অন্টারিও’র শ্রম আইনে গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান
অন্টারিওতে অনেক শ্রমিক তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : অন্টারিতে কর্মসংস্থানের মান বা স্ট্যান্ডার্ডে গুরুতর সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল।
“তদন্তের পর আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে অন্টারিওতে অনেক কর্মস্থলে অনেক কর্মী তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এক্ট এর পর্যালোচনার পর বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই অভিমত প্রকাশ করেন। গত শতকের নব্বুই দশকের পর এই প্রথম এই ধরনের একটি পর্যালোচনা করা হলো। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।
দুই সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল কমিটি জুলাই মাসে তাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট প্রকাশ করেন। রিপোর্টে তারা আরো বলেন, বিভিন্ন কর্মস্থলে শ্রম মন্ত্রণালয় পরিচালিত তদন্তে দেখা গেছে অন্টারিও’র শ্রম আইনের লংঘন হচ্ছে শতকরা ৭৫ থেকে ৭৭ ভাগ ক্ষেত্রেই। শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন বলেন শ্রম আইনের এই পর্যালোচনা ক্রমবর্ধমান অরক্ষিত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
শ্রম মন্ত্রী বলেন, দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক পরিবর্তন, গ্লোবালাইজেশন, ট্রেডি ডিল এবং টেকনলজীর অগ্রগতির কারণে অন্টারিওর সার্ভিস সেক্টরের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে হোয়াইট কালার জব। কিন্তু সেই তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি ম্যানুফেকচারিং খাতের জব।
মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন বলেন, রিপোর্টে উল্লখ করা হয়েছে – অন্টারিওতে সংখ্যাগরিষ্ঠ চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য ‘ ডিসেন্সী এট ওয়ার্ক ’ পরিবেশের বন্দোবস্ত করে এবং প্রচেষ্টা করছে কর্মস্থলের বৈষম্য দূরীকরনের জন্য আর সেই সাথে এমপ্লয়ীদের অধিকার রক্ষার জন্য। কিন্তু তরুন কর্মী ও নতুন ইমিগ্রেন্টরা চাকরী ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে উপযুক্ত বেতন দেওয়া হয় না, ভেকেশন পে দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় না অন্যান্য বেনিফিটসও। এই অনিয়মটি ঘটছে প্রধানত রিটেইল, হসপিটালিটি এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে। এক শ্রেণীর অসাধু চাকুরীদাতাদের কারণে এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে।
অন্টারিও চেম্বার অব কামার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্ল বেলডাফ বলেন, কর্মস্থলের এই সমস্যাগুলো জিইয়ে রয়েছে শুধুমাত্র বর্তমানের বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ নেই বলে। নতুন নতুন গুরুভার ও পীড়নকর আইন প্রণয়ন না করে আমাদের উচিত হবে বিদ্যমান আইন প্রয়োগের ব্যাপারে কঠোর হওয়া।
প্যানেল কমিটি তাদের অন্তবর্তীকালীন রিপোর্টের উপর মন্তব্য গ্রহণ করবে অক্টোবর পর্যন্ত। এর পর কমিটি তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করবে।
অন্টারিও ফেডারেশন অব লেবার এর পক্ষ থেকে বলা হয়, প্যানেল কৃর্তক প্রাপ্ত তথ্য বর্তমানের জটিল ও সমস্যাগ্রস্থ চাকুরী পরিস্থিতির চিত্রটি প্রকাশ করেছে।
অন্টারিতে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য চাকুরির পদমর্যাদা, কর্ম পরিবেশ, বেতন ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজন বৃহত্তর স্থিতিশীলতা। শ্রমিক কর্তৃক ইউনিয়নে যোগ দেবার অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাইভেট সেক্টরে কানাডার বৃহত্তম শ্রমিক ইউনিয়ন ‘ইউনিফর’ পক্ষ থেকে বলা হয়, প্যানেল রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ায় এটি প্রমানিত হয়েছে যে, অন্টারিও প্রভিন্সে চাকুরীদাতাগণ সুযোগবুঝে চাকরী প্রার্থীদেরকে নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত চাকরী দিচ্ছে, বেতন দিচেছ কম এবং পার্ট টাইম জব অথবা কনট্রাক্ট জব অফার করছে যাতে বেনিফিট দিতে না হয়। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে আয়ের ক্ষেত্রে অসমতা।
শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন বলেন, যারা শ্রম আইন মানেন না বা যাদের ধারণা আইন অমান্য করেও ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্যানেল কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টে যে সুুপারিশ করা হবে তা অনুসরণ করা হবে অসাধু চাকুরীদাতাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
প্যানেল কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মাত্র ১৪% শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। অন্যদিকে সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ৭০% শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য।