হ্যাপী কানাডা ডে

আমরা সবাই কানাডাকে ভালবাসি

জুলাই ৯, ২০১৬

প্রবাসী কন্ঠ  : কানাডা পৃথীবির অন্যতম বৈচিত্র্যময় একটি দেশ এবং একই সাথে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ। আর এটি কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয়। কানাডা এমন একটি দেশ যেখানে সবাই সমান। গত ১লা জুলাই শুক্রবার কানাডা ডে উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী অটোয়ায় প্রদত্ত এক বক্তৃতায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ কথা বলেন।

জাস্টিন ট্রুডো আরো বলেন, কানাডার বৈচিত্র প্রকাশ পায় যখন আমরা দেখি এ দেশটিতে দু’দুটি সরকারী ভাষা প্রচলিত রয়েছে এবং সেই সাথে এই দেশটিতে রয়েছে শতাধিক ভাষাভাষির লোক। খবর দি কানাডিয়ান প্রেসের।

১লা জুলাই ১৪৯তম কানাডা ডে উপলক্ষে অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে সমবেত হন বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডো, কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টোন সহ আরো অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আরসিএমপির হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সমবেত জনতা দিনব্যাপী উপভোগ করেন বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান। তবে বিকেলের দিকে আবহাওয়া অনুকুলে ছিল না। তীব্র বজ্রপাতসহ বৃষ্টির ধারা নেমে আসে রাজধানীতে। এই সময় লোকজন উৎসবস্থল থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। তবে বিকেল পাঁচটার পর বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়।

‘বাংলা ক্যারাভান ’ বিপুল উৎসব-আমেজে পালন করে কানাডার ১৪৯তম জন্মদিবস। বাংগালির ঐতিহ্যবাহী ঢোল, মৃদঙ্গ, ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে বিপুল সংখ্যক বাঙালি অটোয়ার রাজপথে বর্ণাঢ্য র্যা লীতে অংশগ্রহণ করেন। ছবি : কাজী মাওলা

১লা জুলাই কানাডা ডে উপলক্ষে অটোয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশীরাও উৎসবে মেতে উঠেছিলেন সেদিন। এ বিষয়ে অটোয়া থেকে মহসীন বখ্ত এর লেখা একটি রিপোর্ট পাঠান সৌরভ বুড়য়া। ঐ রিপোর্টে বলা হয়, “পহেলা জুলাই কানাডা দিবসে বরাবরের মত ‘বাংলা ক্যারাভান ’ বিপুল উৎসব-আমেজে পালন করে কানাডার ১৪৯তম জন্মদিবস। বাংগালির ঐতিহ্যবাহী ঢোল, মৃদঙ্গ, শিঙ্গা, দুমুরু ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে পোষ্টার-ফেস্টুন ও বাংগালির চিরাচরিত মঙ্গল-শোভাযাত্রার মুখোশ ধারণ করে বিপুল সংখ্যক বাঙালি অটোয়ার রাজপথে বর্ণাঢ্য র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন। কানাডার জন্মদিবসে বহুজাতিক সংস্কৃতির মিছিলে প্রবাসী বাঙ্গালির আনন্দঘন অংশগ্রহণ বিপুল গৌরবের বাঙ্গালিপনায় মশগুল করে রাখে বহুজাতিক সংস্কৃতির কানাডার জন্মদিবসের  উৎসবকেন্দ্র অটোয়ার পার্লামেন্ট চত্বর। কানাডা দিবসে এদেশের বহুধা সংস্কৃতির মূলধারায় বাঙ্গালিরা এই বছরে যোগ করে বাঙালি সংস্কৃতি আর লোকমানসের গৌরবময় কিছু মহার্ঘ।”

উল্লেখ্য যে, দিনটি উপলক্ষে কানাডার বিভিন্ন প্রভিন্সেও আয়োজন করা হয় নানা উৎসব ও  আনন্দ অনুষ্ঠানের। টরন্টোর ডাউনটাউনে অবস্থিত অন্টারিও পার্লামেন্ট ভবনের সামনেও আয়োজন করা হয় নানা উৎসব আনন্দের। বিপুল সংখ্যক লোক উপভোগ করেন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসমূহ। রাতে আয়োজন করা হয় ফায়ারওয়ার্কস এর। গ্রেটার টরন্টোর বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয় এই ফায়ারওয়ার্কসসমূহ।

এদিকে টরন্টোর উত্তরে অবস্থিত উপশহর ভন এর বাইতুল ইসলাম মজিদে কানাডা ডে উপলক্ষে সিরিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠান। প্রায় ২০০ সিরিয়ান উদ্বাস্তু এতে অংশ নেন। এটি ছিল কানাডায় তাদের প্রথম কানাডা ডে উদযাপন।

সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতিতে এই সিরিয়ানদের অনেকেই ঐ দিন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এই একই দৃশ্য অবশ্য অটোয়াতেও দেখা গিয়েছে। সিরিয়ানদের অনেকেই অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অনন্দাশ্রু ধরে রাখতে পারেননি।

ভন এর আবহাওয়া সেদিন অটোয়ার মত ছিল না। সেদিন ছিল শুক্রবার। মুসলমানদের জুমার দিন। জুমার নামাজ শেষ করে সবাই বাইরে এসে কানাডা ডে’র উৎসবে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভন এর মেয়র মারিজিও বেভিলিসকোয়া। স্থানীয় মুসলমান নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন উৎসবে।

সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে আগত সুহা কালবোনে এবং তার স্বামী মুতাজ আলকাজাক উপস্থিত ছিলেন বাইতুল ইসলাম মজিদে আয়োজিত কানাডা ডে অনুষ্ঠানে। টরন্টো স্টার এর সাংবাদিক জেকি হং এর কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সুহা বলেন, আমি খুবই আনন্দিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে। সিরিয়াতে আমরা আজকে এই ধরনের কোন অনুষ্ঠানের কথা চিন্তাই করতে পারি না। কানাডা খুবই স্বাধীন একটি দেশ। এদেশে যার যা ইচ্ছা সে তাই করতে পারেন। এখানে মুসলমান, খ্রিষ্টান সবাই একই সঙ্গে বাস করছেন, পাশাপাশি বসে আনন্দ-উল্লাস করছেন। সুহার স্বামী আলকাজাক কানাডা ডে’তে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, কানাডার লোকজন খুবই চমৎকার ও সদাশয়। এটি সত্যি খুব ভাল একটি দেশ। আমরা সবাই কানাডাকে খুব ভালবাসি।