কুইবেকের সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে মুসলমানদের জন্য কবরস্থান নির্মান করা যাবে না

আগস্ট ৫, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার কুইবেক প্রভিন্সের রাজধানী কুইবেক সিটির নিকটস্থ সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটির অধিবাসীরা এক গণভোটের মাধ্যমে রায় দিয়েছেন তাদের এলাকায় মুসলমানদের জন্য কোন কবরস্থান নির্মান করা যাবে না। এই সিটিতে প্রায় ৬ হাজার লোকের বাস। এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা কত তা অবশ্য জানা যায়নি।

উল্ল্লেখ্য যে, কুইবেক সিটিতে মুসলমানদের জন্য কোন কবরস্থান নেই। এখানে কারো মৃত্যু হলে বেশ দূরের আরেকটি শহর লাভালে লাশ নিয়ে যেতে হয় দাফন করার জন্য। গত জানুয়ারী মাসে কুইবেক সিটিতে অবস্থিত ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেক এর মসজিদে পরিচালিত হামলায় নিহতদের মধ্যে একজনের লাশ দাফন করা হয়েছিল এই লাভালে এবং বাকী ৫ জনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের নিজেদের জন্মভূমিতে।

সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার এ মুসলিমদের জন্য পৃথক একটি কবরস্থান নির্মানের পরিকল্পনাটি শুরু হয় ২০১৬ সালে যখন স্থানীয় ‘নন-ডিনমিনেশনাল হারমোনিকা ফিউনারেল হোম’ এর পরিচালক সিলভিন রয় জানতে পারেন যে মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে তাকে দাফন করার কোন সুযোগ নেই কুইবেক সিটিতে। বিষয়টি আরো বেশী করে নজরে আসে যখন কুইবেক সিটিতে মসজিদে হামলা চালিয়ে ৬ জন মুসল্লিকে হত্যা করা হয়। কুইবেক সিটিতে তাদের কাউকেই দাফন করা যায়নি।

গত জানুয়ারীতে কুইবেক সিটির মসজিদে হামলায় নিহতদের জানাজায় স্থানীয় মুসল্লিগণ। ছবি: কানাডিয়ান প্রেস

গত ফেব্র“য়ারী মাসে ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেক এর কাছে হারমোনিকা ফিউনারেল হোম এক খন্ড জমি বিক্রির করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় যেখানে মুসলিমদের জন্য কবরস্থান নির্মান করা হবে। এই চুক্তি স্থানীয় কাউন্সিলেও সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ চুক্তিটি হোল্ড করে রাখা হয় স্থানীয় অধিবাসীদের (যাদের জমি জোনিং চেঞ্জের কারণে এফেক্টেড হতে পারে) মতামত জানার জন্য।

এই পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পর ভোট ৩৯ জন ভোট দেওয়ার জন্য নিজেদের নাম রেজিস্ট্রি করেন। আর নির্দিষ্ট দিনে (গত ১৬ জুলাই) ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন মাত্র ৩৬ জন। দিনের শেষে ভোট গণনার পর দেখা যায় পক্ষে ভোট পড়ে ১৬টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯টি। আর ত্র“টির জন্য একটি ভোট বাতিল হয়ে যায়। ফলে সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার এ মুসলিমদের জন্য পৃথক একটি কবরস্থান নির্মানের পরিকল্পনাটি বাতিল হয়ে যায়।

ফলাফলের বিষয়টি স্থানীয় মুসলিমদেরকে দারুনভাবে নিরাশ করে। ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেক এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লাবিদি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক একটি সিদ্ধান্ত। এতে আমরা উপেক্ষিত অনুভব করছি। গনভোটের ফলাফল একসঙ্গে বসবাসের বিরুদ্ধে গেল।

হারমোনিকা ফিউনারেল হোম এর পরিচালক সিলভিন রয় বলেন, গনভোটের ফলাফল কুইবেকের মুসলিমদের জন্য ভাল বার্তা নয়। এটি বুঝা খুবই কঠিন যে কি ঘটেছিল সেখানে। আমরা যা চেয়েছিলাম তা হলো, পাশাপাশি দুটি সমাধিস্থল তৈরী করে ঐকতানের একটি প্রতীক উপস্থাপন করা। এটিই কানাডার প্রতীক যা আমরা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু আমরা সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটির বাসিন্দাদের কাছ থেকে যে মতামত পেলাম তা নিশ্চিতভাবেই বিস্ময়কর।

সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটির মেয়র বার্নার্ড আউলেট বলেন, আমি ফলাফল জেনে খুবই নিরাশ হয়েছি।

এদিকে কুইবেক প্রভিন্সের প্রিমিয়ার ফিলিপ কুইয়ার্ড এ বিষয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি মনে করি না গণভোটের এই ফলাফল কুইবেকের অনুকূল কোন প্রতিবিম্ব। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, এর সমাধান পাওয়া যাবে। মুসলিমরা যাতে নিজেদের জন্য কবরস্থানের জায়গা খুঁজে  পায় সে ব্যাপারে প্রভিন্স কাজ করবে।

– তথ্য সূত্র : টরন্টো স্টার, রেডিও কানাডা, কানাডিয়ান প্রেস ও সিবিসি।