দ্বৈত নাগরিকেরা নাগরিকত্ব হারাবেন না
বিল সি-৬ পাস : অভিযুক্তদের কানাডার বিদ্যমান আইনেই বিচার করা যাবে
জুন ১৬, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ১৫ জুন সিনেট কমিটিতে বিল সি-৬ পাস হয়েছে। বিগত কনজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক প্রণীত ইমিগ্রেশন আইনের (যা বিল সি-২৪ নামে পরিচিত) বেশ কিছু বিতর্কিত ধারা বাতিল করার জন্য লিবারেল সরকার গত বছর ২৫ ফেব্র“য়ারী পার্লামেন্টে বিল সি-৬ উত্থাপন করেছিল। বিলটি থার্ড রিডিং এর পর পাশ হয় ঐ বছরেরই ১৭ জুন। এর পর নিয়ম অনুযায়ী তা পাঠানো হয়েছিল সিনেট কমিটিতে অনুমোদনের জন্য। কিন্তু সিনেট কমিটিতে গিয়ে বিল সি-৬ আটকে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য।
এই সময়ের মধ্যে বিল সি-৬ নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার পর দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে একটি সংশোধনীর প্রস্তাব গত এপ্রিল মাসে পাশ হয় সিনেট কমিটিতে। এর পরই তা পার্লামেন্টে ফেরত পাঠানো হয়। পার্লামেন্ট এতে সম্মতি দেয় এবং পুনরায় সিনেট কমিটিতে প্রেরণ করে।
সিনেট কমিটিতে গত ১৫ জুন সংক্ষিপ্ত বিতর্কের পর ৫১-২৯ ভোটে পাশ হয়। বিলটি পাশ হওয়াতে এখন কোন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব হরণ করা যাবে না যদি সে
-কোন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হয়ে থাকেন বা কোন সংগঠিত সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য হয়ে থাকেন যেটি কানাডার সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত।
-কেউ যদি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সাজা প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকেন এবং জাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে থাকেন।
-কেউ যদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন অথবা সমজাতীয় অপরাধে বিদেশে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন এবং সেই সাজার পরিমাণ যদি ৫ বছর বা তারো বেশী হয়ে থকে।
বিল সি-৬ পাস হওয়াতে এখন উপরে উল্লেখিত কারণে কেউ অভিযুক্ত হলে কানাডার বিদ্যমান আইনে তার বিচার করা যাবে কিন্তু নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে না।
কিন্তু অনেক দ্বৈত নাগরিক তাদের কানাডিয় নাগরিকত্ব হারিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে নয়, তারা নাগরিকত্ব হারিয়েছেন ইমিগ্রেশন বা নাগরিকত্বের আবেদনপত্রে ভুল বা ভূয়া তথ্য দেওয়ার কারণে। কারণ, আইনে আছে- কেউ যদি ইমিগ্রেশন আবেদন পত্রে অথবা নাগিরকত্বের আবেদন পত্রে কোন মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন বা কোন কিছু গোপন করে থাকেন তবে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে। কনজার্ভেটিভ পার্টি কর্তৃক বিল সি-২৪ পাশ করার আগেও এই আইনটি ছিল। তবে বিল সি-২৪ এ যা সংযোজন করা হয় তা হলো, এর বিরুদ্ধে আদলতে আপিল করা যাবে না। বর্তমান লিবারেল সরকারও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেনি। বরং দেখা গেছে যে, লিবারেল সরকার ক্ষমতায় এসে সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকারের করে যাওয়া বিতর্কিত ইমিগ্রেশন আইন (বিল সি-২৪) ব্যবহার করে গত বছর আগস্ট পর্যন্ত ১৮৪ জন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে তাদেরকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় লিবারেল সরকার সাবেক কনজার্ভেটিভ সরকারের তুলনায় অধিক আক্রমনাত্বকভাবে এই কাজটি করছে।
ট্রুডো সরকার শপথ নেয় ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর। ঐ মাসেই নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় ২১ জনের। তার পরের মাসে নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় ৫৯ জনের। আর ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১৩ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। সাবেক কনজার্ভেটিভ পার্টি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি মাসে নাগরিকত্ব বাতিল করেছে গড়ে ২.৪ জন করে।
সিনেট আপত্তি আনে এখানটাতেই। বলা হয় কারো নাগরিকত্ব বাতিল করতে হলে সেটা আদলতের মাধ্যমেই হতে হবে। ইমিগ্রেন্ট এ্যাডভোকেটস এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রবক্তাগণ সিনেটের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তাদেরও দাবী ছিল, কোন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করার আগে তাকে আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ দিতে হবে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নাগরিকত্ব বিষয়ে তার সুষ্পষ্ট বক্তব্য পেশ করেছিলেন গত নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে এক নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছিলেন, “A Canadian is a Canadian is a Canadian”। তাঁর এই বক্তব্য ছিল তখনকার সরকারের করা ইমিগ্রেশন আইন (বিল সি-২৪) এর বিরোধীতা করার জন্য।
উল্লেখ্য যে, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ইতিপূর্বে জাকারিয়া আমারা নামের এক ব্যক্তির নাগরিকত্ব হরণ করা হয়। ২০০৬ সালে টরন্টোতে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি ও তার গ্র“পের আরো ১৭জন মিলে। নতুন আইনে এখন জাকারিয়ার নাগরিকত্ব ফিরে পাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
লিবারেল প্রস্তাবিত বিলে আরো দুটি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল যার একটি হলো, নাগরিকত্ব লাভের জন্য ল্যাংগুয়েজ এন্ড নলেজ টেস্ট এর বয়স ১৮ থেকে ৫৪ বছর করা। কনজারভেটিভ পার্টি আইন করে গিয়েছিল যাদের বয়স ১৪ থেকে ৬৪, তাদেরকে ল্যাংগুয়েজ এন্ড নলেজ টেস্ট পাস করতে হবে নাগরিকত্ব পেতে হলে। তবে সিনেট কমিটি লিবারেল প্রস্তাবিত সর্ব্বোচ্চ বয়স ৫৪ এর স্থলে ৫৯ করতে চেয়েছিল। কিন্তু লিবারেল তাতে সম্মতি দেয়নি।
লিবারেল প্রস্তাবিত অন্য যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল তা হলো, নাগরিকত্ব পেতে হলে কাউকে আর বলতে হবে না যে কানাডায় বাস করবে।
সাবেক কনজারভেটিভ সরকার আরো আইন করে গিয়েছিল কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে ইমিগ্রেন্টদেরকে ৬ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৪ বছর কানাডায় বাস করতে হবে। আগে নিয়ম ছিল ৪ বছরের মধ্যে তিন বছর কানাডায় থাকতে হবে। লিবারেল সরকার এখন নিয়ম করেছে ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩ বছর কানাডায় বাস করতে হবে সিটিজেনশীপের জন্য আবেদন করার আগে।
বিল সি-৬ এখন রানীর অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী কোন বিল পার্লামেন্টে ও সিনেটে পাশ হলে তা রানীর কাছে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমতির জন্য। রানী অনুমতি দিলে সেই বিল আইনে পরিনত হয়। এ ব্যাপারে যে কোন দিনই ঘোষণা আসতে পারে।
তবে বিরোধী কনজার্ভেটিভ পার্টি এই বিল সি-৬ এর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এর ফলে লোকজন আবেদন পত্রে মিথ্যা বলার ব্যাপারে উৎসাহিত হবে।