প্রবাসী মুসলমানরা কানাডীয় হিসাবে খুবই গর্ববোধ করেন
নিজেদেরকে একাট্রাও মনে করেন কানাডার সঙ্গে
মে ৮, ২০১৬
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : কানাডার ব্যাপক সংখ্যক মুসলমান মনে করেন দেশটির সঙ্গে তাদের শক্তিশালী সংযুক্তি রয়েছে। নিজেদেরকে তারা একাট্রা মনে করেন কানাডার সঙ্গে। তারা আরো মনে করেন কানাডা বর্তমানে সঠিক পথে এগুচ্ছে। নতুন এক জরীপ রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা যায়।
তবে জরীপ থেকে এই তথ্যও বেরিয়ে এসেছে যে, যুবক বয়সী মুসলমানরা ক্রমশ ধর্মপ্রাণ হয়ে উঠছে। তারা বয়স্ক মুসলমানদের তুলনায় নিজেদের মুসলিম পরিচয়ের ব্যাপারে বেশী অনুরক্ত। তারা বৈষম্যের ব্যাপারে বেশী উদ্বিগ্ন এবং হতাশাগ্রস্তও।
গত ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে এবছর জানুয়ারী পর্যন্ত ৬০০ মুসলমান কানাডিয়ানের উপর পরিচালিত এক জরীপ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জরীপটি চালিয়েছে এনভাইরনিকস ইন্সিটিউট নামের একটি সংস্থা। এই সংস্থাটি দশ বছর আগেও এরকম একটি জরীপ চালিয়েছিল। এবারের জরীপ তারই ফলোআপ।
জরীপটি শুরু হয়েছিল গত জাতীয় নির্বাচনের পর। ঐ নির্বাচনে মুসলমান রমনীদের নিকাব পরা নিয়ে বেশ হৈ-চৈ হয়েছিল। পাশাপাশি সাবেক কনজারভেটিভ সরকার কর্তৃক পাস করা বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী বিল সি -৫১ ও দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিল সি-২৪ নিয়ে যথেষ্ট বাদপ্রতিবাদ হয়েছিল এবং ‘বার্বারিক কালচারাল প্র্যাক্টিস’ এর বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য টিপ-লাইন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়েও তর্কবিতর্ক কম হয়নি। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদেরকে জোর করে বিয়ে দেয়া, অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া ইত্যাদিকে বার্বারিক কালচার বলে আখ্যা দিয়েছিল সাবেক কনজারভেটিভ সরকার।
একাত্মতার শক্তিশালী অনুভূতি
জরীপে দেখা যায় কানাডায় বসবাসরত ৮৩% মুসলমান নিজেদেরকে কানাডিয়ান ভেবে খুবই গর্ববোধ করেন। ২০০৬ সালের তুলনায় এই গর্ববোধের অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০%। কৌতুহলের বিষয় হলো, অমুসলিম জনগোষ্ঠির মধ্যে এই অনুভূতি মুসলমানদের তুলনা কম। মাত্র ৭৩% অমুসলিম খুবই গর্ববোধ করেন নিজেদের কানাডিয়ান পরিচয় নিয়ে।
জরীপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৪% জানিয়েছেন কানাডার প্রতি তাদের একাত্মতার অনুভূতি খুবই অথবা মোটের উপর শক্তিশালী। ৫৮% জানিয়েছেন কানাডার প্রতি তাদের একাত্মতার অনুভূতি গত ৫ বছরে আরো শক্তিশালী হয়েছে। আর মাত্র ৫% জানিয়েছেন এই একাত্মতার অনুভূতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এনভাইরনিকস এর জরীপে আরো যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় কানাডায় প্রায় অর্ধেকের মতো মুসলমান মহিলা হিজাব অথবা মাথায় ওড়না পরেন।
২৪% মুসলমান বলেন, কানাডায় তাদের কাছে গর্ব করার সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় হলো, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র। আর ২২% মনে করেন মাল্টিকালচারালইজম ও ডাইভারসিটি হলো তাদের কাছে গর্ব করার শ্রেষ্ঠ বিষয়। যুবক বয়সী ও কানাডায় জন্ম নেয়া মুসলমানগণও মনে করেন মাল্টিকালচারালইজম ও ডাইভারসিটি হলো গর্ব করার বিষয়।
কানাডা সম্পর্কে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো এখানকার বৈরী আবহাওয়া। অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ায় অতিষ্ঠ সবাই। কানাডার এক তৃতীয়াংশ মুসলমান বলেন, কানাডায় তারা সবচেয়ে কম পছন্দ করেন যে বিষয়টি তা হলো তীব্র শীত। আর শতকরা ৯ জন মুসলমানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে অসন্তুষ্ট। প্রতি ৫ জন মুসলমানের মধ্যে একজন কানাডার এমন কোন বিষয় খুঁজে পাননি যেটি তাদের কাছে অপছন্দ।
মুসলমান ও কানাডিয়ান পরিচয়ের মধ্যে ভারসাম্য
জরীপে যারা অংশ নিয়েছেন তারা বলেন, মুসলিম এবং কানাডিয়ান এ দুটি পরিচয়ই তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৮৪% মুসলিম বলেন ধর্ম অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর ৮১% মুসলিম বলেন কানাডার জাতীয়তা।
কিন্তু যারা বলেছেন ধর্ম ও জাতীয়তা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ, তাদের মধ্যে আবার ৫০% মনে করেন ধর্ম অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর ২৭% মনে করেন দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে কানাডায় ২৮% অমুসলিম মনে করেন জাতীয়তা থেকে ধর্মই তাদের কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ৬১% যুবকবয়সী কানাডিয়ান মুসলমান মনে করেন মুসলমান পরিচয়টাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে মাত্র ৬% মনে করেন কানাডিয়ান পরিচয়টাই তাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডায় মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪৮% মুসলমান জানান তারা সপ্তাহে এক বা একাধিকবার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে বা কমিউনিটি সেন্টারে যান। ২০০৬ সালে মসজিদে যাওয়ার হার বর্তমানের চেয়ে ৭% কম ছিল। বর্তমানে ৩৩% মুসলমান মসজিদে যান শুধু বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অথবা কখনোই মসজিদে যান না।
যুবক বয়সী মুসলমানদের মধ্যে নিয়মিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যাদের মধ্যে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে তারা নিয়মিতই মসজিদে যাওয়া আসা করেন সম্ভবত।
মুসলিম মহিলাদের মধ্যে হিজাব পরার প্রবণতা এখন অনেক বেশী। ৪৮% মুসলিম মহিলা হিজাব বা মাথায় ওড়না পরেন। হিজাব/ওড়না পরার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০%। চাদর পরেন ৬% যা গা ঢেকে রাখে, অথবা নিকাব যা মুখ ঢেকে রাখে।
কানাডায় হিজাব পরার প্রবণতা সাধারণত স্বল্প শিক্ষিত, এবং যারা কম সময় ধরে কানাডায় আছেন তাদের মধ্যে বেশী লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু পাশাপাশি এটিও লক্ষ্য করা গেছে যে, ২০০৬ সাল থেকে অল্পবয়সী মেয়ে বা মহিলাদের মধ্যে হিজাব পরার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে পোস্ট সেকেন্ডারী পাস করা মেয়ে বা মহিলাও আছেন।
বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ কানাডীয় মুসলিমের। জরীপে দেখা যায় ৩০% মুসলিম বলেছেন গত ৫ বছরে তারা তাদের ধর্ম বা এথনিসিটি অথবা কালচারের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কানাডায় সাধারণভাবে বৈষম্যের শিকার হওয়ার হারের চেয়ে মুসলমানদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার এই হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশী। আর সে কারণে মুসলিমদের সামনে এখন এই বৈষম্যে শিকার হওয়ার বিষয়টি প্রধান ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সাধারণভাবে ৬২% কানাডিয়ান মুসলিম বেশ উদ্বিগ্ন বৈষম্যের এই বিষয়টি নিয়ে। অন্যদিকে ৭২% যুবক বয়সী মুসলিম বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর কানাডায় যাদের জন্ম সেই সকল মুসলিমদের মধ্যে ৮৩% উদ্বিগ্ন বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে।
কানাডায় দুই তৃতীয়াংশ মুসলিম মনে করেন স্থানীয় মিডিয়াতে তাদেরকে যে ভাবে চিত্রিত করা হয় তা নিয়ে তারা চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন।
জরীপে যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ২৯% মনে করেন পরবর্তী প্রজন্ম আজকের তুলনায় আরো কম বৈষম্যের শিকার হবেন। কিন্তু ৩৫% মনে করেন পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। আর ২১% মনে করেন আগামীতে পরিস্থিতি একই রকম থাকবে। তবে যুবক বয়সী মুসলিমদের ধারণা, আগামীতে এই বৈষম্যের পরিস্থিতি আরো খারাপই হবে।
অবশ্য বৈষম্যের এই চিত্র সত্বেও কানাডার ৮৪% মুসলিম মনে করেন পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশে মুসলিমদের প্রতি যে আচরণ করা হয় সেই তুলনায় তারা এখানে ভাল আছেন। ২০০৬ সালের তুলনায় কানাডা সম্পর্কে মুসলিমদের এই ইতিবাচক ধারণা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭%। তবে ২% মুসলিম মনে করেন তারা বরং আগের তুলনায় আরো বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
একীভূতের মনোভাব এবং সহনশীলতা
জরীপে দেখা যায়, সিংহভাগ কানাডিয়ান মুসলিম একমত হন এই বলে যে, অধিকাংশ মুসলিম কানাডায় এসে এখানকার রীতিনীতি ও জীবনযাপনের পদ্ধতিকে গ্রহণ করতে চান। তবে ১৭% মুসলিমের মত হলো তারা তাদের নিজস্ব রীতিনীতি ও জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে আলাদা হয়েই থাকতে চান।
তবে সাধারণভাবে ৫৭% মুসলিম মনে করেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের উচিৎ তাদের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক পটভূমি পাশে সরিয়ে রেখে কানাডিয়ান সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া। তবে এই মতের সমর্থক নন ৩৪% মুসলিম।
সাংস্কৃতিক পটভূমি বিষয়ে আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে জরীপে। জরীপে অংশগ্রহনকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘পরিবারে পিতা হবেন প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি বা অধিপতি’ এই বিষয়ে তাদের মতামত কি? ৪০% মুসলিম এই মতের প্রতি সায় দেন। তবে অমুসলিম কানাডিয়ানদের মধ্যে এই মতের পক্ষে রায় দেন মাত্র ২১%।
সমকামীতার বিষয়ে কানাডিয়ান মুসলমানদের রক্ষণশীলতা প্রকাশ পেয়েছে জরীপে। ইতিপূর্বে পিউ রিসার্স কর্তৃক পরিচালিত জরীপে দেখা যায় কানাডিয়ানদের মধ্যে ৮০% মনে করেন সমকামীতাকে সামাজে মেনে নেয়া উচিৎ। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে এই মেনে নেয়ার পক্ষে মত দেন মাত্র ৩৬%।
এনভাইরনিকস কর্তৃক পরিচালিত জরীপে আরো দেখা গেছে কানাডার ৪৯% মুসলিম মনে করেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা এখানকার মুসলমানের প্রতি ক্রমশ সহনশীল হয়ে উঠছেন। তাদের মতে খুব কম সংখ্যক কানাডিয়ানই মুসলিমদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব পোষণ করেন। কানাডিয়ানদের সম্পর্কে মুসলিমদের এই ইতিবাচক মনোভাব ২০০৬ সালের তুলনায় ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য মুসলিমদের মধ্যে একটি অংশ আছেন যারা মনে করেন কানাডিয়ানদের বেশীরভাগই তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। এই দলে আছেন ১৪% মুসলিম।
জরীপে যে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তা হলো, কানাডায় স্বল্প সংখ্যক মুসলিমদের মধ্যে ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশার ভাব লক্ষ্য করা গেলেও ৮৯% মুসলিম মনে করেন বর্তমানে কানাডায় যে পরিস্থিতি বিরজমান বা দেশটি যে ভাবে চলছে তা ঠিকই আছে এবং এ ব্যাপারে তারা সন্তুষ্ট।
জরীপে পাওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
৪৪% কানাডিয়ান মুসলিম জানান, দেশের বাইরে যে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্যক্রম চলছে তার প্রতি তাদের সমর্থন নেই। ৩৭% মুসলিম মনে করেন জঙ্গীদের প্রতি সমর্থন রয়েছে যাদের তাদের সংখ্যা খুবই কম।
গত জাতীয় নির্বাচনে ৬৫% কানাডিয়ান মুসলিম ভোট দিয়েছেন লিবারেল পার্টির পক্ষে। এনডিপি’র পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১০%। কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দিয়েছেন মাত্র ২%। ১৯% কানাডিয়ান মুসলিম বলেননি তারা কাকে ভোট দিয়েছেন।
৬০% কানাডিয়ান মুসলিম মনে করেন সিটিজেনশীপ শপথ নেয়ার সময় নিকাব পরার অধিকার রয়েছে তাদের। তবে ২৪% মনে করেন এর কোন প্রয়োজন নেই।
৯০% মুসলিম আশাবাদী এই ভেবে যে, বর্তমান লিবারেল সরকারের আমলে মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
৭৯% মুসলিম মনে করেন সন্ত্রাসবাদ দমন করার জন্য কানাডার সরকারী এজেন্সীগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মুসলিমদের সহযোগিতা করা উচিৎ।
উপরে উল্লেখিত এনভাইরনিকস ইনস্টিটিউস এর জরীপটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় মুসলিমদের নিয়ে কানাডার মূলধারাতে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। মুসলমানদের নিয়ে এতদিন কানাডায় যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল বা এখনো আছে সেটি নিয়ে এখন অনেকেই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। কারণ, জরীপে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কানাডায় বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠির চিন্তা ভাবনা কম-বেশী অন্যসব কানাডিয়ানদেরই মত। কানাডিয়ান মুসলিমরা কানাডাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। তারা নিজেদেরকে কানাডার অংশই মনে করেন এবং নিজেদেরকে কানাডিয়ান ভেবে বেশ গর্বও বোধ করেন। বরং অন্যান্য কানাডিয়ানের চেয়ে মুসলমান কানাডিয়ানদের এই গর্ববোধ আরো বেশী। তাই প্রশ্নও উঠেছে এই বলে যে, তাহলে কানাডিয়ান মুসলিমদেরকে কেন কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হয়, কেন তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হয় এবং কেনই বা তাদের প্রতি বিদ্বেষী আচরণ করা হয়?
কানাডার মূলধারার একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক নেইল ম্যাকডোনাল্ড এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেন, এনভাইরনিকস ইনস্টিটিউস এর জরীপটি প্রমান করেছে কানাডায় মুসলমানদের নিয়ে যে প্রচলিত যে ধারণা রয়ছে তা আসলে সঠিক নয়। জরীপে বরং এটাই প্রমানিত হয়েছে যে, কানাডিয়ান মুসলিমরা অন্যসব কানাডিয়ানদের মতোই। খুব একটা পার্থক্য নেই।
কিন্তু দেখা গেছে কানাডিয়ান মুসলিমরা এদেশে অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মতো সম্মান বা স্বীকৃতি পায়নি।
নেইল ম্যাকডোনাল্ড তার প্রবন্ধে আরো লিখেন, জরীপের একস্থানে দেখা গেছে মুসলিম এবং কানাডিয়ান এ দুটি পরিচয়ই স্থানীয় মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ৮৪% মুসলিম বলেন ধর্ম অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর ৮১% মুসলিম বলেন কানাডার জাতীয়তা। ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ মুসলিমদের কানাডাপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও তো এই একই প্রবণতা দেখা যায়। কারণ, দেশটি মূলতা মাল্টিকলচারাল এবং মাল্টি ফেইথের দেশ। আমি জানি এবং দেখেছি কানাডায় ইহুদীরা প্রথমে নিজেদেরকে ইহুদী ভাবেন এবং খ্রীষ্টানরাও প্রথমে তাদের অনুগত্য যীশু খ্রিস্টের প্রতি। তাহলে কেবল মুসলিমদের প্রতি কেন অঙ্গুলী প্রদর্শণ করা হচ্ছে? জরীপে আরো দেখা গেছে অন্য ধর্মের কানাডিয়ানদের মধ্যে কানাডার প্রতি অনুগত্য প্রকাশের গুরুত্ব কম।
ম্যাকডোনাল্ড আরো লিখেন, কুইবেকের দিকে তাকান এবং সেখানে কানাডিয়ান ফ্লাগ কয়টি আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সেখানকার ৮ মিলিয়ন অধিবাসীকে সরকারীভাবেই প্রথমত নিজেদেরকে কুইবেকার ভাবতে অনুপ্রানিত করা হয়। তাছাড়া কুইবেকের সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে এখনো বিশাল আকারের একটি ক্রশবিদ্ধ যীশুর মুর্তি টানিয়ে রাখা হয়েছে।
সাংবাদিক ম্যাকডোনাল্ড বলেন, কানাডিয়ানরা উগ্র জাতীয়তাবাদী নন। এটি খুবই ভাল একটি দিক। তাহলে কেবল মুসলিমদেরকেই উগ্র জাতীয়তাবাদী হতে হবে এমন আশা কেন করা হয়?