বিশ্বসেরা খ্যাতিমান দেশ কানাডা, বিশ্বসেরা শিষ্টাচারের দেশ কানাডা,অন্যতম শান্তির দেশ কানাডা

জুলাই ৮, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : বলা হয়ে থাকে যে, ১৮৬৭ সালে কানাডার জন্ম হতো না যদি আমেরিকার বিরুদ্ধে ১৮১২-১৫ সালের যুদ্ধে বৃটেন জয়ী না হতো। অন্টারিওতে প্রতি বছর ১৮১২ সালের যুদ্ধকে স্মরণ করা হয় বৃটিশদের জয় হিসাবে।

ঐ যুদ্ধ জয়ের ধারাবাহিকতায় ১৮৬৭ সালে কানাডার জন্ম হয়। ২০১২ সালে পরিচালিত এক জরীপে দেখা যায় শতকরা ২৫ ভাগ কানাডিয়ান মনে করেন ১৮১২ সালের যুদ্ধ জয় ছিল নিজেদের পরিচয় রক্ষার জন্য কানাডার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

১৮৬৭ সালকে কানাডার জন্ম বছর হিসাবে ধরা হলেও এই দেশটির অস্তিত্ব তার আগেও ছিল। ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সাম্রাজ্যের অধিনে ছিল তখন দেশটি।

উল্ল্লেখ্য যে, ১৫ শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীরা আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে এবং পরে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে ইংরেজ ও ফরাসি অভিযাত্রীদের আসার বহুকাল আগে থেকেই এই মহাদেশটিতে রেড ইন্ডিয়ানরা বসবাস করে আসছে।

পরবর্তীতে ফ্রান্স দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৭৬৩ সালে উত্তর আমেরিকায় তাদের সব ঔপনিবেশ ইংরেজদের কাছে ছেড়ে দেয়। ১৮৬৭ সালে, মৈত্রিতার মধ্য দিয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে দেশ হিসেবে কানাডা গঠন করা হয়। এর ফলে আরো প্রদেশ এবং অঞ্চল সংযোজনের পথ সুগম হয় এবং বৃটেন থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮২ সালে জারীকৃত কানাডা অ্যাক্ট অনুসারে, দশটি প্রদেশ এবং তিনটি টেরিটরী বা অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজ্যতন্ত্র উভয়ই মেনে চলে। রাষ্ট্রের প্রধান রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা দুটোই সরকারি ভাষা এবং একটি মাল্টিকালচারের দেশ।

ধারণা করা হয় ‘কানাডা’ নামটি এসেছে সেন্ট লরেন্স ইরোকোয়াইয়ান (St. Lawrence Iroquoian) শব্দ ‘কানাটা’ (kanata) থেকে যার অর্থ ‘জেলেদের ক্ষুদ্র গ্রাম’।

কানাডায় ফরাসি ঔপনিবেশকে “নব্য ফ্রান্স” (New France) বলা হত, যার বিস্তৃতি ছিল কুইবেকের সেন্ট লরেন্স নদী থেকে অন্টারিও দক্ষিনে অবস্থিত গ্রেট লেকস এর উত্তর উপকূল পর্যন্ত। পরবর্তীতে, ১৮৪১ সাল পর্যন্ত, এটি যথাক্রমে আপার কানাডা (বর্তমান অন্টারিও) এবং  লোয়ার কানাডা (বর্তমান কুইবেক) নামক দুটি ইংরেজ উপনিবেশে বিভক্ত থাকে।

আয়তনের দিক থেকে কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এর দক্ষিণে আটলান্টিক ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। কানাডা ও আমেরিকার মধ্যে যে সীমান্ত রয়েছে তা পৃথিবীর দীর্ঘতম সীমান্ত হিসাবে বিবেচিত।

কানাডা এমন একটি ফেডারেশন যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্রভিত্তিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত এবং একই সাথে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রও প্রচলিত। কানাডার সরকার দুই ভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকার। এছাড়াও রয়েছে পৌরসরকার যেগুলো শহরভিত্তিক।

কানাডার বর্তমান সংবিধান ১৯৮২ সালে রচিত হয়। এই সংবিধানে পূর্বের সাংবিধানিক আদেশগুলি একটিমাত্র কাঠামোয় একত্রিত করা হয় এবং এতে অধিকার ও স্বাধীনতার উপর একটি চার্টার যোগ করা হয় যা “কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম” নামে খ্যাত। এই সংবিধানেই প্রথম কানাডার নিজস্ব স্থানীয় সরকারকে তাঁর সংবিধানের উপর পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। পূর্বে কানাডা ১৮৬৭ সালে প্রণীত ব্রিটিশ উত্তর আমেরিকা অধ্যাদেশবলে পরিচালিত হত। ঐ আইনে এবং পরবর্তীতে প্রণীত আইনসমূহে ব্রিটিশ সরকারকে কিছু সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। -সূত্র: উকিপিডিয়া।

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কানাডারও রানী হিসেবে স্বীকৃত। একজন গভর্নর জেনারেল কানাডাতে রানীর প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমান গভর্নর জেনারেল হলেন ডেভিড জনস্টোন। তবে রানী ও

কানাডায় তার প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল মূলত আলংকারিক। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রধান নির্বাহী। তিনি আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ।

কানাডা সম্পর্কে কয়েকটি তাৎপর্যময় তথ্য

০   প্রায় শতভাগ কানাডিয়ানের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে অভিবাসীদের প্রতি (সূত্র : Ipsos-Reid)

০   শতকরা ৮৪ ভাগ কানাডিয়ান কানাডার নাগরিক হওয়ায় নিজেদেরকে সুখী মনে করেন। (সূত্র : Maclean’s)

০ কানাডা বিশ্বের সর্বোচ্চ গড় আয়ুর দেশের মধ্যে একটি (কানাডায় মানুষের গড় আয়ু ৮১.২৩)

০ কানাডা তার প্রতিটি নাগরিক/পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট এর জন্য বিশ্বের সেরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে বিনা খরচে।

০ কানাডা বিশ্বের সেরা নিরাপদ দেশগুলোর একটি।

কানাডা সবচেয়ে বন্ধুবৎসল দেশ। (সূত্র HSBC Bank International )

০ কানাডায় উচ্চশিক্ষিতের হার অনেক বেশী। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের চেয়েও। কানাডার নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ পোস্ট সেকেন্ডারী স্কুলে ভর্তি হন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে এই হার যথাক্রমে ৩৯% ও ৩০%।

০ কানাডিয়ানরা সততাপরায়ণ। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের দেশসমূহে দুর্নীতি যেমন লক্ষণীয়ভাবে বিদ্যমান সেই তুলনায় কানাডা বাস্তবিক অর্থেই দুর্নীতিমুক্ত। বিশ্বে কানাডিয়ানরা সততা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য বিশেষভাবে স্বীকৃত।

০ কানাডিয়ানরা কৌতুক প্রিয় এবং নিজেদেরকে খুব বেশীমাত্রায় গুরুগম্ভীর করে করে রাখেন না।

০ কানাডিয়ানদের মধ্যে বাড়ির মালিকানা সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং বাড়িগুলো প্রশস্ত। শতকরা ৭৭ ভাগ কানাডিয়ানের বাড়ি ৫ বা তারো বেশী কক্ষবিশিষ্ট।

০ কানাডায় অভিবাসীরা তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির অনুশীলন করতে পারেন বিনা বাধায় এবং বিনা আপত্তিতে।

০ এবং কানাডা তার নাগরিকদেরকে সর্বোচ্চ মানের জীবন যাপন পদ্ধতি প্রদান করে থাকে। (সূত্র : United Nations Human Development Index)

কানাডা পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশ

নতুন এক জরীপ রিপোর্টে কানাডা পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। প্রথম স্থানে আছে আইসল্যান্ড। প্রথম দশটি শান্তির দেশের তালিকায় কানাডার অবস্থান অষ্টম। আইসল্যান্ডের পরে আছে ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নিউ জিল্যান্ড, পর্তুগাল, চেক রিপাবলিক, সুইটজারল্যান্ড, কানাডা, জাপান ও শ্লোভেনিয়া।

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ১৫তম, জার্মানীর অবস্থান ১৬তম, ফ্রান্স ৪৬তম, যুক্তরাজ্য ৪৭তম এবং যুক্তরাষ্ট্র ১০৩তম। সূত্র – http://www.cicnews.com

Global Peace Index সম্প্রতি এই রিপোর্টটি (২০১৬) প্রকাশ করে। তাদের রিপোর্টে আরো দেখা যায় কানাডা ইউরোপের বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে শান্তি ও নিরাপত্তার বিচারে। আর উত্তর আমেরিকায় কানাডার অবস্থান সর্বোচ্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুদূর পিছিয়ে আছে কানাডার তুলনায়।

কানাডা বিশ্বে সেরা খ্যাতিমান এবং সবচেয়ে প্রশংসিত দেশ

বিশ্বে সেরা খ্যাতিমান এবং সবচেয়ে বেশী প্রশংসিত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে কানাডা। কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকীর ঠিক দুদিন আগে এই খেতাব পেল দেশটি।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘রেপুটেশন ইনস্টিটিউট’ এর চলতি সালের রিপোর্টে কানাডাকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়। পরিবেশ, রাজনীতি ও অর্থনীতির মত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কোন দেশ কতটা খ্যাতিমান ও প্রশংসার যোগ্য তা নির্ধারন করা হয়।

গত বছর কানাডা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তখন রেপুটেশন ইনস্টিটিউট এর কর্মকর্তা ফারনান্দো প্রাডো বলেছিলেন, কানাডা অনেক বিষয়ে ‘ভাল কিছু’ প্রদান করে থাকে যা রিপোর্ট তৈরীর সময় বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

সিটিভি নিউজ এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ফারনান্দো প্রাডো আরো বলেছিলেন, “আমরা সবাই কানাডাকে ভালবাসি বিভিন্ন কারণে।” ফারনান্দো যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে বর্ণনা করেছিলেন তা হলো, এই দেশটির কার্যকর সরকার, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, বন্ধুবৎসল এবং স্বাগতপূর্ণ মানুষ এবং ওয়েলফেয়ার সাপোর্ট সিষ্টেম।

গত ৬ বছর ধরেই রেপুটেশন ইনস্টিটিউট এই খেতাব দিয়ে আসছে এবং কানাডা কখনোই দ্বিতীয়স্থানের নিচে নামেনি।

অবসর গ্রহণের জন্য কানাডা হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা জায়গা

অবসর গ্রহণের জন্য সেরা দেশগুলোর মধ্যে কানাডার অবস্থান ১৪তম। যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে এই অবস্থান অর্জন করেছে কানাডা। Natixis Global Asset Management–এর প্রকাশিত গ্লোবাল রিটায়ারমেন্ট ইনডেক্সঅনুযায়ী ২০টি সেরা দেশের মধ্যে ইওরোপীয় নয় এমন ৬টি দেশের একটি হলো কানাডা। উনিশ নম্বরে অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ইনডেক্সে চারটি ক্যাটাগরিতে রাষ্ট্রের কর্মকূশলতার সূচক পরিমাপ করেছে। এগুলি হলো, স্বাস্থ্য, গড় আয়ু ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, বস্তুগত কল্যাণ এবং জীবনযাত্রার মান। এছাড়াও ইনডেক্সে আলাদা করে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সেগুলি হলো, অপরাধের হার, বায়ুদূষণ এবং দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার শক্তিমত্তা।

জীবনযাত্রার মানের জন্য কানাডা পেয়েছে সর্বোচ্চ পয়েন্ট এবং এক্ষেত্রে দেশটির শিথিল সংস্কৃতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কানাডা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যেখানে দেশটির ব্যয়বহুল সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবদান রয়েছে বলে মনে হয়।

দুটি দেশকে সাংস্কৃতিক দিক থেকে কানাডার অনুরূপ বলে বিবেচনা করা হয়। সে দু’টি দেশ হলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ওই দু’টি দেশই তালিকার নিচের দিকে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে বললে উভয় দেশই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে খুব কম পয়েন্ট পেয়েছে।

সেরা শিষ্টাচারের দেশ কানাডা

শিষ্টাচারের দেশ কানাডা। অনেকে বলেন বিশ্বসেরা শিষ্টাচারের দেশ কানাডা। কথাটা বাড়িয়ে বলা হয় তা কিন্তু নয়। সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, বিনয়, অথবা শিষ্টাচার যাই বলিনা কেন এ বিষয়ে কানাডিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার। বরং বিশ্বে কানাডিয়ানদের একটি ‘বদনাম’ আছে এই বলে যে, তারা একটু বেশী ভদ্র। রাস্তায় চলতে গিয়ে কেউ যদি অসাবধানতাবশত কোন কানাডিয়ানের গায়ের উপর এসে পড়েন অথবা কোনভাবে যদি গায়ে ধাক্কা লাগান তবে যে লোকটি গায়ের উপর এসে পড়লেন বা ধাক্কা লাগালেন তিনি কিছু বলার আগেই কানাডিয়ান লোকটি সরি বলবেন। এপলজি চাইবেন বা ঐ লোকটি কোনভাবে ব্যথা পেলেন কিনা সেটা জানতে চাইবেন।

কানাডিয়ানরা সাধারণভাবে বন্ধুবৎসল ও বিনয়ী। সততা, সংবেদনশীলতা, সহানুভূতি এবং নম্রতা তাদের চরিত্রের গভীরে প্রোথিত। অন্যের গোপনীতা এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তারা। ভুল করুন বা না করুন, অপরাধ করুন বা না করুন, সরি বলতে বা এপলজি চাইতে তারা মোটেও কার্পন্য করেন না। আর কথায় কথায় কথায় থ্যাং ইউ বলাতেও তাদের জুড়ি নেই। মোট কথা, উপরে উল্লেখিত আচরণগুলোকে কানাডার মূলধারার নৈতিকতা বলেই বিবেচনা করা হয়।

তবে সাম্প্রতিক কালে পরিচালিত কিছু জরীপে দেখা গেছে এই ইমিগ্রেন্ট অধ্যুষিত শহরগুলোতে শিষ্টাচার বা ভদ্র আচরণ কমে আসছে। ভেংকুভার সান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ৬২% ব্রিটিশ কলম্বিয়ান মনে করেন গত পাঁচ বছরে ঐ প্রভিন্সের মানুষদের মধ্যে ভদ্রতা বা শিষ্টাচার কমে গেছে। সেখানে কেউ কেউ পিছন থেকে এসে লাইনের সামনের দিকে দাড়িয়ে যাচ্ছেন, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন কেউ কেউ। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় অভদ্র আচরণ করছেন অনেকে। জরীপে আরো দেখা গেছে বিগত পাঁচ বছরে মানুষের মধ্যে থ্যাংক ইউ বা প্লিজ বলার প্রবণতাও কমে গেছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এক তৃতীয়াংশ অধিবাসীই এ কথা বলেন।

অবশ্য ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন তাদের মধ্য থেকে ৪৫% লোকের পর্যবেক্ষণ হলো ভদ্রতা ও নমনীয়তা কমে গেলেও এখনো অনেক যাত্রী আছেন যারা সিনিয়র সিটিজেন, ডিজএবল বা প্রেগনেন্ট মহিলাদের দেখলে তাদের নিজেদের আসনটি ছেড়ে দেন। অন্যদিকে ৭২% ব্রিটিশ কলম্বিয়ানের মন্তব্য হলো, বেশিরভাগ অভদ্র আচরণ দেখা যায় রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময়।

কানাডায় সিংহভাগ অভিবাসী সুখী

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার এক জরীপেও দেখা গেছে প্রায় শতভাগ অভিবাসীই তাদের মাতৃভূমির তুলনায় কানাডায় সুখে আছেন। কানাডায় মূলধারার বাইরে ৪৩টি অভিবাসী বা এথনিক গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি এথনিক গ্রুপ দাবী করেছেন যে তাঁরা তাঁদের মাতৃভূমির তুলনায় কানাডায় সুখে নেই। এই তিন এথনিক গ্রুপ হলো নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড এবং কলম্বিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা। তবে সাম্প্রতিক সময় আসা কলম্বিয়ানরা নিজেদেরকে সুখীই ভাবেন কানাডায়। বাকি ৪০টি এথনিক গ্রুপের সদস্যরা বলেছেন তাঁরা সুখে আছেন এবং এর মধ্যে বাংলাদেশীরাও আছেন।

আমরা জানি জাপান পৃথিবীর অন্যতম ধনী একটি দেশ। মজার ব্যাপার হলো, এই দেশটি থেকে আসা অভিবাসীরাও নিজ দেশের তুলনায় কানাডায় সুখে আছেন বলে জানিয়েছেন। জাপানে তাদের সুখের মাত্রা ছিল ৭.০৮ এবং কানাডায় তাদের সুখের মাত্রা ৭.৬২। ফ্রান্স থেকে যাঁরা এসেছেন তাঁরা বলেছেন কানাডায় তাঁরা ফ্রান্সের তুলনায় বেশী সুখে আছেন। দেশে তাঁদের সুখে মাত্রা ছিল ৭.২ এবং কানাডায় তাঁদের জন্য এই মাত্রা ৮.৩৭। জার্মানরাও তাঁদের দেশের তুলনায় কানাডায় বেশী সুখে আছেন বলে জানিয়েছেন। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, পৃথীবির সর্বাধিক ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আসা অভিবাসীরা জানিয়েছেন দেশে তাঁদের সুখের মাত্রা ছিল ৭.৬৭ মাত্রার এবং কানাডায় এই মাত্রা ৮.১৪!

ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার কানাডিয়ানদের চেয়ে কম!

অন্টারিওতে বসবাসরত ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার স্থানীয়ভাবে জন্ম নেয়া অথবা দীর্ঘ সময় ধরে এখানে বসবাসরত অধিবাসীদের চেয়ে ৬০% কম! ইমিগ্রেশন এবং আর্থসামাজিক পরিস্থিতি নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে মৃত্যুর হারের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করে তার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিক্যাল ইভেলুয়েটিভ সায়েন্স এবং ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক কম যদিও তারা অন্টারিও প্রভিন্সের সবচেয়ে বঞ্চিত এলাকায় থাকেন। খবর টরন্টো স্টারের।

হিসাবে দেখা গেছে সংখ্যার বিচারে ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অন্টারিওতে সার্বিকভাবে ৪২,৭০০ জন কম ইমিগ্রেন্ট এর মৃত্যু ঘটেছে। আর অকাল মৃত্যু ঘটেছে ১৮,৪০০ জন কম

ইমিগ্রেন্ট এর।

গবেষক দলের প্রধান ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর এপিডেমিলজিস্ট লরা রজেলা বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর মাত্রায় এই পার্থক্য দেখে বিস্মিত হয়েছি। এই পার্থক্য অনেক বেশী এবং দৃঢ়কায়।’ জার্নাল অব এপিডেমলজি এন্ড কমিউনিটি হেলথ এর সর্বশেষ ইস্যুতে এই গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কানাডা

কানাডা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। দেশটি অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এবং জি-৮ গ্রুপের সদস্য। অন্যান্য উন্নতদেশগুলির মত কানাডার অর্থনীতির সিংহভাগ সেবামূলক শিল্প নিয়ে গঠিত। প্রায় তিন চতুর্থাংশ কানাডাবাসী কোন না কোন সেবা শিল্পের সাথে যুক্ত আছেন। কাঠ ও খনিজ তেল আহরণ শিল্প কানাডার প্রধানতম দুইটি ভারী শিল্প। এছাড়া দক্ষিণ ওন্টারিও-কে কেন্দ্র করে একটি উৎপাদন শিল্পব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এগুলির মধ্যে মোটরযান উৎপাদন শিল্প প্রধানতম।

কানাডায় ধনী দরিদ্রের ব্যবধান

কানাডায় দুইজন ধনী ব্যক্তির হাতে যে পরিমান সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে তার পরিমাণ দেশটির ১ কোটি ১০ লাখ দরিদ্র মানুষের হাতে যে সম্পদ রয়েছে তার সমান। ধনী এই দুই ব্যক্তি হলেন ডেভিড থমসন এবং গ্যালেন ওয়েস্টন সিনিয়র। ডেভিড থমসন ‘থমসন রয়টার্স’ এর চেয়ারম্যান এবং গ্যালেন ওয়েস্টন সিনিয়র লবলজ কোম্পানী লিমিটেড এর প্রেসিডেন্ট। থমসন রয়টার্সের ব্যবসা হলো মিডিয়া আর লবলজ এর ব্যবসা হলো গ্রোসারী ও ঔষধের দোকান।

গত ১৫ জানুয়ারীতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফ্যামের এক গবেষণা পত্র থেকে এই তথ্য জানা যায়। সূত্র- কানাডিয়ান প্রেস।

কানাডার প্রতি একাত্মতার শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে ব্যাপক সংখ্যক ইমিগ্রেন্টের

গত ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার গবেষণা পত্রে দেখা গেছে কানাডায় যারা ১৯৮০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগেরই কানাডার প্রতি খুবই শক্তিশালী বা শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে।

এটি নিছক একটি জরীপ তথ্য নয়। এটি গবেষণা পত্র। ১৮২ টি দেশ থেকে আসা ৭০০৩ জন ইমিগ্রেন্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই বিষয়টি জানা গেছে।

এই ৯৩% এর মধ্যে দেখা গেছে ৬৯% ইমিগ্রেন্টের খুবই শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে কানাডা এবং একই সাথে তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রতি। আর মাত্র ২৪% ইমিগ্রেন্টের খুবই শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে শুধু কানাডার জন্য।

অন্যদিকে মাত্র ৩% ইমিগ্রেন্টের খুবই শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রতি। কিন্তু কানাডার প্রতি কোন অনুভূতি নেই এদের। আর ৪% ইমিগ্রেন্টের কোন অনুভূতি নেই কানাডা বা তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রতি।

কানাডা পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশ

নতুন এক জরীপ রিপোর্টে কানাডা পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। প্রথম স্থানে আছে আইসল্যান্ড। প্রথম দশটি শান্তির দেশের তালিকায় কানাডার অবস্থান অষ্টম। আইসল্যান্ডের পরে আছে ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নিউ জিল্যান্ড, পর্তুগাল, চেক রিপাবলিক, সুইটজারল্যান্ড, কানাডা, জাপান ও শ্লোভেনিয়া।

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ১৫তম, জার্মানীর অবস্থান ১৬তম, ফ্রান্স ৪৬তম, যুক্তরাজ্য ৪৭তম এবং যুক্তরাষ্ট্র ১০৩তম। সূত্র – http://www.cicnews.com

Global peace index এই রিপোর্টটি ২০১৬ সালে প্রকাশ করে। তাদের রিপোর্টে আরো দেখা যায় কানাডা ইউরোপের বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে শান্তি ও নিরাপত্তার বিচারে। আর উত্তর আমেরিকায় কানাডার অবস্থান সর্বোচ্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুদূর পিছিয়ে আছে কানাডার তুলনায়।

কানাডার মাল্টিকালচারালইজম

আমরা জানি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বের হয়ে আসার পিছনে ইমিগ্রেশন একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু কানাডার রাজনীতিকগণ গত চার দশক ধরে ইমিগ্রেশনকে সমর্থন দিয়ে আসছে যা কানাডার ডেমোগ্রাফিক অবয়বকে দিয়েছে নতুন রূপ। কানাডাকে দিয়েছে মাল্টিকালচারাল সোসাইটির পরিচয়।

কানাডা একটি মাল্টিকালচারের দেশ। এটি শুধু কথার কথা নয়। রাষ্ট্রিয়ভাবেই গত ৪৫ বছর ধরে এটি স্বীকৃত হয়ে আসছে কানাডায়। ১৯৭০ দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডো উদ্যোগে রাষ্ট্রিয়ভাবে গৃহীত হয় এই পলিসি। বলা হয়ে থাকে যে, “Multiculturalism in Canada is the sense of an equal celebration of racial, religious and cultural backgrounds  ”।

আমরা জানি বিশ্বে কানাডাই প্রথম দেশ যেখানে মাল্টিকালচারালইজমকে রাষ্ট্রিয় নীতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা আসে ১৯৭১ সালে। পরে ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে ২৭ জুনকে কানাডার মাল্টিকালচারালইজম দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনটি মাল্টিকালচারালইজম দিবস হিসাবে পালন হয়ে আসছে।

গত জুন মাসে মাল্টিাকালচারালইজম ডে উপলক্ষ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক বাণীতে বলেন, “৪৫ বছর আগে কানাডা বিশ্বে প্রথম মাল্টিকালচারালইম এর নীতি গ্রহণ করে। সেই থেকে কানাডা সব সময় প্রমাণ করে আসছে যে একটি দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এর বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠির কারণে।” প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আরো বলেন, “মাল্টিাকালচারালইজম আমাদের শক্তি। মানব সমাজ এই বৈচিত্রপূর্ণ জনগোষ্ঠি থেকে লাভবান হয়।”

তিনি আরো বলেন, “কানাডায় আমাদের কার কি ধর্ম, কার গায়ের রঙ কি, আমরা কে কোথায় জন্ম নিয়েছি বা আমরা কে কোন ভাষায় কথা বলি তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা সবাই সমান এই মহান দেশটিতে, সেটিই আমাদের সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়।”

কানাডার আদীবাসী জনগোষ্ঠি

কানাডায় ফ্রান্স ও ইংরেজ ঔপনিবেশিকদের আগমনের বহু সহস্র বছর আগে থেকেই বিভিন্ন আদীবাসী জনগোষ্ঠির অবস্থান ছিল। এদের মধ্যে ফার্স্ট নেশনস, ইনুইট ও মেটিস উল্ল্লেখযোগ্য। মেটিসরা প্রধানত সংকর জাতের। ১৭ শতাব্দীতে ফার্স্ট নেশন ও ইনুইটরা যখন ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে থাকলো তখন থেকে এই সংকর জাতের সৃষ্টি হয়।

ধারণা করা হয় প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে মানুষজন প্রথম মাইগ্রেট করে কানাডায় আসে। কোন কোন গবেষক দাবী করেন, ১৫ হাজার নয়, তারো আগে মানুষজন আসেন এই কানাডায়।

কানাডায় যখন ইউরোপীয়রা আসেন ঔপনিবেশ স্থাপনের জন্য তখন তারা সাথে করে নিয়ে আসেন কিছু রোগ যা এই অঞ্চলে কখনোই ছিলনা। এর মধ্যে আছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, মিজেলস, স্মলপক্স। এই রোগগুলো বিরুদ্ধে কানাডার আদীবাসীদের শরীরে কোন প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ইউরোপীয়রা আসার পর পরবর্তী কয়েক দশকে আদীবাসী জনগোষ্ঠির প্রায় ৪০% থেকে ৮০% লোক নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়ে। বর্তমানে (২০১১ সালের আদম সুমারীর হিসাব) কানাডায় আদীবাসীদের সংখ্যা ১.৮ মিলিয়ন। শতকরা হিসাবে কানাডার মোট জনসংখ্যার ৪.৩ ভাগ।

কানাডার আদিবাসীরা এখনো বেশ কিছু সমস্যা মোকাবেলা করছেন। এর মধ্যে আছে মন্দ স্বাস্থ্য, স্বল্প শিক্ষা, বাসস্থান সমস্যা, স্বল্প আয়, উচ্চমাত্রায় বেকারত্ব, উচ্চমাত্রায় কারাবাস, উচ্চমাত্রায় আত্মহত্যা ইত্যাদি। উল্ল্লেখ্য যে, কানাডায় ‘কালচারাল জেনোসাইড’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে যা চালানো হয়েছিল আদিবাসীদের বিরুদ্ধে। কানাডার ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এর শুরুটা হয়েছিল কানাডায় আদীবাসী শিশুদের জন্য আবাসিক স্কুল নির্মানের মাধ্যমে। কানাডিয়ান সরকার ও খ্রিস্টান গির্জা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রেসিডেনশিয়াল স্কুলগুলোতে জোর করে ধরে আনা হতো আদীবাসীদের সন্তানদের। শিক্ষার্থীদের ইউরো-কানাডিয়ান সংস্কৃতি গ্রহণে বাধ্য করা হতো। একইসঙ্গে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ধর্ম চর্চার চরম বিপক্ষে ছিল আবাসিক স্কুলগুলো। শিশুদের খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে জোর করা হতো। বেশিরভাগ সময়ই ছেলে-মেয়েরা ১৮ বছর হওয়ার আগে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারত না। হলিডে বা প্রিয়জনের মৃত্যু হলেও না। এসব স্কুলে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনমান ছিল ভয়াবহ। তারা দিনের বেশিরভাগ সময়ই রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত থাকত। শিক্ষার্থীরা ভুগত অপুষ্টি, চিকিৎসাহীনতা ও শীতে পর্যাপ্ত উষ্ণতার অভাবে। স্কুলে অকারণে নিষ্ঠুরভাবে শিশুদের মারধর করা হতো। আবাসিক স্কুলগুলোতে সেক্সুয়াল এবিউজ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ছেলে-মেয়ে সবাই স্কুলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হতো। কানাডার সর্বশেষ রেসিডেন্সিয়াল  স্কুলটি বন্ধ হয় ১৯৮৬ সালে।

২০১১ সালে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার কানাডিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে আদীবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করেন ঐ রেসিডেন্সিয়াল স্কুলগুলোতে আদিবাসীদের সন্তানদের উপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার জন্য।

অতীতে আদীবাসীদের উপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার প্রতিবাদ হিসাবে চলতি বছর কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে তৃনমূল পর্যায়ের কিছু আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গিয়েছে। তারা অনেকেই বলেছে এই দিনটি কানাডার জন্মবার্ষিকী নয়, ঔপনিবেশবাদ দিবস। কানাডা ঔপনিবেশবাদ দিবস পালন করছে। ২৮ জুলাই তারা অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে টিপি (teepee, , আদিবাসীদের এক ধরণের তাবু) স্থাপনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরের দিন কাছাকাছি অন্য একটি স্থানে সেই তাবু স্থাপনের অনুমতি পায় তারা। এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করে। এই গ্র“পের মুখপাত্র জেসোলিন ওবানো বলেন, আদীবাসীরা যুগের পর যুগ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ঔপনিবেশবাদীরা আমাদেরকে মানুষ হিসাবে গন্য করে না। এই দেশে আমরা আজো সংগ্রাম করছি।

কানাডার রাজনৈতিক দল

কানাডায় বর্তমানে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিদ্যমান। এগুলো হলো- লিবারেল পার্টি অব কানাডা, কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডা এবং নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি। এছাড়াও দুটি ছোট দল আছে যার একটি হলো ব্লক কুইবেকো এবং অপরটি গ্রীন পার্টি। বর্তমানে ক্ষমতায় আছে জাষ্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধিন লিবারেল পার্টি অব কানাডা।

দশ বছরের মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হবেন একজন সমকামী ব্যক্তি

সিংহভাগ কানাডিয়ান নাগরিক মনে করেন আগামী এক দশকের মধ্যে দেশটিতে একজন সমকামী ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে নির্বাচিত হতে পারেন। নতুন এক জরীপ রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এবাকাস ডাটা সম্প্রতি এই জরীপ চালায়। খবর হাফিংটন পোস্ট এর।

জরীপে অংশ নেওয়া কানাডিয়ানদের মধ্যে শতকরা ৫৬ জন মনে করেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে একজন সমকামী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সমুজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। আর শতকরা ৫৮ জন মনে করেন আগামী ২০ বছরের মধ্যে কানাডায় একজন সমকামী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

তবে যারা নিউ ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থক তাদের মধ্যে শতকরা ৬৭ জন মনে করেন আগামী দশ বছরের মধ্যে একজন সমকামী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন কানাডায়। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির শতকরা ৫০ জন এবং লিবারেল পার্টির শকরা ৬০ জনের একই অভিমত।

দলীয় প্রধান মুসলমান?

কানাডায় মূখ্য কোন একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারেন একজন মুসলমান। আর সেটি আগামী দশ বছরের মধ্যেই! এরকমই মনে করছেন জরীপে অংশ নেয়া শতকরা ৪৪ জন। আর শতকরা ৫৪ জন মনে করছেন এটি হতে পারে আগামী ২০ বছরের মধ্যে।

এবাকাস ডাটা পরিচালিত জরীপে আরো কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। ঐ তথ্যে দেখা যায় প্রায় অর্ধেক (৪৬%) কানাডিয়ান নাগরিক মনে করেন আগামী দশ বছরে এদেশের মহিলারা আরো ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী হবেন।

থেকে কুইবেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে

কানাডা থেকে কুইবেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে আগামী দশ বছরে। এ কথা মনে করেন শতকরা ১৮ জন। অন্যদিকে শতকরা ২৩ জন মনে করেন কুইবেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে আগামী বিশ বছরের মধ্যে। সম্ভাবনা রয়েছে কানাডা থেকে আলবার্টার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও। জরীপে অংশ নেওয়া শতকরা ৭ জন মনে করেন আগামী দশ বছরের মধ্যে আলবার্টা কানাডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আর শতকরা ৬ জন মনে করেন আগামী বিশ বছরের মধ্যে এই প্রভিন্সটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

কানাডার রাজনীতি পাল্টে দিচ্ছে ইমিগ্রেন্টরা

কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ভিক্টর চোই এর মতে আমরা রাজনীতির নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি এবং সেখানে মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি নতুন এক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাদের শক্তির অবস্থান এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী। ফলে কানাডার সব রাজনৈতিক দলই এখন এই মাল্টিকালচারাল কমিউিনিটিকে খাতির করার চেষ্টা করছে।

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় বর্তমানে কানাডার জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগের জন্ম কানাডার বাইরে। অর্থাৎ প্রতি ৫ জনের ১ জন কানাডায় এসেছেন ইমিগ্রেন্ট বা উদ্বাস্তু হয়ে। আবার টরন্টোতে দেখা গেছে বিদেশে জন্মগ্রহণকারীদের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ। প্রতিবছর কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ১.২% এবং এর প্রধান কারণ এই ইমিগ্রেন্টদের আগমন। কানাডায় আমরা বছরে আড়াই লাখেরও বেশী ইমিগ্রেন্টকে স্বাগত জানাই। এই ধারা চলতে থাকলে আগামী ২০৩০ সালে কানাডার মোট জনসংখ্যার ৩০% হবে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী।

প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ফেসবুকে প্রদত্ত বিভিন্ন তথ্য যাচাই করলেও দেখা যাবে এই ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটিকে নানাভাবে খুশি বা তুষ্ট করার একটা প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ফেসবুকে প্রায় ৬০টি ভিডিও প্রকাশ করেছেন যার ১৩% হলো ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটিকে নিয়ে। ঐ ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় সেখানে এংলোফোন বা ফ্রাঙ্গোফোনদের ঐতিহ্য উদযাপন নিয়ে কোন ভিডিও নেই। যা আছে তা হলো মুসলমানদের রমজান নিয়ে ভিডিও, ইহুদীদের হনুকা নিয়ে ভিডিও ইত্যাদি।

ভিক্টর চোই বলেন, এভাবেই আমরা দেখতে পাচ্ছি ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কানাডার রাজনীতি রূপান্তরিত হচ্ছে। তবে পুরোপুরি রূপান্তরিত হয়নি এখনো। হয়তো এটি হতে আরো কিছু সময় লাগবে। তবে দ্রুতই তা হবে। আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে মাল্টিকালচারাল কমিউনিটির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব আরো বেশী হবে এবং তখন যে পার্টিই ক্ষমতায় থাকুক এই মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিকে গুরুত্ব দিতে হবে কারণ তারা তখন সরকারী নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে। কুইবেকের প্রভাব যেমন বিশ শতকে কানাডার রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করেছিল তেমনি মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি প্রভাবান্বিত করবে কানাডার একুশ শতকের রাজনীতিকে।

কানাডা বিশ্বের পঞ্চম সেরা ব্যয়বহুল দেশ

জার্মানীর আন্তর্জাতিক ব্যাংক ডয়েচা’র সর্বশেষ জরীপে বিশ্বের সেরা ব্যয়বহুল দেশ হিসেবে এবারও অস্ট্রেলিয়ার নাম উঠে এসেছে। গত চার বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়া সেরা ব্যয়বহুল দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর কানাডার অবস্থান এবার পঞ্চম স্থানে। অস্ট্রেলিয়ার পর কানাডা থেকে বেশী ব্যয়বহুল দেশের তালিকায় রয়েছে নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে কানাডা এগিয়ে আছে ফ্রান্স, জার্মানী ও জাপানের মতো দেশগুলোর চেয়ে। খবর হাফিংটন পোস্টের।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের জন্য যে ব্যয় হয় তা কানাডার চেয়ে গড়ে ১৪% বেশী। গত কয়েক বছরে কানাডার ডলারের মূল্যমান ইউএস ডলারের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালের সার্ভেতে দেখা যায় কানাডিয়ান প্রাইস ছিল যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ২৫.৪% বেশী। চলতি বছরে দেখা যাচ্ছে কানাডিয়ান প্রাইস যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ১.৭% কম।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি ৫ স্টার হোটেলে রাত কাটাতে গেলে খরচ পড়ে ৮৮০ ইউএস ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের তুলনায় তা সাড়ে তিন গুন বেশী এবং কানাডার টরন্টোর তুলনায় তা ৪ গুন বেশী।

টরন্টোতে একটি অফিস ভাড়া নিতে গেলে প্রতি স্কয়ার ফুটের জন্য গুনতে হয় ২৭.৮৬ ইউএস ডলার। অপরদিকে সিডনীতে একটি অফিস ভাড়া নিতে গেলে প্রতি স্কয়ার ফুটের জন্য একজন ভাড়াটিয়াকে গুনতে হয় ১০৮.০৫ ইউএস ডলার।

জনসংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে

রেকর্ড সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট ও রিফিউজি কানাডায় প্রবেশ করায় কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৩৬ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৬০ লাখেরও বেশী। গত জুলাই মাসের ১ তারিখের হিসাব এটি। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার বরাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ করে সিবিসি নিউজ।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় গত বছর জুলাই মাসের তুলনায় এবছর জুলাই পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৮ শত ১৫ জন। এর ফলে কানাডার মোট জনসংখ্যা গত জুলাই পর্যন্ত দাড়ায় ৩ কোটি ৬২ লাখ ৮৬ হাজার ৪ শ ২৫ জনে। ১৯৮৮ সালের পর এটিই ছিল বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সংখ্যা। আর গত বছরের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার ছিল ১.২%।

ব্যাংক অব মন্ট্রিয়লের অর্থনীতিবিদ ড্যগ পোর্টার বলেন, পঞ্চাশ দশকের বেবী বুমের পর এবারের এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি বড় ধরনের জনংখ্যা বৃদ্ধির একটি ঘটনা যদিও এর পিছনে অন্যতম ঘটনা ছিল ইমিগ্রেন্ট ও রিফিউজির সংখ্যা বৃদ্ধি।

২০১৫ সালের জুলাই থেকে শুরু করে চলতি বছর জুলাই মাসের মধ্যে কানাডায় ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করে ৩২০,৯৩২ জন। ৩০ হাজার সিরিয়ান রিফিউজিও এই সংখ্যার অন্তভূক্ত। সিরিয়ানদের রিফিউজি হিসাবে আনা হলেও আদতে এরা ইমিগ্রেন্টই। কারণ এদেরকে সাধারণ রিফিউজিদের মত কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে না।

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসাব মতে ১৯১০ সালের পর কোন একটি একক বছরে এত বিপুল সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট গ্রহণ করেনি কানাডা।

কানাডার দুটি প্রভিন্সে এখনো জনসংখ্যা সর্বাধিক। এই দুটি প্রভিন্স হলো অন্টারিও এবং কুইবেক। অন্টারিওর জনসংখ্যা ১৩.৯ মিলিয়ন এবং কুইবেকের জনসংখ্যা ৮.৩ মিলিয়ন।

ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের ইতিবাচক মনোভাব বিদ্যমান এখনো

গোটা পাশ্চাত্যভূমে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব তরঙ্গায়িত হতে হতে এখন জলোচ্ছাসে রূপ নিয়েছে কোন কোন দেশে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কানাডায় এই তরঙ্গের আঘাত এখনো এসে লাগেনি। কারণ, প্রতি ১০ জন কানাডিয়ানের মধ্যে ৮ জন এখনো মনে করেন দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইমিগ্রেন্টদের প্রয়োজন রয়েছে। তারা আরো মনে করেন, কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা এখনো খুব বেশী নয়। তবে কেউ কেউ মনে করেন ইমিগ্রেন্টদের প্রবেশের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখলে অপরাধীদের প্রবেশের সুযোগ কম থাকে।

ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের এই ইতিবাচক মনোভাব এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন গত এক বছরে দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে এবং যাদের মধ্যে রয়েছে ৩২ হাজারেরও বেশী সিরিয়ান উদ্বাস্তু। গত এক বছরে (জুলাই পর্যন্ত) ৩২০,৯৩২ জন ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে কানাডায় যা ছিল কাগজ-পত্রে ইমিগ্রেন্টদের হিসাব রাখার রীতি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যার বিচারে সর্বোচ্চ। ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের এই ইতিবাচক মনোভাব গত ১৫ মাসে একই রয়েছে অথবা কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে জানান Environics Institute  এর নির্বাহী পরিচালক কিথ নিউম্যান। এই জরীপটি যৌথভাবে চালায় Environics Institute  এবং Canadian Race Relations Foundation। খবর globe and mail এর।

উল্ল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্য বিশ্বে জেনোফোবিয়া ( ীবহড়ঢ়যড়নরধ) বা বিদেশীদের সম্বন্ধে অহেতুক ভয়ের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে। কিন্তু কানাডার পরিস্থিতি কি? এখানেও কি ঐ জেনাফোবিয়ায় ভুগছেন লোকজন? জরীপ পরিচালনাকারীদের অভিমত- না, এখানে জেনোফোবিয়া এখনো গড়ে উঠেনি।

কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। টরন্টোতে এই মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশী এবং যারা উচ্চ শিক্ষিত (ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী) তারাও এই মতের পক্ষে।

জরীপে আরো বলা হয়, অধিকাংশ কানাডিয়ান আগামীতেও এই বিশ্বাস ধরে রাখবেন যে, কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ভূমিকা ইতিবাচক। তারা আরো বিশ্বাস করেন যে কানাডা কর্তৃপক্ষ উদ্বাস্তুদের নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য রাখে এবং একই সাথে সম্ভাব্য অপরাধীদেরকেও।

ভাল লাগে এই দেশটি, শান্তি আছে বসবাসে,

সুখী না হয়ে উপায় নেই : আহমেদ হোসেন

আহমেদ হোসেন

প্রশ্ন : ১লা জুলাই কানাডা মেতে উঠেছিল ১৫০তম জন্মউৎসবে। এই পরিস্থিতিতে একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে আপনার অনুভূতি কি ছিল?

উত্তর : দেখতে দেখতে ১৭টি বসন্ত পার করে দিলাম এই কানাডাতে। শপথ নিয়ে নাগরিকত্ব পেয়েছি তাও হলো ১৫ বছর আগে। যেদিন অভিবাসন এর দরখাস্ত করেছি সেদিনই আমি বুঝেছি আমাকে কানাডিয়ান হতে হবে। যেখানে একটি জলজ্যান্ত বড় গাছ অন্যত্র রোপন করলে খুব কম বাঁচে। সেখানে মানুষ বলে হয়তো মানিয়ে নিয়েছি নিজেকে, প্রতিনিয়ত নিচ্ছি। মেনে নেয়াতে তাই আমি এখন বাংলাদেশী কানাডিয়ান। এই কানাডা আমাকে গত ১৭ বছরে কম দেয় নি। এই কানাডার ১৫০ বছর উৎসবে আমিও নিজেকে সম্পৃক্ত করেছি। আমার কাজের জায়গায় বর্নিল পতাকা লাগিয়েছি। কমিউনিটিতে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছি। করছি টরন্টো ফিল্ম ফোরাম হয়ে মাল্টিকালচারাল চলচ্চিত্র উৎসব ।

প্রশ্ন : নিজেকে কতটা কানাডিয়ান মনে করেন আপনি? আর কতটা বাংলাদেশী?

উত্তর : ২০ ভাগ কানাডিয়ান হবো হয়তো। ১৪ আনায়ই আমি বাংলাদেশী। ২৪ ঘণ্টার ৮ ঘন্টা ইংরেজী ভাষার পরিবেশে থাকি আর বাকি সময় শুধুই বাংলা আর বাংলা ।

প্রশ্ন : কানাডার প্রতি কতটা একাত্ম অনুভব করেন আপনি? কেন?

উত্তর : আমার মেয়ের জন্ম টরন্টোতে। যেমনটা আগেও বললাম কানাডা আমাকে অনেক দিয়েছে। এর সাথে আমার একাত্মতা অনেক। অনেকটা দেনা পাওনার মতো।

প্রশ্ন : জন্মভূমি নয়, তারপরও নিজ দেশ হিসাবে কানাডাকে আপনার কতটুকু ভাল লাগে এবং কতটা সুখী আপনি এ দেশে? কেন?

উত্তর : অনেক ভাল লাগে এই দেশটা। শান্তি আছে বসবাে

স। শৃঙ্খলা ঈর্ষনীয়। সুখী না হয়ে উপায় নেই। সব নিয়মে চলে সেটা অনেক ভাল লাগে। শীত আর বরফ সহনশীল পর্যায়ে থাকলে তো কথাই নেই। শ্বাস নেয়াতে শান্তি আছে। পৃথিবীটাই আমাদের এটা ভাবলে অবশ্যই সুখী লাগে। তবে আমার সোনার বাংলা সত্যিই সোনার বাংলা।

প্রশ্ন : বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যদি কানাডাকে তুলনা করতে বলা হয়, তবে কানাডা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি হবে?

উত্তর :  অনেক উঁচুতে । আমি কানাডার নাগরিক বলে বলছি না আসলে কানাডা অনেক সভ্য দেশ। আমাদের অর্থনীতি অনেক মজবুত। সব এথনিক গ্রুপকে এখানে সম্মান দেখানো হয়। কানাডায় সরকারের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা অনেক বেশী । কানাডার প্রধানমন্ত্রীর পাহাড় সমান সিকিউরিটি লাগে না। এমপিরা সাধাসিধা জীবন যাপন করে। দুর্নীতি নাই বললেই চলে। সহনশীলতা আর পারস্পরিক শ্রদ্ধা রাষ্টীয়ভাবে চর্চা করা হয়।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যকার

মৌ মধুবন্তী

আমি শেকড়ে বাংলাদেশী এবং

সত্ত্বায় কানাডিয়ান : মৌ মধুবন্তী

প্রশ্ন : ১লা জুলাই কানাডা মেতে উঠেছিল ১৫০তম জন্মউৎসবে। একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে আপনার অনুভূতি কি ছিল?

উত্তর : আমি মনে প্রাণে কানাডিয়ান সিটিজেনশীপের প্রতি শ্রদ্ধাশীল  এবং আমার নিজ দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসাসহ একজন দায়িত্বশীল নাগরিক।

আমি মহা আনন্দিত এবং যাবতীয় আয়োজনের জন্য কানাডিয়ান সরকারের প্রতি রইলো আমার প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা। এটা আড়ম্বর নয়। নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে সরকারের প্রভূত কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। আপামর জনসাধারণ কে উৎসাহিত করছে,উদ্যমী করছে এবং মাল্টিকালচারারের যে মূল মন্ত্র তাকে প্রতিষ্ঠিত করছে।

ব্যক্তি জীবনে এই রকম সেলিব্রেশনকে আমি সব সময় সমর্থন করি। তাই আমার শ্লোগান, চলো চলো অটোয়া যাই।

প্রশ্ন : নিজেকে কতটা কানাডিয়ান মনে করেন আপনি? আর কতটা বাংলাদেশী?

উত্তর : আমি শেকড়ে বাংলাদেশী এবং সত্ত্বায় কানাডিয়ান। আমার দৈনন্দিন নি:শ্বাসে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি আমি গ্রহণ করি, আমি আমার মত,পথ,স্বাধীনচেতা  মানুষ হিসাবে একটি সার্বভৌম ভূখন্ডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপক সুযোগ ভোগ করছি, তাতে আমি বিশ্ব নাগরিক চেতনার স্বপক্ষে হলেও কানাডা আমার আত্মার সাথে মেশানো। আমি একজন নিবেদিত প্রাণ

কানাডিয়ান।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে একজন দেশপ্রেমী, ভাষায়,কৃষ্টিতে ও জাতীয়তাবাদে বাংলাদেশী- এই কথা ভুলিনা কখনো

প্রশ্ন : কানাডার প্রতি কতটা একাত্ম অনুভব করেন আপনি? কেন?

উত্তর : কানাডার সাথে আত্মার সম্পর্ক। তা প্রতিটি ধুলিকণা জানে। ম্যাপল যেমন কানাডার একচ্ছত্র সৌন্দর্য আমিও তেমনি কানাডার মাটির সাথে মেশানো নাগরিক।

আমার জীবনের অর্ধেকের বেশী সময় আমি আমেরিকা, কানাডায় আছি।  এটা গুরুত্বপুর্ণ।

বোধ বুদ্ধির সময় এবং জীবনের অগ্রসরের সময় আমি কানাডায় এসেছি, তাই রক্তের সাথে মিশে আছে আলো,বাতাস,আর এর  দেশাত্মবোধ। কানাডার সামাজিক কাঠামো আমাকে অভিভূত করে। নি:স্বার্থবাদী হতে শিখিয়েছে। একজন সাবলীল মানুষ হিসাবে চলতে সুযোগ দিয়েছে। মানুষকে শ্রদ্ধা করবার সুযোগ আছে এইখানে। সেবা করার প্রবল ইচ্ছাকে কাজে লাগাতে পারি। নিজের মত করে নিবিষ্ট চিত্ত কাব্যিক জীবনে ডুব দিতে পারি।

আমার মাথা নত হয়ে আছে এ মাটির কাছে।

প্রশ্ন : জন্মভূমি নয়, তারপরও নিজ দেশ হিসাবে কানাডাকে আপনার কতটুকু ভাল লাগে এবং কতটা সুখী আপনি এ দেশে? কেন?

উত্তর : জন্মদিলেই সব শিশু তার মায়ের কোল পায় না। মায়ের আদরে বড় হতে পারে না।

আমরা নিয়মতান্ত্রিক কারণে ভূগোলের কোন এক অংশে জন্ম নেই বটে, কিন্তু সেই মাটিতে সীমাবদ্ধ জীবনের পক্ষপাতি আমি নই। আমি পৃথিবীর যে প্রান্তে, যে সমাজে, যে আবহাওয়ায় নিজেকে ব্যাপ্তির মাঝে বিলিয়ে দিতে পারি, সেটাই আমার আত্মার দেশ। আবারো বলছি বাংলাদেশ আমার শেকড়। যেখানে নাগরিকত্ব নিয়ে, বৈধ বসবাস নিয়ে কোন ঝক্কি ছিল না। ছিল নিরাপত্তাহীনতা। সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং অনভিপ্রেত আস্থাবলের জীবন যাপন (স্বাধীনতা হীনতা)। তবু বাংলাদেশ নিয়ে যত কবিতা লিখেছি,কানাডা নিয়ে তা আজো হয় নি।

এমনকি এই ১৫০ তম কানাডা ডে নিয়েও লিখতে পারিনি। কিন্তু একদিন কবিতায় আমি কানাডার হয়ে উঠব,সে বিশ্বাস আছে।

প্রশ্ন : বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যদি কানাডাকে তুলনা করতে বলা হয়, তবে কানাডা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি হবে?

উত্তর : আমি আমেরিকায় ছিলাম। তাই নিজস্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে বলি, আমার কাছে কানাডা হলো, ল্যান্ড অফ প্যারাডাইস। আমি আমার মায়ের আদর খুজে পাই এই কানাডায়, কানাডা সরকার যত সুবিধা এবং সন্মান দেয় আমাদেরকে,তা আমার কাছে অতি মুল্যবান। এটা নিশ্চিন্তপুর। আমার ভুবনডাঙা।  বাংলাদেশের সব স্বাদ এই কানাডায় বসে উপভোগ করি। তাই মনেই হয় না দেশের বাইরে আছি। বিদেশ বা প্রবাস জীবনের স্বাদ, অভিজ্ঞতা বা আকুলতা কিছুই পাওয়া হয় নাই।

তাই এই বিশ্ব চরাচর এক অখন্ড ভূগোল। আমি তার প্রলেতারিয়েত বাসিন্দা। আমি তার ধ্যানমগ্ন নাবিক। আমি তার গর্বিত ভ্রমনচারী।

আমাকে যে মাটি গ্রহন করে,বস্তুত আমি সেই মাটির প্রতি শ্রদ্ধাবনত। আমি সেই মাটির যোগ্য সন্তান।

মৌ মধুবন্তী

কবি ও আবৃত্তিকার

সুব্রত কুমার দাস

কানাডা আমার দ্বিতীয় মাতৃভূমি

সুব্রত কুমার দাস

প্রশ্ন : ১লা জুলাই কানাডা মেতে উঠেছিল ১৫০তম জন্মউৎসবে। একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে আপনার অনুভূতি কি ছিল?

উত্তর: কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে কানাডাকে অভিনন্দন জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই সেইসব কৃতী মানুষদের যাঁদের অবদানে কানাডা আজ পৃথিবীর প্রথম সারির একটি দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

এটি অনেক আনন্দের যে কানাডার জন্মদিনে আমি কানাডাতে আছি। দেখছি ১৫০তম বার্ষিকী নিয়ে আয়োজনের তোড়জোড়। চেষ্টা করছি সে সব-আয়োজনের সাথে পরোক্ষভাবে হলেও নিজেকে সম্পৃক্ত করতে। প্রচেষ্ট আছি সে-সব আয়োজন থেকে নিজেকে ঋদ্ধ করতে।

খেয়াল করছি দেশজুড়ে অনুষ্ঠানগুলো শুধু ১ জুলাইতেই হবে না, হবে মাসজুড়ে – কোনো কোনোটি হয়তো দীর্ঘমেয়াদীও হবে – বছরজুড়েও চলবে।

প্রশ্ন :  নিজেকে কতটা কানাডিয়ান মনে করেন আপনি? আর কতটা বাংলাদেশী?

উত্তর: যদিও কানাডাতে আমার স্ট্যাটাস এখন পর্যন্ত ‘পিআর’, নাগরিক নয়, কিন্তু তারপরেও আমি বলবো আমি একইসাথে বাংলাদেশি ও কানাডিয়ান। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি – সে-মাতৃকার কাছে আমার ঋণের পরিমাণ এত বেশি যে নিজের জীবন দিয়েও সে-ঋণ শোধ হবার নয়। কিন্তু তাই বলে ব্যাপাটি তো এমন নয় যে আমি অন্য দেশের বাসিন্দা হতে পারবো না। আর তেমন পরিস্থিতিতেই কানাডা আমার নতুন আবাস। সে নতুন প্রবাসভূমিকে আমার দ্বিতীয় মাতৃভূমি না ভাবাটাই অকৃজ্ঞতা হবে বলে মনে করি।

প্রশ্ন : কানাডার প্রতি কতটা একাত্ম অনুভব করেন আপনি? কেন?

উত্তর: কানাডাতে পদার্পণের প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করেছি একাত্ম বোধ করতে। চেষ্টা করেছি এখানকার সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে। নতুন সংস্কৃতির সাথে সংযোগকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করেও নতুন সংস্কৃতি থেকে নতুনতর জিনিস শিখতে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একাত্ম না হতে পারাটা এক ধরনের ব্যর্থতা। আরও মনে করি, যাঁদের জীবনে ওই ব্যর্থতাটা এসে ভীড় করে তাঁদের উচিত  প্রতিবন্ধতাকে কাটিয়ে একাত্ম হওয়া।

প্রশ্ন : জন্মভূমি নয়, তারপরও নিজ দেশ হিসাবে কানাডাকে আপনার কতটুকু ভাল লাগে এবং কতটা সুখী আপনি এ দেশে? কেন?

উত্তর: সত্যি কথা বলতে কি প্রথম দিন থেকেই কানাডাকে আমি আমার নিজের দেশ হিসেবেই বিবেচিনা করেছি। মনে করেছি যে-কোনো পরিস্থিতিতেই কানাডা হবে আমার নতুন ঠিকানা। তাই ভালোর সাথে মিশে থাকা মন্দগুলোকেও মেনে নিতে চেষ্টা করেছি। পেরেছিও খানিকটা। ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট কানাডাতে আসার পর থেকে কখনও ব্যক্তিজীবন এবং সমাজজীবনে কী কী পাইনি তা নিয়ে আমি বিচলিত হইনি। বরং যতটুকু পেয়েছি সেটিতে আশীর্বাদ হিসেবে মান্য করেছি।

আজকে প্রায় চারবছর পর এসে যদি হিসেব মিলাই, বার বার মনে হয় যে সুবিধাগুলো কানাডা আমাকে দিয়েছে, সেগুলো তো দেশে পেতাম না। একজন নাগরিকের স্বাধীন চিত্ততার যে প্রকাশ সেটা কানাডা নিশ্চিত করে বলেই দেশটি এত দ্রুত প্রিয় বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর কাছে।

প্রশ্ন : বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যদি কানাডাকে তুলনা করতে বলা হয়, তবে কানাডা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি হবে?

উত্তর: সত্যি কথা হলো, অন্য কোনো দেশে আমি কখনও থাকতে যাইনি। থাকতে চাইওনি। যৌবনের শেষপ্রান্তে এসে যখন নতুন কোনো দেশে অভিবাসী হবার প্রয়োজন হলো, কানাডার কথাই মনে এসেছিল। বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে কানাডার যে সহনক্ষমতার কথা পড়তাম, জানতাম, অনুমান করতাম, তার ওপর ভিত্তি করেই দেশের মাটিকে প্রণাম জানিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের কানাডা-যাত্রা।

অন্যদেশে না থেকেও আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলবো, তুলনায় কানাডা শীর্ষস্থানীয়। সেটি যে শুধু অনুমান নয়, তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বাৎসরিক জরিপগুলোতে প্রতিবছর প্রমাণিত হয়।

সবশেষে বলবো, কানাডা অভিবাসীদের দেশ। আমরা দেশটির অভিবাসী মানুষেরা আরও বেশি সচেষ্ট থাকবো কানাডার সম্মান রক্ষা করতে, কানাডার উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে। কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের সবার প্রত্যয়।

সুব্রত কুমার দাস

লেখক ও গবেষক

২০০৩ সাল থেকে চালু বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রথম ওয়েবসাইট বাংলাদেশি নভেলস (https://bdnovels.org/)-এর উদ্যোক্তা।

ফারহানা শান্তা

কানাডিয়ান হিসাবে পরিচয় দিতে সম্মানিত বোধ করি

ফারহানা শান্তা

প্রশ্ন : ১লা জুলাই কানাডা মেতে উঠেছিল ১৫০তম জন্মউৎসবে। একজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান হিসাবে আপনার অনুভূতি কি ছিল?

উত্তর : কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে অন্যসব কানাডিয়ানদের মত আমিও খুব উদ্দীপ্ত, উৎসবের আবেশে রোমাঞ্চিত । নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এই রকম একটি মাইলস্টোন জন্মদিনের জাতীয় উদযাপন প্রত্যক্ষ করব।

প্রশ্ন : নিজেকে কতটা কানাডিয়ান মনে করেন আপনি?  আর কতটা বাংলাদেশী?

উত্তর : বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। জন্মভূমি সঙ্গে অন্য কোন দেশের প্রত্যক্ষ তুলনা হতে পারে না। জন্মভুমির প্রতি আবেগ, ভালোবাসা চিরন্তন। সেই হিসাবে আমি নিজেকে এখনও বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। তবে, বাস্তবতা এই যে, বর্তমানে আমার পরিচয় কানাডিয়ানও। কানাডিয়ান হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতেও খুব ভালো লাগে। বিশ্ব দরবারে কানাডার গণতন্ত্র, মানবতা ও সকল নাগরিকের সমান অধিকার খুবই প্রশংসিত ও সম্মানের। সেইজন্য কানাডিয়ান হিসাবে নিজেও সম্মানিত বোধ করি।

প্রশ্ন : কানাডার প্রতি কতটা একাত্ম অনুভব করেন আপনি?  কেন?

উত্তর : নিশ্চয় কানাডা’র প্রতি একাত্ম অনুভব করি। যেহেতু কানাডা আমাদের বর্তমান ঠিকানা, আবাসস্থল, কর্মস্থল এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই দেশে বেড়ে উঠছে তাই এই দেশের সঙ্গে সকল নাগরিকের একাত্মতা থাকলে

এই দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি বজায় থাকবে এবং এ থেকে আমরা সবাই উপকৃত হব।

প্রশ্ন : জন্মভূমি নয়, তারপরও নিজ দেশ হিসাবে কানাডাকে আপনার কতটুকু ভাল লাগে এবং কতটা সুখী আপনি এ দেশে?  কেন?

উত্তর : দেশ হিসাবে কানাডা চমৎকার একটি দেশ। যদিও এদেশের আবহাওয়া, বিশেষ করে শীতকাল আমাদের মত দক্ষিন এশীয়দের জন্য উপযোগী নয়। তবুও উন্নত জীবন-যাপন, শিক্ষা, চাকুরী, স্বাস্থ্যসেবা সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধার জন্য কানাডা সবার মত আমারও ভালো লাগে।

সুখি তো অবশ্যই । তা না হলে কি বছরের পর বছর মাতৃভূমি ছেড়ে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে থাকা যায়?

প্রশ্ন : বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যদি কানাডাকে তুলনা করতে বলা হয়, তবে কানাডা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি হবে?

উত্তর : কানাডা আসার আগে আমি প্রায় এক-দশক সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে ছিলাম। অর্থনৈতিক উন্নতির কথা বললে দু’টো দেশই প্রায় সমপর্যায়ের। তবে, কানাডার গণতন্ত্র, মানবতা ও নাগরিকদের সমান অধিকার নিঃসন্দেহে সিঙ্গাপুরে চেয়ে অনেক উন্নত। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মাঝে মাঝে দেখা যায় যে, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বসবাসযোগ্য দেশ হিসাবে কানাডা প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি। আমিও ব্যক্তিগতভাবে এইসব পরিসংখ্যান কে সমর্থন করি ।

ফারহানা শান্তা

সঙ্গীত শিল্পী