কানাডায় অভিবাসী নারীদের আয় কম চাকরি পাওয়াও অনেক কঠিন

জুন ৩, ২০১৮

অভিবাসী নারীদেরকে চাকরি পেতে নিদারুণ বাধাবিপত্তি পোহাতে হয়। চাকরী পেলেও তাদের আয় কম। ছবি : সেন্টার ফর নিউ কামার্স

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার অভিবাসী নারীদেরকে চাকরি পেতে নিদারুণ বাধাবিপত্তি পোহাতে হয়। শুধু তাই নয়, তারা অভিবাসী পুরুষ এবং কানাডায় জন্মগ্রহণকারী নারী উভয়ের চেয়ে কম অর্থ আয় করেন। অভিবাসন বিভাগের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তে এমনটাই জানা গেছে। খবর দ্য কানাডিয়ান প্রেস এর।
অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন আইনের আওতায় দ্য কানাডিয়ান প্রেসের হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, কানাডায় নতুন আসা কিংবা প্রতিষ্ঠিত উভয় ধরণের অভিবাসী নারীর ক্ষেত্রেই কানাডায় জন্মানো নারীদের সঙ্গে এক ধরণের স্থায়ী ব্যবধান রয়ে গেছে।
তথ্যে জানা যায়, ভাগ্যান্বেষণে, উদ্বাস্তু হিসাবে বা অন্য কোনও ক্যাটাগরিতে আসা অভিবাসীদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী হিসাবে নারীদের বেশি সংখ্যায় কানাডায় আসার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির সুযোগ কমে যাচ্ছে এবং গড় বেতনের চেয়েও তারা কম অর্থ আয় করছেন।
সরকারের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই বাস্তবতা থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, অভিবাসন কর্মসূচিগুলোতে মনোনয়নের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো নারী অভিবাসীদের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন সর্বোচ্চে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়নি।
রিপোর্টে সরকারের অভ্যন্তরীণ উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ইকোনোমিক-ক্লাস, ফ্যামিলি-ক্লাস বা উদ্বাস্তুর ঢলসহ সব ধরণের উৎস থেকে আসা অভিবাসীদের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে ওই উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
এতে বলা হয়েছে যে, নবাগত নারীদের জন্য শ্রমবাজারে একাত্ম হওয়া দিনে দিনে কঠিনতর হয়ে উঠছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, “সদ্য আসা, সাম্প্রতিক সময়ে আসা এবং প্রতিষ্ঠিত নারী অভিবাসীদের ক্ষেত্রে তাদের কানাডীয় বংশোদ্ভূত প্রতিপক্ষের সঙ্গে একটি স্থায়ী ব্যবধান রয়ে গেছে যা পুরুষ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে সেভাবে নেই।”
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অভিবাসীর সন্তানদের চাকরি পাবার ক্ষেত্রেও একই ধরণের বাধা রয়েছে বিশেষ করে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু অভিবাসীর সন্তানদের ক্ষেত্রে। এমনকি ওইসব সন্তানেরা কানাডায়-জন্মানো শিশুদের চেয়ে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে থাকলেও তারা এই বৈষম্যের শিকার হয়। প্রায় সব দৃশ্যমান অভিবাসীর সন্তানই তাদের কানাডায় জন্মানো সহপাঠীদের চেয়ে কম আয়-রোজগার করে।
অন্টারিওর কিচেনার ওয়াইএমসিএ’র অভিবাসন সার্ভিসের জেনারেল ম্যানেজার প্যারি কারেম নবাগত তরুণ ও নারীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন।
তিনি বলেন, তিনি দেখেছেন যে, মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেও অভিবাসীর সন্তানদের জন্য ভালো চাকরি পাওয়া কত কষ্টের। তার মতে, অংশত এর কারণ হলো মানুষের সঙ্গে তাদের বাবা-মার যোগাযোগের অভাব।
কারেম বলেন, কিছু মক্কেল তাকে বলেছেন যে, তাদের জাতিগত পরিচয়ের কারণে অনেক চাকরিদাতা তাদেরকে চাকরি দেন না। আর এটা হলো কিছু চাকরিদাতার মনে বিরাজিত “গোপন বর্ণবাদ”।
এই মহিলা জেনারেল ম্যানেজার বলেন, “তারা এই দেশে শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন করেছে নিছক এইটুকুই তাদের ব্যাপারে কিছু চাকরিদাতার কিছু ধরাবাধা বিচারবোধকে দূর করতে পারে না, যেমন তাদের নাম, তাদের দৃশ্যমান সংখ্যালঘুর পরিচয় ইত্যাদি। আর এসব দুর্ভাগ্যজনক।”
তবে কারেন বিশ^াস করেন যে, নারীদের কাজ করা এবং স্বল্প আয় করার বিষয়টি যখন সামনে আসে তখন বিষয়টি আরও বেশি জটিল।
অনেক অভিবাসী নারী এমন সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে আসেন যাদের বেড়ে ওঠা এমন সমাজে যেখানে নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির অথবা সন্তান লালন পালনের ভূমিকা পালন করবে এমনটাই ধরে
নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “একজন নারী হিসাবে আমি যদি মনে করি যে, ঘরে থাকা এবং সন্তানের লালন-পালনই আমার কাজ তাহলে নারীর জন্য যত কর্মসূচিই থাকুক না কেন তাতে কোনওই লাভ নেই। কারণ, আমি সেগুলো গ্রহণ করতে যাবো না।”
তিনি অভিমত প্রকাশ করেন যে, অভিবাসী নারীদের বরং তাদের পারিবারিক জীবন ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনার ব্যাপারে ভালোভাবে শিক্ষা দেওয়া দরকার।
অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হুসেইন কর্মসংস্থান ও বেতনের মধ্যে ব্যবধান থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, অভিবাসী নারী ও শিশুদের জন্য চাকরির সুযোগ বাড়ানোর জন্য সরকার এক ধরণের বন্দোবস্তের কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।
হুসেইন বলেন, “আমরা অবশ্যই এটা চাই যে সব নবাগতই যত দ্রুত সম্ভব কানাডায় তাদের সফল জীবন শুরু করুক এবং সাফল্যের সঙ্গে এদেশের জন্য বিনিময় দিতে সক্ষম হোক।”