কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডার নতুন নেতা এন্ড্রু শিয়ার
জুন ১০, ২০১৭
বিশ্বজুড়েই রক্ষণশীলরা গত বছর রাজনৈতিক স্থিতাবস্থাকে ঝাঁকুনি দেয়ার ঘোষণা দেয়। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার জন্য পক্ষে ভোট দেয় এবং রাজনীতিতে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত করে।
কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছে কানাডার রক্ষণশীলরাও একই পথ অনুসরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার রাতে প্রথম ১২ দফা গণনায় তারা যাকে নেতা হিসাবে নির্বাচিত করবে বলে মনে হচ্ছিলো তিনি হলেন অতীতে উদারনীতিক হিসাবে পরিচিত কুইবেকের এমপি ম্যাক্সিম বার্নিয়ের যার নীতিগত প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে কৃষিখাতে সরবরাহ ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে কেন্দ্রীয় তহবিলের মত সুবিধাগুলোকে বলি দিয়ে দেয়া। শেষপর্যন্ত টোরিরা এটা করতে পারেনি, তার পরিবর্তে তারা বিরোধী দলীয় নেতার বাসভবনের চাবি হস্তান্তর করেছে এন্ড্রু শিয়ারের হাতে যিনি প্রাপ্ত পয়েন্টের মধ্যে ৫০.৯৫ শতাংশ লাভ করেছেন। অন্যদিকে বার্নিয়ার পেয়েছেন ৪৯.০৫ শতাংশ।
শিয়ারের নির্বাচনী প্রচারণার স্লোগান ছিলো, ‘শিয়ারে মাতো’ (“ঝপযববৎ বীপরঃবসবহঃ,”) এবং এতে কোনও সন্দেহ নেই যে তার বিজয়ের পর তার সমর্থকরা ঠিক সেই কাজটিই করেছে।
শিয়ারের সমর্থক লেসলি উইচার বলেন, “তিনি মূল্যবোধ ও অভিজ্ঞতার মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা করতে পেরেছেন এবং তিনি একজন খাঁটি মানুষ। তিনি এমন একজন মানুষ যার ওপর পুরো দল ভরসা করতে পারে। কোনও দিক থেকেই তিনি খুব দূরে নন।”
নিজের প্লাটফর্ম থেকে তিনি সৌখিন জিনিসের ওপর কর হ্রাস, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য এমনকি নিজের পাঁচটি মূল অগ্রাধিকার ঘোষণার সময়ও শিয়ার ছিলেন এমনই একজন প্রার্থী যাকে অনেকে মনে করেন দলটির প্রথম ও একমাত্র নেতা স্টিফেন হারপারেরই প্রতিধ্বনি।
সুতরাং কোনও কোনও পর্যবেক্ষকের যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো, নেতৃত্বের ধারায় শিয়ারের শেকড় প্রোথিত হওয়া।
“শিয়ার হলেন রুপকথার গল্পের মতো হঠাৎ আগত একজন প্রার্থী যিনি খুব গরমও নন আবার খুব শীতলও নন-” বললেন, রক্ষণশীল দলের লবি গ্রুপ ন্যাশনাল সিটিজেনস কোয়ালিশনের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট গেরি নিকোলাস। তিনি বলেন, আমার ধারণা, একটি কারণে তারা নিজেদেরকে রক্ষণশীল বলে। তারা লোকরঞ্জনবাদের ভিন্ন রূপ চরমপন্থার আশ্রয় নিতে চায় না, এমনকি উদারনীতিক পদক্ষেপও নয়। তারা বরং নিরাপদ থাকার পথ বেছে নেবে।”
জনমত জরিপের বিষয়ে অভিজ্ঞ ফ্রাঙ্ক গ্রেভস বলেন, ব্যাপারটা এমন যে, মনে হয় রক্ষণশীলরা কোনও পদক্ষেপ নিতে নয় বরং লম্ফ দিতেই প্রস্তুত।
গ্রেভস-এর জরিপে অংশগ্রহণকারী কানাডার রক্ষণশীল দলের বেশিরভাগ সমর্থক কেবল যে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন তাই নয়, তারা ফ্রান্সের সাম্প্রতিক নির্বাচনে জোরালো প্রচারণা গড়ে তোলা ডানপন্থী প্রার্থী ম্যারিন লি পেনকেও সমর্থন দিয়েছেন।
গ্রেভস বলেন, তবে হ্যাঁ, সামাজিক রক্ষণশীলরা ট্রাম্পকে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছেন এবং ধারণা করা যায় যে তারাই শিয়ারকেও সাহায্য করেছে, তবে এসব দৃষ্টিভঙ্গি সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয়র দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে। আর জাতীয় পর্যায়ে এর প্রয়োগ থেকে খুব সামান্যই সুবিধা লাভ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, শিয়ার যখন রক্ষণশীল রাজনীতিতে একটি আশাবাদী ও ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তখনও কানাডার রক্ষণশীলদের মধ্যে দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে হতাশাজনক মনোভাব বিরাজ করছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীলদের মতোই তাদের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য ও অভিবাসন প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
তিনি বলেন, “এ ধরণের লোকরঞ্জনবাদী হাওয়া থেকে শিয়ার কীভাবে লাভবান হবেন আমার তা জানা নেই।”
কেলি লিচ-এরও আশা ছিলো যে তিনি অভিজাতশ্রেণীবিরোধী লোকরঞ্জনবাদী সুরের ভিত্তিতে এবং নবাগতদের কানাডীয় মূল্যবোধের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রচারণা এগিয়ে নিতে পারবেন। তিনি প্রথম দফা ভোটগ্রহণে মাত্র সাত শতাংশ ভোট পান এবং কখনই আট শতাংশের বেশি ভোট পাননি। ১০ম দফা ভোটগণনা থেকে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
এটাই ঘটেছে, যদিও সবাই বলছিলো যে, নির্বাচনের ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে কেলি লিচের প্রচারণাই ছিলো সবচেয়ে সুসংগঠিত এবং তিনি ১৩ লাখ ডলারেরও বেশি তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
লোকরঞ্জনবাদী ধারায় প্রচারণা শুরু করেছিলেন আরেকজন প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কেভিন ও’লিয়েরি। এবছর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর তিন মাসের মাথায় তিনি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান, যদিও তার নাম পঞ্চম দফা ভোটগ্রহণ পর্যন্ত ব্যালটে ছিলো বলে মনে করা হয়।
কিছুদিনের জন্য ও’লিয়েরির প্রচারণার দায়িত্ব পালনকারী মাইক কোটস বলেন, “আমরা ১০ বছর ধরে অত্যন্ত সফলভাবে দেশ চালিয়েছি। আর ক্ষমতায় যাওয়ার দুবছরের মাথায় দলের পক্ষ থেকে লোকরঞ্জনবাদী কর্মসূচি নাকচ করে দেয়া হয়। আমি মনে করি, বিজয়ের সূত্র হিসাবে তারা যাকে বিবেচনা করে তা থেকে সরে যেতে চায় না অনেক বেশি সংখ্যক সদস্য।”
অন্য একজন প্রার্থী যিনি নীতিগত বিষয়গুলো ১৮০ ডিগ্রি পাল্টে দেয়ার পক্ষে ছিলেন, সেই মাইকেল চং ১১শ দফা ভোটগণনা পর্যন্ত টিকে ছিলেন। কার্বন নিঃসরণের জন্য মূল্য দিতে হবে বলে তার নীতি দলের ভেতর অপ্রচলিত ধারণা হিসাবেই থেকে যায়। তবে তাকে সমর্থনকারী টরন্টো এলাকার এমপি পিটার কেন্ট বলেন, মাইকেল চং একটি সঙ্কেত দেখাতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “মাইকেল এবং ম্যাক্সিম হলেন দুজন প্রার্থী যারা রক্ষণশীল দলের নীতিগত অবস্থানের বাইরে পা রেখেছেন। আমি মনে করি এটি একটি ভালো ব্যাপার যে তারা দুজনেই অনুধাবন করেছেন, পার্টি ও ককাসের নীতি পাল্টানোর আগে তাদেরকে ওইসব নীতি ও যুক্তির পক্ষেই থাকতে হবে। আমি মনে করি ভবিষ্যতে নীতিগত অবস্থান সম্পর্কিত আলোচনায় এই দুজন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।”
পার্টির পরবর্তী সম্মেলন উপলক্ষে আগামী ২০১৮ সালের আগস্টে হ্যালিফ্যাক্সে নীতিগত অবস্থান নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানান ক্রিস আলেকজান্ডার, যিনি নিজেও পার্টির নেতৃত্বে আসতে চান কিন্তু বর্তমান নির্বাচনে পঞ্চম দফা ভোটগ্রহণের পর প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিজয়ী হওয়ার মানে হলো কোনকিছু উড়িয়ে দেয়া এবং অত্যধিক নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে চমৎকার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।”
তিনি বলেন, “আমাদেরকে বল পেটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে, নীতিমালা বিসর্জন না দিয়েই অতীতের পৃষ্ঠা উল্টে দিতে হবে। আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে আমরা ঠিক এই বিষয়টিই সন্ধান করবো।”
-সৈজন্যে : কানাডিয়ান প্রেস