কানাডায় এসে একবারের জন্যও নিজেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ বলে মনে হয়নি : আসাদ চৌধুরী
ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবি ও সাহিত্যিক। তিনি কবিতা লিখছেন গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে। অতিসম্প্রতি তিনি কানাডায় এসেছেন ইমিগ্রেন্ট হয়ে। সাথে স্ত্রী সাহানা বেগমও এসেছেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই জনপ্রিয় কবি কবিতা ছাড়াও বেশ কিছু শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া ও জীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনুবাদ সাহিত্যেও রয়েছে তার কিছু কাজ। ১৯৮৩ সালে তাঁর রচিত “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ” শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরষ্কারও পেয়েছেন।
সাহিত্যের জগত ছাড়াও মনোগ্রাহী টেলিভিশন উপস্থাপনায় রয়েছে তার অপরিসীম দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা। চমৎকার আবৃত্তির জন্যও তিনি জনপ্রিয়।
তাঁর কবিতা গীতিময় এবং ছন্দোদ্ভাসিত। তাঁর ব্যঙ্গার্থক কবিতা ‘কোথায় পালালো সত্য’ একটি জনপ্রিয় পদ্য। সভ্যতার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি গত কয়েক দশকে মানবিক মূল্যবোধের যে করুণ অধোগতি, তারই প্রেক্ষাপটে এই কবিতায় তিনি আক্ষেপ করেছেন।
আসাদ চৌধুরী গত ২৬ সেপ্টেম্বর কানাডায় এসেছেন ইমিগ্রেন্ট হয়ে। এসে উঠেছেন টরন্টোতে। এখানে তার ছেলে আসিফ ও মেয়ে নুসরাত থাকেন। নুসরাতের স্বামী নাদিম একজন সৌখিন আলোকচিত্র শিল্পী। ছেলে আসিফ টরন্টোর বাঙ্গালী কমিউনিটিতে একজন পরিচিত মুখ। তার স্ত্রী সারমিনও। টরন্টোর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে দুজনই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সারমিন একবার প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের একটি কভার স্টোরীতে কভারপেজের মডেলও হয়েছিলন।
আসাদ চৌধুরী আগে আরো দুবার কানাডায় এসেছিলেন। প্রথমবার এসেছিলেন ১৯৯৮ সালে অটোয়াতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দ্বিতীবার এসেছিলেন যখন তার ছেলে আসিফ কানাডায় আসেন। সেটি ২০০৮ সালে। সেই সফরগুলো ছিল অনেকটাই নিভৃতে। কিন্তু এবার ইমিগ্রেন্ট হয়ে কানাডায় আসার পর থেকে আসাদ চৌধুরী আর নিভৃতে থাকতে পারেননি। প্রবাসে তার ভক্তরা তাকে জাপটে ধরেছেন চারদিক থেকে। প্রায় প্রতিদিনই তাকে কোন না কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হচ্ছে। কখনো কখনো একইদিনে দুই অনুষ্ঠানে।
আসাদ চৌধুরী কথারও যাদুকর। কথা বলেন গুছিয়ে। শ্রোতা-ভক্তরা অধীর আগ্রহ নিয়ে শুনেন তার কথা। গত সপ্তাহে প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে গুণী এই মানুষটার একটি একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এখানে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের সম্পাদক খুরশিদ আলম।
প্রশ্ন : আপনি একজন রাজনীতি সচেতন কবি। এবার কানাডায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় আপনি এখানে উপস্থিত ছিলেন। এখানকার রাজনীতি সম্পর্কে আপনার কি অভিজ্ঞতা হলো?
উত্তর : গত ১৯ অক্টোবর কানাডার জাতীয় নির্বাচনের দিনটি আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আরো আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম পরাজিত প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার কি বলেন এবং বিজয়ী নেতা জাস্টিন ট্রুডো কি বলেন। আমরা জানি, বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই
কিছু লোক মারা যাবে, কিছু ঘর-বাড়ী পুড়বে। নির্বাচনের পরে দাঙ্গা হাঙ্গামা হবে এবং যথারীতি সুক্ষ্ম কারচুপী আর বিজয় ছিনতাই হয়েছে এ ধরনের কাথাবার্তা হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়েও কথাবার্তা হবে। কিন্তু এগুলো কিছুই দেখলাম না কানাডার জাতীয় নির্বাচনে। উল্টো দেখলাম জাস্টিন ট্রুডো অসম্ভব প্রশংসা করলেন স্টিফেন হারপারের। তিনি এমনো বলছেন যে, হারপার দেশটাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে স্টিফেন হারপারও বললেন, জাস্টিন ট্রুুডো যে কোন ভাল উদ্যোগ নিলে তিনি তার সাধ্যমত চেষ্টা করবেন সহযোগিতা করার জন্য। আমি দুজনের বক্তব্যই শুনেছি খুব মনোযোগ দিয়ে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছি দুজনের বক্তব্য শুনে।
প্রশ্ন : কানাডা সম্পর্কে কিছু বলুন। কেমন লাগে দেশটি।
উত্তর : কানাডায় আসার পর ইতিমধ্যে দুই মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো আমার মনে হয়নি আমি কানাডায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ। এটা আমি খুব কম জায়গায় পেয়েছি। আমি পৃথিবীর অনেক দেশেই গিয়েছি। আমি চাকরীর সুবাদে জার্মানীতে থেকেছি তিন বছর। আমি নিউয়র্কে গিয়েছি। লন্ডনেও গিয়েছি বেশ কয়েকবার। অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে গিয়েছি, গিয়েছি প্যারিসেও। কিন্তু আমি অত্যন্ত জোর দিয়ে বলতে পারি, কানাডায় এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও মনে হয়নি আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ যেটি মনে হয়েছিল পৃথিবীর অন্যান্য দেশে গিয়ে বা থেকে।
প্রশ্ন : প্রবাসী বাঙ্গালীদের বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আপনার ইতিমধ্যেই। কি অভিজ্ঞতা হলো সেখানে গিয়ে?
উত্তর : আমার কাছে মনে হয়েছে, এখানে এই প্রবাসে বাঙ্গালীর একটি চরিত্র খুব সন্দরভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। সেটি হলো বাঙ্গালীর উৎসব প্রিয়তা। বাঙ্গালী যে সত্যিকার অর্থেই উৎসব প্রিয় সেটা কানাডায় এসে আবার নতুন করে যেন উপলব্দি হলো আমার। দেশে নানা কারণে বিভিন্ন উৎসব উদযাপনে বাধা আসতো। তার মধ্যে ধর্মীয় বাধা একটি। আরো নানান বাধার বিষয় ছিল। বাধা এখনো আছে। তবে আগের তুলনায় কম সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে দেখেছি এই ডিসেম্বরের তীব্র শীতের মাঝেও বাঙ্গালীরা বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করছেন।
প্রবাসে আরেকটি জিনিষ আমার খুব ভাল লেগেছে। প্রবাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সজ্জন ব্যক্তি যারা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যারা অনেক বড় বড় ভূমিকা নিচ্ছেন, যারা মর্টগেজ বা রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করেন, যারা আইন ব্যবসা করেন এরা কিন্তু বাঙ্গালীদের প্রতিটি অনুষ্ঠানে আসেন নিয়মিত। শুধু যে আসেন তাই নয়, তারা বাঙ্গালীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতাও করেন। এটি সত্যিই আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে।
এখানে বাংলা চর্চাটাও যথেষ্ট আছে। প্রবাসে তরুনদের নিয়ে কিছু একটা করা দরকার। বাংলাদেশ সেন্টারে আমি একটা বিষয় দেখলাম তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটা আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। আমি অস্ট্রেলিয়াতেও দেখেছি সেখানে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে নানামুখী কাজ হচ্ছে। সেখানে বাংলা একাডেমী নামে একটি প্রতিষ্ঠানও আছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে মেয়েদেরকে বাঙ্গালী কায়দার রান্না-বান্নাও শেখানো হয় অস্ট্রোলিয়াতে।
কানাডায় দেখেছি প্রথম সন্তান বাবা মায়ের সঙ্গে খুব ভাল বাংলা বলছে। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তান জন্মাবার পর তারা তখন নিজেদের মধ্যে ইংরেজীতে কথা বলছে। কার্টুন দেখে হোক বা অন্যকোনভাবে হোক তারা খুব দ্রুত এই ভাষাটি আয়ত্ব করে নিচ্ছে বা নিতে পারছে। এটি একটি ভাল দিক। কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে, এরা না আবার বাংলাটা খুব দ্রুত ভুলে যায়।
প্রশ্ন : যদি বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার তুলনা করতে বলি তবে আপনি কি বলবেন?
উত্তর : গুড গভার্নেস বা সুশাসন একটি খুব বড় ব্যাপার। আর আমি আরো মনে করি মানুষের প্রতি প্রশাসনের আস্থা এবং শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এই সুশাসনটা বিকশিত হয় এবং আমার কাছে আরো মনে হয়েছে যে মানবিক মূল্যবোধগুলো কার্যকর থাকায় এখানকার সমাজও অনেকটা এগিয়ে আছে। সুশাসনের কথাটা বলছি এই কারণে যে, কতগুলো কাগুজে মূল্যবোধ থাকে গণতন্ত্রের। এখানে কাগজে নয়, খাতা কলমে নয়, আমি সেটার অস্তিত্ব বাস্তব জীবনেই লক্ষ্য করেছি। যেমন চার্চে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে বাঙ্গালীদের। নাচের অনুষ্ঠান বা গানের অনুষ্ঠান। এটা আমাকে অবাক করেছে। এতটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজ এখানে, এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এরকমটি হচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সুশাসনের কারণে।
দুই দেশের তুলনা করতে বললে আমি আরো বলবো, বাংলাদেশের কাগজে – কেতাবে অনেক কিছু আছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে কিচ্ছু নেই।
যেমন আমরা এত কষ্ট করে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছি, স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়ই যেন ছিনতাই হয়ে গেছে বা যাচ্ছে বা যাওয়ার পথে।
আরো দেখেছি এখানকার বিভিন্ন লাইব্রেরীগুলো যেখানে বাংলা বই আছে, আছে গানের সিডি। আছে বাংলা ম্যাগাজিন। তার মনে হচ্ছে, এখানে যে অনেকগুলো ভাষা আছে সেই ভাষাগুলো সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই যে প্রয়াসটা এটা খুব বড় ব্যাপার বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উপস্থিতি বা অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। তাদের হাতে সাম্প্রতিক সময়ে
কয়েকজন লেখক ও প্রকাশক নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। ব্যাপারটিকে আপনি কিভাবে দেখেন? আপনার কি মনে হয় মৌলবাদীদের এই নৃশংসতা দেশে সৃষ্টিশীল বা প্রগতিশীল সাহিত্য সৃষ্টির উপর কোন প্রভাব বিস্তার করছে বা করবে?
উত্তর : আমার পক্ষে হয়তো বলা সম্ভব নয়, তবু আমি বলি ১৯৭৭ সালে যখন জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন করলেন, ধর্মকে সংবিধানে জায়গা করে দিলেন, পরবর্তীতে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করলেন এর ফলে আমার মনে হয়না বাইরের দিক থেকে ফল কিছু হয়েছে। কিন্তু ভেতরে একটা পরিবর্তন অবসম্ভাবী ভাবে হয়েছে। দেশে মৌলবাদের বিকাশের সঙ্গে এবং জঙ্গীবাদের সঙ্গে এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আমি মনে করি মানুষের চিন্তা শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি। এবং আমার সবচেয়ে বড় ভয় যেটা সেটা হচ্ছে, এই চিন্তা শক্তি যাতে ব্যাহত হয়, মানুষের বাক স্বাধীনতা যাতে খর্ব হয় তার জন্য বাংলাদেশ সবরকমের আয়োজন আছে। এটা নিশ্চই আপনিও নিশ্চই লক্ষ্য করছেন অত্যন্ত চিন্তা ও উদ্বেগের সঙ্গে। রাজনীতির নামে, গণতন্ত্রের নামে সব জায়গায়ই একই অবস্থা। ব্লগারদের ব্যাপারে সরকার যে ভূমিকা নিচেছ সে ব্যাপারে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
কানাডায় বাকস্বাধীনতা আছে শতভাগ। এটা মানতেই হবে। এটা একটা বড় ব্যাপার আমি মনে করি। গণতন্ত্রটা প্র্যাক্টিসের ব্যাপার। এটি শুধু একটি মুখের কথা নয়। বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা ইত্যাদি কিছুই ছিল না তখনও কিন্তু সমাজে বাকস্বাধীনতা ছিল। আমি সমাজ বলছি, বলছি না যে দেশে ছিল বা রাষ্ট্রে ছিল। এখন এগুলো সমাজ থেকেও আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। আর এগুলো আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি।
আমি মনে করি মৌলবাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে কিন্তু সাহিত্যে কি প্রভাব ফেলবে? যার লেখার কিছু আছে সে লিখবেই। তাকে থামানো যাবে না।
প্রশ্ন : কিন্তু প্রকাশকদেরকেওতো হত্যা করা হচ্ছে। তাহলে লেখা ছাপাবে কে?
উত্তর : হয়তো এখন ছাপতে পারবে না কিন্তু অনেক বছর পরে হলেও ছাপতে পারবে। আসলে এই খুনাখুনির বিষয়টাকে রাষ্ট্রই একসময় প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন এই হেপা বা ঝক্কিটা সামলাবে কে? আর একসময় প্রশ্রয় দিয়েছে এটাতো পাস্ট টেন্স এর কথা। প্রেজেন্ট টেন্সেইবা হচ্ছেটা কি? আর গণজাগরণ মঞ্চটাকে নষ্ট করেছে কারা? এগুলোতে চিন্তা করার বিষয়।
প্রশ্ন : কানাডা প্রবাসী বাঙ্গালীদের সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
উত্তর : কানাডায় গণতন্ত্রের পরিবেশ আছে বলেই দেখুন এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ রয়েছে। তার একটি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদযোগ। বৃটেনে কানাডার চেয়ে অনেক বেশী বাঙ্গালী রয়েছেন। সেখানে এখন বাঙ্গালীদের পঞ্চম প্রজন্মের যুগ চলছে। নিউয়র্কেও রয়েছেন প্রচুর সংখ্যক বাঙ্গালী। সেখানে তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্ম রয়েছে বাঙ্গালীদের। শুধু তাই নয়, বৃটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বিত্তবান বাঙ্গালীও রয়েছেন। কিন্তু তারপরও এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন কানাডা প্রবাসী বাঙ্গালীরাই।
কানাডায় ইদানিং বাঙ্গালীদের মধ্যে আস্তে আস্তে বিত্তবানদের সংখ্যা বাড়ছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেল-মেয়েরা অনেক ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তারপর দেখুন লেখালেখিতেও অনেকে ভাল করছেন কানাডা প্রবাসী বাঙ্গালীরা। যেমন অটোয়াপ্রবাসী মুস্তফা চৌধুরী লিখেছেন অসামান্য একটি গবেষণা গ্রন্থ ‘একাত্তরের যুদ্ধ শিশু’। বহু দিন লেগেছে তার এই কাজটি সমাধা করতে। মন্ট্রিয়লে বসে মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন তাজুল ইসলাম। কাজেই আমি বলতে চাচ্ছি যে বিষয়টা সেটা হলো, এদেশের রাজনীতি, এদেশের প্রশাসন সমাজে এমন একটা অনুকুল অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলেই এখানে একজন বাঙ্গালী বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলা ভাষায় বাঙ্গালীরা পত্রিকা প্রকাশ করতে পারছেন। এতগুলো পত্রিকা এখানে – ভাবা যায়? এই যে সবার জন্য ক্ষেত্র তৈরী করা, সুযোগ দেওয়া, এই বিষয়গুলো কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার।
কানাডা একজন বিদেশীকে গ্রহণ করছে, তাকে নাগরিকত্ব দিচেছ। এবং তার জন্য সুযোগ তৈরী করে দিচেছ তার নিজের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের। আর এটা কোন কাগুজে প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবিকভাবেই তারা এই কাজগুলো করছে। তাদের এই যে সহমর্মীতা ও সহযোগিতা এবং মানবিক মূল্যবোধ এর কি তুলনা হয়? একটি দেশে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকলে সেখানে এই বিষয়গুলো থাকবেই অবধারিতভাবে। কানাডায় আমরা সে বিষয়গুলোই দেখতে পাচ্ছি।
প্রশ্ন : কানাডায় কোন কোন জায়গায় গিয়েছেন। সবচেয়ে ভাল লেগেছে কোন স্থানটি?
উত্তর : কানাডায় আসার পর আমি গিয়েছি বেশ কিছু জায়গায়। অটোয়া মন্ট্রিয়ল ছাড়াও টরন্টোর বিভিন্ন উপশহরগুলোতেও গিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত টরন্টোই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বলে মনে হচ্ছে। নায়েগ্রাতেও গিয়েছি। নায়েগ্রার প্রকৃতি আমাকে পাগল করে দিয়েছে। এটা একটা বিষ্ময়। নায়েগ্রা নিয়ে আমি দুটো কবিতাও লিখেছি। নায়েগ্রার আশপাশ অঞ্চলগুলোও আমার দেখা হয়েছে। ওখানকার পার্কটাও অসম্ভব সুন্দর। অন্টারিওর নদীটাও আমাকে খুব টানে। প্রচন্ডভাবে টানে। অন্টারিও লেকটাও আমার পছন্দ।
কানাডার ঋতু সবগুলো দেখা হয়নি। বিশেষ করে শীত। আমার মনে হয় না শীত ঋতুটা খুব আনন্দের হবে। এখানে মাইনাস ৩/৪ এ যে অবস্থা দেখেছি বা যে কাপুনি উঠেছিল সেটা জার্মানীতে থাকা অবস্থায় মাইনাস ২৪ ও হয়নি। এখানে শীতের বাতাসটা খুবই বেশী। ভয়াবহ, একেবারে হাড়কাপানো। গ্রীষ্মের অবস্থাটাও দেখার সুযোগ হয়নি। নিশ্চই সেটা খুব উপভোগ্য হওয়ার কথা।
প্রশ্ন : এখানকার বাঙ্গালীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মচাঞ্চল্য সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
উত্তর : কানাডায় বাঙ্গালীর সংখ্যা খুব বেশী নয়। কিন্তু এখানে যে কটি পরিবারের লোকজনকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার তাদের প্রায় প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেউ গান করেন, কেউ কবিতা পড়েন, কেউ নৃত্য নিয়ে আছেন, অভিনয়ও করছেন কেউ কেউ, কেউ আছেন ছবি তোলা নিয়ে, কেউ আবার চলচ্চিত্র তৈরী করছেন। এমনকি আমার ছেলে নাতনী এরা কোনদিন নাচবে বলে ভাবিনি। কিন্তু তাই করছে তারা। আমার ছেলেকে একদিন দেখলাম স্টেজে উঠে নাচছে। তাও আবার যে সে নাচ নয়, রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের স্টেজ শোতে নৃত্য করছে। আসলে এটাই দেখলাম যে এখানে বাঙ্গালী কমিউনিটির মধ্য সাংস্কৃতি উদ্যোগটা অনেক বেশী। আর আমার আরো ভাল লেগেছে এটি দেখে যে এখানে বাঙ্গালীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের কয়েকজন শিল্পী কানাডার মেইনস্ট্রিমের সঙ্গেও যুক্ত। সত্যিই এটা আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। একটা মেয়েকে আমি দেখেছি যে গান করে। তাকে আমার কাছে খুবই প্রমিজিং মনে হয়েছে। সে যদি মেইনস্ট্রিমে লেগে থাকতে পারে তবে আমার ধারণা সে খুবই নাম করতে পারবে একদিন। আবার কয়েকজন শিল্পী আছেন যারা নিয়মিত ভারতীয় ও পাকিস্তানী কমিউনিটির প্রোগ্রামে অংশ নেন এবং কিছুটা সম্মানীও পান। এ সম্মানী প্রসঙ্গে আমি আপনার মাধ্যমে একটি বিষয় তুলে ধরতে চাই যেহেতু আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগাজিনের সম্পাদক। যখন বাঙ্গালীদের উদ্যোগে বড় মাপের কোন ইভেন্ট হয় কানাডায় তখন কেন স্থানীয় শিল্পীদের সম্মানী বা পারিশ্রমিক দেয়া হয়না যারা ঐ ইভেন্টে পারফর্ম করেন? এটা আসলে আমার কাছে বিস্ময়কর বলে মনে হয়। ঢাকা থেকে তিন চার হাজার ডলার বা তারো বেশী অর্থ ব্যয় করে শিল্পী আনা হচ্ছে অথচ স্থানীয় শিল্পীদের কিছুই দেয়া হচ্ছে না। ঢাকার শিল্পীরা এখানে এসে খারাপ করছে তা বলবো না। তারা নিশ্চয় ভাল শিল্পী। কিন্তু এখানে যারা শিল্পী এদের কয়েকজনের গান ও নাচ আমি দেখেছি। তারা ঢাকার জনপ্রিয় শিল্পীদের সমান না হলেও কমতো পাওয়ার কথা নয়। তাদেরকে শুনেছি কিছুই দেওয়া হয় না।
প্রশ্ন : টরন্টোতে কবিতা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, আবৃতি প্রশিক্ষণের ক্লাশও হয়। আবার এককভাবে শুধুমাত্র আবৃতির অনুষ্ঠানও হয় মঞ্চ ভাড়া করে যেখানে দর্শকরা যান টিকিট কেটে। একজন কবি হিসেবে বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর : এটাকে আমার বিনয় যদি ভাবেন তবে বলি, আমি নিজে তো একটু লিখি। অনেক বছর ধরেই লিখছি। এখানে আমাকে যে সম্মানটা দেয়া হচ্ছে সেটা আমি প্রত্যাশা করিনি। কথাটি আমি অকপটেই বলছি। আমি দেখেছি এখানে যারাই লেখালেখি করেন বা আবৃত্তি করেন তাদের লেখাপড়াটা অনেক বেশী। আর বাংলাদেশ থেকে বড় হয়ে যারা এখানে এসেছেন তাদের লেখার ধরণটা হবে একরকমের আর এখানে যারা বড় হয়েছেন তাদের লেখার স্বাদ কিন্তু আলাদা হবে। প্রবাসের শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় বাঙ্গালীরা যেভাবে বিচরণ করছেন তার একটা ফলাফলতো পাওয়া যাবে নিশ্চই।
প্রশ্ন : গত ৯ বছর ধরে টরন্টোতে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামী বছর ঘটা করে ১০ম বই মেলা করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যমেলা নামে একটি বই বিপননকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সাদী আহমেদের উদ্যোগে এবং অন্যান্য বইপ্রেমীদের সহযোগিতায় এই মেলাটি হয়ে আসছে। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর : এটাতো বিশাল ব্যাপার কোন সন্দেহ নেই। ঢাকা থেকে বই আনা খুবই ব্যয়বহুল এখন। তারপরও যে এখানে এই প্রবাসে বই মেলা করা হচ্ছে এটা একটা বিশাল ব্যাপার। আর লোকজন যে এখানে বই একেবারে কিনেননা তা নয়। ভাল বই পেলে তারা কিনেন। যেমন জাহানারা ইমামের উপর লেখা একটা বই আমেরিকা প্রবাসী ড. নূরন্নবীকে ফেরত নিয়ে যেতে হয়নি। অটোয়ার মুস্তফা চৌধুরীর বইও ভাল বিক্রি হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, শুদ্ধ সাহিত্যের বই পৃথিবীর সব জায়গাতেই একটু কষ্টের মধ্যে আছে। এগুলের বিক্রি একটু কমই হয়।
এখানে আরেকটা ব্যাপার যেটা আমি বলতে চাচ্ছি, মাইনরিটি কমপেক্স মানুষকে নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করে। সত্য প্রকাশ করার সময় তারা হিসেব করে কথা বলে। যেমন বাংলাদেশে একজন হিন্দু লেখক লিখতে বসলে তাকে চিন্তা করতে হয় কোন মুসলমান আঘাত পাবে কি না বা কষ্ট পাবে কি না সেটি তাকে বার বার চিন্তা করতে হয়। এই চিন্তা মুসলমান লেখককেও করতে হয়। কিšুÍ এখানে এই প্রবাসে আঘাতের প্রশ্ন নয়, একটি সত্য অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এখানে কেউ দ্বিধা করবেন না। আমার আরো মনে হয়ে আগামী পনের বিশ বছরের মধ্যে আরো অনেক ভাল লেখক পাব। চিত্র শিল্পীতো পাবোই তাতে কোন সন্দেহ নেই।
প্রশ্ন : প্রবাসী বাঙ্গালীদের মধ্যে নেতিবাচক কোন কিছু লক্ষ্য করেছেন কি?
উত্তর : আমাদের দেশে বাঙ্গালীদের মধ্যে লোকজনকে চিহ্নিত করার একটা বিশ্রি প্রবনতা আছে। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বললেই তাকে ওমুকের দালাল বা অমুকের এটা সেটা বলে চিহ্নিত করা হয়। এখানেও দেখেছি বাঙ্গালীদের মধ্যে একটা বিষয় খুব কাজ করছে। আর সেটা হলো জেলাসী বা ইর্ষাপরায়নতা। এটি প্রচন্ডভাবে কাজ করছে এখানে এই প্রবাসে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করাটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
তাছাড়া প্রবাসে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোন অর্থ দেখি না। এখানে যদি রাজনীতি করতে হয় তবে লিবারেল পার্টি করবে, কনজারভেটিভ পার্টি করবে নয়তো এনডিপি করবে। প্রয়োজনে গ্রীন পার্টিও করতে পারে। আমি মনে করি যারা এদেশে বসে দেশের রাজনীতি করেন তারা কখনোই বিকশিত হবেন না।
হ্যা, বাংলাদেশে যদি কোন অন্যায় হয়ে থাকে তবে এখানে একটা সুস্থ বাঙ্গালীকে তা স্পর্শ করবেই। স্বাভাবিকভাবেই এটা করবে। যেমন প্রকাশক দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করার পর এখানে মানববন্ধন করা হলো আলো জ্বেলে। আমিতো এটাকে একটা সুস্থ লক্ষণ মনে করি। পৃথিবীর যেখানেই অন্যায় হোক সেটার প্রতিবাদ তো হবেই। কিন্তু আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, এখানকার যে বাস্তবতা এখানকার যে রাজনীতি এখানকার যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এই সমস্ত ব্যাপারে বাঙ্গালী কেন তার নিজস্ব চিন্তা যুক্ত করবে না। এখানে তো দেখেছি ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখদের মধ্য থেকে কয়েকজন মন্ত্রীও হয়েছেন এবার। আফগানিস্তান থেকে এসেও এমপি হয়েছেন একজন মহিলা যার নাম মরিয়ম মুনসেফ। তিনি মন্ত্রির দায়িত্বও পেয়েছেন। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহন করা উচিত বাঙ্গালীদের।
আপনিও একটা কাজ খুব ভাল করেছেন যে আপনার প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনটিতে মূলধারার নিউজ/ভিউজকে প্রাধান্য দিচ্ছেন যে বিষয়গুলো প্রবাসীদের জানা খুবই জরুরী।
মূলধারায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এখানে মূলধারায় কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রাষ্ট্র
বিজ্ঞানের অধ্যাপক, বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং অর্থনীতির অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপ হওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি তাদের সাফল্য দেখে। অমিত চাকমার কথাই চিন্তা করুন। উনি কত উপরে উঠে গেছেন!
প্রশ্ন : আমাদের শেষ প্রশ্ন। আপনি কোন পরিচয়ে পরিচিত হতে ভালবাসেন সবচেয়ে বেশী? কবি হিসেবে না লেখক হিসেবে?
উত্তর : আমাকে আমি মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি। কবি বা লেখক হিসেবে নয়।
আসাদ চৌধুরীর শিক্ষা কর্ম ও সাহিত্য জীবন সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে যে তথ্য দেয়া আছে তা পাঠকদের জন্য এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো : –
জন্ম : আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম।
শিক্ষাজীবন: আসাদ চৌধুরী আরমানিটোলা হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিভাগ থেকে ১৯৬৩ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন : বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীতে কাজ করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমীতে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
আসাদ চৌধুরীর রচনাসমগ্র
কবিতা : তবক দেওয়া পান [১৯৭৫], বিত্ত নাই বেসাত নাই [১৯৭৬], প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় [১৯৭৬], জলের মধ্যে লেখাজোখা [১৯৮২], যে পারে পারুক [১৯৮৩], মধ্য মাঠ থেকে [১৯৮৪], মেঘের জুলুম পাখির জুলুম [১৯৮৫], আমার কবিতা [১৯৮৫], ভালোবাসার কবিতা [১৯৮৫], প্রেমের কবিতা [১৯৮৫], দুঃখীরা গল্প করে [১৯৮৭], নদীও বিবস্ত্র হয় [১৯৯২], টান ভালোবাসার কবিতা [১৯৯৭], বাতাস যেমন পরিচিত [১৯৯৮], বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই [১৯৯৮], কবিতা-সমগ্র [২০০২], কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি [২০০৩], ঘরে ফেরা সোজা নয় [২০০৬]।
প্রবন্ধ : কোন অলকার ফুল [১৯৮২]।
শিশুসাহিত্য : রাজার নতুন জামা [রূপান্তর, ১৯৭৯], রাজা বাদশার গল্প [১৯৮০], গ্রাম বাংলার গল্প [১৯৮০], ছোট্ট রাজপুত্র [অনুবাদ : ১৯৮২], গর্ব আমার অনেক কিছুর [১৯৯৬], ভিন দেশের মজার লোককাহিনী [১৯৯৯], তিন রসরাজের আড্ডা [১৯৯৯], কেশবতী রাজকন্যা [২০০০], গ্রাম বাংলা আরো গল্প [২০০০], তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী [জীবনী, ২০০০], জন হেনরি [আমেরিকার লোককাহিনী, ২০০১], মিকালেঞ্জেনো [জীবনী, ২০০১], ছোটদের মজার গল্প [২০০১], সোনার খড়ম [২০০৬], মুচি-ভ’তের গল্প [২০০৬]।
জীবনীগ্রন্থ : সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু [১৯৮৩], রজনীকান্ত সেন [১৯৮৯], স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী [২০০১]।
ইতিহাস : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ [১৯৮৩]।
অনুবাদ : বাড়ির কাছে আরশিনগর : বাংলাদেশের উর্দু কবিতা [২০০০], প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা [২০০৫]।
সম্পাদনা : যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ [১৯৯১ যুগ্মভাবে], ছয়টি রূপকথা [১৯৭৯]।
পুরস্কার ও সম্মাননা : আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার [১৯৭৫], অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার [১৯৮২], বাংলা একাডেমি পুরস্কার [১৯৮৭], শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক [১৯৯৯], ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার, বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক, অশ্বনী কুমার পদক [২০০১], জীবনানন্দ দাশ পদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার [২০০৬], বঙ্গবন্ধু সম্মাননা [১৪১৮], একুশে পদক [২০১৩]।
– প্রচ্ছদে ব্যবহৃত আসাদ চৌধুরীর ছবিটি তুলেছেন আব্দুস সালাম।