কানাডায় ফিরে আসার সময় দ্বৈত নাগরিকদেরকে কানাডিয়ান পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ থেকে নতুনএই আইন কার্যকর হবে

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডিয়ান নাগরিক, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে তারা যদি অন্য কোন দেশে যান তাহলে ফিরে আসার সময় তাদেরকে অবশ্যই কানাডার পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। কানাডিয়ান পাসপোর্ট না থাকলে তাদেরকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এই আইন বলবৎ হবে। বাংলাদেশী কানাডিয়ানরাও এই আইনের আওতায় পড়বেন যেহেতু তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।

নতুন এই আইন করা হয়েছে ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিনিং সিস্টেমের মাধ্যমে বর্ডার সিকিউরিটি সিস্টেম উন্নত করা ও বিমানবন্দরে যাত্রী পারাপারের কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে। খবর টরস্টার নিউজ সার্ভিসের।

তবে সরকারের এই নতুন আইন নিয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগ ও হতাশা ব্যক্ত করা শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই বলছেন দ্বৈত নাগরিকদের জন্য এটি একটি বৈষম্যমূলক আইন। তবে কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফুউজি এন্ড সিটিজেনশীপ বিভাগ এ অভিযোগ মানতে নারাজ। এই বিভাগের একজন কর্মকর্তা লিন্ডসে ওয়েম্প বলেন, নতুন এই আইনে পরিবর্তনটা শুুধু এই যে, ভ্রমনের সময় বিমান যাত্রীদের কাছে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আছে কি না তা যাচাই করে দেখার জন্য এয়ারলাইনগুলোকে সহায়তা করার লক্ষ্যে নতুন এই ইলেক্ট্রনিক চেকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ আইনত বাধ্য এই ব্যাপারে যে, যারা কানাডায় প্রবেশ করতে চান তাদের কাছে নাগরিকত্বের কোন প্রমাণ আছে কি না এবং যাত্রীর পরিচয় সঠিক কিনা তা যাচাই বাছাই করে দেখা। ভ্রমণকারীর বৈধ পাসপোর্টই এই বিষয়গুলো নিশ্চত করতে পারে।

বর্তমানে দ্বৈত নাগরিকেরা অন্যদেশ থেকে বিমানে করে কানাডায় ফেরৎ আসার সময় তাদের নিজ নিজ দেশের (যে দেশ থেকে তারা কানাডায় এসে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন) পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। অথবা যে সকল কানাডিয়ান অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছন তারাও ঐ দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কানাডায় প্রবেশ করতে পারেন। তবে কানাডায় প্রবেশের সময় তাদের সাথে কানাডার নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র যেমন ড্রাইভার্স লাইসেন্স বা কানাডিয়ান সিটিজেনশীপ কার্ড থাকতে হবে।

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুয়ায়ী কানাডায় দ্বৈত নাগরিকের হার শতকরা ২.৯ ভাগ। সংখ্যার হিসাবে ৯৪৪,৭০০  জন।

কানাডা গত বছর বিমান যাত্রীদের জন্য ইলেক্ট্রনিক ট্রাভেল অথারাইজেশন সিস্টেম চালু করে। এই সিস্টেম চালু হওয়ার কারণে বিমান পথে কাউকে কানাডায় আসতে হলে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাটের মাধ্যমে তাদের বায়োগ্রাফি, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে হয় প্রি-স্ক্রিনিং এর জন্য। এমনকি যে দেশের নাগরিকদের ভিসার প্রয়োজন পড়ে না কানাডায় আসার জন্য তারাও এই আইনের আওতায় পড়েন। যারা এই আইন মান্য করবেন না তারা কানাডায় প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম মার্কন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বেলায়। তারা এই আইনের আওতায় পড়েন না।

কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক ষাট বছর বয়সী ক্রেইগ কেম্পবেল এর জন্ম কানাডার ম্যানিটোবায় এক সৈনিক পরিবারে। তিনি বলেন, নতুন এই আইন দ্বৈত নাগরিকদের জন্য নিছকই বৈষম্যমূলক একটি পদক্ষেপ। আমি এর কোন প্রয়োজনীয়তাই দেখতে পাচ্ছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি অর্থ আদায়ের একটি কৌশলমাত্র এবং যে সকল দ্বৈত নাগরিক কানাডার বাইরে থাকেন কার্য উপলক্ষে তাদের জন্য এই আইন বড় ধরনের একটি ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। অল্পসংখ্যক গর্বিত কানাডিয়ান নাগরিককের (যারা দ্বৈত নাগরিক) জন্য নতুন প্রবর্তিত এই আইন একটি লজ্জাজনক পদক্ষেপ এবং এর মাধ্যমে কানাডা দৃষ্টিগোচরভাবে মোটেও উপকৃত হবে না।

কানাডার ক্যালগারিতে জন্ম নেয়া ৪৫ বছর বয়সী কেরি ডু গ্রে থাকেন ব্রিটেনে। তার নাগরিকত্ব রয়েছে কানাডা ও ব্রিটেনের। সপ্তাহ দুই আগে তিনি কানাডায় আসার পরিকল্পনা করার সময় জানতে পারেন নতুন এই আইন সম্পর্কে। তিনি বলেন, আমার মেয়েদের জন্ম ব্রিটেনে। তারা কানাডার নাগরিক। কিন্তু তারা কানাডায় যেতে পারবে না তাদের ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে। এটি খ্যাপামী ছাড়া আর কি?

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য খরচ হয় ১২০ ডলার আর দশ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য ১৬০ ডলার।

কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফুউজি এন্ড সিটিজেনশীপ বিভাগের কর্মকর্তা লিন্ডসে ওয়েম্প বলেন, ফেডারেল সরকার যথাসাথ্য চেষ্টা করছে কানাডার দ্বৈত নাগরিকদের মধ্যে নতুন এই আইনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে যাতে করে তারা কানাডার পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করেন। এ উপলক্ষ্যে গত মার্চ মাস থেকেই প্রচার প্রচারনা চলছে বিভিন্ন সামাকিজ মাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে।

লিন্ডসে ওয়েম্প বলেন, কানাডার চার্টর অব রাইটস এ প্রতিটি কানাডিয়ান নাগরিকের অধিকার রয়েছে কানাডায় প্রবেশ করার। তবে কানাডার আইনে এটিও আছে যে, প্রতিটি কানাডিয়ান নাগরিককে কানাডায় প্রবেশের সময় তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও সাথে রাখতে হবে।