অভিবাসন বিভাগ দম্পতিদের স্পন্সর করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে

মার্চ ১৩, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ : বিগত বছরে বিদেশে অবস্থানরত জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কানাডীয়দের মিলন ঘটিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেমের দেবীর ভূমিকায় ইমিগ্রেশন কানাডা কঠোর পরিশ্রম করেছে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে মিসিসগার একটি ডেজার্ট শপে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হুসেন দম্পতিদের স্পন্সরশিপের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে তার দফতরের অর্জিত নাটকীয় অগ্রগতির সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেন।

হুসেনের তথ্য অনুযায়ী, স্বামী বা স্ত্রীকে কানাডায় নিয়ে আসার জন্য আবেদনের সংখ্যা এক বছর আগের ৭৪,৯০০ থেকে কমে এখন মাত্র ১৫,০০০-এ নেমে এসেছে। আর এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণের সময় গড়ে ২৬ মাস থেকে কমে ১২ মাসে নেমে এসেছে। খবর টরন্টো স্টার এর।

হুসেন বলেন, “কানাডা সরকার পরিবারের একত্রীকরণের বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। দম্পতির পুনর্মিলন কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা উপলব্ধি করি। এটি কানাডাকে শক্তিশালী করে।” তিনি বলেন, “কানাডার কোনও নাগরিক বিদেশের কাউকে বিয়ে করলে তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে অভিবাসী হয়ে আসার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে বা অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাতে হবে না।”

কানাডার কোনও নাগরিক বিদেশের কাউকে বিয়ে করলে তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে অভিবাসী হয়ে আসার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে না। ছবি : অনলাইন

মন্ত্রী এই সাফল্যের জন্য “ফ্যামিলি ক্লাস টাইগার টিম” নামে পরিচিত একটি বিশেষ কর্মী দলের প্রশংসা করেন। ২০১৬ সালের বসন্তে এই দলটি গঠন করা হয়। তাদেরকে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে আগ্রহীদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময়সীমা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি উদ্ভাবনীমূলক পদ্ধতি এবং আবেদনের মাধ্যমগুলোর পুনর্বিন্যাস ও একটি কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিশেষ ওই দলটি গ্রাহকের অভিজ্ঞতার উন্নয়ন এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় দ্রুততর করার লক্ষ্যে স্বামী/স্ত্রী বা সঙ্গীর আবেদনের ফরম, নির্দেশনা, ওয়েবসাইট, উপায়-উপকরণ ও প্রক্রিয়াগুলো পুনর্বিবেচনা করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দলটির কার্যক্রম শেষ হয়।

তখন থেকে অভিবাসন বিভাগে দম্পতিদের আবেদনের প্রক্রিয়া পাল্টানো হয়। সে সময় হুসেনের পূর্বসূরি জন ম্যাক্কালাম ঘোষণা করেন যে, সরকার দম্পতিদের স্পন্সরশিপের মামলা ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনতে এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় ১২ মাসে নামিয়ে আনতে চায়। ওই ঘোষণার পর আবেদনের জন্য ব্যবহৃত ফরম ও অন্যান্য উপকরণের সংখ্যা আগের ১৪টি থেকে কমিয়ে চারটিতে নির্ধারণ করা হয়।

গত বুধবার অভিবাসন বিভাগ বলেছে, প্রক্রিয়াটি আগামী মাসের মধ্যে আরও সহজ করা হবে।

আগামী ১৫ মার্চ থেকে এই নতুন পদ্ধতি চালু হলে দম্পতিদের আবেদনের ক্ষেত্রে তাদের আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া এবং অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়ানোর জন্য প্রাথমিক আবেদন প্যাকেজের অংশ হিসাবে তাদের ব্রাকগ্রাউন্ড ফরম এবং পুলিশ সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হবে যা আগের নিয়মে পরে দিতে হতো।

দম্পতিদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণে সরকারের এসব পদক্ষেপ অনেককেই বিস্মিত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীন অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী লোরনে ওয়াল্ডম্যান।

টরন্টো স্টারকে তিনি বলেন, “আমার অভিজ্ঞতায় আবেদনের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে কিন্তু নম্বরের হিসাবে সেটি উল্লেখযোগ্য নয়।” তিনি বলেন, “আমি সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান নই, কিন্তু এখনও এমন অনেক আবেদন রয়েছে যেগুলোর প্রক্রিয়াকরণে দীর্ঘ সময় লাগছে এবং সেগুলোর নিষ্পত্তি অনেকটাই অভিবাসন দফতরের ওপর নির্ভর করছে।”

অভিবাসন দফতরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, হাইতি, মেক্সিকো, পাকিস্তান, কাতার এবং শ্রীলঙ্কার মতো বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব আবেদন আসে সেগুলোর প্রক্রিয়াকরণে এখনও ১৪ থেকে ১৯ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে যেটা বিশে^র অন্যান্য দেশের গড় অপেক্ষার সময় অর্থাৎ ১২ মাসের চেয়ে বেশি।

ভ্যাঙ্কুভারের অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী স্টিভেন মিউরেন্স বলেন, প্রক্রিয়াকরণের সময়সীমা কমিয়ে আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো স্পন্সরের মাধ্যমে এদেশে আসা স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের বার্ষিক কোটা বৃদ্ধি পাওয়া। এর ফলে আরও বেশি আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

অটোয়া অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর স্পন্সরের মাধ্যমে আসা স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানের বার্ষিক কোটা এক-তৃতীয়াংশ বাড়িয়ে ৬৪,০০০ হাজারে উন্নীত করেছে যা ২০১৪ সালে ছিলো ৪৮,০০০। চলতি বছরের জন্য এই কোটা আরও বেশি এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর এই শ্রেণিতে ৭০,০০০ হাজার করে অভিবাসী আসতে পারবে।

মিউরেন্স উল্ল্লেখ করেন যে, লিবারেল সরকার অভিবাসী আগমনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে, এর ফলে তাদের এক বছরে প্রক্রিয়াকরণ করা আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে, অর্থাৎ প্রক্রিয়াকরণ দ্রুততর হয়েছে।

ওয়াল্ডম্যান জানান, আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সরকারি সময়সীমায় সেইসব আবেদনের বিষয়টি হিসাবে ধরা হয়নি যেগুলো অসম্পূর্ণ বিবেচনায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, “আমার মক্কেল একটি স্পন্সরশিপ পাঠালে কিছু কর্মকর্তা ভুল করে সেটিকে অসম্পূর্ণ বলে সিদ্ধান্ত নেন এবং ফেরত পাঠান। এর ফলে আবেদন প্রক্রিয়াকরণে অতিরিক্ত তিন মাস বা তার বেশি সময় লেগে যায় অথচ এটি সরকারের হিসাবে আসে না।” তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অসংখ্য আবেদন আছে যেগুলোকে ভুল করে অসম্পূর্ণ বলে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর ফলে আমাদের অনেক মক্কেলকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।”