টরন্টোতে দুর্গাপূজা
ধর্ম যার যার উৎসব
অক্টোবর ৮, ২০১৬
সুব্রত কুমার দাস : উত্তর আমেরিকার বাঙালি অধ্যুষিত প্রধান দুটি শহরের একটি হলো টরন্টো। বাঙালির অন্যান্য উৎসবের মতো দুর্গাপূজাও এই শহরে বিশাল জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়ে থাকে। তুলনায় বিচার করলে বলা যায় দুর্গাপূজার মতো এতো মানুষের সম্মিলন বোধ করি আর কোনো অনুষ্ঠানে হয় না। এতো মানুষের সমাগম, এতো সংস্কৃতিকর্মীর অংশগ্রহণ ঘটে পূজার মন্দিরগুলোতে যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এবছরের মহালয়া অনুষ্ঠানে মানুষের সমাগম দেখে ধারণা করা যায় পূজার দিনগুলোতে সহস্র মানুষের সমাগমে আনন্দমুখর হয়ে উঠবে মন্দির প্রাঙ্গনগুলো।
অন্যান্য শহরের মতো টরেন্টাতেও বাঙালি কমিউনিটির দুটি ধারা – একটি হলো বাংলাদেশের বাঙালিদের, অন্যটি ভারতের পশ্চিম বাংলার। টরন্টো এবং আশপাশের শহরগুলোতে দুই বাংলার বাঙালিদের উদ্যোগে অনেকগুলো দুর্গাপূজা হয়। সংখ্যাটি ঠিক কতো সেটি বলা মুস্কিল। কমিউনিটিগুলোর সংবাদপত্র ভিন্ন হওয়ায় ঠিক ঠিক সংবাদ সবসময় জানার সুযোগও ঘটে না। তাছাড়া, তাদের অবস্থানও দূরে দূরে হওয়ায় যোগাযোগ কম। পারিবারিক বা কাজের সূত্রেই শুধুমাত্র সংযোগ ঘটে কিছু কিছু মানুষের। তাই প্রবাসে উভয় বাংলার বাঙালি কমিউনিটির পুরো চিত্রটি একসাথে পাওয়া সহজ নয়। তবে, এটুকু বলা যায়, বাংলাদেশি কমিউনিটি পরিচালিত মোট তিনটি মন্দিরে পূজা হবে। অন্যদিকে অন্য যে পূজাগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে বেদান্ত সোসাইটি বা রামকৃষ্ণ মিশন, টরন্টো কালীবাড়ি, ভারত সেবাশ্রম, বঙ্গীয় পরিষদ এবং বঙ্গ পরিবারের পূজা অন্যতম।
প্রবাসে পূজা নিয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা প্রত্যেকেরই আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হলো তিথী-নক্ষত্র ধরে অনেক সময়ই পূজা না হওয়া। কাজের ব্যস্ততার কারণেই এমনটি ঘটে থাকে। আর তাই, যারা নিয়মিত সোসাল মিডিয়া করেন, তারা জানেন যে উত্তর আমেরিকার কোনো কোনো শহরে ঢাকা বা কলকাতায় পূজা শুরুর আগেই পূজা শেষই হয়ে গেছে। ছুটি না থাকায় এবং জনবল কম থাকায় উদ্যোক্তারা এমনটি করতে বাধ্য হন। টরন্টোতেও এক সময় তেমনটি হতো বলেই শুনেছি। দিনে দিনে হিন্দু কমিউনিটির সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়াতে টরন্টোর প্রধান পুজোগুলোতে এখন সুযোগ ঘটেছে পঞ্জিকা মেনে আয়োজন করার।
মহালয়া দিয়ে টরেন্টার প্রধান মন্দিরগুলোতে দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হয়েছে। দেশে মন্দিরে মন্দিরে এমন মহাউৎসাহে মহালয়া হতে দেখা যায় না। মহালয়াতে বাংলাদেশি কমিউনিটি পরিচালিত তিন মন্দিরেই এবার ছিল অসামান্য টিম-ওয়ার্কের স্পর্শ। কণ্ঠ আর বাচনের নান্দনিক উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয়েছিলেন তিন মন্দিরে উপস্থিত ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশিষে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শক। প্রধানত দুটি টিম তিন মন্দিরে মহালয়া করেন। প্রধান কুশিলব ছিলেন প-িত প্রসেনজিৎ দেওঘরিয়া ও অরুনাভ ভট্টাচার্য। বিশিষ্ট শিল্পী অরুনাভ ভট্টাচার্য বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু মন্দির এবং টরন্টো দুর্গাবাড়িতে মহালয়ায় নেতৃত্ব দেন। প-িত প্রসেনজিৎ দেওঘরিয়ার দলটি পরিবেশন করেন হিন্দু ধর্মাশ্রমে। প্রবাসী ক্লাবেও তাঁরা মহালয়ার অনুষ্ঠান করেছেন। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিল্পীদের অংশগ্রহণে সে অনুষ্ঠান অসাম্প্রদায়িক বাঙালির দীর্ঘ ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। উদাহরণ তৈরি করেছে যে কোনো বাঙালির জন্যে। নজর কেড়েছে বাংলাদেশের বহু লেখক-সাংবাদিককে। অন্যদিকে শংকর চক্রবর্তী এবং অরুনাংশু হোর তাঁদের উচ্চমার্গের উপস্থাপনায় মুগ্ধ করেছেন বঙ্গীয় পরিষদের শ্রোতাদের। টরন্টো কালীবাড়িতে কৃষ্ণকলি সেনগুপ্তা এবং অরুনাংশু হোর করেছেন অনুপম মহালয়া। তাদের মাসাধিককালের দলগত অনুশীলন মূল্যায়িত হয়েছিল দর্শক-শ্রোতাদের কাছে।
বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু মন্দির, হিন্দু ধর্মাশ্রম এবং টরন্টো দুর্গাবাড়িতে অক্টোবরের ৭, ৮, ৯ ও ১০ তারিখে বিপুল আয়োজনে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী পূজা হবে। পূজা শেষে থাকবে অঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা। থাকবে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থাও। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজকেরা জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত প্রসাদ বিতরণের কাজ চলবে। বেদান্ত সোসাইটির পূজা হবে ৯ ও ১০ তারিখে। রবি ও সোমবার। ভবন সংস্কারের কারণে সোসাইটির পূজা এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইটোবিকোর ২০৭ কুইনস প্লেট ড্রাইভের গুরুমন্দিরে। বঙ্গ পরিবারের পূজার প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে ৯ ও ১০ তারিখে। তাদের ভ্যেনু মিসিসাগার ক্যাপিটল ব্যাঙ্কুয়েট সেন্টার (৬৪৩৫ ডিক্সি রোড)। বঙ্গ পরিবারের অনুষ্ঠানেরও ব্যাপক জাঁকজমকের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে।
বেশ কয়েকটি মন্দিরের উদ্যোক্তারা পূজা উপলক্ষে বিশেষ শারদীয়া ম্যাগাজিনও বের করেছেন। কাজটি চলছেও বেশ ক’বছর ধরেই। দুর্গাপূজায় বাংলাদেশি কমিউনিটি পরিচালিত তিনটি মন্দির থেকে প্রকাশিত সে ম্যাগাজিনগুলো প্রবাসে বাঙালির ভাষা ও সাহিত্যপ্রীতির উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু মন্দির, হিন্দু ধর্মাশ্রম এবং টরন্টো দুর্গাবাড়ি থেকে প্রকাশিত পূজা ম্যাগাজিনগুলো দেখলে গভীর বিস্ময়ে আপ্লুত হতে হয়। বার বার মনে হয়, প্রবাসে এমন দেড়শ/দুশো পৃষ্ঠার মূখ্যত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন তাঁরা সামাল দেন কীভাবে! কতো নতুন নতুন লেখক (অধিকাংশই প্রবাসী) সেগুলোতে! গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-ভ্রমণকাহিনি-অভিজ্ঞতা কী থাকে না তাতে? ইংরেজি লেখাও থাকে কিছু কিছু। ছোটোদের লেখাগুলো বেশির ভাগই ইংরেজিতেই থাকে। এই ম্যাগাজিনগুলোতে যেমন থাকে ধর্ম-বিষয়ক লেখা, তেমনি নাস্তিক্যবাদী লেখাও সেগুলোতে ছাপা হয়। লেখকের ধর্ম, জাতীয়তা বা বয়স কিছুই তাদের কাছে বিবেচনার নয়। বিবেচ্য হলো লেখার মান। আমার শুধুই মনে হয়, এতো বিশাল প্রকাশনার সম্পাদনা কি সহজ কথা? সেগুলোর খরচ সংকুলানও সহজ কথা নয়। প্রতিটির প্রকাশনা খরচ পাঁচ থেকে সাত হাজার ডলার তো বটেই। ঢাউস আকৃতির প্রতিটি সংকলনই ছাপা হয় তিন শ থেকে সাত/আট শ পর্যন্ত। ‘চিন্ময়ী’, ‘নীল কমল’ ‘দৃষ্টি’ দেখলে প্রবাসে থেকেও বাংলা ভাষার যে কোনো কর্মীই গর্ববোধ করতে পারবেন।
সুদূর উত্তর আমেরিকাতে এসে পুজোর এই আমেজ যে উপভোগ করেনি, তার পক্ষে ধারণা করাও মুশকিল কতো উচছ¡লতা সেগুলোতে। নিরাপদ চারপাশ তাঁদেরকে যেন মুক্ত বিহঙ্গে পরিণত করে। যে পূজা একসময় বেইজমেন্টে করতে হতো সেটি এখন হয় বিশাল মন্দিরে। সহজেই বোঝা যায় এই পরিবেশ একদিনে আসেনি। বহু উদ্যোগী মানুষের দীর্ঘ প্রয়াসের ফলেই প্রবাসে পূজার এমন আয়োজন আজকে বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে। উদ্যোগী সেসব কর্মবীর বাঙালি সমাজের কৃতজ্ঞতার দাবীদার।
আশা করা যায়, গতবারের মতো এবারও কমিউনিটির মানুষেরা উপচে পড়বেন মন্দিরগুলোতে। এবার দর্শনার্থী এবং ভক্তদের ভীড় আরও কয়েক গুণ বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ পুরো পূজাটাই পড়েছে ছুটির দিনগলোতে। প্রত্যাশা করা হচেছ, মন্দিরগুলোতে বাংলাদেশের বাঙালিদের সাথে ভারতের বাঙালিরাও যুক্ত হবেন। উপস্থিত থাকবেন অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিপুল সংখ্যক অহিন্দু সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আর এভাবেই পূজা হয়ে উঠবে আমাদের সকলের। পূজার আনন্দে ভেসে যাবে বৃহত্তর টরন্টোর সীমানাবিহীন বাঙালিসমাজ। সে আনন্দ অব্যাহত থাকবে দুর্গাপূজার শেষ দিন অবধি। প্রমাণিত হবে ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
এই লেখা নিয়ে ‘প্রবাসী কণ্ঠ’ যখন পাঠকের কাছে যাবে তখন টরন্টোর মন্দিরে মন্দিরে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে যাবে। ঢাকের শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকবে মন্দির প্রাঙ্গন। দর্শনার্থীদের ভীড় গমগম করতে থাকবে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি। দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন মন্দিরগুলোতে সহস্র মানুষের ভক্তি আর উচ্ছ্বাস উপচে পড়বে। দিনভর আলোচনা চলবে সন্ধ্যার জাকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে। বাংলাদেশ বা ভারত থেকে আসা কোন্ শিল্পী কেমন মাতালেন তা নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠবে। প্রবাসী কোন্ শিল্পী কতো ভালো উপস্থাপন করলেন তা নিয়ে চলবে মূল্যায়ন-প্রতিমূল্যায়ন। গভীর রাত অবধি মন্দিরে কাজ করেও স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রস্তুতি নেবেন সকাল সকাল মন্দিরে গিয়ে মা দুর্গার চরণে নিবেদন জানাতে। দশমীর দিনে অশ্রুভারে বিসর্জন দিয়ে সকলে ¯œাত হবেন পূত-পবিত্রতায়। সমস্বরে প্রার্থনা করবেন পৃথিবীর সকল মানুষের কল্যাণ। আর এভাবেই প্রবাসে দুর্গাপূজা ‘আসছে বছর আবার হবে’ প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের মতো।
(প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবি বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু মন্দিরের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত)
লেখক: প্রাবন্ধিক। ২০০৩ সালে শুরু বাংলাদেশি নভেলস -এর উদ্যোক্তা।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে পূজার আমন্ত্রণ : শিবু চৌধুরী
সভাপতি, বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু মন্দির
এবারের আয়োজন চলছে বিশাল কলেবরে। যেহেতু পূজা পড়েছে উইকএন্ডে, ভক্তরা সুযোগ পাবেন পূজাতে বেশি করে যোগ দিতে। টরন্টোর পূজা দেখতে পুরো উত্তর আমেরিকা থেকে এবার দর্শনার্থী আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিপুল সংখ্যক উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু মন্দির এ বছর ব্যাপক জাঁকজমকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্থানীয় বিপুল সংখ্যক শিল্পী চারদিন-ব্যাপী আমাদের আয়োজনে অংশ নেবেন। প্রতিদিন ইন্ডিয়ান আইডল এবং সারেগামা-র শিল্পীও রয়েছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে পূজার আমন্ত্রণ।
দুর্গাপূজা শুধুমাত্র হিন্দুদের অনুষ্ঠান নয়, সকল বাঙ্গালির : কাজল চৌধূরী
সভাপতি, হিন্দু ধর্মাশ্রম
দুর্গাপূজা শুধুমাত্র হিন্দুদের অনুষ্ঠান নয়। এটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালির। দুর্গাপূজায় যেমন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য থাকে, তেমনি থাকে সাংস্কৃতিক সম্মিলন। ধর্ম এবং সংস্কৃতি দুটো বিষয়কে মাথায় রেখেই ধর্মাশ্রমের এবছরের দুর্গাপূজার আয়োজন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে কানাডার স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও কলকাতার নামীদামী শিল্পীদের উপস্থাপনা।
আমরা আশা করি, প্রতি বছরের মতো এবারও টরন্টোবাসী সকল বাঙালি আমাদের পূজায় আসবেন, অংশ নেবেন, সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করবেন, প্রসাদ নেবেন।
প্রবাসী সকল বাঙালিকে শারদীয় শুভেচ্ছা : ড. সুশীতল চৌধুরী
সভাপতি, টরন্টো দুর্গাবাড়ি
টরন্টো দুর্গাবাড়ির পক্ষ থেকে কানাডা-প্রবাসী সকল বাঙালিকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যাপক শারদীয় আয়োজন করা হয়েছে আমাদের মন্দিরে। পূজাকে সাফল্যময় করে তুলতে একটি শক্তিশালী দল গত একমাসের বেশি ধরে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পূজার সময় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভারতের ও টরন্টোর বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনায় সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি থাকবে।
প্রবাসী কণ্ঠের মাধ্যমে টরন্টো এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে অবস্থানরত সকল বাঙালিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বিশিষ্ট জনদের পূজাভাবনা
দেবী দুর্গার আগমনে আমাদের মনের গ্লানি দূর হোক : মানিক চন্দ
মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, ও বিশ্বাস জাগ্রত না হলে সমাজে যেমন হানাহানি ও বিশৃংখলা লেগে থাকে তেমনি ধর্মচর্চাও পর্যবশিত হয় নিছক আনুষ্ঠানিকতায় এবং অসুরের পদচারণায় জর্জরিত হয় গোটা সমাজ। দেবী দুর্গার আগমনে আমাদের মনের গ্লানি দূর হোক, মনুষ্যত্ব জাগ্রত হোক। অসুরের নিধন ও সুরের প্রতিষ্ঠা হোক আমাদের মানসপটে ও সমাজে এই প্রত্যাশা করি।
মানিক চন্দ , রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতি কর্মী
সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা : শাহজাহান কামাল
সুন্দর এই পৃথিবীতে আমরা মানুষ এখন নানা অস্থিরতা, উদ্বেগ, যন্ত্রণা ও অশান্তিতে আছি। দশ বাহু ও তিন নয়নের দেবী দুর্গা যে শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন তা সমস্ত অশুভ শক্তিকে বিনাশ করুক এই প্রত্যাশা থাকলো। আমরা যেন জাগতিক সব লোভ লালসা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারি সেই শক্তি যেন দেবী আমাদেরকে দান করেন। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।
শাহজাহান কামাল, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী
শারদীয় দুর্গোৎসব জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের মহা মিলনমেলা : যুথিকা বড়ুয়া
বাঙালি সনাতন ধর্মের প্রধানতম উৎসব শরতের শ্রী শ্রী দূর্গাপূজা। বহুজাতিক কৃষ্টি সভ্যতা ও ঐতিহ্যের দেশ কানাডার টরোন্ট শহরে কিছুটা ব্যতিক্রমী হলেও শারদীয় দুর্গোৎসব মানেই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের মহা মিলনমেলা, আনন্দমেলা। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সৌভ্রাতৃত্যের এক অপূর্ব মিলন-বন্ধন। তুলনামূলকভাবে প্রবাসে শারদীয় দুর্গোৎসবের অন্যতম আনন্দ উপভোগ করি, শিশু-কিশোরীদের চমকপ্রদ নৃত্যে ও সঙ্গীতে। কামনা করি, মহামায়ার ঐশ্বর্য্যস্পর্শে সকলের মাঝে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি, ঐক্যতা ও আনন্দ। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
যুথিকা বড়ুয়া জ্যোতি, কথাসাহিত্যিক ও সঙ্গীতশিল্পী
টরন্টোতে সকল ধর্মের মানুষ পূজার উৎসবে সামিল হন দেখে মনটা ভরে যায় :রিঙ্কি রায়
দুর্গাপূজা বাঙালি জীবনে এক মূল্যবান ক্ষণ। প্রবাসজীবনে পূজার ওই ক্ষণ বিপুল আনন্দে টরন্টোতে অনুভব করা যায়। এতে যেমন আছে ধর্মীয় অনুভবের অপার সুখ, তেমনি সাংস্কৃতিক উৎসবের আমেজ। টরন্টোতে সকল ধর্মের মানুষ পূজার উৎসবে সামিল হন দেখে মনটা ভরে যায়। সকলকে পূজার শুভেচ্ছা।
রিঙ্কি রায়, ব্যবসায়ী
প্রবাসে উৎসবের সর্বজনীন রূপটি দেখে অভিভূত হই : শেখর ই গোমেজ
‘আজ শরতের কাশের বনে হাওয়ার লুটোপুটি/মন রয় না রয় না এই বিদেশে চায় যে এবার ছুটি।’ ঋতুরাণী শরৎ আসার সাথে সাথে মনটা প্রবাস ছেড়ে আলোর বেগে ছুটে যায় প্রিয় স্বদেশভূমিতে। ধবল কাশের বন, সদ্য জেগে ওঠা চরে রোদের রূপালি ঝিলিক, উঠানে ঝরে পড়া শুভ্র শেফালি দেখার জন্য মনটা উতলা হয়। এই প্রবাস জীবনে বাংলার শরৎ প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলীর অভাব অনুভূত হয় প্রবলভাবে। তবে একটি অভাব এই প্রবাসে অনুভব করি না, তা হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ। এখানেও মন্দিরে মন্দিরে সংস্থাপিত হয় দুর্গা প্রতিমা, জ্বলে ওঠে মঙ্গলপ্রদীপ, বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি, বেজে ওঠে মন মাতানো ঢাক। প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলে আকর্ষণীয় সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানেও সবাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অপার আনন্দে মেতে ওঠে। এখানেও এই উৎসবের সর্বজনীন রূপটি দেখে অভিভূত হই, বিভোর হই মিলন সৌহার্দের স্বপ্নে।