কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্তে প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকায় ইউএস বর্ডার গার্ডদের অধিকতর ক্ষমতা প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি : কানাডায় প্রতিবাদের ঝড়
সিনেট কমিটিতে আটকে আছে বিলটি : পাশ হলে কানাডিয়ানরা গ্রেফতার হতে পারেন প্রি-ক্লিয়ারেন্স এলাকায়
সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার বিমানবন্দর এবং অন্যান্য বন্দরে প্রাক-অনুমোদন (Pre-clearance) সম্পর্কিত নতুন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিপুল সংখ্যক মানুষের ই-মেল বার্তা পেয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে মার্কিন সীমান্ত রক্ষীদেরকে যে ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সিবিসি নিউজে খবর প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ই-মেলের বন্যা বয়ে যায়। সরকারি নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কানাডার সঙ্গে সর্বশেষ আন্তঃসীমাস্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন কংগ্রেস আট মাস আগেই তাদের তরফে প্রয়োজনীয় আইন অনুমোদন করেছে। খবর সিবিসি নিউজের।
মার্কিন আইনে সেদেশের কাস্টমস ও সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদেরকে কানাডার আরও বেশি সংখ্যক স্থানে প্রাক-অনুমোদন কেন্দ্র স্থাপনের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। এর ফলে কানাডীয় পর্যটকরা তাদের মার্কিন গন্তব্যে পৌঁছার পর কানাডার অভিবাসন ও কাস্টমস-এর প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারবেন।
কানাডাও আইনটি একই সময়ে অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছিলো। কারণ কানাডাই নতুন চুক্তি সম্পাদনের জন্য জোরালোভাবে ধরাধরি করেছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেভিড ম্যাকনটন সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিকে বলেছেন যে, তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থেকে চাপ অনুভব করছেন, তারা জানতে চাচ্ছেন কানাডা কখন আইনটি পাস করবে।
গত জুন মাসে ম্যাকনটন সিনেটরদের বলেন, “দয়া করে দ্রুত বিলটি পাস করুন, কারণ আমি কিছুটা বিব্রত। আমি মার্কিনীদের কাছে জোরালোভাবে লবিং করেছি এবং এখন তারা পাল্টা জানতে চাচ্ছে, ‘তোমার আইন কোথায়?’”
কানাডার কমন্সসভায় বিলটি অনুমোদিত হয়েছে কিন্তু সিনেটে এখনও পাস হয়নি।
এটি পাস না হওয়ার একটি সম্ভাব্য সূত্র হলো প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো জনগণের বিপুল সংখ্যক ই-মেল বার্তা।
সমালোচনার ঝড়
জনগণের পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিপুল ভান্ডারের খোঁজ পেয়েছে সিবিসি নিউজ, যার বেশিরভাগই ই-মেল। নতুন চুক্তির বিতর্কিত সি-২৩ অনুচ্ছেদ, বিশেষ করে কানাডার মাটিতে কর্মরত মার্কিন সীমান্তরক্ষা কর্মকর্তাদেরকে দেয়া নতুন ক্ষমতা সমপর্কিত বিষয়ে সিবিসি নিউজে খবর প্রকাশের পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে জনগণের পক্ষ থেকে এসব যোগাযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ১০ ফেব্র“য়ারি থেকে ২০ ফেব্র“য়ারির মধ্যে পাঠানো জনগণের চিঠি ও ই-মেল-এর মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৫২৭। এর মধ্যে মাত্র ৭৭৭টি পৃষ্ঠা সিবিসির কাছে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশিত চিঠিগুলোর লেখকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিঠি ও ই-মেলগুলো কোন শহর বা কোন প্রদেশ থেকে পাঠানো হয়েছে সেটাও সম্পাদনা করে বাদ দেয়া হয়েছে।
সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনগণের পক্ষ থেকে পাঠানো বার্তার সংখ্যা “নজীরবিহীন” এবং জননিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা এটা দেখে বিস্মিত হয়েছেন।
প্রাক-অনুমোদন কী?
প্রাক-অনুমোদন হলো যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে যাওয়া কানাডীয় পর্যটকদেরকে কানাডার ভেতরে কোনও কানাডীয় বন্দরে অবস্থান করার সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও অভিবাসন বিভাগের অনুমোদন দিয়ে দেয়ার ক্ষমতা।
কানাডার আটটি বিমানবন্দর প্রাক-অনুমোদন দিতে পারে। চলতি বছর আরও দুটি বিমানবন্দর থেকে প্রাক-অনুমোদন দেয়া হবে। ভ্যাঙ্কুভার বিমানবন্দর, ভ্যাঙ্কুভার রেল স্টেশন এবং ব্রিটিশ-কলাম্বিয়া থেকে ওয়াশিংটনমুখি কয়েকটি নৌ-বন্দরকেও প্রাক-অনুমোদনের ক্ষমতা দেয়া হবে। চলতি বছরের শেষ দিকে মন্ট্রিয়লের আমট্র্যাকস থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে যাওয়ার জন্য মন্ট্রিয়ল রেল স্টেশনকেও প্রাক-অনুমোদনের ক্ষমতা দেয়ার কথা রয়েছে।
উদ্বেগের কারণ মূলত আটক করার ক্ষমতা নিয়ে
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো জনগণের বেশিরভাগ চিঠিতে লেখকরা কানাডার মাটিতে কর্মরত মার্কিন সীমান্তরক্ষা কর্মকর্তাদেরকে দেয়া নতুন ক্ষমতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, অস্ত্র বহন করার ক্ষমতা এবং সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়, মার্কিন কর্মকর্তারা যদি জিজ্ঞাসাবাদের সময় কানাডীয় পর্যটকের জবাবে সন্তুষ্ট না হন তাহলে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করতে পারবেন এমন ক্ষমতা প্রদান।
এখন পর্যন্ত প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কানাডার বন্দরে মার্কিন প্রাক-অনুমোদন গ্রহণকারী পর্যটকদের এমন অধিকার রয়েছে যে, জিজ্ঞাসাবাদ যথাযথ না হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুরোধ প্রত্যাহার করতে এবং বন্দর ত্যাগ করতে পারেন।
কানাডার প্রস্তাবিত আইনে ওই অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একজন লিখেছেন, “কানাডার মাটিতে অবস্থানকালে কোনও কানাডীয়কে আটক করার ক্ষমতা মার্কিন কর্তৃপক্ষকে দেয়ার মাধ্যমে কানাডার নাগরিক হিসাবে আমাদের অধিকার লংঘন করা হয়েছে।” তিনি লিখেছেন, “জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার প্রতি আমার সমবেদনা থাকলেও আমি দেখতে পাচ্ছি যে, এটি হলো আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আরেকটি বিপজ্জনক আঘাত।”
আরেকজন পত্রলেখক লিখেছেন, “আমি যদি সীমান্ত পেরিয়ে যেতে চাই এবং আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, আমার ধর্ম, কোনও বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত বিশ^াস ইত্যাদি বিষয়ের ওপরই যদি জিজ্ঞাসাবাদে জোর দেয়া হয় এবং তা যদি স্বাচ্ছন্দ্যকর না হয় অথবা আমার নিজের নিরাপত্তার জন্য ভীতিকর হওয়ার কারণ হয়ে দেখা দেয় তাহলে আমার দ্ব্যর্থহীনভাবে একথা বলার অধিকার থাকতে হবে যে, ঠিক আছে, আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টেছি, আমি আজ আর আটলান্টায় যেতে চাই না।’ আমি আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবো।
একজন নাগরিক জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী র্যাল্ফ গুডেলকে ই-মেল পাঠিয়ে বলেছেন, “আমি বুঝতে পারছি মার্কিনীরা ওই অধিকার ও কর্তৃত্ব চাচ্ছে। এটি হতে যাচ্ছে হাজার হাজার যাচাইবাছাইহীন তথাকথিত অভিবাসীকে কানাডায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তএলাকায় রাখার ট্রুডোর পরিকল্পনার অংশ।”
তবে এই লেখক অন্যদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, “নিজের দেশকে সুরক্ষা দেয়ার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের আছে… কিন্তু তাদের এমন অধিকার নেই কিংবা থাকতে পারে না যে তারা কানাডার মাটিতে কানাডীয় নাগরিককে আটক করতে পারে।”