রহিত হলো দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণের আইন
বিল সি-৬ এবার রাজ সম্মতিও পেল, পরিনত হল আইনে
জুলাই ৮, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের করে যাওয়া ইমিগ্রেশন আইন ‘বিল সি-২৪’ এর বেশ কিছু বিতর্কিত ধারা সংশোধন করার জন্য লিবারেল সরকার ‘বিল সি-৬’ নামের যে বিল সংসদে পেশ করেছিল তা অবশেষে রাজ সম্মতিও পেল গত ১৯ জুন। এর আগে গত ১৫ জুন বিলটি সিনেটেও পাশ হয় ৫১-২৯ ভোটে।
অবিলম্বে কার্যকর হবে যে ধারাগুলো
বিল সি-৬ রাজ সন্মতি পাওয়ায় এখন অবিলম্বে কার্যকর করা হবে যে ধারাগুলো তার মধ্য আছে, কানাডায় দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণ করা যাবে না যদি সেই ব্যক্তি কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয় বা কানাডার জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয়। কারো বিরুদ্ধে এই জাতীয় অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে কানাডার প্রচলিত আইনেই তার বিচার করা হবে যেমনটি করা হয় কানাডার অন্যন্য নাগরিকদের বেলায়।
বিল সি-৬ আইনে পরিনত হওয়ায় এখন থেকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদেরকে এই মর্মে ঘোষণা দিতে হবে না যে তারা কানাডায়ই বাস করবে। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তারা চাকুরী বা অন্য কোন ব্যক্তিগত কারণে কানাডার বাইরে বাস করতে পারবে যদি তারা চায়।
বিল সি-৬ এর যে ধারাগুলো আগামী ফল সিজনে কার্যকর হবে
নাগরিকত্ব লাভের জন্য কতদিন কানাডায় শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে সে বিষয়েও নতুন আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাবেক কনজারভেটিভ সরকার আইন করে গিয়েছিল কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে ইমিগ্রেন্টদেরকে ৬ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৪ বছর কানাডায় বাস করতে হবে। তারও আগে নিয়ম ছিল ৪ বছরের মধ্যে তিন বছর কানাডায় থাকতে হবে। লিবারেল সরকার এখন বিল সি-৬ এ নিয়ম করেছে ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩ বছর কানাডায় বাস করতে হবে সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করার আগে। তাছাড়া পার্মান্টে রেসিডেন্সী পাওয়ার আগের সময়টাও কাউন্ট করা হবে যারা ঐ সময়টা কানাডায় অবস্থান করছিলেন। তবে সেই সময়ের অর্ধেকটা কাউন্ট করা হবে। অর্থাৎ কেউ এক বছর অবস্থান করে থাকলে ৬ মাস কাউন্ট করা হবে। এই ধারাটি বাস্তবায়িত হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। আগামী ফল সিজনের (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) দিকে তা বাস্তবায়িত হবে বলে গভর্নমেন্ট অব কানাডার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। ঐ সময়ে আইনের আরো যে ধারা বাস্তবায়িত হবে তা হলো নাগরিকত্ব লাভের জন্য ল্যাংগুয়েজ এন্ড নলেজ টেস্ট। বর্তমান সরকার নাগরিকত্ব লাভের জন্য ল্যাংগুয়েজ এন্ড নলেজ টেস্ট এর বয়স ১৮ থেকে ৫৪ বছর করেছে। কনজারভেটিভ পার্টি আইন করে গিয়েছিল যাদের বয়স ১৪ থেকে ৬৪, তাদেরকে ল্যাংগুয়েজ এন্ড নলেজ টেস্ট পাস করতে হবে নাগরিকত্ব পেতে হলে।
বিল সি-৬ এর যে ধারাগুলো আগামী বছরের প্রথম দিকে বাস্তবায়িত হবে
ইতিপূর্বে কানাডায় অনেক দ্বৈত নাগরিক কানাডার নাগরিকত্ব হারিয়েছেন ইমিগ্রেশন বা নাগরিকত্বের আবেদনপত্রে ভুল বা ভূয়া তথ্য দেওয়ার কারণে। কারণ, আইনে আছে- কেউ যদি ইমিগ্রেশন আবেদন পত্রে অথবা নাগিরকত্বের আবেদন পত্রে কোন মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন বা কোন কিছু গোপন করে থাকেন তবে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে। কনজার্ভেটিভ পার্টি কর্তৃক বিল সি-২৪ পাশ করার আগেও এই আইনটি ছিল। তবে বিল সি-২৪ এ যা সংযোজন করা হয়েছিল তা হলো, এর বিরুদ্ধে আদলতে আপিল করা যাবে না।
বর্তমান লিবারেল সরকারও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেনি। বরং দেখা গেছে যে, লিবারেল সরকার ক্ষমতায় এসে সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকারের করে যাওয়া বিতর্কিত ইমিগ্রেশন আইন (বিল সি-২৪) ব্যবহার করে গত বছর আগস্ট পর্যন্ত ১৮৪ জন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে তাদেরকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় লিবারেল সরকার সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকারের তুলনায় অধিক আক্রমনাত্বকভাবে এই কাজটি করছে।
ট্রুডো সরকার শপথ নেয় ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর। ঐ মাসেই নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় ২১ জনের। তার পরের মাসে নাগরিকত্ব
বাতিল করা হয় ৫৯ জনের। আর ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১৩ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। সাবেক কনজার্ভেটিভ পার্টি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি মাসে নাগরিকত্ব বাতিল করেছে গড়ে ২.৪ জন করে।
বিল সি-৬ যখন ইতিপূর্বে সিনেটে পাঠানো হয়েছিল অনুমোদনের জন্য তখন সিনেট আপত্তি আনে এখানটাতেই। তাদের অভিমত ছিল, কারো নাগরিকত্ব বাতিল করতে হলে সেটা আদলতের মাধ্যমেই হতে হবে। ইমিগ্রেন্ট এ্যাডভোকেটস এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রবক্তাগণও সিনেটের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। তাদেরও দাবী ছিল, কোন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করার আগে তাকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ দিতে হবে।
গভর্নমেন্ট অব কানাডার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বিল সি-৬ এর এই ধারাটি কার্যকরী হবে আগামী বছরের প্রথম দিকে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নাগরিকত্ব বিষয়ে তার সুষ্পষ্ট বক্তব্য পেশ করেছিলেন গত নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে এক নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছিলেন, “A Canadian is a Canadian is a Canadian”। তাঁর এই বক্তব্য ছিল তখনকার সরকারের করা ইমিগ্রেশন আইন (বিল সি-২৪) এর বিরোধীতা করার জন্য।