অর্ধশত বছর ধরে বাংলাদেশী কমিউনিটি অন্টারিও’র উন্নয়নে অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে : ডেল ডুকা

কানাডা বাংলাদেশে চেম্বার অব কমার্স এর গালা ডিনার পার্টি অনুষ্ঠিত

মার্চ ১৮, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ রিপোর্ট : গত অর্ধশত বছর ধরে অন্টারিওর বাংলাদেশী কমিউনিটি এই প্রভিন্সের উন্নয়নে অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের অন্টারিও আজ একটি ধনী প্রভিন্স। এবং সার্বিক অর্থে এর পিছনে অবদান রয়েছে বাংলাদেশীদেরও।
গত ১৬ মার্চ টরন্টোর উত্তরে অবস্থিত মার্কহাম সিটির এ্যাডওয়ার্ড হোটেলের বিশাল পার্টিরূমে অনুষ্ঠিত কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর গালা ডিনার অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অন্টারিও’র Ministry of Economic and Growth এর মন্ত্রী ও ভন এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপিপি স্টিভেন ডেল ডুকা। মন্ত্রী ডেল ডুকা গালা ডিনার পার্টিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পরিবেশিত হয় কানাডা ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।
গালা ডিনার পার্টিতে মন্ত্রী ডেল ডুকা আরো বলেন, আমি খুবই শিহরিত এবং রোমাঞ্চিত আজ আপনাদের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে। এখানে এই কক্ষে আমি চমকপ্রদ একদল উদ্যোগী ও কঠোর পরিশ্রমি ব্যবসায়ীকে দেখতে পাচ্ছি যারা নিরবচ্ছিন্ন প্ররিশ্রম করে যাচ্ছেন। অন্টারিও’র Ministry of Economic and Growth  এর মন্ত্রী ও ভন এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপিপি হিসাবে আজ এখানে আসতে পারায় আমি আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
মন্ত্রী বলেন, গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশী কমিউনিটি আমাদের অন্টারিও’র উন্নয়নে অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারা এই পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের ব্যবসায়ীক উদ্যোগ এর মাধ্যমে, তাদের চাকরীর মাধ্যমে এবং তাদের স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে। বিজ্ঞান, শিল্পকর্ম, খেলাধূলা, সাংবাদিকতা ইত্যাদির মাধ্যমে এখানে বাংলাদেশী কমিউনিটি তাদের অবদান রেখে চলছে। আমাদের অন্টারিও আজ একটি ধনী এলাকা। এবং সার্বিক অর্থে এই সাফল্যের পিছনে অবদান রয়েছে আপনাদেরও।
মন্ত্রী বলেন, আপনাদের অবদানের কথা মনে রেখে ২০১৬ সালে অন্টারিও সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাস মার্চ মাসকে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ মান্থ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। অন্টারিওতে আমাদের মাল্টিকালচারাল সোসাইটিতে বাংলাদেশী কমিউনিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তিনি আরো বলেন, অন্টারিও’র Ministry of Economic and Growth এর মন্ত্রী হিসাবে এখানকার বিভিন্ন এলাকায় যাবার সুযোগ হয় আমার। আমি আমার ঐ সকল সফরকালে অর্থনীতিতে অন্টারিওর সাফল্যের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় গত প্রায় এক দশক আগে বিশ্বব্যাপী যখন মন্দা শুরু হয়েছিল তখন অন্টারিও প্রায় আট লক্ষ নতুন জব ক্রিয়েট করেছিল। বর্তমানে অন্টারিওতে বেকারত্বের হার কানাডার জাতীয় হারের চেয়ে কম। এই পরিস্থিতি গত ৩৪ মাস ধরেই অব্যাহত রয়েছে।
ডেল ডুকা বলেন, অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে এটি সরকারের সাফল্য। আমি বলবো, না, সরকারের নয়। অন্টারিওতে সার্বিকভাবে এই সাফল্য বাস্তবিক অর্থে অন্টারিওর সকল ব্যবসায়ীদের যাদের মধ্যে আপনারাও আছেন। আপনাদের কঠোর পরিশ্রম এবং অক্লান্ত চেষ্টার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আপনাদের এই অবদানের সুফল ভোগ করছে এখানকার হাসাপাতাল, স্কুল এবং পরিকাঠামো। এই জন্য আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অন্টারিও একটি দারুন জায়গা পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করার জন্য, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাদানের জন্য এবং চাকরী বা ব্যবসা করার জন্য। এর প্রমাণ আজকে এই কক্ষেই আমি দেখতে পাচ্ছি। তবে আমাদেরকে আরো কাজ করতে হবে আমাদের এই প্রভিন্সকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য।
আমরা সবসময়ই পাশে আছি অন্টারিওর ব্যবসায়ীদের পাশে এবং একই সঙ্গে এখানকার শ্রমজীবী মানুষের পাশে।
অন্টারিও সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাজমুল হক মনা। গালা ডিনার পার্টির আয়োজন ও সফল করার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
চেম্বারের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আরিফ রহমান বলেন, অদূর ভবিষ্যতে টরন্টোতে কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কামার্সের উদ্যোগে একটি ট্রেড শো করার পরিকল্পনা রয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মন্ত্রী ডেল ডুকা-কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ঐ ট্রেড শো’র আয়োজন ও বাস্তবায়নে আমরা আপনার সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট (ফাউন্ডার) রেজাউর রহমান চেম্বারের অতীত কর্মকান্ডের কিছু স্মৃতি তুলে ধরেন। বর্তমানে এই চেম্বার কি ভাবে কাজ করছে সেই বিষয়েও তিনি কিছুটা আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানে কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারী (কমার্স) মো. সাকিল মাহমুদ সহ আরো কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
গালা ডিনার অনুষ্ঠানে টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও প্রফেশনাল উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ।
কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালকদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন- নাসির কাশেম, সবুর শিকদার, হেলাল খান, তানভির সিদ্দীকি, আনোয়ার আজাদ, জাহিদুল খান এবং আবু শামীম আরিফ।

অনুষ্ঠানে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (CBCC) এর পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। CBCC Business Excellency Award 2018 পান এম কবির গ্রুপ কর্পোরেশন এর মোহাম্মদ কবির উদ্দিন । জনাব কবির এর প্রতিষ্ঠানে শতাধিক ফুলটাইম কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও প্রতি বছর তিনি ৫ থেকে ১০টি প্রজেক্ট এ অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ দেন। উল্লেখ্য যে, মোহাম্মদ কবির উদ্দিন গালা ডিনার পার্টির প্রাইম স্পন্সর ছিলেন।
CBCC Business Award 2018 পান মর্টগেজ ব্যবসায়ী আসাবউদ্দিন খান (আসাদ)। জনাব আসাদ গত ১৫ বছর ধরে কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বড় মাপের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। তিনি কমিউনিটির সদস্যদেরকে আর্থিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
এছাড়াও আরো যারা এওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট পান তাদের মধ্যে আছেন: আলী আহমেদ, পারভেজ আহমেদ (মুহিদ), মনির ইসলাম, মিসেস মাহবুবা খান (ঘরোয়া), নাঈমা এন রহমান, রাসেল রহমান, সনি মীর ও আনোয়ার কবীর।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টস এসোসিয়েশন (BGMEA)এর সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব আতিকুল ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার ( ভিডিওতে ধারণকৃত) প্রচারিত হয়।
গালা ডিনার ইভেন্টের চেয়াম্যান ও হোস্ট এর দায়িত্ব পালন করেন কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক তানভির সিদ্দীকি। গালা ডিনার পার্টিতে মাস্টার অব সেরিমনি ছিলেন তাজরীন কাশেম।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদেরকে নৈশ ভোজে আপ্যায়ন করা হয়।