ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের ইতিবাচক মনোভাব বিদ্যমান এখনো
নভেম্বর ৫, ২০১৬
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গোটা পাশ্চাত্যভূমে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব তরঙ্গায়িত হতে হতে এখন জলোচ্ছাসে রূপ নিয়েছে কোন কোন দেশে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কানাডায় এই তরঙ্গের আঘাত এখনো এসে লাগেনি। কারণ, প্রতি ১০ জন কানাডিয়ানের মধ্যে ৮ জন এখনো মনে করেন দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইমিগ্রেন্টদের প্রয়োজন রয়েছে। তারা আরো মনে করেন, কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা এখনো খুব বেশী নয়। তবে কেউ কেউ মনে করেন ইমিগ্রেন্টদের প্রবেশের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখলে অপরাধীদের প্রবেশের সুযোগ কম থাকে।
ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের এই ইতিবাচক মনোভাব এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন গত এক বছরে দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে এবং যাদের মধ্যে রয়েছে ৩২ হাজারেরও বেশী সিরিয়ান উদ্বাস্তু। গত এক বছরে (জুলাই পর্যন্ত) ৩২০,৯৩২ জন ইমিগ্রেন্ট প্রবেশ করেছে কানাডায় যা ছিল কাগজ-পত্রে ইমিগ্রেন্টদের হিসাব রাখার রীতি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যার বিচারে সর্বোচ্চ। ইমিগ্রেন্টদের সম্পর্কে কানাডিয়ানদের এই ইতিবাচক মনোভাব গত ১৫ মাসে একই রয়েছে অথবা কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে জানান Environics Institute এর নির্বাহী পরিচালক কিথ নিউম্যান। এই জরীপটি যৌথভাবে চালায় Environics Institute এবং Canadian Race Relations Foundation। খবর গ্লোব এন্ড মেইলের।
উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্য বিশ্বে জেনোফোবিয়া ( xenophobia) বা বিদেশীদের সম্বন্ধে অহেতুক ভয়ের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে। কিন্তু কানাডার পরিস্থিতি কি? এখানেও কি ঐ জেনাফোবিয়ায় ভুগছেন লোকজন? জরীপ পরিচালনাকারীদের অভিমত – না, এখানে জেনোফোবিয়া এখনো গড়ে উঠেনি।
কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। টরন্টোতে এই মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশী এবং যারা উচ্চ শিক্ষিত (ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী) তারাও এই মতের পক্ষে।
জরীপে আরো বলা হয়, অধিকাংশ কানাডিয়ান আগামীতেও এই বিশ্বাস ধরে রাখবেন যে, কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ভূমিকা ইতিবাচক। তারা আরো বিশ্বাস করেন যে কানাডা কর্তৃপক্ষ উদ্বাস্তুদের নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য রাখে এবং একই সাথে সম্ভাব্য অপরাধীদেরকেও।
উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশ তাদের সীমান্তকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে উদ্বাস্তু ঠেকানোর জন্য। কোন কোন দেশে উদ্বাস্তুদের উপর হামলাও হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্ফ-তো বারবার বলেই আসছেন তিনি নির্বাচিত হলে মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেওয়াল নির্মান করবেন ঐ দেশটি থেকে উদ্বাস্তু আসা বন্ধ করার জন্য। তিনি আরো ঘোষণা দিয়েছেন কোন মুসলিমকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না যদি তিনি নির্বাচত হন।
কানাডায় অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন এখানে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না।
কানাডায় উদ্বাস্তু গ্রহণের সংখ্যা নিয়ে আছে একাধিক মত। জরীপে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৪৮%) মনে করেন কানাডা সঠিক সংখ্যক উদ্বাস্তু গ্রহণ করছে। ৩৬% মনে করেন কানাডা যে সংখ্যাক উদ্বাস্তু গ্রহণ করছে তা মাত্রাতিরক্তি। আবার ১০% মনে করেন উদ্বাস্তু গ্রহণের মাত্রা অনেক কম। যারা মনে করেন কানাডা অতিরিক্ত উদ্বাস্তু গ্রহণ করছে তাদের প্রাথমিক আশংকা হলো, এই উদ্বাস্তুদেরকে সহায়তা করার সামর্থ্য কানাডার আছে কি না? বা তাদেরকে সহায়তা করার জন্য অন্য কোন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হবে?
জরীপে আরো দেখা গেছে, বর্তমানে অল্পসংখ্যক কানাডিয়ান ইমিগ্রেন্টদের ‘কানাডিয়ান ভ্যালিউজ’ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। কার্যত, এই চিন্তার বিষয়টি গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ম পর্যায়ে নেমে এসেছে। জরীপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯০% ই মনে করেন কানাডায় জন্ম নেয়া একজন ব্যক্তি যতটা ভাল নাগরিক হতে পারবেন, কানাডার বাইরে জন্ম নেয়া একজন ব্যক্তিও এই দেশে এসে ততটা ভাল নাগরিক হতে পারবেন।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডার লীডারশীপ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া মহিলা প্রার্থী ক্যালী লিচ সম্প্রতি মত প্রকাশ করেন এই বলে যে, যারা কানাডায় আসতে চান নতুন ইমিগ্রেন্ট হয়ে তাদের মধ্যে ‘এন্টি কানাডিয়ান ভ্যালিউজ’ বা কানাডিয়ান মূল্যবোধ বিরোধী কোন প্রবণতা আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ তাদের আবেদন গ্রহণ করার আগে। এই বক্তব্য দিয়ে তিনি তার নিজ দলের লোকদের কাছেই সমালোচতি হয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, এই জরীপ রিপোর্টটি এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কুলাম কানাডার নতুন ইমেগ্রেশন টার্গেট ঘোষণা করেছেন। মন্ত্রী জানান, কানাডা আগামী বছর ৩ লাখ ইমিগ্রেন্ট নিবে। কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই কোটা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি কানাডায় বয়স্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে আগামী বছরের ইমিগ্রেশন কোটা ৩ লাখে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অধিকাংশই আরো বেশী ইমিগ্রেন্ট গ্রহনের পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ, কানাডায় একদিকে সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যদিকে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।” উল্লেখ্য যে, একটি উপদেষ্টা প্যানেল সম্প্রতি ফেডারেল সরকারকে উপদেশ দিয়েছে ইমিগ্রেন্টের সংখ্যা বছরে ৪৫০,০০০ এ উন্নীত করার জন্য। তবে ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বলেছেন, এই সংখ্যা আবার খুব বেশী হয়ে যায়। তবে কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের ব্যাপারে অঞ্চলভেদে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মত দুটোই লক্ষ্য করা যায়। যেমন, প্রেইরী অঞ্চলে (আলবার্টা, সাসকাচুয়ান ও মেনিটোবা) ইমিগ্রেন্টদের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায় বেশী। অন্যদিকে আটলান্টিক কানাডা (নিউ বার্নসউইক, নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এন্ড ল্যাব্রাডোর, নোভাস্কশিয়া এবং প্রিন্স এডওয়র্ড আইল্যান্ড) এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ইমিগ্রেন্টদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায় বেশী।