অন্টারিওতে বেসিক ইনকাম পাইলট প্রজেক্ট ঘনিষ্ঠ নজরদারিতে

জানুয়ারী ৬, ২০১৮

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : হ্যামিলটনÑ সাবেক নিরাপত্তা প্রহরি টিম বাটন ভাবছিলেন, একটি সামাজিক পরীক্ষা থেকে অস্বাভাবিকভাবে আয়-রোজগার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কীভাবে তার জীবন পাল্টে গিয়েছিল।

টিম হর্টনস ডোনাট শপে কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে বাটন বলছিলেন যে তিনি একটি ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ায় কাজ করতে অসমর্থ ছিলেন। পরে অন্টারিওর নতুন ‘বেসিক ইনকাম’ কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা পাওয়ায় তিনি বহু বছর পর প্রথমবারের মত ক্রিসমাসে বহু দূরে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করতে পেরেছিলেন। ওই সহায়তা পেয়ে তিনি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার, বহুদিন ধরে ফেলে রাখা দাঁতের চিকিৎসা করানোর এবং নিজ কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য সহায়ক একটি কোর্স করার বিষয়ে ভাবারও সুযোগ পান।

বাটন গত অক্টোবরে অন্টারিও সরকারের কাছ থেকে তার আয়ের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি মাসিক সুবিধা লাভ করছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি আমার জন্য একটি বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে।”

‘বেসিক ইনকাম’ কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা পাওয়ায় টিম বাটন বহু বছর পর প্রথমবারের মত ক্রিসমাসে বহু দূরে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করতে পেরেছিলেন। ছবি : এপি

অন্টারিও সরকার তিনটি কমিউনিটির চার হাজার লোককে মূল আয় (basic income) দেওয়ার চিন্তা করছে। এটা করা হচ্ছে একটি পরীক্ষার অংশ হিসাবে। সেটা হলো, সরকারি সহায়তার অংশ হিসাবে অথবা দরিদ্র লোকেদের অধিকতর অর্থ দেওয়া হলে তা তাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা এনে দিতে পারে কি না তার মূল্যায়ন করা। বাটনের মত লোকেরা পরবর্তী তিন বছর ধরে এই সহায়তা পেলে কী ধরণের সাড়া দেন সেটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন কানাডা ও বিশে^র অন্যান্য স্থানের সামাজিক বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও নীতি-নির্ধারকরা।

এই পাইলট প্রকল্পের জন্য অন্টারিও সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শকের দায়িত্ব পালনকারী কানাডার সাবেক সিনেটর হাফ সেগাল বলেন, আমরা দেখতে চাই, “এই সহায়তা কী শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অধিকতর ভালো সুফল বয়ে আনতে পারে? তিন বছর ধরে এমন জীবনযাপনের ফলে এটি কি স্বাস্থ্যগত উন্নততর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে? কাজের ক্ষেত্রে যদি প্রণোদনার পরিপন্থী কিছু না ঘটে তাহলে এই সহায়তার কারণে কর্মস্থলের প্রতি অধিকতর অনুরাগের জন্ম দিতে পারে?”

এই প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পাবার যোগ্য ব্যক্তিরা হলো ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী বেকার অথবা ৩৪,০০০ ডলারের নিচে আয় করেন অথবা যদি দম্পতি হন তাহলে তাদের আয় যদি ৪৮,০০০ ডলারের কম হয় এবং তারা যদি প্রকল্পের আওতাধীন নির্দিষ্ট কোনও এলাকার বাসিন্দা হন।  প্রকল্পের আওতায় একক ব্যক্তি সর্বোচ্চ মূল বেতন হিসাবে ১৭.০০০ ডলার করে পাবেন এবং নিজের আয়ের অর্ধেকটা নিজের জন্য রাখতে পারবেন। দম্পতিরা পাবেন সর্বোচ্চ ২৪,০০০ ডলার করে।

ফিনল্যান্ডও একই ধরণের একটি পরীক্ষা চালাচ্ছে। তারা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বাছাই করা ২০০০ লোকের মধ্যে অর্থ বিতরণ করছে। এই কর্মসূুচি থেকে ফিনল্যান্ড জানতে আগ্রহী যে, পরিবর্তনশীল কর্মক্ষেত্র, জনগণকে কাজ করতে উৎসাহিত করা এবং সুযোগ-সুবিধার আমলাতন্ত্রের সহজীকরণের ক্ষেত্রে দেশটি কীভাবে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে পারে। কালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডেও অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে এধরণের পদ্ধতির পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

একজন শ্রম আইনজীবী ডেভিড ওয়েকলি বলেন, এটি একটি বিরাট ধারণা বলেই মনে হয়, কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে এটির প্রচলন কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি না যে, এটা সাশ্রয়ী কোনও বিষয়। যত মানুষকে এ ধরণের সহায়তা দিতে হবে তাদের সংখ্যা এত বেশি যে তা কোনওভাবেই সামাল দেওয়ার মত নয়। এতে যে ব্যয় হবে সেটাও বিশাল। এটি একটি বিরাট ব্যাপার।”

ওয়েকলি মনে করেন, এ ধরণের সহায়তা দেওয়া হলে তা লোকেদের মধ্যে কাজের প্রতি অনীহার জন্ম দেবে। অন্য সমালোচকেরা বলেন, এটি কোনও অর্থবহ পরিবর্তনের সূচনা করবে না, বরং কার্যত অন্যান্য সুবিধা কর্তনের পটভূমি হিসাবে কাজ করবে।

অন্টারিওতে এই কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা দেখেছেন যে, কিছু লোক এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে অনিচ্ছুক। কারণ তারা আশঙ্কা করে যে এর পেছনে কোনও গোপন ফাঁদ থাকতে পারে অথবা যখন এই মঞ্জুরির অবসান ঘটবে তখন তাদের বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। গত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত মোট ৭৯৩ জন মানুষ এই পাইলট প্রজেক্টে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যা গত অক্টোবরের চেয়ে বেশি। অক্টোবরে চার ’শ জন এই প্রজেক্টে তালিকাভুক্ত হয়। এই সহায়তা তাদের জীবনে সত্যিকারের কোনও পরিবর্তন আনছে কি না তার পরিমাপ করার সময় এখনও আসেনি।

হ্যামিলটনে ৪৬ বছর বয়সী ডেভ চার্কিউইস্কি বলেন, তিনি মাসে যে সাড়ে সাত শ’ ডলার করে পাচ্ছেন সেটি তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা এবং মানসিক অসুস্থতাজনিত চাপ সহজতর করেছে। মানসিক অসুস্থতার কারণে ২০০২ সাল থেকে তিনি চাকরি করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, “১৪ বছর ধরে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসের পর এখন তিনি যেমন আছেন এতটা ভালো আগে কখনও ছিলেন না।

চার্কিউইস্কি এখন তার চাকরিতে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন যেখানে তার কাজ হলো মানসিক নানা জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া।

তিনি বলছিলেন, “মূল বেতনটা পাওয়ার ফলে আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হবো এবং এটি বাস্তবে রূপ নেবে কারণ এই লক্ষ্যে আমি আমার সমস্ত প্রয়াস কেন্দ্রীভূত করতে পারছি কোনওরকম উদ্বেগ ছাড়াই। আমাকে ৫২০ ডলার বাড়িভাড়া দিতে হয়, ৫০ ডলার সেলফোনের পেছনে ব্যয় হয় এবং খাওয়া খরচ ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় রয়েছে।”

৪৪ বছর বয়সী তিন সন্তানের মা জোডি ডিন তার মূল বেতন পেয়েছেন গত অক্টোবরে। তার বড় মেয়ে ম্যাডিসন মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগে গুরুতর অসুস্থ। তিনি বলেন, “বাড়তি অর্থ তার খাবারের অভাব মিটিয়েছে, ফলে তার পরিবার শ^াস ফেলার ফুরসৎ পেয়েছে।”

টিম বাটন অবশ্য তার অভাবনীয় দৈবধন প্রাপ্তির বিষয়টির সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধনে সমস্যার কথাও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এই অর্থ প্রাপ্তির পর থেকেই আমি উদ্বেগে ভুগছি, আমার মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু আমি সেটা বলতে ভীত নই।”

তবে বাটন এটাও বলেন যে, প্রথম চেক পাবার পর থেকে তিনি আর তার ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে বিষণœ মনে বসে থাকেন না।

তিনি বলেন, “এটি আমাকে বিষণœতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমি নিজেকে অনেক বেশি সামাজিক মানুষ বলে বোধ করছি।”