টরন্টোতে বাংলাদেশী তরুণকে গুলি করে হত্যা

জুন ১৫, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টোতে এক বাংলাদেশী তরুণকে গুলি করে হত্যা করেছে দুবৃত্তরা। গত ১০ জুন শনিবার রাত আড়াইটার দিকে ফিঞ্চ ও ইজলিংটন এলাকায় অবস্থিত ব্লু হেভেন ক্রিসেন্টে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। ২০ বছর বয়সী এই তরুণের নাম সৌমিক আসগর। ধারণা করা হচ্ছে সে অত্র এলাকার সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের ক্রসফায়ারের শিকার।
পুলিশ জানায় শনিবার রাত ২ : ২৭টায় স্থানীয় লোকজন বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ পেয়ে ৯১১ এ কল করে। এই সময় পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং একটি লাল রং এর হোন্ডা সিভিক গাড়ির চালকের আসনে সৌমিককে মৃত অবস্থায় পায়।
এই ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিভাবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ প্রথমে ধারণা করে গুলির ঘটনার সময় গাড়িতে অন্য একজন যাত্রীও ছিল যে পুলিশ আসার আগেই ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। তবে পরবর্তীতে পুলিশ জানায় তারা ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আর খোঁজ নিচ্ছে না। পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানায় তাদের সহযোগিতার কারণে।
টরন্টো পুলিশের কনস্টেবল এলিসন ডগলাস কুক স্থানীয় লোকজনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা কেউ যদি ঘটনা স্বচক্ষে দেখে থাকেন বা কোন কিছু শুনে থাকেন তবে তা আমাদের জানান।”
ডগলাস বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি তারা ৬ থেকে ৭টি গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন।
পুলিশ অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে ১৪টি বুলেটের খোসা উদ্ধার করে।
তবে স্থানীয় এক বাসিন্দা সাফি ঘরয়াল বলেন, তিনি ১৫ থেকে ২০টি গুলির আওয়াজ শুনতে পান। তিনি ও তার ভাই তখন ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলছিলেন। গুলির ঘটনার পর সব আবার চুপচাপ হয়ে যায়।
সাফি আরো জানান, ”গত আট বছরে আমি এই এলাকায় এরকম গুলিবর্ষনের শব্দ আরো বেশ কয়েকবার শুনতে পেয়েছি। এই এলাকাটি নিশ্চিতভাবেই নিরাপদ নয়। আমি নিজেও রাতের বেলায় বাইরে যাই না। দিনের বেলায় গেলেও খুব সতর্ক থাকি। অত্র এলাকায় আমার কিছু আত্মীয় আছেন। তাদেরকেও আমি সবসময় বলি সতর্ক থাকার জন্য।”
এই এলাকার আরেক বাসিন্দা হালিমা হাসান বলেন, “এখানে আরো পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা উচিৎ, বিশেষ করে উইকএন্ডে। কারণ, উইকএ্যান্ডগুলোতে প্রায়ই আমি গুলির শব্দ শুনতে পাই।। আমি এখানে বাইরে যেতে ভয় পাই। আমি জানিনা কি হচ্ছে এই এলাকায়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, অত্র এলাকায় কয়েক বছর আগে দলবদ্ধ অপরাধ চক্র ছিল যা সাম্প্রতিক কালে কিছুটা কমে এসেছে। তবে এই গুলির ঘটনা বিরক্তিকর এবং ভীতিকরও বটে।
উল্লেখ্য যে, ব্লু হেভেন হলো টরন্টোর অন্যতম অপরাধপ্রবণ এলাকা ফিঞ্চ ও জেন এর কাছাকাছি।
সৌমিক আজগর চলতি বছর টরন্টো শহরের ২১তম খুনের শিকার হলেন। পুলিশ জানায় এটি অনেকটা টার্গেটেড এবং এক্সিকিউশন স্টাইলের হামলা ছিল। খবর টরন্টো সান, ইনসাইড.কম ও নর্থ ইয়র্ক মিরর।
গত মঙ্গলবার ১৩ জুন স্কারবরোর নাগেট মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে দাফন করা হয় পিকারিং কবরস্থানে।
সৌমিক ড্যানফোর্থ এর বাঙ্গালী এলাকার নিকটবর্তী ফার্মেসী এ্যাভিনিউতে মা শিরিন সুলতানা ও বোনের সঙ্গে থাকতেন। বাবা থাকেন টরন্টোর ডাউনটাউনে। সৌমিককে হারিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা গভীরভাবে ভেঙ্গে পড়েন।
সৌমিক আজগরের পরিবারের বন্ধু বাংলাদেশ সেন্টার এ্যন্ড কমিউনিটি সেন্টারের সহসভাপতি ড. মাহবুব রেজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, সৌমিক ছিল খুবই সদাশয় ও সহানুভূতি-সম্পন্ন তরুণ।
সৌমিকের এই মর্মান্তিক মৃতু্তে কমিউনিটি নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া।

সৌমিকের পরিবারে পক্ষ থেকে আগামী ২০ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় স্কারবরোর সুন্নাতুল জামাত মসজিদে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত দোয়া মাহফিলে সবাইকে উপস্থিত হয়ে সৌমিকের আত্মার  মাগফেরাত কামনা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।