অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে কানাডায় ইমিগ্রেশন পাওয়া অতি ব্যয়বহুল
তবে সস্তায় ইমিগ্রেশন পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে
সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পাওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে পৃথিবীর শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলোতে। কানাডায়ও রয়েছে এই সুযোগ। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এই বিষয়ের উপর এক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে সম্প্রতি।
তবে সস্তায় ইমিগ্রেশন পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে কানাডায়। আর সেটি নির্ভর করে আবেদনকারীরা কানাডার কোন প্রভিন্সে বিনিয়োগ করতে চান। খবর হাফিংটন পোস্টের।
কিন্তু কি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে কানাডার মত একটি দেশের ইমিগ্রেশন পেতে? এবং অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় তার পরিমানটা কত?
উল্লেখ্য যে গত ২০১৪ সালে কানাডার ফেডারেল সরকার বিনিয়োগের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেয়। কারণ, এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিতর্ক চলছিল অনেক বছর ধরেই। গ্লোব এন্ড মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয় ধনী বিদেশীদের দ্বারা কানাডার ইমিগ্রেশন কিনে নেয়ার নিছক একটি প্রক্রিয়ামাত্র এই অর্থ বিনোয়গের বিষয়টি। তবে কানাডার কয়েকটি প্রভিন্স এখনো এই বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধনী বিদেশীদেরকে ইমিগ্রেশন প্রদান করে আসছে। টরন্টোর ‘আমাজন ইমিগ্রেশন এন্ড লিগ্যাল সার্ভিসেস’ এর স্বত্বাধিকারী ওয়াজির হোসেন মুরাদ জানান- প্রভিন্স গুলো হলো কুইবেক, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, মেনিটোবা, সাচকাচুয়ান ও প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড। অন্টারিওতে এই সুযোগ নেই এখন। জনাব মুরাদ আরো জানান, বিনিয়োগ বলতে বাড়ি ক্রয় করাও বোঝায়। কেউ যদি কুইবেকে বা ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে বাড়ি ক্রয় করেন তবে তিনিও তার পরিবার ইমিগ্রেশন পেতে পারেন। বর্তমানে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ ডলারে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কোন কোন অঞ্চলে বাড়ি কিনতে পাওয়া যায়। কুইবেকেও আছে একই সুযোগ। (বিস্তারিত জানতে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন জনাব মুরাদের সঙ্গে। ফোন 647 895 3966, ওয়েবসাইট: : www.amazonimmigration.com
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে কুইবেকে বিনিয়োগের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পেতে হলে সবচেয়ে বেশী অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই অর্থের পরিমান ৮ লক্ষ ডলার। আর সবচেয়ে কম অর্থ ব্যয় করতে হয় প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে। সেখানে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে ইমিগ্রেশন পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন একজন ব্যবসায়ী। এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর মধ্যমে চাকরী বা কর্ম সৃষ্টি করা।
বিবিসি’র এক রিপোর্টে বলা হয় প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধনী ব্যক্তিরা ি
শল্পোন্নত দেশে বা অন্যকোন সুবিধাজনক দেশে ইমিগ্রেশন পাওয়ার জন্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। তবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেই সব দেশ সাথে সাথেই নাগরিকত্ব দেয় না। যেমন কানাডা। দেশটিতে বিনিয়োগ করা হলে প্রথমে দেয়া হয় স্থায়ী বাসিন্দার (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি) মর্যাদা। পরে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয় নাগরিকত্ব পেতে হলে।
কুইবেক ইমিগ্রেন্ট ইনভেস্টর প্রগ্রামের (QIIP) মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারীকে কানাডায় আসার সুযোগ দেয় যদি সে ব্যক্তি ৮ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করে যা পাঁচ বছর পর ফেরৎ দেয়া হয়। বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ অর্থ ছাড়াও তার অন্ততপক্ষে ১.৬ মিলিয়ন সম্পদ থাকতে হবে এবং কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য অথবা ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
অন্যদিকে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রগ্রাম (PNP) এর মাধ্যমে কেউ ঐ প্রভিন্সে ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে তাকে পার্মানেন্ট রিসিডেন্সী দেওয়া হয়। প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড কানাডার সবচেয়ে ছোট প্রভিন্স। আবেদনকারীকে অন্তত ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে কোন ব্যবসায়।
তবে এই বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিতর্ক লেগেই আছে। অনেক বছর ধরেই চলছে এই বিতর্ক। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ফেডারেল সরকার এই প্রক্রিয়ায় ইমিগ্রেন্ট আনা বন্ধ করে দিলেও কুইবেক ও প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড এখনো চালু রেখেছে তা। আর সম্প্রতি এই বিতর্কের মধ্যে ইন্ধন যুগিয়েছে বাড়ির মূল্য অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি।
কুইবেক ইনভেস্টর প্রগ্রামের মাধ্যমে যারা এখানে ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসেন তাদেরকে শর্ত অনুযায়ী কুইবেকেই থাকার কথা। কিন্তু দেখা গেছে এদের প্রায় ৮৯ ভাগই আসার পর কুইবেক ছেড়ে চলে যান অন্য প্রভিন্সে। আর তাদের বেশির ভাগের পছন্দের প্রভিন্স হলো ব্রিটিশ কলম্বিয়া। ঐ ৮৯ ভাগের দুই তৃতীয়াংশই চলে যান ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যাংকুভারে। আর এদের বেশির ভাগই আসেন চায়না থেকে। প্রভিন্স বদল করে ভ্যাংকুভারে গিয়ে এরা দেদারসে বাড়ি কিনেন যার ফলশ্রুতিতে বড়ির দাম এখন আকাশচুম্বী হয়ে দাড়িয়েছে ভেঙ্কুভারে। ঐ একই অবস্থা বিরাজ করছে টরন্টোতেও। ফলে সাধারণ আয়ের কানাডীয়দের পক্ষে ফার্স্ট বায়ার হিসাবে এই দুই শহরে বাড়ি কিনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।
ইনভেস্টর ইমিগ্রেন্টদের এই প্রভিন্স বদলের বিষয়টি এতটাই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে যে- গ্লোবাল নিউজ এর এক রিপোর্টে বলা হয়, আগস্ট মাসের মধ্যভাগে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার প্রিমিয়ার ক্রিস্টি ক্লার্ক এ নিয়ে কুইবেকের প্রিমিয়ার ফিলিপ কুলার্ড এর সঙ্গে কথা বলেন। ক্লার্ক বলেন, যখন কেউ ইনভেস্টর ইমিগ্রেন্ট হয়ে কুইবেকে আসেন তখন তাদের কুইবেকেই থাকার কথা এবং তাদের বিনিয়োগ ঐ কুইবেকেই হওয়ার কথা।