কানাডায় শুধু দুই ব্যক্তির হাতেই কুক্ষিগত হয়ে আছে ১ কোটি ১০ লাখ দরিদ্র মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ
অন্যদিকে ৮ ধনকুবের হাতে কুক্ষিগত সারা বিশ্বের ৩৬০ কোটি মানুষের সমান সম্পদ
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় দুইজন ধনী ব্যক্তির হাতে যে পরিমান সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে তার পরিমান দেশটির ১ কোটি ১০ লাখ দরিদ্র মানুষের হাতে যে সম্পদ রয়েছে তার সমান। ধনী এই দুই ব্যক্তি হলেন ডেভিড থমসন এবং গ্যালেন ওয়েস্টন সিনিয়র। ডেভিড থমসন ‘থমসন রয়টার্স’ এর চেয়ারম্যান এবং গ্যালেন ওয়েস্টন সিনিয়র লবলজ কোম্পানী লিমিটেড এর প্রেসিডেন্ট। থমসন রয়টার্সের ব্যবসা হলো মিডিয়া আর লবলজ এর ব্যবসা হলো গ্রোসারী ও ঔষধের দোকান।
গত ১৫ জানুয়ারীতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফ্যামের এক গবেষণা পত্র থেকে এই তথ্য জানা যায়। খবর দি কানাডিয়ান প্রেসের।
অক্সফ্যামের গবেষণা পত্রে আরো বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আট ধনকুবেরের হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে ৩৬০ কোটি মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ।
অক্সফ্যাম তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বিপজ্জনকভাবে সম্পদ কুক্ষিগত হওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনকে সামনে রেখে ‘এন ইকোনমি ফর নাইনটি নাইন পার্সেন্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে অক্সফ্যাম।
প্রতিবেদনে আট ধনকুবেরের হাতে বিশ্বের দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ কুক্ষিগত থাকার বিষয়টিকে ‘কল্পনাতীত বৈষম্য’ আখ্যা দিয়েছে অক্সফ্যাম। অক্সফ্যামের পলিসি এন্ড ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর লরেন রেভন
বলেন, এটি ধনী দরিদ্রের সাধারণ অবস্থা বর্ণনা করার কোন রিপোর্ট নয়, এটি বিশ্বের সুপার ধনী ও বাদবাকী মানুষের অবস্থা বর্ণনার একটি রিপোর্ট।
সংস্থাটি এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে ‘নতুন অর্থনৈতিক মডেল’ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে।
অক্সফ্যামের প্রতিবেদন অনুযায়ী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, স্পেনের ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান জারা’র প্রধান আমানিকো ওর্তেগা, মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট, মেক্সিকান টেলিকম ব্যবসায়ী কার্লোস সিøম হেলো, আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা মালিক জেফ বেজোস, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, ওরাকলের সিইও ল্যারি এলিসন এবং ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিষ্ঠাতা মিকায়েল ব্লুমবার্গ- এই আট ধনকুবেরের হাতে মোট ৪২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তাদের এই সম্পদ পৃথিবীর ৩৬০ কোটি মানুষের সম্পদের সমান।
অন্টারিওর ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জিম ডেভিস বলেন, “সম্পদের এই বৈষম্য বৃহত্তর প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রভাব অনেক সময় আয়ের বৈষম্য থেকে যে প্রভাব সৃষ্টি হয় তা থেকে ভিন্নতর হতে পারে। সম্পদ নিরাপত্তা প্রদান করে। কিন্তু আয় সবসময় তা দেয় না। কেউ যদি চাকরী হারায় এবং ব্যাংকে তার জমানো অর্থ না থাকে তবে তার অবস্থা হয় করুন। ”
অক্সফ্যামের পলিসি এন্ড ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর লরেন রেভন বলেন সম্পদের এই বৈষম্য সমাজের অন্যান্য অংশেও বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। যে সমাজে অধিক বৈষম্য থাকে সে সমাজে অপরাধের মাত্রাও অধিক থাকে। ঐ সমাজ হয় অস্বাস্থ্যকর। মানুষ একে অপরকে বিশ্বাস করে না। মানুষজন মনে করতে থাকেন তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন যখন দেখেন ঐ সুপার ধনীরা নিজেদের সুবিধার্থে আইন তৈরী করে নেয়।
অটোয়ার কার্লটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিফেন হ্যারিস বলেন, ধনী ব্যবসায়ীদের অধিক ক্ষমতা থাকে সরকারের মধ্যে লবিং করার ক্ষেত্রে যা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এর মাধ্যমে আরো বৈষম্য সৃষ্টি হয়। স্টিফেন বলেন, আমরা সত্যিই এমন একটি সমাজ ছিলাম যেখানে একে অপরের যতœ নিতাম এবং আমাদের মধ্যে একটি অংশীদারিত্বের মনোভাব ছিল। এখন আমরা তা কিছুটা হারিয়েছি।
অক্সফ্যামের লরেন রেভন বলেন, যে সমাজে বৈষম্য এত বেশী সে সমাজ অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়। দীর্ঘ মেয়াদে যদি আমরা দেখি যে সম্পদ মাত্র গুটি কতক লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে তবে আমরা এও দেখবো যে, বাজারে পণ্য কিনার লোক থাকবে না অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য।
কার্লটনের অধ্যাপক স্টিফেন হ্যারিস বলেন, সম্পদের এই বৈষম্য দূরীকরণে কানাডা কিছু নীতি বা আইন প্রণয়ন করতে পারে যেমনটা নিয়েছে নরডিক দেশসমূহ। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। এই দেশগুলোতে সম্পদের বৈষম্য এত তীব্র নয়। তবে কানাডায় এই নীতি কার্যকর হবে না যদি না জনগণ এর পিছনে এসে দাড়ায়। এক দেশের নীতি ও আদর্শ অন্য দেশে আমদানী করা যায় না যদি জনগণের সমর্থন না থাকে।
অক্সফ্যাম অবশ্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেছে তাদের রিপোর্টে এই বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য। এর মধ্যে আছে আগামী বাজেটে প্রগ্রেসিভ টেক্সেশন এর নীতি গ্রহণ করা যেটি নরডিক দেশসমূহে রয়েছে। ঐ নীতিতে যাদের আয় বেশী তাদেরকে একটা বড় অংশ প্রদান করতে হয় টেক্স হিসাবে।
কানাডার সোস্যাল ডেভলাপমেন্ট মিনিস্টার জিন ইভ ডিক্লেস এর কার্যালয় থেকে কর্মকর্তা মেথিও ফিলন এক বিবৃতিতে জানান, বর্তমান লিবারেল সরকার ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে মধ্যবিত্তের অবস্থার উন্নতীসাধনে। তিনি আরো জানান, লিবারেল সরকার ক্ষমতায় এসেই মধ্যবিত্তের টেক্স কমিয়েছে এবং যাদের বাৎসরিক আয় আড়াই লক্ষ বা তারও বেশী তাদের টেক্স বৃদ্ধি করেছে। তিনি বর্তমান সরকারের ‘কানাডা চাইল্ড টেক্স বেনিফিট’ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে দেশের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ পরিবার বছরে গড়ে ২৩০০ ডলার করে পাচ্ছেন।
মেথিও বলেন, সম্পদের এই বৈষমের বিষয়টি সরকার খুব মনযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।