবং তাদের পরিবার উপকৃত হচ্ছেন, উপকৃত হচ্ছেন বাংলাদেশী কমিউনিটিও। আপনি কি এই বিল সি-৬ প্রসঙ্গে একটু বিস্তারিতভাবে বলবেন?

উত্তর : কানাডার প্রধানন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতিপূর্বে বলেছেন, “A Canadian is a Canadian is a Canadian.”।

বিল সি-৬ আমাদের অভিবাসন সিস্টেমে বৃহত্তর ন্যায্যতা এনেছে, আবেদনকারীদেরকে দিয়েছে অধিকতর নমনিয়তা। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পার্মান্টে রেসিডেন্টদেরকে ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩ বছর কানাডায় বাস করতে হবে সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করার আগে। তাছাড়া পার্মান্টে রেসিডেন্সী পাওয়ার আগের সময়টাও কাউন্ট করা হবে যারা ঐ সময়টা কানাডায় অবস্থান করছিলেন। সাবেক কনজারভেটিভ সরকার আইন করে গিয়েছিল কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে ইমিগ্রেন্টদেরকে ৬ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৪ বছর কানাডায় বাস করতে হবে।

বিল সি-৬ কানাডায় দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণের ক্ষমতাকেও রহিত করেছে। কারো বিরুদ্ধে কোন অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে কানাডার প্রচলিত আইনেই তার বিচার করা হবে যেমনটি করা হয় কানাডার অন্যন্য নাগরিকদের বেলায়। দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণের আইনটি কনজারভেটিভ সরকারই করে গিয়েছিল।

সংক্ষেপে বলা যায়, কানাডায় নাগরিকত্ব লাভ এখন অনেক সহজ হয়েছে এই বিল সি- ৬ এর কারনে এবং এই বিল সি -৬ এর মাধ্যমে এটিও নিশ্চিত করা হয়েছে যার যা ব্যাকগ্রাউন্ডই থাকুক, প্রত্যেকেই সমান আচরণ পাবেন।

আর সবশেষে বলবো, আমরা ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশনের জন্য কানাডায় অধিক সংখ্যক ইমিগ্রেন্টকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা ইমিগ্রেশন প্রসেসিং এর টাইমও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছি। উদাহরণ হিসাবে বলবো spousal application প্রসেস করার সময়সীমা দুই বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে।

একটি আনন্দঘন পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, এমপি নেথানিয়াল স্মিথ ও স্মিথের ছেলে

প্রশ্ন : গ্রেটার টরন্টো এলাকায় সবচেয়ে কম বয়সী এমপি আপনি। একজন যুবক এমপি হিসাবে কানাডার যুবক সম্প্রদায়ের প্রতি আপনার অঙ্গীকার কি এবং তাদের জন্য আপনি ইতিমধ্যে কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন?

উত্তর : সবচেয়ে কম বয়সী এমপি হিসাবে আমি খুব মনোযোগ সহকারে যুবক বয়সী কানাডিয়ানদেরকে কানাডার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স¤পৃক্ত করার চেষ্টা করি।

আমি অটোয়াতে আমাদের লিবারেল ইয়ূথ ককেসাস এর ফাউন্ডিং মেম্বার। সম্প্রতি আমি অটোয়াতে যুবক বয়সী এপিদের একটি বিশ্ব সম্লেলনের আয়োজনে সহায়তা করেছি যেখান বাংলাদেশের কয়েকজন যুবক বয়সী এমপি যোগ দিয়েছিলেন।

টরন্টোতে আমি নিয়মিত বিভিন্ন স্কুলের ক্লাসে উপস্থিত হই রাজনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে। আমি বিভিন্ন গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেই। আমার একটি সক্রিয় ইয়ূথ কাউন্সিল এবং ইয়ং লিবারেল ক্লাব আছে। এই কাউন্সিল এবং ক্লাবের সদস্যরা আমার সাথে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে কাজ করে।

আমরা একটি সামার স্টুডেন্ট লিবারেল ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রাম চালাই প্রতি বছর যেখানে আমরা আমাদের কমিউনিটিতে রাজনৈতিক প্রচার এর উপর গুরুত্ব দেই।

যদি কারো পরিবারের সন্তানেরা রাজীনতিতে আগ্রহী হয় তবে আমি তাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি আমার অফিসে যোগাযোগ করার জন্য। আমরা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে তাদেরকে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

টরন্টোতে কানাডা ডে প্যারেড অনুষ্ঠানে টরন্টোর মেয়র জন টরির সঙ্গে নেথানিয়াল দম্পতি

প্রশ্ন : আমরা লক্ষ্য করেছি আপনি আপনার পার্টির কিছু কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেন। ইতিপূর্বে আপনি স্বেচ্ছা মৃত্যু আইন, গাঁজার বৈধতা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন। এতে কি কখনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে আপনাকে?

উত্তর : বিগত কনজার্ভেটিভ সরকারের একটি খ্যাতি ছিল গোপনীয়তা রক্ষা করা ও নিজ দলের এমপিদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। কিন্তু আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম ব্যতিক্রমী হওয়ার। আমাদের অঙ্গীকার ছিল লিবারেল এপি গণ তাদের নিজ নিজ এলাকার কণ্ঠস্বর হবেন পার্লামেন্টে, তারা পার্লামেন্টের কণ্ঠস্বর হবেন না তাদের নিজ নিজ কমিউনিটিতে।

সেই দৃষ্টিকোন থেকে যুক্তিসঙ্গত ও সম্মানজনক মতভেদকে আমাদের পার্টিতে স্বাগতম জানানো হয়। যখন আমি কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি তখন নিশ্চিত হয়ে নেই যে আমি তা সম্মানজনভাবে এবং চিন্তাশীলভাবে করছি এবং আমার দ্বিমত পোষণ করার পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে, আমার কমিউনিটির ফিডব্যাক রয়েছে এবং আমি আমার সুবিবেচনা ও নীতিবোধকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছি।

তবে অবশ্যই দলগতভাবে আমরা একটি টিম। সুতরাং আমি কখনোই নিম্মলিখিত বিষয়গুলোতে ভিন্নমত পোষণ করবো না।

– নির্বাচনের সময় আমরা যে সব অঙ্গীকার বা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি এই বিষয়গুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে যাব। এ বিষয়ে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

– বাজেট / কনফিডেন্স ইস্যুজ।

– চার্টার এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ইস্যুজ। এই ভ্যালুজ এবং অধিকার সমূহের সঙ্গে বিসদৃশ বা অসঙ্গতিপূর্ণ কোন প্রস্তাবের পক্ষে আমি ভোট দিব না।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে যতক্ষন আমি সুসংগত থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই কখনো কখনো অন্যকোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা। সত্যিকার অর্থে, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সাংবিধানিক আইন এবং রাজনীতি বিষয়ে অধ্যয়ন করে আমি যা শিখেছি তাতে আমার কাছে মনে হয় যুক্তিসঙ্গত দ্বিমত পোষণ বা মতবিরোধ

আমাদের গণতন্ত্রের বুনিয়াদ। অধিকতর তৃণমূল পর্যায়ের গণতন্ত্র আমাদের সমাজের জন্য অধিক স্বাস্থ্যকর।

আমি গর্বিত লিবারেল পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে। তবে আমি অধিকতর গর্বিত বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক এলাকাকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে যেখানে আমার বেড়ে উঠা এবং যেখানে এখন আমি বাস করছি আমার স্ত্রী এ্যামি ও ছেলে ম্যাক্কিনলে-কে নিয়ে।

প্রশ্ন : আমরা জেনেছি আপনি একজন নিরামিষভোজী। এই নিরামিষভোজী হওয়ার পিছনে কি বিশেষ কোন কারণ আছে?

উত্তর : আমার মা আমাকে নিরামিষভোজী হিসাবে গড়ে তুলেছেন আমার শৈশব থেকেই। তিনি নিজেও তাই। উনার বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন থেকেই তিনি পশু ক্লেশ নিবারণের চিন্তা থেকে নিরামিষভোজী হয়ে উঠেন।

আমি কেন নিরামিষভোজী এ প্রশ্নের মুখোমুখি আমি সবসময়ই হই। স্কুলে আমার সহপাঠীরা আমাকে প্রশ্ন করতো, আমার বন্ধু-বান্ধবরাও জানতে চাইতো। সবারই কৌতুহল এ বিষয়ে।

আমার সোজা উত্তর, মাংস খাওয়ার প্রয়োজন নেই আমার। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিট প্রডাকশন বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। পশুদের প্রতি আমাদের মানবিক আচরণ করা উচিৎ। পরিবেশ রক্ষায় এবং স্বাস্থ্য রক্ষায়ও আমাদেরকে এ বিষয়ে চিন্তা করা উচিৎ।

এরকম চিন্তা থেকে আমি পরবর্তীতে কোন এনিমেল প্রোডাক্ট ব্যবহার করাও ছেড়ে দিয়েছি। যেটাকে অনেকে ভেগান (vegan) হিসাবে সঙ্গায়িত করে থাকেন। আমার স্ত্রীও একজন প্লান্ট-বেজড সেফ এবং নিউট্রিশন প্রফেসর। আমরা আমাদের এক বছর বয়সী ছেলেকেও ভেগান হিসাবে বড় করে তুলছি।

২০১৬ সালে আমি পার্লামেন্টে একটি বিল তুলেছিলাম যার মাধ্যমে আমাদের সমাজে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে সহায়তা করতে পারতো। আমি অবশ্য আমাকে এনিমেল এক্টিভিষ্ট হিসাবে বিবেচনা করিনা। তবে আমি পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্দের পক্ষে কাজ করে যাব এবং তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করার জন্য কাজ করে যাব যতদিন আমি পার্লামেন্টে আছি।

প্রশ্ন : আপনি গত বছর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন কনফারেন্সে যোগ দিতে। ঐ সফরে বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার কি অভিজ্ঞতা হলো?

উত্তর : বাংলাদেশে আমার ঐ সফরের সময়টা ছিল চমৎকার এবং অপূর্ব। আর কানাডা বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী ফ্রেন্ডশীপ গ্র“প এর চেয়াম্যান হিসাবে আমার ঐ সফরের বিশেষ তাৎপর্য ছিল।

বাংলাদেশ সফরকালে আমি বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিনিয়র এ্যাডভাইজার এইচ.টি. ইমাম সহ আরো কয়েকজন এমপি। আমি সাবেক প্রধান মন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছি। এছাড়াও আমি ইউএনডিপি এবং ব্রাক এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। দেখা করেছি স্থানীয় ব্যবসায়ী কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গেও।

আমার সুযোগ হয়েছিল জাতীয় শহীদ মিনারে যাওয়ারও। আমি বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামেও গিয়েছি। ঢাকা শহরটাও দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার ঐ সফরের সময়। দুই দেশের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আগামী বছর জানুয়ারীতে আবারো বাংলাদেশ সফরের প্রত্যাশা করছি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশী জনগণ কি বন্ধুভাবাপন্ন বলে মনে হয়েছে আপনার কাছে?

উত্তর : টরন্টোতে আমার রাইডিং এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যদের কাছে আমি যে অভ্যর্থনা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পেয়ে আসছি তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে, আমি বাংলাদেশ সফরে গিয়েও একই অভ্যর্থনা পাব। আমি বাংলাদেশ সফর কালে যেখানেই গিয়েছি সেখানেই আন্তরিক অভ্যর্থনা পেয়েছি। বাংলাদেশীদের আন্তরিক অভ্যর্থনা আমাকে এতটাই অভিভূত করেছে যে, আবারো সেই দেশটিতে যাবার জন্য আমার মন ব্যাকুল হয়ে আছে।

ঢাকায় জাতীয় সংসদ চত্বরে আমাদের কনফারেন্স এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেদিন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী। ভাষণের পর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দেয়া হয় সংসদ ভবন চত্বরে। মঞ্চের পিছনে ছিল সুদৃশ্য জাতীয় সংসদ ভবনের অতীব মনোরম দৃশ্যপট। সেদিন সেই সন্ধ্যায় গোটা অনুষ্ঠান ও পিছনের দৃশ্যপটটি ছিল অবিশ্বাস্যভাবে চিত্তাকর্ষক।

আমার কাছে এটি দেখে চমৎকার লাগছিল যে, ঢাকা কত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চারিদিকে শুধু ভবন আর ভবন। কিন্তু এই বৃদ্ধির চাপটা এসে পড়ছে শহরের অবকাঠামোর উপর। আমার অভিজ্ঞতায় এরকম ব্যাপক ট্রাফিক কখনো দেখিনি।

এর পরের বার বাংলাদেশ গেলে আমি ঢাকায় আরো কিছুটা বেশী সময় কাটাতে চেষ্টা করবো। তবে আমার ইচ্ছা আছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলো ঘুরে দেখারও।

প্রশ্ন : মিয়ানমারে সম্প্রতি পৈশাচিক ও নৃশংস গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে এবং প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ইউনাইটেড নেশনস এর হিউম্যান রাইটস প্রধান বলেছেন, মায়ানমারের বেসামরিক

নেত্রী অং সান সু চি ভবিষ্যতে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন। এদিকে সিটি অব অক্সফোর্ড সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সু চি -কে দেয়া তাদের পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

আমরা জানি, ইতি পূর্বে কানাডা অং সান সু চি -কে অনারারি সিটিজেনশীপ প্রদান করেছে। আপনি কি মনে করেন সু চি-র ঐ সিটিজেনশীপ বাতিল করে দেয়া উচিৎ কানাডার?

উত্তর : রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আমি শুরু থেকেই চাপ দিয়ে আসছি কানাডা কর্তৃক মানবিক সাহায্য প্রদানের জন্য। মায়ানমার সরকার প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ ছড়া করেছে। এত বড় একটি বোঝা বা দায়িত্ব একক ভাবে বাংলাদেশের উপর ছেড়ে দেয়া যায় না। বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও এগিয়ে আসতে হবে রোহিঙ্গাদের সাহায্যে।

আমরা জানি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কানাডার বিশেষ দূত সম্মানিত বর রে বলেছেন, অং সান সু চি-র অনারারি সিটিজেনশীপ বাতিল করাটা কেন্দ্রীয় ইস্যু নয়, আমাদেরকে নজর দিতে হবে অধিকতর বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে যা পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়তা করবে।

অং সান সু চি- কে দেয়া অনারারি সিটিজেনশীপ একটি সিম্বলিক বা প্রতীকী বিষয়। এর সঙ্গে কানাডার সিটিজেনশীপ এর যে অধিকার এবং সুযোগ তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে এই অনারারি সিটিজেনশীপের যে সন্মান সেটি এমন কাউকে দেয়া উচিৎ নয় যিনি কোন নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত যেমনটা  মায়ানমারের নেত্রী সু চি। সে কারণে, বিষয়টি যদি আমার হাতে ন্যাস্ত করা হতো তবে আমি সু চি-কে দেয়া সম্মান সূচক সিটিজেনশীপ বাতিল করে দিতাম।

প্রশ্ন : সম্প্রতি ‘বিচ মেট্রো’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আপনি লিখেছেন, “ইসলামোফোবিয়া আমাদের সমাজে একটি সত্যিকারের চলমান ঘটনা। কুইবেক সিটিতে মুসলিমদের উপর যে আঘাত হানা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে আমাদেরকে মুসলিম-কানাডিয়ানদের পাশে দাড়াতে হবে, তাদের সহমর্মী হতে হবে।”

আমরা জানি কানাডায় Soldiers of Odin, La Meute সহ আরো কিছু চরমপন্থী গ্র“প সক্রিয় যারা ইমিগ্রেন্ট বিরোধী এবং বিশেষ করে মুসলিম বিরোধী। এই চরমপন্থী গ্র“পগুলোর বিষয়ে আপনার কি অভিমত এবং কানাডায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কি করা উচিত?

উত্তর : আমাদের যে বিষয়টি প্রয়োজন তা হলো, কানাডায় ডাইভার্সিটিকে ধরে রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আর আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোরর নেতৃত্বে আমাদের এই সরকারের একটি বড় শক্তি হলো এই ডাইভার্সিটি।

এখানে আমাদের নেয়া কয়েকটি পদক্ষেপের বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই :

আমি র্পালামেন্টে ‘motion against Islamophobia ’  এর পক্ষে সমর্থন দেই। এ ছাড়াও আমি অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছি। আমাদের সরকার এ বিষয়ে সম্ভাব্য কি পদক্ষেপ নিতে পারে সে বিষয়ে আমাদের হেরিটেজ কমিটি ইন-ডেপ্থ স্টাডি করছে। আমি অপেক্ষা করছি ফাইনাল রিপোর্টটি দেখে তা রিভিউ করার জন্য।

আমাদের সরকার ইমিগ্রেশন এর আবশ্যকতা সমর্থন করে। এই সরকার বিল সি-৬ পাস করিয়েছে যা দুই স্তরের নাগরিকত্বকে (সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন) প্রতিহত করেছে। এছাড়াও বিল সি-৫৯ উপস্থাপন করেছ যা সিভিল লিবার্টিজ প্রটেকশন করবে এবং সাবেক সরকারের করে যাওয়া এন্টি টেরর বিল সি-৫১ এর অনেক সমস্যা দূর করবে।

যখন আমাদের এলাকায় বর্ণবাদী ও যৌন বিষয়ক একটি নিউজপেপার বিলি হচ্ছিল তখন আমি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনি। তারা নিশ্চিত করেছে যে, কানাডা পোস্ট এই পত্রিকাটি বিলি করা থেকে বিরত থাকবে।

যখন কুইবেক সিটিতে অবস্থিত মসজিদে হামলা হলো তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে দাড়িয়ে এর তীব্র নিন্দা করেন। ঐ সময় আমিও স্থানীয় এক  মসজিদে গিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি এই ধরণের হামলার বিরুদ্ধে।

অতিতে যারা বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কানাডায় তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতায় আসার পর। এদের মধ্যে আছেন এক দল ভারতীয় শিখ, মুসলিম ও হিন্দু যারা শতাধিক বছর আগে (১৯১৪) জাহাজে চড়ে কানাডার ভেঙ্গুভারে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। (সেদিন তাদের সবাইকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। মাত্র ২৪ জনকে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে বাকি ৩৫২জনকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল সমুদ্রে। এরা যখন ভারতে ফিরে যান তখন সেই সময়কার ইংরেজ শাসকদের একটি গানবোট তাদেরকে সমুদ্র উপকুলে আটক করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে গেলে পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হন। বাকী সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল )

প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন LGBTQ2 (people who identify as lesbian, gay, bisexual, transgender, queer/questioning or two-spirited.) কমিউনিটির কাছেও  যারা অতীতে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

আমরা কানাডার আদীবাসী জনগোষ্ঠির জন্য ক্ষতিপূরণ এর ব্যবস্থাও করছি যারা ধারাবাহিকভাবে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

এই সবই করা হচ্ছে একটি বৃহৎ প্রকল্পের অংশ হিসাবে যার মূল উদ্দেশ্য হলো, সকল সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও সমতা নিশ্চিত করণ।

আমরা কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিভিন্ন মাল্টিকালচারাল ইভেন্টে ফান্ড প্রদানের ব্যবস্থাও করেছি। টরন্টোর বাঙ্গালী অধ্যুষিত ডেন্টোনিয়া পার্কে গত বছর আগস্ট মাসে বাংলাদেশীদের উদ্যোগে আয়োজিত এরকম একটি অনুষ্ঠানেও আমরা ফান্ড প্রদানের ব্যবস্থা করেছি সরকারের পক্ষ থেকে। কানাডায় আমাদের উচিৎ প্রতি বছরই এই মাল্টিকালচারলইজম ও ডাইভার্সিটি উদযাপন করা যাতে করে আমাদের পরবর্তী জেনারেশন এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

প্রশ্ন : বর্তমানে কানাডায় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি, এমপিপি ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য। এই ধারায় সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন হলো এনডিপি’র নেতা জাগমিত সিং। কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসাবে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনি এসেছেন ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“প থেকে। কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্যদের এই যে উপস্থিতি- এই বিষয়টাকে আপনি কি ভাবে মূল্যায়ন করেন?

উত্তর : এটি নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ যে এনডিপি’র নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“প থেকে। পাশাপাশি এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে গ্রীন পার্টির নেতা একজন নারী।

এটা আরো ভাল যে, পার্লামেন্টে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্যদের এই উপস্থিতি নিবিরভাবে প্রতিফলন ঘটাচ্ছে তাদের সমানুপাতিক অংশের। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার মন্ত্রী সভায় বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের এমপিদেরকে একত্রিত করেছেন এবং জেন্ডার ইকুয়ালিটি বজায় রাখার জন্য সেখানে সমান সংখ্যাক নারী পুরুষের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

প্রশ্ন : সম্প্রতি আপনি টরন্টো এলাকার সেরা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ‘NOW’ ম্যাগাজিনের পাঠক জরীপে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

উত্তর : আমি এই স্বীকৃতির জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাব আমাদের কমিউনিটিকে এবং আমাদের এই টরন্টো সিটিকে যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।