বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : গত ২০ আগস্ট নাগরিক অধিকার গ্রুপ বি.সি. সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশন এবং কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অব রিফুজি ল’ইয়ার্স যৌথভাবে বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। তারা বলেন এই আইন কানাডার পরিচয়কে হেয় করছে এবং একই সাথে সংবিধানও লঙ্ঘন করছে। তারা আরো বলেন, এই আইন বলবৎ হওয়াতে কানাডার দ্বৈত নাগরিকেরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নগরিকে পরিনত হয়েছে।
বিল সি-২৪ কানাডার ‘চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম’ এর লঙ্ঘন এই অভিযোগ তুলে নাগরিক অধিকার গ্রুপ দুটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়।
বি সি সিভিল লিবার্টিজ এসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক জস পিটারসন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনটি বলবৎ হওয়ার আগে সকল কানাডিয়ান নাগরিকের সমান সুযোগ ও অধিকার ছিল। কে কোথায় জন্ম নিয়েছে বা কোথা থেকে এসেছে সেটি কখনো কোন প্রশ্ন ছিলনা। কিন্তু নতুন এই আইনের কারণে কানাডায় আমরা বিভক্ত হয়ে পরেছি। এই বিভক্তির ফলে আমরা কেউ বেশী অধিকার ভোগ করবো আবার কেউ কম অধিকার ভোগ করবো।
উল্লেখ্য যে নতুন এই আইনের বলে সরকার যে কোন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে তার নিজ দেশে (যেখান থেকে এসেছে) পাঠিয়ে দিতে পারবে যদি প্রমানিত হয় যে সেই ব্যক্তি কানাডায় বা কানাডার বাইরে যে কোন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, বিশ্বাসঘাতকতা বা গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত রয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত নিবেন ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বা তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আদলতের মাধ্যমে এর
সুরাহা হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এ প্রসঙ্গে বৃটিশ কলম্বিয়া সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশন এর নির্বাহী পরিচালক জোস পিটারসন ইতিপূর্বে ইয়াহু কানাডার কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নাগরিত্ব বাতিলের এই আইনটি এক ধরণের পরিহাস। তিনি বলেন, বৃটেনে আজ থেকে ৮শত বছর আগে একটি আইন ছিল যে আইনের বলে দেশ থেকে নাগরিকদেরকে বহিস্কার করা যেত। আজ ৮শত বছর পর সেই আইন আবার আমরা কানাডায় ফিরিয়ে এনেছি।
তিনি বলেন, দেশ থেকে কোন নাগরিককে বহিস্কার করার প্রথাটি ছিল মধ্যযুগীয় কালচার। এটা করা হতো কারণ সে সময় বৃটেনে সঠিক ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম ছিল না। ছিল না আইনের শাসন। কিন্তু ৮ শ বছর পর সেই মধ্যযুগীয় আইনকে আবার ফিরিয়ে আনা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয় বলে আমরা মনে করি। দেশের কোন নাগরিক যদি কোন অপরাধ করে থাকে তবে কানাডার যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম বিদ্যমান রয়েছে সেটিই এ ক্ষেত্রে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত বলে আমরা মনে করি।
এদিকে বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ফেডারেল ক্যাম্পেইন টিমের মুখপাত্র কেভিন ম্যানার্ড সাংবাদিকদের বলেন, সরকার বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে করা সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জকে “আক্রমনাত্মকভাবে মোকাবেলা” করবে।
কেভিন ম্যানার্ড আরো বলেন, “আমাদের কনজারভেটিভ সরকার কানাডার সিটিজেনশীপ এর ভ্যালুকে অনেক জোরদার করেছে যা কানাডা ইতিহাসে ইতিপূর্বে অন্য কোন সরকার করেনি। ২০১৪ সালে আমরা রেকর্ড সংখ্যক ইমিগ্রেন্টকে নাগরিকত্ব দিয়েছি। আর এটি সম্ভব হয়েছে এই বিল সি-২৪ এর বদৌলতে যে বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডিয়ান সমর্থন দিয়েছে যদিও নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি অর্থহীন ও উদ্ভটভাবে এর বিরোধীতা করেছিল।”
তবে কানাডার ইমিগ্রেশন এন্ড রিফুজি অইনজীবীগণ এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কানাডাও মনে করে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। তারা সকলেই এই বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
সিভিল রাইটস গ্রুপস এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে নতুন এই আইন দ্বৈত নাগরিকদের জন্য বৈষম্যমূলক। এর মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকদেরকে এক অর্থে ‘লেস কানাডিয়ান’ কাতারে ফেলা হয়েছে এবং কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের চেয়ে কম অধিকারসম্পন্ন করে তোলা হয়েছে। বৃটিশ কলম্বিয়ার সিভিল লিবার্টিজ এসোসিয়েশন এর ভাষ্য মতে দ্বৈত নাগরিকরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে গেল।