ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা যাচ্ছেন কানাডিয়ান এমপি ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ
মার্চ ৩০, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ : আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৩৬তম ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলন। আর এই সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ৫ জন কানাডীয় এমপি ও দুইজন সিনেটর। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন টরন্টোর বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে নির্বাচিত লিবারেল দলীয় এমপি ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ। তিনি কানাডা-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ গ্রুপের চেয়াম্যান।
১৯৮৪ সালের ১৫ই জুন টরন্টো’র জেরাড-উডবাইন এ জন্ম নেয়া ন্যাথানিয়েল এরিস্কিন স্মিথ ২০১৫ সালে কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক এলাকা থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। কানাডার পার্লামেন্ট এর একজন নবীনতম সদস্য হিসেবে ন্যাথানিয়েল ইতিমধ্যে তাঁর বক্তৃতা ও কাজের জন্য সবার নজর কেড়েছেন। তিনি কানাডিয়ান গ্রুপ অব ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের এর সভাপতি। এছাড়া, তিনি কানাডার পাবলিক সেফটি ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি ও এক্সেস টু ইনফরমেশন, প্রাইভেসী এন্ড এথিক্স কমিটির সদস্য।
ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন সম্পর্কে ন্যাথানিয়াল স্মিথ ইতিপূর্বে প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজেনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টারীয়ানদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা প্লাটফর্ম, যেখান থেকে আমরা এক হয়ে পৃথিবী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং বিষয় মোকাবেলায় এক সাথে কাজ করি। এই বিষয়গুলোর মধ্যে আছে পরিবেশ, দারিদ্র্য, জলবায়ু। সেই সাথে বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় কিভাবে পৃথিবীর সব দেশের মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন করা যায়।
আইপিইউ সম্মেলনে যাওয়ার আগে গত ২৭ মার্চ ড্যানফোর্থে অবস্থিত বাংলাদেশ সেন্টার ও কমিউনিটি সার্ভিসেস এর মিলনায়তনে ন্যাথানিয়েল স্মিথ এক সংবাদ এর আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ন্যাথানিয়েল স্মিথ তার বাংলাদেশ সফরের বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার বিষয়ে তিনি কতটা উচ্ছসিত তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি সত্যিই খুব উচ্ছসিত। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে কয়েকটি ভিডিও দেখেছি। দেশটির নদী ও সবুজ গ্রাম আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছে। এবারের ভিজিটে হয়তো আমার গ্রাম দেখার সুযোগ হবে না। তবে ইচ্ছে আছে পরের কোন ভিজিটে যাওয়ার সুযোগ হলে গ্রাম দেখতে যাব।
ন্যাথানিয়েল স্মিথ বাংলাদেশের বর্তমান আবহাওয়া সম্পর্কেও জানতে চান সংবাদ সম্মেলনে আসা সাংবাদিকদের কাছে।
উল্লেখ্য যে, ঢাকায় পাঁচ দিন ব্যাপী এ সম্মেলন বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবারের আইপিইউ সম্মেলনে অংশ নিতে এখনও পর্যন্ত ৪৮টি দেশের স্পিকার ও ৩০টি দেশের ডেপুটি স্পিকার নিবন্ধন করেছেন। এছাড়া প্রায় ১২০টি দেশের ১৩০০-রও বেশি সাংসদ ও সংসদ কর্মকর্তা অংশ নিতে পারেন এ সম্মেলনে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের উপ-সচিব মো. আলী আশরাফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখনও সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ পাচ্ছি। এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ জন নারী সাংসদ অংশ নেবেন এবং পুরুষ সাংসদের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করছি, এই সম্মেলন সফল হবে।’
আইপিইউ সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে আরো জানা যায়, এ সম্মেলনের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আট হাজার পোশাকধারী পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে।
উল্লেখ্য যে, গত কয়েক বছরের মধ্যে সংসদ ভবনকে ঘিরে এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এটা অনেকটা নজিরবিহীন। তিন কারণে সংসদ ভবনের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো, লন্ডনে পার্লামেন্টের সামনে হামলার ঘটনা, বিমানবন্দরের সামনে বিস্ফোরণের ঘটনা ও সিলেটসহ কয়েকটি স্থানে জঙ্গি হামলার ঘটনা।
আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সংসদীয় বিধি-বিধান, এমপি-মন্ত্রীদের আচার আচারণ, সংসদীয় কর্যবিধি, এমপিদের ক্ষমতা, নারীর ক্ষমতায়ণ, বিশ্ব মানবাধিকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রহীন মানুষের অবস্থা, দুর্দশা এবং বিশ্ব মানুষের সংহতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং করনীয় বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।
উল্লেখ্য যে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় সংস্থা আইপিইউ। সংস্থাটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে এ সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। এর বর্তমান চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী।
সাবের হোসেন চৌধুরী একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, গত বছর ৮-৯ ফেব্রুয়ারী নিউয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ কার্যালয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদের এক সম্মেলনে কানাডার দুই প্রতিনিধি যোগ দেন যাদের মধ্যে একজন ছিলেন নেথিনিয়েল স্মিথ। সম্মেলনে আসা বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন এর প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তখন সৌজন্য সাক্ষাত করেন নেথিনিয়েল স্মিথ। এবার এদের দুজনের আবার দেখা হচ্ছে ঢাকায়।