নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদের অনেকেই কানাডা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন
উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে অনেক
আগস্ট ৫, ২০১৭
খুরশিদ আলম : কানাডায় নতুন আসা পুরুষ ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে শতকরা ৩৫ ভাগই চলে গেছেন তাদের নিজ নিজ দেশে। এদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন কানাডায় আসার এক বছরের মধ্যেই। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ইমিগ্রেন্ট হয়ে কানাডায় আসার প্রবনতাও হ্রাস পেয়েছে অনেক। ইমিগ্রেশন রিফুজি এন্ড সিটিজেনশীপ কানাডার এক অভ্যন্তরীন সমীক্ষায় সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেশন রিফুজি এন্ড সিটিজেনশীপ কানাডা যে বিষয়ের উপর নজর দেওয়ার কথা বলেছে তা হলো দ্রুত পরিবর্তনশীল শ্রমবাজার পরিস্থিতি, যেখানে এখন ক্রমবর্ধমান হারে অস্থায়ী চাকরীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন প্রার্থীদের জব স্কিল ও শ্রমবাজারের ডিমান্ডের সঙ্গে বনাবনী না হওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। খবর টরস্টার নিউজের।
অন্টারিও কাউন্সিল অব এজেন্সীজ সার্ভিং ইমিগ্রেন্টস এর কর্মকর্তা ডেবিস ডগলাস বলেন, অটোয়ার উচিত অবশ্যই একটি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে করে বর্তমান ইমিগ্রেশন পলিসির সার্বিক সমীক্ষা করে একটি জাতীয় ঐক্যমতে পৌছানো যায় এবং যার মাধ্যমে কানাডা ন্যাশন বিল্ডিং এর পথে এগুতে পারবে।
ইমিগ্রেশন রিফুজি এন্ড সিটিজেনশীপ কানাডা’র রিপোর্টে আরো উঠে এসেছে বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান সিটিজেনদের কথা যারা বর্তমানে অন্য দেশে বাস করছেন। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় ২.৮ মিলিয়ন কানাডিয়ান সিটিজেন (কানাডার মোট জনসংখ্যার ৯%) বর্তমানে অন্য দেশে বাস করছেন। এদের মধ্যে এক মিলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তিন লক্ষ হংকং এ এবং ৭৫ হাজার যুক্তরাজ্যে। বাকিরা অন্যান্য দেশে।
আগেই উল্ল্লেখ করা হয়েছে যে ৩৫% পুরুষ ইমিগ্রেন্ট তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ১.৩৩ ভাগ অন্য দেশে চলে গেছেন। আর ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া কানাডিয়ানদের মধ্যে এই হার ৪.৫%।
কিন্তু কেন চলে যাচ্ছেন এই ইমিগ্রেন্টরা আর কি তাদের অভিযোগ বা অভিমান? কানাডায় আসার জন্য যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরিয়া হয়ে নানা উপায় খুঁজেন সেখানে এই ইমিগ্রেন্টদের কানাডা ছেড়ে চলে যাওয়ার পিছনে রহস্য কি?
আমরা জানি মানুষের অভিবাসন ইতিহাস আজ নতুন নয়। বিশ্বব্যাপী মানুষ এক অঞ্চল থেতে অন্য অঞ্চল, এক দেশ থেকে অন্য দেশ, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেরিয়েছে কখনো ভাগ্যান্বেষে, কখনো নতুনের খোঁজে, কখনো অর্থনৈতিক কারণে, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, কখনো শিক্ষালাভের কারণে অথবা কখনো নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য। রাজ্য জয়ের নেশায়ও অতীতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়েছে মানুষ। গিয়ে স্থায়ী হয়েছে। আবার একপর্যায়ে নিজ দেশে ফেরতও এসেছে, কখনো বাধ্য হয়ে আবার কখনো প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়াতে।
কানাডার কথাই ধরা যাক। এখানে একমাত্র আদীবাসীরা ছাড়া বাকী সবাইতো অভিবাসী। কেউ আগে এসেছেন কেউ পরে এসেছেন। পার্থক্য এইটুকুই। অবশ্য আগে যারা এসেছেন (১৫ শতকের শুরুতে) তারা সঠিকভাবে অভিবাসী ছিলেন তা হয়তো বলা যাবে না। কারণ, আধুনিক যুগে অভিবাসীর যে সংঙা, সেই সংঙায় তারা পড়েন না। তারা ইউরোপ থেকে এসেছিলেন উপনিবেশ অনুসন্ধান করার জন্য এবং তা দখল করার উদ্দেশ্য নিয়ে। যেমনটা তারা করেছেন ভারত উপমহাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যন্য অঞ্চলে। আধুনিক যুগের অভিবাসীদেরকে নিয়মের মধ্য দিয়ে কানাডায় প্রবেশ করতে হয়। অনুমতি নিয়ে থাকতে হয় এ দেশে। পর্যায়ক্রমে তারা নাগরিকত্ব পান যদি কোন গুরুতর সমস্যা তৈরী না করেন। কিন্তু অতীতে যারা উপনিবেশ স্থাপনের জন্য এসেছিলেন তারা জোরজবস্তি করেছেন, যুদ্ধ বাধিয়েছেন, প্রতিপক্ষের লোকদের হত্যা করেছেন, নিজেরাও হত্যার শিকার হয়েছেন।
কানাডায় আসা আধুনিক কালের অভিবাসীদেরকে সেই কঠিন পথ অবলম্বন করতে হয়নি। অবশ্য সীমান্ত পথ দিয়ে যারা উদ্বাস্তু হিসাবে কানাডায় প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে কঠিন পথই অতিক্রম করতে হয়। যেমনটি হয়েছে ঘানা’র দুই নাগরিক রাজাক আয়াল ও সিডু মোহাম্মদ এর বেলায়। তারা ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত হওয়ার ভয়ে কানাডায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তমোতাবেক তারা উইনিপেগের সীমান্ত দিয়ে কানাডায় প্রবেশ করেন গত ডিসেম্বর মাসে। রাতের অন্ধকারে তারা যখন বর্ডার অতিক্রম করছিলেন তখন সেখানে তাপমাত্রা ছিল প্রায় মাইনাস ২০। সাথে ছিল না পর্যাপ্ত শীতের কাপর। কখনো কোমড় সমান তুষার স্তুপ কখনো হাটুসমান তুষার স্তুপের মধ্য দিয়ে পথ হেটেছেন তারা সীমান্ত অতিক্রমের সময়। এভাবে দীর্ঘ সময় লেগে যায় তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে। ইতিমধ্যে তীব্র শীতের কারণে তাদের হাতের আঙ্গুল ফ্রস্টবাইটের শিকার হয়। এভাবে দুর্গম পথ অতিক্রম করে একসময় তারা কানাডায় প্রবেশ করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে রিফ্যুজি স্টেটাসও পান। কিন্তু ফ্রস্টবাইটের কারণে তারা তাদের আঙ্গুলগুলো হারান। অপারেশন করে তাদের আঙ্গুলগুলো ফেলে দিতে হয়।
কদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি মালবাহী লড়ির অভ্যন্তর থেকে ৮ জন অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরেকজনের। আরো ২০ জনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে তাদের এই করুন দশা। লড়িতে কোন এয়ার কন্ডিশন ছিল না। টেক্সাসে তখন তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি। লড়ির ভিতরে পানিও ছিল না। ভয়াবহ তাপ ও পানিশূণ্যতায় ভুগে তাদের এই অবস্থায় পড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্গম দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অনেক উদ্বাস্তুই নানান উপায় অবল্বন করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং ঐ দুর্গম সীমান্তপথে অনেকেই সাপের কামরে বা পানিশূণ্যতায় কিংবা অনাহারে মারা যান। যারা প্রবেশ করতে পারেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ কানাডায় প্রবেশ করেন উদ্বাস্তু হিসাবে। হয়তো লড়ির ঐ ভাগ্যহত যাত্রীদের কেউ কেউ কানাডায় প্রবেশের চেষ্টা করতেন। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এভাবে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র পরে কানাডায় আসার চেষ্টা করেন।
এই যে এত কষ্ট করে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষজনের কানাডায় আসা, তাদেরও কেউ কেউ কি একসময় কানাডার প্রতি মোহ হারিয়ে ফেলেন? চলে যান অন্য দেশে বা নিজ দেশে?
যারা বৈধভাবে অর্থাৎ ইমিগ্রেশন নিয়ে কানাডায় প্রবেশ করেন তাদেরকে হয়তো কষ্ট করতে হয় না, জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয় না। কিন্তু তারপরও যখন তারা কানাডায় আসেন তখন তাদেরকে অন্য কিছু ঝুঁকি নিয়েই আসতে হয়। যেমন অনেককেই চাকরী ছেড়ে আসতে হয় বা ব্যবসা গুটিয়ে আসতে হয়। কেউ কেউ জমি বিক্রি করেন বা ব্যাংকে রাখা আমানত খরচ করে আসেন। অর্থাৎ ঝুঁকি ছাড়া কেউ কানাডায় আসেন না। তবে অতি ধনীদের কথা আলাদা। তাদের অর্থনৈতিক ঝুঁকি সাধারণ পেশাজীবীদের মত নয়।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি ছাড়াও আছে আত্মীয়-পরিজনদের ছেড়ে আসার মনোবেদনা। মাতৃভূমির মায়া ত্যাগের বেদনা। আরো আছে নতুন দেশে এসে নতুন পরিবেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কঠিন সংগ্রাম, তীব্র শীতের সঙ্গে যুদ্ধ এবং রুটিরুজির সংগ্রাম। অচমকা একসঙ্গে এতগুলো কঠিন সংগ্রামের মুখমুখি হয়ে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন। সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পরতে হয় পেশাজীবীদেরকে। কারণ তারা তাদের পেশাভিত্তিক চাকরীতে প্রবেশ করতে পারেন না। নানান রকমের প্রতিবন্ধকতার মুখমুখি হতে তাদেরকে কানাডায় এসে।
সাবেক রক্ষণশীল সরকার নতুন অভিবাসীদের জন্য বিদেশী শিক্ষাসনদের স্বীকৃতিদানের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও দক্ষ নবাগতরা সরকারের নিয়োজিত গবেষকদের বলছেন, তারা কোন কাজের জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার পরও কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে ‘বিপুল প্রতিবন্ধকতা’র মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এনভায়রনিকস রিসার্চ-এর তৈরি করা এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সারাদেশে ১২টি ক্ষেত্রের নবাগতরা বলেছেন, শিক্ষাসনদ ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোও কাজ খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও প্রকৌশলীসহ অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ভাষাগত বাধা এবং কোন কোন চাকরির পদের ক্ষেত্রে কানাডীয় অভিজ্ঞতার শর্ত সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, নবাগতরা বলছেন যে, তাদের সন্দেহ, কানাডীয় অভিজ্ঞতার শর্ত হলো চাকরিদাতাদের জন্য কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদেরকে আনুকূল্য দেয়ার একটি সাংকেতিক পদ্ধতি।
অংশগ্রহণকারীরা কানাডীয় যোগাযোগ বা নেটওয়ার্কের অভাবের কথা উল্লেখ করেন এবং ‘‘ভাষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবধানের কারণে সাধারণ সামাজিক যোগাযোগে অসুবিধার’’ বিষয়টিও উল্ল্লেখ করেন।
তারা এমনটা অনুভব করেন না যে, শিক্ষা সনদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়টি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিলো। বিদেশী শিক্ষা সনদের মূল্য নিয়েও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে যা নির্ভর করে তারা কে কোন দেশ থেকে এসেছে তার ওপর।
কানাডায় চকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশভেদে বেশ খানিকটা বৈষম্য রয়েছে। চীন, ভারত অথবা ফিলিপাইন থেকে পড়াশুনা করে আসা অভিবাসীরা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পেতে অনেক বেশি সমস্যায় পড়েন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স অথবা বৃটেনের অভিবাসীরা সেই তুলনায় বেশ সুবিধা পান। এসব দেশের অভিবাসীদের মধ্যে বেকারত্বের হার কম।
শিক্ষা ও পেশার এই গরমিল অন্যান্য ক্ষেত্রেও আছে। আর এ বিষয়টা নতুন অভিবাসীদের জন্য বেশ আতংকের।
ভ্যানকুভার ভিত্তিক অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী রিচার্ড কুরল্যান্ড বলেন, বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের অভাবে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া বেকারত্বের সমস্যার কারণে উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরণের রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। নতুনদের শিক্ষা ও যোগ্যতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে তা কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
দেখা গেছে একাধিক উচ্চতর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও অভিবাসীরা উপযুক্ত কাজ না পেয়ে তার যোগ্যতার তুলনায় ট্যাক্সি চালনাসহ অন্যান্য ছোট ছোট কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারীরা টিকে থাকার দায়ে কেরানি, অফিস সহকারী অথবা ট্যাক্সির হুইল ধরছেন।
চাকরীর খোঁজে প্রতি বছর যারা কানাডায় আসছেন, তাদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, নতুন অভিবাসীদের চাকরী বাজারে সমস্যায় পড়ার কারণ তাদের যোগ্যতার অভাব নয়, বরং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বৈষম্য এবং ভাষাগত সমস্যাই মূল কারণ।
আর এ সমস্ত কারণে নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে দেখা দেয় কানাডার প্রতি একটি অনীহা ও বিমুখতার ভাব। যে আশা আর যে স্বপ্ন নিয়ে তারা কানাডায় আসেন তা ধুসর হয়ে মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না।
কানাডা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ধনী দেশগুলোর একটি। বহু সংখ্যক সেরা ধনীরও বসবাস রয়েছে এই কানাডায়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রথম সারির ১০০ জন ধনী কানাডিয়ানের মোট সম্পত্তির পরিমান ২০০ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু এর উল্টো চিত্রও রয়েছে
এই কানাডায়। এখানে প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন লোককে ফুড ব্যাংকের স্মরনাপন্ন হতে হয় অভাবের তারনায়। আর এর প্রায় অর্ধেকই শিশু ও নতুন ইমিগ্রেন্ট।
ইউনিভারসিটি অব টরন্টোর সোস্যাল ওয়ার্ক ফেকাল্টির অধ্যাপক লিওনার্ড এডওয়ার্ডের মতে কানাডায় প্রতি তিনজন দরিদ্র লোকের মধ্যে একজন হলেন ইমিগ্রেন্ট যারা এখানে মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য হিসেবে বিবেচিতে হয়।
কারো কারো মতে কানাডায় দারিদ্রতাটি একটি বিশেষ গ্র“পের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা টরন্টো, ভ্যাংকুভার ও মন্ট্রিয়লের মতো বড় বড় শহরগুলোত থাকে তারাই এর শিকার হচ্ছে বেশী। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এই বড় বড় শহরগুলোতে ইমিগ্রেন্টদের বসবাসই বেশী এবং তারাই দারিদ্রতার শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশী।
কানাডিয়ান লেবার মার্কেট এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে সকল ইমিগ্রেন্ট এখানে এসেছে গত পাঁচ বছর বা তারো কম সময়ে, তাদের মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছেন। যাদের বয়স পঞ্চাশ বা তারো বেশী তাদের অবস্থা আরো করুন। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় এখন থেকে দুই দশক আগে ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ ছিলেন দারিদ্রসীমার নিচে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমিগ্রেন্টদের বর্তমান দারিদ্রতার বিষয়টি একটি বিস্ফোরম্মুখ অবস্থায় বিরাজ করছে। সামাজিক বিশৃংখলাসহ আরো অনেক ধরণের সমস্যা তৈরী করতে পারে দারিদ্রতার এই হার।
বিশেষজ্ঞদের মতে দরিদ্র এই ইমগ্রেন্টদের মধ্যে অধিকাংশই রয়েছে উচ্চ শিক্ষিত যারা কানাডায় এসেছে স্কিল্ড ক্যাটাগরীর পয়েন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে। স্বভাবতই তাদের ধারণা ছিল কানাডার ইমিগ্রেশনের পয়েন্ট সিস্টেমে যেহেতু তারা যোগ্য বিবেচিত হয়েছে সেহেতু কানাডার জব মার্কেটেও তারা যোগ্য হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা হলো তার উল্টো। কানাডায় আসার পর নতুন এই ইমিগ্রেন্টরা দেখলো যে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এখানকার চাকুরীদাতাদের কাছে কোন গুরুত্ব নেই। নিজের দেশ থেকে একজন লোক যখন তার চাকরী ছেড়ে এবং জায়গা জমি বিক্রি করে দিয়ে কানাডায় এসে দেখেন নিজ প্রফেশনের কোন জব নেই বা জব মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানারকম বাধাবিপত্তি বিরাজ করছে তখন স্বাভাবিক কারণেই তিনি চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হতাশা আরো বৃদ্ধি পায় যখন তিনি দেখেন পেশা বদল করেও কোন লাভ হয় না। কারণ, দারিদ্রতা পিছনে লেগেই থাকে। পেশা বদল করে তারা যেসব কাজে নিয়োজিত হন সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম বেতনের চাকরী যার জন্য সাধারণভাবে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। এক কথায় ‘অড জব’। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে কানাডিয়ান লেবার মার্কেট এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্যে এই চিত্রই ফুটে উঠেছে।
ম্যাক মাস্টার ইউনিভারসিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আর্থার সুইটম্যান সম্প্রতি হ্যালিফেক্সে এক ভাষনে বলেন, অতীতে ইমিগ্রেন্টরা কানাডায় আসার ৫ বছরের মাথায়ই কানাডিয়ানদের সমপরিমাণ আয় করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। তিনি জানান, ১৯৮০ সালের দিকে কানাডায় দরিদ্র লোকের সংখ্যা ছিল কানাডিয়ান এবং ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে প্রায় সমান সমান। কিন্তু বর্তমানে ইমিগ্রেন্টদের অর্ধেকই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন।
সুইটম্যান আরো জানান, বিষয়টি এমন নয় যে, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী এই সকল ইমিগ্রেন্টারা শিক্ষায় দক্ষতায় বা অভিজ্ঞতায় কানাডিয়ানদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বরং অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র এই ইমিগ্রেন্টরা তাদের কানাডিয়ান কাউন্টারপার্টদের চেয়ে অনেক বেশী উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তাদের সেই শিক্ষার মান অনুপাতে তারা প্রয়োজনীয় মজুরী পাচ্ছেন না। তিনি এর কারণ হিসেব যে বিষগুলোতে দায়ী করেছেন তার মধ্যে আছে বৈষম্যতা, ভাষা ও সংস্কৃতি। তিনি বলেন, ইংরেজী ও ফ্রেন্স ভাষার উপর ইমিগ্রেন্টদের দখল থাকে কম।
কানাডায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যেও আবার রয়েছে আয়ের ভিন্নতা। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার এক হিসাবে দেখা যায় পূর্ব এশিয়া থেকে আগত ইমিগ্রেন্টদের আয় সবচেয়ে কম। ফলে ঐ অঞ্চল থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকরীর সংখ্যাও বেশী। প্রায় ৫০ ভাগ পূর্ব এশিয়ান ইমিগ্রেন্টই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন কানাডায়। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন পশ্চিম মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত ইমিগ্রেন্টদের অবস্থান। এদের প্রায় ৪০ ভাগ লোক দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। তৃতীয় স্থানে আছে উত্তর আফ্রিকা ও চীন থেকে আগত ইমিগ্রেন্টরা। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। তবে ভারত থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের অবস্থা এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের তুলনায় ভাল। শতকরা প্রায় ১৮ ভাগ ভারতীয় ইমিগ্রেন্ট বসবাস করছেন দারিদ্রসীমার নিচে। অন্যদিকে ইউরোপ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে যারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন তাদের সংখ্যা শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ বা তারো নিচে।
এরকম পরিস্থিতে যদি দেখা যায় যে, নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদের শতকরা ৩৫ ভাগই কানাডা ছেড়ে চলে গেছেন তবে আশ্চর্য হবার কিছু আছে কি?
অবশ্য এদের সবাই যে পরিবার পরিজন নিয়ে কানাডা ছেড়ে চলে যান তা কিন্তু নয়। এদের মধ্যে অনেকেই চাকরীর খোঁজে চলে যান স্বদেশে বা তৃতীয় কোন দেশে। আর পরিবার রেখে যান কানাডায়। কারণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হয়।
এই পেশাজীবীদের রেখে যাওয়া পরিবারগুলো নিয়ে মিসিসাগায় গড়ে উঠেছে বেগম পাড়া নামের কয়েকটি এলাকা। এগুলোর বেশীর ভাগেরই অবস্থান স্কয়ার ওয়ান মল এবং সেরিডিয়ান মলের নিকবর্তী সুউচ্চ ভবনগুলোতে। বেগম পাড়ার এই বেগমেরা সংসার চালানো জন্য নিয়মিত অর্থ পান মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত তাদের স্বামীদের কাছ থেকে। কেউ কেউ অবশ্য এখানে নিয়মিত বা অনিয়মিত কাজও করেন বাড়তি কিছু অর্থ আয়ের জন্য। টরন্টো স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বেগমদের সবাই প্রতিকুল অবস্থার সঙ্গে কঠিন লড়াই করছেন। একাকিত্ব, একা বাচ্চাদের লালন পালন করা, লং-ডিস্টেন্স ম্যারেজ, ফিয়ার অব স্পাউজাল ইনফাইডিলিটি (স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক বিশ্বাসঘাতকতা), নতুন কালচারের দেশ ও সামাজ এবং ফরেইন বুরোক্রেসী এই সবই তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বেগম পাড়ার এই মহিলাগণ নিয়তই তাদের একাকিত্বের জন্য উদ্বেগ আর বিষন্নতায় ভুগেন। আর খুব কম লোকেই আসলে বুঝতে পারেন এর ব্যাপকতা কতখানি। এই ধরণের চাপ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
এদেরই একজন সাবা খাতুন যিনি থাকেন সেরিডিয়ান মলের কাছে তার দুই ছেলে নিয়ে। সাবার বয়স ৩৬। তার দুই ছেলের বয়স ৮ এবং ৬। সাবার স্বামী কাজ করেন কাতারে। ছেলেদের চিন্তায় কিছুতেই আসে না তাদের বাবা কেন আরেক দেশে থাকেন। তারা মা’কে প্রায়ই প্রশ্ন করে এই বলে যে, “মা, তোমরা কি ডিভোর্স নিয়ে নিচ্ছ? সাবা বলেন, ছেলেরা খুব চিন্তা করে এ নিয়ে। তাদেরকে অনেকভাবে বুঝানো হচ্ছে যে, অর্থের প্রয়োজনেই তাদের বাবা অন্যদেশে চাকরী করছেন। হয়তো আরেকটি বয়স হলে তারা বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হবে।
সাবা বলেন, অবুঝ ছেলেদেরকে বিষয়টি বুঝানো অত কঠিন নয় যতটা কঠিন এরকম প্রশ্ন যখন পরিবারের বাইরের অন্যকোন প্রাপ্তবয়স্করা করে বসেন। সাবা বলেন, আরো বিরক্ত লাগে যখন কেউ বলেন আমরা পাসপোর্টের জন্য এই দেশে এসেছি। পাসপোর্টটি পেলেই আমরা চলে যাব। এটি হয়তো কারো কারো বেলায় সত্যি। তবে আমাদের বেলায় নয়। আর এই বেগম পাড়ার সিংহভাগ মানুষের বেলায়ই এই ‘টেম্পরারী সেপারেশনের’ বিষয়টি জীবনের কঠিন সত্য।
কানাডায় নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদের এই দুরাবস্থার পাশাপাশি অন্য চিত্রও রয়েছে। নতুন এক পরিসংখ্যানে অনুযায়ী দেখা যায়, কানাডার প্রায় অর্ধেক মিলিয়নিয়ার হয় অভিবাসী নাহয় কানাডায় প্রথম প্রজন্ম। এরা সবাই বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন কানাডায় আসার পর।
জড়িপে অংশ নেয়া মাত্র ২০ শতাংশ জানিয়েছে তাদের সম্পদের অন্তত একটি অংশ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।
বিএমও হ্যারিস প্রাইভেট ব্যাংকিং জরিপে দেখা যায়, এক মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি নগদ অর্থের মালিক ৪৮% কানাডিয়ান হয় অভিবাসী(২৪%) অথবা কানাডায় প্রথম প্রজন্ম (২৪%)। অর্থাৎ তাদের বাবা-মা’র মধ্যে অন্তত একজনের জন্ম কানাডার বাইরে। বৃটিশ কলাম্বিয়ার ৬৮% মিলিয়নিয়ার জানিয়েছেন তারা কানাডার নতুন নাগরিক।
কানাডায় আসার পর মিলিয়নিয়ার হয়েছেন এমন একজন হচ্ছেন বিক্রম ভিজ। কানাডায় অভিবাসী হিসেবে আসার পাঁচ বছর পর তিনি ভ্যানকুভারে একটি ভারতীয় খাবারের রেস্টুরেন্ট খোলেন।
সিটিভি’র রিপোর্টারকে ভিজ বলেন, “আমি যখন এই দেশে আসি তখন আমি বুঝতে পারি এটি হচ্ছে তারুণ্যদ্বীপ্ত একটি দেশ। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যদি আমি কঠোর পরিশ্রম করি, এই দেশ আমাকে উন্নতি করার সুযোগ দেবে। ভারতে থাকাকালীন সময়ে এটাই আমি চেয়েছিলাম”।
পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, ভিজের মতো কানাডার দুই-তৃতীয়াংশ মিলিয়নিয়ার কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে তার মূলধন গড়ে তুলেছেন।
বিএমও-এর অ্যালেনৈ ডেজনোয়ার্স বলেন,“ তাদের সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নয়। এরা সবাই নিজের সম্পদ নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন”।
এই শ্রেণীর অভিবাসী বা ইমিগ্রেন্টরা অবশ্যই কানাডা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবেন না। এছাড়া আরেক শ্রেণীর ইমিগ্রেন্ট আছেন যারা কানাডা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবেন না। বা যানও না। এরা দরিদ্র ও অনুন্নত দেশে থেকে আসা ইমিগ্রেন্ট। এদের অধিকাংশেরই কোন উচ্চতর ডিগ্রি নেই। নেই প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড। সাধারণ জব করেও মাতৃভূমির চেয়ে তারা এখানে অনেক ভাল আছেন। দেশে থাকলে তারা ছেলেমেয়েদেরকে উন্নত ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারতেন না। এখানে তাদেরকে সে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না।
আরেক শ্রেণীর ইমিগ্রেন্ট আছেন যারা কানাডাকে অপছন্দ করে নয়, চাকরীর সুবাদে দেশের বাইরে গিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ আছেন নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ নিজ মাতৃভূমিতে স্থায়ীভাবে ফিরে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে লেবানীজ কানাডিয়ানদের কথা উল্ল্লেখ করা যেতে পারে। ২০০৬ সালে যখন লেবাননের হিজবুল্লা গ্র“প ও ইজরাইলের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয় এবং সেই বিরোধ যুদ্ধে রূপ নেয় তখন সেখানে বিপুল সংখ্যক লেবানিজ কানাডিয়ান অবস্থান করছিলেন। এরা কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পাওয়ার পর লেবাননে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা যেহেতু কানাডারও নাগরিক, সে কারণে তাদের নিরাপত্তা দানের জন্য কানাডার তৎকালিন কনজারভেটিভ সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় প্লেন ভাড়া করে ১৫ হাজার লেবানিজ কানাডিয়ানকে কানাডায় নিয়ে আসেন। এ জন্য সরকারের কোষাগার থেকে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৯৪ মিলিয়ন ডলার। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, এত বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে এই লেবানিজদের কানাডায় নিয়ে আসা হলেও যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর এদের প্রায় সবাই আবার লেবাননে ফিরে যান। বিষয়টি নিয়ে তখন বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার। ফলশ্র“তিতে কানাডার ইমিগ্রেশন আইনও পরিবর্তন করা হয় কিছুটা।
এতো গেল একটা দিক। কিন্তু যে সকল প্রফেশনাল ইমিগ্রেন্ট কানাডায় এসে চাকরী না পেয়ে কানাডা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তাদের বিষয় নিয়ে কানাডার সরকারের মাথা ব্যথা কতটুকু?
এই ইমিগ্রেন্টদের কেউ কেউ কানাডায় আসার পর এক থেকে দুই বা তিন বছরের মধ্যেই চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আরেকটু বেশী সময় অপেক্ষা করে কানাডার পাসপোর্টটি হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
কথায় আছে ’মরার আবার জাত কি’। ইমিগ্রেন্টদের ক্ষেত্রে বলা যায় ‘তাঁদের আবার দেশ কি’। যাঁরা নিজ মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করতে পারেন নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অথবা উন্নত জীবনযাপনের জন্য, তাঁরা প্রয়োজনে কানাডার মায়াও ত্যাগ করতে পারেন। তার প্রমানও লক্ষ্য করা গেছে কানাডায়। দেখা গেছে, এখানকার চাকরী ক্ষেত্রের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে এবং আয়ের উন্নতি ঘটাতে না পেরে গত দুই দশকে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ইমিগ্রেন্টদের একতৃতীয়াংশ কানাডা ছেড়ে চলে গেছেন। অদূর ভবিষ্যতে এই ছেড়ে যাওয়ার হার আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন। এটি নিশ্চই কানাডার অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়। কারণ, ইমিগ্রেন্টরা এদশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তির একটি উল্ল্লেখযোগ্য অংশ। এদেরকে অবহেলা করে, তাচ্ছিল্য করে কানাডার অগ্রগতি সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হতো তবে অন্য দেশ থেকে ইমিগ্রেন্ট আনার কোন প্রয়োজন পড়তো না। প্রয়োজন ছিল বলেই এবং এখনো আছে বলেই ইমিগ্রেন্ট আনা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার অভাবে অথবা পরিকল্পনাহীনভাবে ইমিগ্রেন্ট নিয়ে আসার কারণে এখানে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। আর এই জটিলতাকে আরো জটিল করে তুলেছে ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ নামক এক পর্বতপ্রমান বাঁধা। কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স নেই বলে ইমিগ্রেন্টদেরকে কোন পেশাভিত্তিক কাজে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ বলেন এই ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ এর অপর নাম ‘কানাডিয়ান বর্ণবাদ’। এই বর্ণবাদের বাধা ডিঙ্গানো ইমিগ্রেন্টদের জন্য সহজ কাজ নয়। ইমিগ্রেন্টদেরকে এখানকার চাকরীর বাজারে করে রাখা হয়েছে অচ্ছুত ও অস্পৃশ্য। আর এ কারণেই ইমিগ্রেন্টদের আয় কম এবং এদের মধ্যে গরীবের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, আমাদের সমাজে বয়স্কলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ কারণে ইমিগ্রেন্টদের উপর আমাদেরকে আরো বেশী করে নির্ভর করতে হবে আগামী দিনগুলোতে। এখন যদি এরা বৈরী অবস্থার কারণে অন্যত্র চলে যান তবে তা হবে কানাডার অর্থনীতির জন্য এক বিপর্যয়কর অবস্থা। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কানাডার সরকার ও বিভিন্ন চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।