কানাডার প্রতি একাত্মতার শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে ব্যাপক সংখ্যক ইমিগ্রেন্টের

নভেম্বর ৫, ২০১৬

প্রবাসী কণ্ঠ: কানাডায় সম্প্রতি নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এই বলে যে, ইমিগ্রেন্টরা কি নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে কানাডার মূলস্রোতের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাবে? সম্প্রতি এক জরীপ চালানো হয়েছিল ইমিগ্রেন্টদের বিষয়ে কানাডিয়ানদের কি মনোভাব তা নিয়ে। দেখা গেছে ৬৮% কানাডিয়ান মনে করেন, নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে ইমিগ্রেন্টদের উচিৎ এখানকার মূলশ্রোতের সঙ্গে মিশে যাওয়া! জরীপে অংশগ্রহণকারী এই ৬৮% কানাডিয়ানদের মধ্যে ৮৭%ই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ান। অর্থাৎ প্রতি দশজন শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ানদের মধ্যে প্রায় ৯ জনই চান ইমিগ্রেন্টরা তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে যাক! জরীপটি চালিয়েছিল CBC-Angus Reid যৌথভাবে।

এই যখন পরিস্থিতি ঠিক তখনই নতুন আরেকটি গবেষণা পত্রের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে কানাডার প্রতি একাত্মতার শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে ব্যাপক সংখ্যক ইমিগ্রেন্টের। অর্থাৎ এরা কানাডাপ্রেমী।

এখন এই একাত্মতার অনুভূতি বা কানাডাপ্রেমী বনাম নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে যাওয়া কি এক বিষয়? কানাডাকে ভালবাসতে হলে কি নিজের মাতৃভাষা ও নিজের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ভুলে যেতে হবে?

কানাডার প্রতি একাত্মতার শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে ব্যাপক সংখ্যক ইমিগ্রেন্টের । ছবি : ভেঙ্গুভার সান

গত ১৮ অক্টোবর প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার গবেষণা পত্রে দেখা গেছে কানাডায় যারা ১৯৮০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগেরই কানাডার প্রতি খুবই শক্তিশালী বা শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে।

এটি নিছক একটি জরীপ তথ্য নয়। এটি গবেষণা পত্র। ১৮২ টি দেশ থেকে আসা ৭০০৩ জন ইমিগ্রেন্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই বিষয়টি জানা গেছে।

এই ৯৩% এর মধ্যে দেখা গেছে ৬৯% ইমিগ্রেন্টের খুবই শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে কানাডা এবং একই সাথে তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রতি। আর মাত্র ২৪% ইমিগ্রেন্টের খুবই শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে শুধু কানাডার জন্য।

অন্যদিকে মাত্র ৩% ইমিগ্রেন্টের খুবই শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রতি। কিন্তু কানাডার প্রতি কোন অনুভূতি নেই এদের। আর ৪% ইমিগ্রেন্টের কোন অনুভূতি নেই কানাডা বা তারা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রতি।

এই ইমিগ্রেন্টরা এসেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং এদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজ নিজ ভাষা ও নিজ নিজ দেশের কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু তা সত্বেও এদের মধ্যে শতকরা ৯৩ জনই অনুভব করেন যে কানাডার প্রতি তাদের রয়েছে একাত্মতার শক্তিশালী অনুভূতি। এই অনুভূতি কারো কারো ক্ষেত্রে তীব্র আর কারো কারো ক্ষেত্রে একটু কম তীব্র।

গবেষণায় দেখা গেছে, কানাডার প্রতি যারা বেশী মাত্রায় একাত্মতা অনুভব করেন তারা এমনসব দেশ থেকে এসেছেন যেখানে নাগরিক অধিকার খুব নিম্ম মাত্রায় বিদ্যমান এবং জীবনের পরিতৃপ্তিও খুব কম। আর যারা খুব অল্প বয়সে কানাডায় এসেছেন, অধিক সময় ধরে কানাডায় বাস করছেন বা নিজ গৃহে ইংরেজী অথবা ফরাসী ভাষায় কথা বলেন তাদের মধ্যে কানাডার প্রতি একাত্মতার মাত্রা বেশী।

আর যারা কানাডায় বর্ণবাদ বা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে কানাডার প্রতি একাত্মতার মনোভাব কম। কানাডায় যারা অল্প সময় ধরে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যেও এই একাত্মতার মনোভাব কম লক্ষ্য করা গেছে।

এই গবেষণা পত্রের তথ্যটি এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন দেখা গেছে ৬৮% মিশ্র বর্ণের কানাডিয়ান মনে করেন, নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে ইমিগ্রেন্টদের উচিৎ এখানকার মূলশ্রোতের সঙ্গে মিশে যাওয়া! আর শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ানদের মধ্যে এই মনে করার হার ৮৭%।

অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডার লীডারশীপ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া

মহিলা প্রার্থী ক্যালী লিচ সম্প্রতি সম্ভ্যব্য ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে এক বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের শীর্ষে এসেছেন। তিনি বিতর্কের মুখমুখি হয়েছেন নিজ দলের লোকদের কাছেও। তার মতে যারা কানাডায় আসতে চান নতুন ইমিগ্রেন্ট হয়ে তাদের মধ্যে ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ’ বা কানাডিয়ান মূল্যবোধ বিরোধী কোন প্রবণতা আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ তাদের আবেদন গ্রহণ করার আগে। পরীক্ষা পাশ করলে তারা ইমিগ্রেশন পাবেন, পাশ না করলে তাদেরকে কানাডায় আসার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে।

ইমিগ্রেন্টদেরকে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে যেতে হবে, বা সম্ভাব্য ইমিগ্রেন্টদেরকে কানাডায় প্রবেশ করার আগে ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ’ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে- এই ধরণের মনোভাব সৃষ্টির পিছনে বর্ণবাদ ও রক্ষণশীলতা একটি বড় ধরণের ভূমিকা রাখছে বলেই অনেকের ধারণা।

এখন নতুন গবেষণা পত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি গত কয়েক দশকে আসা ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগেরই কানাডার প্রতি খুবই শক্তিশালী বা শক্তিশালী অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও দেখা যাচ্ছে, ইমিগ্রেন্টদের এই কানাডাপ্রেম রক্ষণশীলদের কাছে যথেষ্ট নয়। তারা চাচ্ছেন ইমিগ্রেন্টরা যেন তাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিও ভুলে যায়!