মাল্টিকালচারালইজম আমাদের শক্তি : জাস্টিন
আগস্ট ১০, ২০১৬
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : আমরা জানি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বের হয়ে আসার পিছনে ইমিগ্রেশন একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু কানাডার রাজনীতিকগণ গত চার দশক ধরে ইমিগ্রেশনকে সমর্থন দিয়ে আসছে যা কানাডার ডেমোগ্রাফিক অবয়বকে দিয়েছে নতুন রূপ। কানাডাকে দিয়েছে মাল্টিকালচারাল সোসাইটির পরিচয়।
কানাডা সবসময়ই এর মাল্টিকালচারালইজম পলিসি নিয়ে গর্ববোধ করে। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করে বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে। আমরা জানি বিশ্বে কানাডাই প্রথম দেশ যেখানে মাল্টিকালচারালইজমকে রাষ্ট্রিয় নীতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা আসে ১৯৭১ সালে। পরে ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে ২৭ জুনকে কানাডার মাল্টিকালচারালইজম দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনটি মাল্টিকালচারালইজম দিবস হিসাবে পালন হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক বাণীতে বলেন, “৪৫ বছর আগে কানাডা বিশ্বে প্রথম মাল্টিকালচারালইম এর নীতি গ্রহণ করে। সেই থেকে কানাডা সব সময় প্রমান করে আসছে যে একটি দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এর বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠির কারণে।” খবর রেডিও কানাডা ইন্টারন্যাশনাল এর।
তিনি আরো বলেন, “কানাডায় ব্যক্তি পরিচয় ও আমাদের পূর্ব পুরুষদের পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর যে অপার স্বাধীনতা আমাদের রয়েছে তার প্রশংসা করি। কানাডায় আমাদের কার কি ধর্ম, কার গায়ের রঙ কি, আমরা কে কোথায় জন্ম নিয়েছি বা আমরা কে কোন ভাষায় কথা বলি তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা সবাই সমান এই মহান দেশটিতে, সেটিই আমাদের সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়।”
তবে কানাডিয়ানরা মাল্টিকালচারালইজম নিয়ে অনেক কথা বললেও গত ২৭ জুন মাল্টিকালচালারালইজম দিবসটি অত্যন্ত নিভৃতে ও নিরবে উদযাপন করলো। রেডিও কানাডা জানায়, কোথাও কোন ফানফেয়ার বা প্যারেড কিছুই লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিদিন কানাডিয়ানরা যে ভাবে তাদের দিন উদযাপন করে গত ২৭ জুনও সেভাবেই উদযাপন করেছে।
২০১১ সালের আদম শুমারীর রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই, কানাডায় বিদেশে জন্মগ্রহনকরী লোকের সংখ্যা ৬,৭৭৫,৮০০ জন। মোট জনসংখ্যার ২০.৬%। এই অনুপাত শিল্প উন্নত অন্যান্য দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসাব মতে দেখা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত কানাডায় সবচেয়ে বেশী ইমিগ্রেন্ট এসেছে এশিয়া থেকে। তবে আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান, সেন্ট্রাল এবং সাউথ আমেরিকা থেকে আগত ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যাও কিঞ্চিত বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, মাল্টিকালচারালইজম আমাদের শক্তি। মানব সমাজ এই বৈচিত্রপূর্ণ জনগোষ্ঠি থেকে লাভবান হয়।
জাস্টিন ট্রুডোর এই কথা সমভাবে উচ্চারিত হয় কনজারভেটিভ পার্টির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নেত্রী রনা এমব্রোসের কন্ঠেও। তিনি বলেন, কানাডায় প্রতিটি নাগরিকের মূল্য বা সম্মান রয়েছে এবং দায়িত্ব রয়েছে দেশের প্রতি কিছু একটা অবদান রাখার। এ ক্ষেত্রে কার জন্ম কোথায়, কার কি উত্তরাধিকার বা কার কি ধর্ম সেটা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচ্য নয় কে সম্প্রতি এসেছে বা কার পরিবারের সদস্যরা কয়েক জেনারেশন ধরে এদেশে আছে। প্রত্যেকেরই পরিবারকে সহায়তা করার, কমিউনিটিকে সহায়তা করার এবং সর্বপোরি দেশকে সহায়তা করার অধিকার রয়েছে সমানভাবে।
গ্রীন পার্টির নেত্রী এলিজাবেথ মে বলেন, মাল্টিকালচারালইজম অব্যাহত ভাবে সহায়তা করবে দেশকে সাংস্কৃতিক ভাবে, অর্থনৈতিক ভাবে এবং রাজনৈতিক ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
এনডিপি’র মুখপাত্র (মাল্টিকালচালারালইজম বিষয়ক) র্যাচেল ব্লেনী বলেন, আমরা এই মাল্টিকালচারালইজমকে যথেষ্ট পরিমানে গুরুত্ব দেই। তবে কেউ যদি এর নাম করে ধর্মান্ধতা, বৈষম্য বা বর্ণবাদকে উসকে দেয় তবে আমরা চুপ থাকবো না।
কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টোন বলেন, ডাইভারসিটি মানুষের গায়ের রঙ থেকে অনেক বেশী কিছু অর্থ বহন করে। তিনি আরো বলেন, কানাডায় আমাদের যার যে রকম উৎসই হোক বা যার যে রকম আচারই হোক আমরা সবাই সমান। আমরা সবাই সবার তরে।