বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হলো কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী

জুলাই ৮, ২০১৭

পার্লামেন্ট হিলের সামনে কানাডার ১৫০তম জন্মউৎসবের অনুষ্ঠানে (সামনের সারিতে বাঁ থেকে) প্রিন্স চাসর্ল ও তাঁর স্ত্রী ক্যামেলিয়া, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর স্ত্রী সোফি গ্র্যাগওয়া । ছবি: রয়টার্স

প্রবাসী কণ্ঠ : বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১লা জুলাই পালিত হলো কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। এই উৎসব আর আনন্দের জোয়ার এসে লেগেছিল প্রবাসের বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও। টরন্টো, অটোয়া ও মন্ট্রিয়লসহ আরো কিছু শহরে বাংলাদেশীরা মেতে উঠেছিলেন কানাডার জন্মদিনের উৎসবে। প্যারেডে অংশ নেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন তারা।
কানাডার ১৫০তম জন্মউৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানী অটোয়াতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে। ২৫ সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন বৃটেনের প্রিন্স চার্লস, কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টোন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণ এবং সরকারী ও বিরোধী দলীয় এমপিগণ।
দিনের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে ছিল না। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে লোকজনকে ছাতা মাথায় নিয়ে বাইরে যেতে হয়েছে। অনেকে রেইন কোর্ট পরে বৃষ্টিকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছেন। তবে উৎসব অনুষ্ঠানের স্বতঃস্ফূর্ততাকে থামাতে পারেনি বৃষ্টি। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী পুরুষের ঢল নেমেছিল রাজধানী অটোয়াতে কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে। উৎসবে যোগ দিতে অন্যান্য প্রভিন্স থেকেও এসেছিলেন অনেকে। অনেকের হাতে ছিল ম্যাপেল লিফ খচিত কানাডার লাল সাদা পতাকা। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল কানাডার পার্লামেন্ট চত্বর।
টরন্টো স্টার এর এক খবরে বলা হয়, পার্লামেন্ট চত্বরে জড় হওয়া জনতার উদ্দেশ্যে প্রিন্স চার্লস, গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টোন ও প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বক্তব্য রাখেন। তারা সকলেই কানাডার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, এই দেশটি ডাইভারসিটিকে সম্মান করে এবং বিশ্বে এই দেশটি সকলের কাছে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে তার ভাষণে বলেন, “আমরা কেয়ার করি না এখানে কে কোন দেশ থেকে আসলো, কার কি ধর্মবিশ্বাস এবং কাকে কে ভালবাসে। কানাডায় সবাইকে সাদরে গ্রহণ করে। সবাই এখানে সমাদৃত।” এই সময় জনতা তুমুল করতালিতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
তবে কানাডার আদীবাসীরা মনে করেন, এই দিনটি তাদের জন্য আনন্দ উৎসবের চেয়ে অধিকতর বেদনাদায়ক। আর সেই বেদনাকে জানান দেয়ার জন্য আদীবাসীদের একটি দল পার্লামেন্ট ভবনের কাছে একটি টিপি (ঃববঢ়বব, আদীবাসীদের একধরণের তাবু) স্থাপন করেন। প্রথমে তাবুটি স্থাপন করতে গিয়ে আদীবাসীরা পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। পরে অবশ্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আদীবাসীদেরকে তাবু খাটানোর অনুমতি দেওয়া হয় এবং গ্রেফতারকৃদেরকেও ছেড়ে দেওয়া হয়। কানাডা ডে এর আগের দিন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজেই ঐ তাবুতে গিয়ে আদীবাসীদের সঙ্গে প্রায় অধ ঘন্টা সময় কাটান এবং তাদের কথা শুনেন।
জনতার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আরো বলেন, “আমাদের অতীত নির্ভুল ছিল না। কয়েক শতাব্দী ধরেই কানাডার আদীবাসী জনগোষ্ঠি নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এই নির্যাতন শুরু হয়েছিল যেদিন থেকে পশ্চিমের এই নতুন গোলার্ধ আবিস্কার হয় সেদিন থেকেই। ”
জাস্টিন ট্রুডো আরো বলেন, “আমাদেরকে তাই আমাদের অতীতের ভুলগুলো স্বীকার করে নিতে হবে, সেই ভুলের দায়ও নিতে হবে এবং প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কানাডার প্রতিটি নাগরিকের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত হয়।”
প্রিন্স চালর্স বলেন, বিশ্বে কানাডা আজ মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে স্বীকৃত এবং শান্তিরক্ষী হিসাবে খ্যাত। পরিবেশ রক্ষায়ও পথপ্রদর্শক এবং ডাইভার্সিটির একটি শক্তিশালী উদারহরণ কানাডা।
অটোয়ার পার্লামেন্ট চত্বরে আয়োজিত উৎসব অনুষ্ঠানে আরো যোগ দিয়েছিলেন প্রিন্স চার্সস এর পত্মী ক্যামেলিয়া, জাস্টিন ট্রুডোর পত্মী সোফি গ্র্যাগওয়া।
সকালের দিকে বৃষ্টি কিছুটা বাধা সৃষ্টি করলেও দুপুরের দিকে আকাশ ছিল পরিষ্কার। তবে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটি বেকায়দায় ফেলে দেয় অনেক দর্শনার্থীকে। অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থেকেও পার্লামেন্ট চত্বরে ঢুকার সুযোগ পাননি। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তারা ৭/৮ ঘন্টা লাইনে অপেক্ষা করেও প্রবেশের সুযোগ পাননি। এয়ারপোর্টে যে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেই একই মাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল পার্লামেন্ট এলাকার প্রবেশ পথে।
উল্লেখ্য যে, অতি সম্প্রতি বৃটেনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে একাধিকবার। ফলে কানাডার সরকার কোন রিস্ক নেয়নি। পুলিশ অফিসারদের অনেককেই কারবাইন রাইফেল বহন করতে দেখা যায়। গার্বেজ ট্রাক এবং অন্যান্য হেভী ইকুইপমেন্ট দিয়ে রাজধানীর কয়েকটি রাস্তা ব্লক করে রাখা হয়েছিল যাতে ইউরোপ স্টাইলে এখানে লরি বা ট্রাক দিয়ে জনতার উপর হামলা চালানো না যায়। একটি ফিল্ড হাসপাতালও স্থাপন করা হয়েছিল পার্লামেন্ট এর কাছে।
সকালে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে একটা বিশৃঙ্খল আবস্থার সৃষ্টি হয় পার্লামেন্ট চত্বরে। মাঠে বৃষ্টির পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে উঠে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে পাম্প করে পানি নিস্কাশন করার চেষ্টা চালায়। পার্লামেন্ট চত্বরে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য একটি মাত্র খাবারের স্টল ছিল। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় লোকজনকে। কারণ, নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে বের হয়ে আবার ফিরে আসতে হলে চারপাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে এই ভেবে কেউ আর রিস্ক নেননি। অনেকে ক্ষুধা পেটেই অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন।
কানাডার ১৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে টরন্টোসহ কানাডার অন্যান্য শহরেও নানান উৎসব আনন্দের আয়োজন করা হয়েছিল। এই উৎসব আনন্দের জন্য কেন্দ্রিয় সরকার প্রায় ৫শ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়। টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটির দুটি সংগঠনও এই বরাদ্ধ থেকে অর্থ পায়। জুলাই মাসের শেষের দিকে এবং আগস্ট মাসে তারা টরন্টোর বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে কানাডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে।