অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীত হচ্ছে
জুন ১০, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ১৫ ডলারে করা হচ্ছে। আগামী ১৮ মাসের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে। অন্টারিওর কর্মসংস্থান বিষয়ক আইনের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ৩০ মে প্রিমিয়ার ক্যাথলিন উইন এ ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি এমন সময় আসলো যখন প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। অন্যদিকে সাম্প্রতি সময়ে পরিচালিত কিছু জরীপে দেখা গেছে যে, অন্টারিও লিবারেল পার্টির নেত্রী ক্যাথলিন উইনের জনপ্রিয়তা অনেক নিচে নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য যে, অন্টারিওতে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন দিচ্ছেন না, দিচ্ছেন না ভেকেশন পে এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাও। ফলে এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের পাওনা অধিকার থেকে। বিভিন্ন কর্মস্থলে শ্রম মন্ত্রণালয় পরিচালিত তদন্তে দেখা গেছে অন্টারিও’র শ্রম আইনের লংঘন হচ্ছে শতকরা ৭৫ থেকে ৭৭ ভাগ ক্ষেত্রেই। খবরটি প্রকাশ করে কানাডিয়ান প্রেস।
ক্যাথলিন উইন এর এই ঘোষণায় আরো বলা হয় – ফুলটাইম ওয়ার্কারদেরকে যে রেটে বেতন দেয়া হয় পার্টটাইম ওয়ার্কারদেরও সেভাবেই বেতন দিতে হবে। তাছাড়া দুই সপ্তাহের বদলে তিন সপ্তাহের পেইড ভ্যাকেশনের ব্যবস্থাও করতে হবে শ্রমিকদের জন্য যাদের বয়স কোম্পানীতে ৩ বছরের অধিক হবে।
ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির এই পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত করা হবে। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানের ন্যূনতম বেতন ১১.৪০ ডলার আগামী অক্টোবর মাসে বৃদ্ধি করে ১১.৬০ ডলারে করা হবে । এর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৪ ডলার এবং ২০১৯ সালে ন্যূনতম মজুরী ঘন্টায় ১৫ ডলার করা হবে।
ক্যাথলিন উইন বলেন, বর্তমানে অন্টারিওতে ন্যূনতম বেতনে কাজ করছেন শতকরা ১০ জন শ্রমিক। আর শতকরা ৩০ জন শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন ঘন্টায় ১৫ ডলারের কম। তার অর্থ হচেছ এই প্রভিন্সে কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক যা আয় করছেন তা তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নয়। বাড়ি কেনা দূরে থাকুন, দৈনন্দিন খরচপত্র যোগাড় করতে গিয়েই তারা হিমসিম খাচ্ছেন।
এদিকে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) লিডার এনড্রিয়া হোরওয়াথ দাবী করেন ক্যাথলিন উইন নির্বাচনের আগে ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার জন্য এই ঘোষণা প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য যে, এনড্রিয়া হোরওয়াথ নিজেও অনেকদিন ধরেই অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী ১৫ ডলার করার পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
অন্টারিও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছরের মধ্যেই অন্টারিওর কর্মসংস্থান বিষয়ক আইনের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশসমূহের অধিকাংশ বাস্তবায়িত করবে।
উল্লেখ্য যে, গত বছর জুলাই মাসে এই বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অন্তর্বতীকালিন রিপোর্ট পাওয়ার পর শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন বলেছিলেন, শ্রম আইনের এই পর্যালোচনা ক্রমবর্ধমান অরক্ষিত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেছিলেন, দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক পরিবর্তন, গ্লোবালাইজেশন, ট্রেড ডিল এবং টেকনলজীর অগ্রগতির কারণে অন্টারিওর সার্ভিস সেক্টরের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে হোয়াইট কালার জব। কিন্তু সেই তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি ম্যানুফেকচারিং খাতের জব।
রিপোর্টের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেছিলেন, অন্টারিওতে সংখ্যাগরিষ্ঠ চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য ‘ডিসেন্সী এট ওয়ার্ক’ পরিবেশের বন্দোবস্ত করে এবং প্রচেষ্টা করছে কর্মস্থলের বৈষম্য দূরীকরনের জন্য আর সেই সাথে এমপ্লয়ীদের অধিকার রক্ষার জন্য। কিন্তু তরুন
কর্মী ও নতুন ইমিগ্রেন্টরা চাকরী ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে উপযুক্ত বেতন দেওয়া হয় না, ভেকেশন পে দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় না অন্যান্য বেনিফিটসও। এই অনিয়মটি ঘটছে প্রধানত রিটেইল, হসপিটালিটি এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে। এক শ্রেণীর অসাধু চাকুরীদাতাদের কারণে এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে।
অন্টারিওর শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন অবশ্য বলেছেন, আমাদেরকে দেখতে হবে যে, এই প্রভিন্সে যারা অনিশ্চিয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চাকরী করছেন তরা যাতে সুরক্ষা পায় তা নিশ্চিত করা। অপরদিকে এটাও দেখতে হবে যাতে করে প্রভিন্সের অর্থনীতি প্রতিযোগিতামূলক হয়।
অন্টারিওর এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এ্যক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এ্যক্ট এর পর্যালোচনায় দুই সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল যে বিষয়গুলোর উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন তা নিম্মরূপ :
সিক্ পে, ওভারটাইম, ভেকেশন পে, মিনিমাম ওয়েজ
– সিক্ ডে’র পে বাধ্যতামূলক করা।
– পেইড ভেকেশন বর্তমানে দুই সপ্তাহের জন্য দেয়া হয়। এটিকে তিন সপ্তাহে উন্নীত করা।
– বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একজন এম্পøয়ীকে ওভারটাইম পে করা হয় সপ্তাহে ৪৪ ঘন্টা কাজ করার পর। ৪৪ ঘন্টার এই সীমা কমিয়ে ৪০ ঘন্টায় করা হবে।
– ১৮ বছরের কম বয়সী স্টুডেন্ট এবং যারা এ্যালকোহল সার্ভ করেন তাদেরকে মিনিমাম ওয়েজ পে করার যে নিয়ম রয়েছে তা বাতিল করা।
– ফুলটাইম ওয়ার্কারদেরকে যে নিয়ম মেনে বেতন দেয়া হয় পার্টটাইম ওয়ার্কারদেরও সেভাবেই বেতন দিতে হবে।
ক্যাজুয়াল এবং কনট্্রাক্ট ওয়ার্কার্স
– শিফটিং এম্পøয়ীদের কাজের সময়সূচী কয়েকদিন আগেই জানানোর জন্য এম্পøয়ার্সদের বাধ্য করা।
– শেষ সময়ে কাজের সময়সূচী পরিবর্তন করা হলে এম্পøয়ীদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া।
– জব এজেন্সীর মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া কর্মীর সংখ্যা বা অনুপাত কমিয়ে আনা।
ইউনিয়ন করার অধিকার
– ধর্মঘট চলাকালে রিপ্লেসমেন্ট ওয়ার্কার নিয়োগ বন্ধ করা বা সীমিত করা।
– যে সকল ফ্রেঞ্চাইজ স্টোর বা রেস্টুরেন্টে ইউনিয়ন নেই সেখানে এম্পøয়ীদেরকে ইউনিয়ন করার অধিকার সহজ করে দেয়া। – প্রাইভেট বাড়ি-ঘরে যারা কাজ করেন তাদেরকে ইউনিয়ন গড়ার অধিকার প্রদান করা।