বাঙ্গালী ভোটারদের প্রতি নজর সব দলের প্রার্থীদের

টরন্টোর বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক ও স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার

অক্টোবর ৯, ২০১৫

খুরশিদ আলম : কানাডার জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। আগামী ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে দেশব্যাপী ৪২তম জাতীয় নির্বাচন। তিনটি প্রধান দলের মধ্যে চলবে ভোটের মূল লড়াই। দল তিনটি হলো, কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং লিবারেল পার্টি অব কানাডা। এই প্রতিবেদন তৈরী করার সময় সর্বশেষ প্রাপ্ত নির্বাচনী জরীপে দেখা যাচ্ছে থমাস মুলকেয়ারের নেতৃত্বাধীন নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি এগিয়ে আছে।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে সে নিয়ে প্রবাসী বাঙ্গালীদের যেমন আগ্রহ রয়েছে তেমনি রয়েছে স্বার্থও। বাঙ্গালী এমনিতেও রাজনীতিপ্রিয়। তবে এই প্রবাসেও তাদের রাজনীতির চর্চাটা বেশী হয় বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন বলেই মনে হচ্ছে। বাঙ্গালীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে কানাডার জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। কোন দল ক্ষমতায় আসবে তা নিয়ে বিভিন্ন আড্ডা ও বৈঠকে অল্পবিস্তর আলোচনা হচেছ।
কারণটা সম্ভবত ইমিগ্রেশন বিষয়ে কনজারভেটিভ পার্টির কঠোর রক্ষণশীল অবস্থান। একই সাথে বিল সি-২৪ এবং বিল সি-৫১। এ বিল দুটি সম্প্রতি আইনে পরিনত হওয়ায় অন্যান্য ইমিগ্রেন্ট বা নতুন কানাডিয়ানদের মতো বাংলাদেশীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কারণ তারা এখন কানাডার দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনত হয়েছে। কানাডার সরকার ইচ্ছে করলে এই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকদেরকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভূমি বা পিতৃভূমিতে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতে পারবে। এরকম আরো কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। তবে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে এ কারণে যে, প্রধান বিরোধী দল দুটোই নির্বাচিত হলে এই বিল সি-২৪ বাতিলের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য দিয়ে আসছে। আর বিল সি-৫১ বাতিল না করলেও সংশোধন করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বিরোধী দল দুটি।
এতো গেল একটা দিক। কিন্তু স্থানীয় প্রার্থী যারা তাদের আলাদা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কি স্থানীয় জনগনের জন্য? নির্বাচনে জয় লাভ করলে তারা স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য কি কি করবেন? চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে তাদের ভূমিকা কি হবে? এ নিয়েও আগ্রহ রয়েছে প্রবাসী বাঙ্গালীদের।
টরন্টোতে প্রবাসী বাঙ্গালীদের সিংহভাগ থাকেন বিচেস ইস্ট ইয়র্ক এবং স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ। এ দুটি রাইডিং এ প্রায় সাত হাজারের মত বাঙ্গালী ভোটার আছেন যাদের ভোট আসন্ন নির্বাচনে একটি জোড়ালো ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিবে। ফলে এই এলাকার প্রার্থীদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বাঙ্গালী ভোটারদের উপর। বাঙ্গালীদের মধ্য থেকে ইতিপূর্বে কয়েকজন চেষ্টাও করেছেন এই দুটি এলাকা থেকে নমিনেশন পাওয়ার জন্য। কিন্তু পান নি।
বাঙ্গালী অধ্যুষিত এই দুটি রাইডিং দীর্ঘদিন ধরেই লিবারেল পার্টির দখলে ছিল। কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টিকে পরাজিত করে এনডিপি আসন দুটি দখল করে নেয়। কনজারভেটিভ পার্টি এই এলাকা দুটিতে তেমন কোন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি এখনো। এবারের আসন্ন নির্বাচনে এই এলাকায় ভোট যুদ্ধ হবে প্রধানত এনডিপি এবং লিবারেল পার্টির মধ্যেই।
বিসেচ ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি হলেন এনডিপি’র ম্যাথিও ক্যালওয়ে এবং লিবারেল পার্টির নেথেনিয়েল আরস্কিন স্মিথ। অন্যদিকে স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ লিবারেল পার্টি থেকে বিল ব্লেয়ার এবং এনডিপি থেকে ডেন হ্যারিস। এ দুটি রাইডিং এ প্রচুর সংখ্যা বাঙ্গালী ভোটার আছেন বিধায় আমরা প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে এই চারজন প্রার্থীরই আলাদাভাবে একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছি। জানতে চেয়েছি দলীয় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাইরেও স্থানীয় জনগনের জন্য তাদের আলাদা কোন প্রতিশ্রুতি আছে কিনা এবং নির্বাচিত হলে তারা স্থানীয় জনগনের জন্য কি কি করবেন।
আমাদের ধারণা, সাক্ষাৎকারে প্রদত্ত তাঁদের বক্তব্য, প্রতিশ্রুতি এবং কার কি ব্যাকগ্রাউন্ড তা দেখে প্রবাসী বাংলাদেশীরা সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীটি কে হতে পারে।
এই চারজন প্রার্থীই অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনকে।
সাক্ষৎকারে তারা কে কি বলেছেন সেটি জানার আগে আসুন একটু দেখে নেই নির্বাচনী কিছু ফ্যক্টস এন্ড ফিগার।
আমরা জানি, বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা এদেশের দুটি রক্ষণশীল দল কানাডিয়ান এলায়েন্স এবং প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির সমন্বয়ে গঠিত। এই রক্ষণশীল দল দুটি অতিতে লিবারেল পার্টির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে না পেরে একিভূত হয়ে যায়। এটি ২০০৩ সালের ঘটনা। একিভূত হওয়ার পর এর নাম হয় কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডা। এর পর ২০০৪ সালে একিভূত এই দলটি প্রথমবারের মত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। সেবার তারা ৩০% ভোট পেয়ে ৯৯ টি আসন দখল করে এবং অফিসিয়াল অপজিশন পার্টির মর্যাদা লাভ করে। লিবারেল পার্টি সেবার সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। ২০০৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডা প্রথমবারের মত ক্ষমতায় আসে। তবে সংখ্যালঘু সরকার হিসাবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়ে সংখ্যালঘু সরকার হিসাবেই থেকে যায় দলটি। পরে ২০১১ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৬৬ টি আসন পেয়ে কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়।
বর্তমানে কানাডার পার্লামেন্টে (হাউস অব কমন্স অব কানাডা) ৩৩৮টি আসন রয়েছে। সংখ্যাগড়িষ্ঠতা পেতে হলে একটি দলকে ১৭০টি আসন পেতে হবে।
গত জাতীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি আসন পেয়েছিল ১৬৬। এনডিপি পেয়েছিল ১০৩ টি আসন। আর লিবারেল পার্টি পেয়েছিল ৩৪ টি আসন। ঐ সময় মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০৮টি। পরে তা বৃদ্ধি করে ৩৩৮টি করা হয়।
এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন পার্টির নির্বাচনী শ্লোগান হলো :
কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা – “”Proven leadership for a strong Canada.”
“Safer Canada/Stronger Economy”
নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি – “Ready for Change.”
লিবারেল পার্টি অব কানাডা – “Real Change.”
আমরা জানি নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বি দলগুলো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে একের পর এক। সীমাহীন প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে জয়ী হলে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে কি না সে বিষয়ে তখন কোন দলেরই হুস থাকে না। অবস্থাটা দাড়ায় এমন যে, আগে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। পরে দেখা যাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যাবে কি যাবে না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের রাজনীতিকদের চরিত্র এই একটি ক্ষেত্রে এসে প্রায় মিলে যায়। কানাডার রাজনীতিকরাও এর ব্যতিক্রম নয় খুব বেশী।
এবারের নির্বাচনে তাদের সেই প্রতিশ্রুতি কি? আমরা উপরে দেখলাম কোন দলের কি শ্লোগান। আর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এ পর্যন্ত যা দেখা গেছে তার মধ্যে আছে প্রধানত:-
কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা : ফ্যামিলি টেক্স কাট, টেক্স ফ্রি সেভিংস একাউন্টস, বর্ধিত ইউনিভার্সাল চাইল্ড কেয়ার বেনিফিট, স্মল বিজনেজ এর টেক্স রেট কমানো, ব্যালেন্স বাজেট ইত্যাদি।
এনডিপি : পার্সোনাল ইনকাম টেক্স রেট বর্ধিত না করা, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টেক্স রেট বাড়ানো, ছোট ব্যবসার টেক্স রেট কামানো, ন্যাশনাল চাইল্ড কেয়ার প্রোগ্রাম, গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট প্রগ্রামকে আরো জোরদার করা ইত্যাদি।
লিবারেল পার্টি অব কানাডা : মিডল ক্লাস ইনকাম টেক্স কমানো, ইনকাম-স্পীøটিং ফর ফ্যামিলি প্রগ্রাম বাদ দেয়া, টেক্স ফ্রি মাসিক কানাডা চাইল্ড
বেনিফিট, ২০১৬ সালে ব্যালেন্স বাজেট, ওল্ড এজ সিকিউরিটি বেনিফিট পাওয়ার বয়স কমিয়ে আগের স্থানে নিয়ে আসা ইত্যাদি।
নির্বাচনের বাকি এখনো আরো প্রায় ৬ সপ্তাহ। এর মধ্যে হয়তো দেখা যাবে আরো প্রতিশ্রুতি যোগ হয়েছে। তবে ভোটারদের নজর প্রায় সবসময়ই বেশী থাকে আর্থিক সুবিধা লাভের প্রতিশ্রুতির দিকে। উপরের প্রতিশ্রুতিগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যাবে আর্থিক সুবিধার বিষয়গুলোর উপরই বেশী জোর দেয়া হয়েছে।
তবে কানাডায় যারা দ্বৈত নাগিরক বা এখানে জন্ম নিলেও যাদের পিতা বা পিতামহ কিংবা মাতা বা মাতামহীর জন্ম অন্যদেশে তাদের নজর এবার কিছুটা অন্যদিকে বাক নিয়েছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তারা জানতে চাচ্ছেন বিতর্কিত সন্ত্রাস বিরোধী বিল সি-৫১ এবং আরেক বিতর্কিত বিল সি-২৪ নিয়ে বিরোধী দলের নেতারা কে কি ভাবছেন বা তাদের প্রতিশ্রুতি কি এ বিষয়ে।
বিতর্কিত বিল সি-৫১ নিয়ে শুধু যে দ্বৈত নাগরিকরাই উদ্বিগ্ন তা নয়। মেইনস্ট্রিম কানাডিয়ানরাও উদ্বিগ্ন। কারণ, এই আইনে অতিমাত্রায় কিছু অস্পষ্ট বাক্য রয়েছে যা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এর অপব্যবহারের মাধ্যমে। তাদের আরো অভিযোগ, এই আইন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে না। বরং কানাডিয়ানদের নাগরিক অধিকারকে খর্ব করবে। এই আইন উপকারের চেয়ে অপকার করবে বেশী। মোদ্দা কথা, এটি সবার জন্যই একটি হুমকী হয়ে দেখা দিবে।
সন্ত্রাস বিরোধী এই সি-৫১ বিলটি পাসের ব্যাপারে অবশ্য লিবারেল পার্টিও সম্মতি দিয়েছে। এটি অনেকের কাছে বিস্ময়ের বিষয় ছিল। আধুনিক কানাডার অবিসংবাদিত নেতা পিয়ের ট্রুডোর ছেলে লিবারেল পার্টির বর্তমান নেতা জাস্টিন ট্রুডো এমন একটি বিলের পক্ষে ভোট দিবেন তা অনেকের কাছেই স্বাভাবিক মনে হয়নি। তাছাড়া লিবারেল দলের তিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীও এর বিরোধিতা করেছিলেন।
এর পর রয়েছে আরেক বিতর্কিত বিল সি-২৪। দ্বৈত নাগরিকরা এই বিলটি নিয়েই বেশী উদ্বিগ্ন। সমালোচকরা বলছেন কানাডা ইমিগ্রেশন আইনে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সাম্প্রতিককালে যেসব পরিবর্তন এনেছে তার অধিকাংশই অগণতান্ত্রিক।
কানাডার ইমিগ্রেশন এন্ড রিফুজি অইনজীবীগণ এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কানাডাও মনে করে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। তারা সকলেই এই বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত দুটি বিল এর বিরুদ্ধেই সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষ থেকে।
এবারে আসুন দেখি বিচেস ইস্ট ইয়র্ক ও স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এর এগিয়ে থাকা প্রার্থীরা কে কি বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক খুরশিদ আলম।

ম্যাথিও ক্যালওয়ে

ম্যাথিও ক্যালওয়ের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন প্রবাসী কন্ঠের সম্পাদক খুরশিদ আলম

ম্যাথিও ক্যালওয়ে বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে এমপি পদে লড়ছেন। গত নির্বাচনেও তিনি এই রাইডিং থেকেই লিবারেল প্রার্থী মারিয়া মিন্নাকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মারিয়া একাধারে ১৮ বছর এ রাইডিং এ নির্বাচিত এমপি ছিলেন। বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ ম্যাথিও ক্যালওয়ের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি লিবারেল পার্টির নেথেনিয়েল আরস্কিন স্মিথ।
এবার ম্যাথিও’র জয় লাভের আশা কতটুকু? বলা মুস্কিল। কারণ ২০১১ সালে লিবারেল পার্টির মারিয়াকে পরাজিত করে ম্যাথিও ক্ষমতায় এলেও গত প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে অত্র এলাকার জনপ্রিয় রাজনীতিক এনডিপির প্রার্থী মাইকেল প্রু হেরে যান লিবারেল পার্টির প্রার্থী আর্থার পটস এর নিকট। অবশ্য ভোটের ব্যবধান খুব বেশী ছিল না। মাত্র ৪৩১ ভোটে মাইকেল পরাজিত হন।
ক্যালওয়ের শৈশব কেটেছে কিংস্টনে। কুইন্স ইউনিভারসিটি থেকে তিনি রাজনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি গ্রহন করেন। পরে ইন্ডস্ট্রিয়াল রিলেসন্স এর উপর মাস্টার্স করেন টরন্টো ইউনিভারসিটি থেকে।
ম্যাথিও ২০১৪ সালে ঢাকায় গিয়েছিলেন রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। টরন্টোতে বাঙ্গালীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে এখন নিয়মিত দেখা যায়। একুশে উদযাপন, বৈশাখী মেলা ও পদযাত্রাসহ আরো অনেক অনুষ্ঠানেই তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। নিজের উদ্যোগে ক্রিসেন্ট টাউনে গত কয়েক বছর যাবতই তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করে আসছেন বঙ্গালীদের নিয়ে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে তার একটি একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয় প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে। জানতে চাওয়া হয় নির্বাচনে জয়ী হলে তার এলাকার অধিবাসীদের জন্য তিনি কি কি করবেন। একই সাথে জানতে চাওয়া হয় বিতর্কিত বিল সি-৫১ এবং বিল সি-২৪ সম্পর্কে তার কি অভিমত এবং ক্ষমতায় গেলে তার দল এ দুটি বিল নিয়ে কি করবে। কারন ইমিগ্রেন্ট ও দ্বৈত নাগরিকদের জন্য এ দুটি বিলই এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

প্রশ্ন : আপনার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি আপনার বার্তা কি?

উত্তর : আমার নির্বাচনী এলাকায় যারা নতুন ইমিগ্রেন্ট এবং নাগরিকগ তাদের প্রতি আমার বার্তা হলো, কানাডার জন্য আমরা এখনো ভাল কিছু করতে পারি। আমি নিজে এখানকার অনেক নতুন ইমিগ্রেন্ট, নতুন কানাডিয়ান এমনকি দশ পনের বছর বা তারো কিছুটা আগে এসেছেন এমন কানাডিয়ানদের সঙ্গেও আলাপ করেছি। আলাপ করেছি বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্ট ও বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের সঙ্গেও। এদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় রয়েছে এদের চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু কানাডায় এসে তারা তাদের প্রফেশনাল জব পাচ্ছেন না। যথাযথ স্বীকৃতি পাচ্ছেন না তাদের শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের। এটা একধরনের বিশ্বাঘাতকার মত বিষয়। কারণ তারা কানাডায় আসেন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন ধারণা নিয়ে। কিন্তু এসে দেখেন অন্য পরিস্থিতি।
আমার বক্তব্য- এই পরিস্থিতিকে মেনে নিতে হবে কেন? পরিবার নিয়ে কানাডায় এসে পিছনে পড়ে থাকতে হবে কেন? এগুলো সামাধানের পথ আছে। সামাধান করতে হবে। আমরা সেই সমাধান দিব। লিবারেল আর কনজারভেটিভ যা পারেনি বা করেনি আমরা সেটা করবো। আমাদেরকে একবার সুযোগ দিন।

প্রশ্ন : টরন্টোতে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিন্ম আয়ের পরিবার বাস করেন এবং এদের অনেকেরই বাস আপনার নির্বাচনী এলাকায়। আর এদের অনেকেই কানাডায় নতুন আসা প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্ট। তারা তাদের প্রফেশনাল জব পাচ্ছেন না। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এই সমস্যা সমাধানে আপনার পদক্ষেপ কি হবে?

উত্তর : আমরা জানি টরন্টোতে লিভিং কস্ট অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মূলত: এই এই আয় দিয়ে কেউই টিকে থাকতে পারে না। আমার রাইডিং এর অনেক মানুষেরও একই অবস্থা। গোটা জিটিতেই চলছে স্বল্প আয়ের মানুষের কঠিন সংগ্রাম। আমরা যদি নির্বাচিত হই তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে আমরা কানাডায় মিনিমাম ওয়েজ নির্ধারণ করবো ঘন্টায় ১৫ ডলার। এটি ফেডারেল সরকারের অধিনে যারা কাজ করবেন তাদের জন্য করা হবে। তবে আমরা আশা করবো, প্রভিন্সিয়াল সরকারগুলোও এই নীতি অনুসরন করবে।
এর পর আছে চাইল্ড কেয়ার সমস্যা। স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য এফর্ডএবল চাইল্ড কেয়ারের সুবিধা নেই পর্যাপ্ত। ফলে তাদের অনেকেই সমস্যায় আছেন। যাদের চাকরী নেই তারা বাচ্চাদের কোথাও রেখে চাকরী খুঁজতে যাবেন তা হয়ে উঠে না। স্কুলেও যেতে পারেন না বাচ্চাদের কোথাও রেখে।
চাইল্ড কেয়ার এর সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে লিবারেল দল আজ বহু বছর ধরেই। অন্যদিকে কনজারভেটিভ দলও একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে বছরে পর বছর। কিন্তু তারা কেউই বাস্তব অর্থে কিছুই করছে না এই সমস্যা সমাধানে। আমরা এ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবো। ন্যাশনাল চাইন্ড কেয়ার প্রগ্রাম প্রতিষ্ঠা করবো যেখানে নিন্ম আয়ের লোকেরা দিনে ১৫ ডলার দিয়ে বাচ্চা রাখতে পারবেন। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এক মিলিয়ন এফর্ডএবল চাইল্ড কেয়ার স্পেস তৈরী করবো কানাডায়।
কানাডায় এখন অনেক সিনিয়র সিটিজেনও আছে যারা দারিদ্রতার মধ্যে বাস করছেন। এদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনডিপি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ কারণে আমাদের নেতা টম মুলকেয়ার আগস্ট মাসের শেষের দিকে টরন্টো সফর কালে বলেছেন আগামী নির্বাচনে এনডিপি জয়ী হলে গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট প্রগ্রামকে আরো জোরদার করা হবে। গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট হলো সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য একটি মাসিক নন-টেক্সএবল বেনিফিট যা প্রদান করা হয় লো ইনকাম সিনিয়রদেকে। মুলকেয়ার বলেন, দুই লক্ষ সিনিয়র সিটিজেনদেরকে দারিদ্র মুক্ত করার এটি একটি গুরুত্বপূণ পদক্ষেপ। বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করা হবে এই গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট প্রোগ্রামে।
আমরা ওল্ড এজ সিকিউরিটি‘র জন্য কোয়ালিফাই করার বয়স ৬৭ থেকে নামিয়ে আবার ৬৫ নিয়ে আসবো। হারপার সরকার এটি বাড়িয়েছিলেন।

প্রশ্ন : বিতর্কিত সন্ত্রাস বিরোধী বিল সি-৫১ এখন আইনে পরিনত হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন এই আইন সন্ত্রাস দমনে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখবে না, বরং কানাডিয়ানদের নাগরিক অধিকারকে খর্ব করবে। সাবেক চার প্রধানমন্ত্রী জন ক্রিশ্চিয়েন, পল মার্টিন, জো ক্লার্ক এবং জন টার্নার এই বিলের নিন্দা জানিয়েছিলেন পাশ হওয়ার আগে। সম্প্রতি কানাডিয়ান সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশন এবং কানাডিয়ান জার্নালিস্ট ফর ফ্রি এক্সপ্রেশন এই আইনটির বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে আদালতে। আপনার অভিমত কি এই বিলটির বিষয়ে?
উত্তর : বিল সি-৫১ এর বিরুদ্ধে আমরা ভোট দিয়েছি দফায় দফায় যাতে এটি আইনে পরিনত হতে না পারে। নির্বাচিত হলে আমরা এই বিল বাতিল করে দিব।
আমরা দেখেছি বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার একদিকে আরসিএমপি ও কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের ফান্ডিং কমিয়েছে অপর দিকে সন্ত্রাস দমন বিল সি-৫১ পাশ করিয়েছে যা স্ববিরোধী আচরণ। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো এই দুই সংস্থাই পর্যাপ্ত ফান্ড পাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য। একই সঙ্গে আমরা দেখবো কানাডিয়ানরা নিরাপদে আছেন। বিল সি-৫১ এর মৌলিক অসঙ্গতি বা পরস্পরবিরোধী বিষয় হলো এটি কানাডিয়ানদের অধিকার ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করার নামে আসলে তাদের এই দুই অধিকারকেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এটি একেবারেই অর্থহীন।

প্রশ্ন : বিল সি-২৪ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? এই বিল পাশ হওয়ার পর দ্বৈত নাগরিকেরা কানাডায় নিজেদেরকে অরক্ষিত মনে করছেন। সমালোচকরা বলছেন এই বিলের মাধ্যমে দুই শ্রেণীর নাগরিক তৈরী করা হয়েছে কানাডায়। প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। দ্বৈত নাগরিকত্ব যাদের আছে তাদের অবস্থান
এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত অবস্থা।
উত্তর : আমাদের মতে এটি একটি বিপজ্জনক আইন। অপরাধের শাস্তি দেয়ার জন্য কারো সিটিজেনশীপকে টার্গেট করা মোটেও উচিৎ নয়। ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই আমরা এই বিল বাতিল করে দিব। অপরাধীদের বিচার করার জন্য আমাদের প্রচলিত আইনই যথেষ্ট। নতুন করে এই বিল সি-২৪ এর কোন প্রয়োজন নেই।
এই বিলে আরো আপত্তিকর বিষয় হলো, কারো সিটিজেনশীপ বাতিল করার এখতিয়ার আদালতের হাতে ছেড়ে না দিয়ে ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি দেশে আইনের শাসন অনুসরন করা উচিৎ। এভাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া যায় না।
কেউ কানাডায় বাস করবে কি করবে না সে বিষয়ে মন্ত্রির সন্দেহ হলেই তার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া যাবে এটি আমার কাছে একেবারেই নিম্মমানের আইন বলে মনে হয়েছে। এই আইন প্রবর্তন করায় অন্যদেশও আমাদের আইন ব্যবস্থাকে প্রভাবান্বিত করবে। আমরা জানি অনেক দেশ আছে যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। কানাডার দ্বৈত নাগরিকরা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন।


নেথেনিয়েল স্মিথ

বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে লিবারেল পার্টির পক্ষে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নেথেনিয়েল আরস্কিন স্মিথ। তার জন্ম এই এলাকাতেই। নেথেনিয়েলের বাবা লরেন্স স্মিথ এবং মা সারা আরস্কিন অত্র এলাকার সন্মানিত শিক্ষক। স্ত্রী এ্যামি শিক্ষকতা করেন জর্জ ব্রাউন কলেজে।
নেথেনিয়েল বর্তমানে টরন্টোর ডাউনটাউনে একটি কমার্শিয়াল লিটিগেশন ফার্মে আইনজীবী হিসাবে কর্মরত। তিনি রাজনীতি বিষয়ে ব্যাচেলর এবং আইন বিষয়ে জে.ডি. (ঔঁৎরং উড়পঃড়ৎ) লাভ করেন কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে বি.সি. এল (মাস্টার্স অব ল) ডিগ্রি লাভ করেন।
নেথেনিয়েল কানাডিয়ান সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন আইনী পেশায় সার্বক্ষনিক নিয়োগ লাভের আগে।
নেথেনিয়েল তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন তিনি বিশ্বাস করেন কানাডিয়ানরা একজন যোগ্য নেতৃত্বের দাবীদার যিনি দেশের পরিবেশ রক্ষা করবেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করবেন, হেলথ কেয়ার, ডে কেয়ার এবং পাবলিক ট্রানজিটের জন্য স্থিতিশীল তহবিলের নিশ্চয়তা দিবেন এবং শিক্ষার মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ সৃষ্টি করবেন।
বিচেস ইস্ট ইয়র্কে নেথেনিয়েলের প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যাথিউ ক্যালী। নেথেনিয়েল এমপি নির্বাচনে একেবারেই নবীন।
আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে তার একটি একান্ত সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।

নেথেনিয়েল আরস্কিন স্মিথ

প্রশ্ন : আপনার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি আপনার বার্তা কি?

উত্তর : লিবারেল পার্টির একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য আছে। সেটি হলো, নতুন কানাডিয়ান ও ইমিগ্রেন্টদের মাল্টিকালচারাল অধিকারকে স্বাগত জানানো এবং একই সঙ্গে সেটি রক্ষা করা। আমরা সেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করবো।
পিয়ের ট্রুডো একবার বলেছিলেন, কোন নাগরিক বা নাগরিকদের গ্রুপ কানাডিয়ান ছাড়া অন্য কিছু নয় এবং সকলের প্রতি সমানভাবে ন্যায্য আচরণ করতে হবে। আমাদের বর্তমান নেতা জাস্টিন ট্রুডোর অধিনেও সেই বার্তাই বহাল আছে।
আমাদের পরিকল্পনা আছে আমরা আমাদের অর্থনীতির উন্নয়ন সাধন করবো, চাকরী সৃষ্টি করবো এবং একটি উন্মুক্ত ও সততাপরায়ন সরকার তৈরী করবো যে সরকার সকল কানাডিয়ানের জন্য কাজ করবে।

প্রশ্ন : টরন্টোতে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিন্ম আয়ের পরিবার বাস করেন এবং এদের অনেকেরই বাস আপনার নির্বাচনী এলাকায়। আর এদের অনেকেই কানাডায় নতুন আসা প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্ট। তারা তাদের প্রফেশনাল জব পাচ্ছেন না। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এই সমস্যা সমাধানে আপনার পদক্ষেপ কি হবে?

উত্তর : আমি মনে করি নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদের বিদেশী ডিগ্রীকে যথাযথ স্বীকৃতি দেয়া এবং তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে চাকরী পাওয়ার বিষটি নিশ্চিত করা উচিৎ। এটি শুধু তাদের ন্যায্য অধিকারই নয়, কানাডার অর্থনীতির জন্যও এটি খুবই জরুরী। ইমিগ্রেন্টরা যদি তাদের সঙ্গে বয়ে আনা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেন তবে প্রতিটি নাগরিকই এ থেকে লাভবান হবেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এদের অধিকাংশই সেই সুযোগটি পাচ্ছেন না। একযুগ বা তারো বেশী সময় কানাডায় বাস করেও এই প্রফেশনাল ইমিগ্রেন্ট বা নাগরিকরা কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের চেয়ে কম বেতনে নিন্ম দক্ষতার কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি সমাধান করা জরুরী শুধু প্রফেশনাল ইমিগ্রেন্টদের স্বার্থের জন্যই নয়, কানাডার জাতীয় স্বার্থের জন্যও এই সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে।
নিজ নিজ দেশ থেকে নিয়ে আসা নতুন ইমিগ্রেন্টদের ক্রিডেন্সিয়াল বা সার্টিফিকেট যাতে কানাডায় যথাযথভাবে স্বীকৃত হয় কোনরকম অহেতুক বিলম্ব ছাড়া সে বিষয়ে আমরা কাজ করবো। নতুন ইমিগ্রেন্টদের জন্য আমরা ঋণেরও ব্যবস্থা করবো যাতে তারা পুন-প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও স্বীকৃতি লাভ করতে গিয়ে গুরুতর আর্থিক সমস্যায় না পড়েন।

প্রশ্ন : টরন্টোতে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাছে নতুন ইমিগ্রেন্টরা চাকুরীর জন্য আবেদন করলে “কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স” আছে কি না এ কথা জিজ্ঞেস করা হয়। বিষয়টি নতুন ইমিগ্রেন্টদের জন্য বিব্রতকর। অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনও মনে করে এ ধরণের প্রশ্ন করা এক ধরণের বৈষম্যমূলক আচরন। এ বিষয়ে আপনার মত কি এবং আপনি নির্বাচিত হলে এর বিরুদ্ধে কি কোন পদক্ষেপ নিবেন?

উত্তর : সমস্যাটি স্ট্যাটিসটিকস কানাডার জরীপেও উঠে এসেছে। ২০০৩ সালের রিপোর্টে দেখা যায় নতুন ইমিগ্রেন্টদের বেলায় এই কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স নামক প্রচলিত বাধাটির কারনে অনেকেই প্রফেশনাল জব পাচ্ছেন না। আমাদেরকে এই কালচার পরিবর্তন করতে হবে।
বি.সি হিউম্যান রাইটস ট্রাইবুনালও বলেছে- এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার নয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভাল এবং উজ্জ্বল ব্যক্তিদের আসার সুযোগ দেয়া হলো কানাডায় এবং এরপর তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগতে দেয়া হলো না।
নির্বাচিত হলে আমরা প্রভিন্সগুলোর সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কাজ করবো যাতে এ জাতীয় বৈষম্য দূর হয়।

প্রশ্ন : কানাডায় শিশু দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশী টরন্টোতে। প্রায় দেড় লক্ষ শিশু রয়েছে যারা স্বল্প আয়ের পরিবারে বাস করে এখানে। আর এসকল পরিবারের একটি অংশ আপনার নির্বাচনী এলাকাতেও বাস করেন। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এ বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হবে?

উত্তর : লিবারেল পার্টি একমাত্র রাজনৈতিক পার্টি যার পরিকল্পনা রয়েছে এ বিষয়টি সমাধানের। আমরা অধিক পরিমানে অর্থ প্রদান করবো পরিবারসমূহকে যাতে তারা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শিশুদেরকে লালন-পালন করতে পারেন। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি ১০ পরিবারের মধ্যে ৯ পরিবারই টেক্স ফ্রি চেক পাবেন প্রতিমাসে। বছরে ৬,৪০০ ডলার (নধংব ধহহঁধষ ধসড়ঁহঃ) করে দেয়া হবে প্রতি শিশুর জন্য যাদের বয়স ৬ বছরের নিচে। ৬-১৭ বছর যাদের বয়স তাদের জন্য দেয়া হবে ৫,৪০০ ডলার। যার আয় যত বেশী সে তত কম পাবে। এটিই ন্যায্য বিধান।
যে সকল পরিবারে শিশু রয়েছে এবং যাদের আয় ১৫০,০০০ ডলার বা তার চেয়ে কম তারা আমাদের এই পরিকল্পনা থেকে লাভবান হবেন।

প্রশ্ন : বিতর্কিত সন্ত্রাস বিরোধী বিল সি-৫১ এখন আইনে পরিনত হয়েছে। আপনার অভিমত কি এই বিলটির বিষয়ে?

উত্তর : আমি রাজনীতি ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে কুইন্স ইউনিভারসিটি ও অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটিতে ৮ বছর লেখাপড়া করেছি। অক্সফোর্ড থেকে ফিরে এসে আমি কানাডিয়ান সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশনে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করেছি। আমি নাগরিক স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে এবং বিল সি-৫১ এর বেশ কিছু ত্রুটি সংশোধন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আইন বিশেজ্ঞদের মতে বিলের কিছু অংশ ডিফেন্ড করা যেতে পারে। তবে আমি এই বিলের সমালোচকদের সঙ্গে একমত। এটি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি সংশোধন করতে হবে যাতে করে আমাদের চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডম কোনভাবে লংঘিত না হয়।

প্রশ্ন : বিল সি-২৪ পাশ হওয়ার পর দ্বৈত নাগরিকেরা কানাডায় নিজেদেরকে অরক্ষিত মনে করছেন। এই আইন বলবৎ হওয়ায় এখন যে কোন দ্বৈত নাগরিক যে কারো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের শিকার হয়েও কানাডার নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বা তার দফতরের যে কোন কর্মকর্তা ইচ্ছে করলেই যে কোন দ্বৈত নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিতে পারেন আদালতের আশ্রয় না নিয়েই। এই বিলটি সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

উত্তর : বিল সি-২৪ একটি অসাংবিধানিক আইন। আমরা ক্ষমতায় গেলে এই আইন বাতিল করে দিব। নাগরিকত্ব একটি অধিকার যেমন অধিকর ভোট দিতে পারা। এগুলো কোন উপহারের বিষয় নয় যে কোন রাজনৈতিক নেতার স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারনে দিলাম আবার ছিনিয়ে নিলাম।

বিল ব্লেয়ার

বিল ব্লেয়ারের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন প্রবাসী কন্ঠের সম্পাদক খুরশিদ আলম

বিল ব্লেয়ারের জন্ম ১৯৫৪ সালে। স্কারবরোতেই তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। তিনি অর্থনীতি ও ক্রিমিনলজিতে ব্যাচলর ডিগ্রি নেন। শৈশবেই স্বপ্ন ছিল পুলিশ বিভাগে কাজ করবেন। ব্লেয়ারে প্রায় ৩৯ বছরের কর্মজীবন কেটেছে পুলিশ বিভাগেই। শেষ দশ বছর তিনি টরন্টো পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। চাকুরি থেকে অবসর নেন গত এপ্রিল মাসে।
বর্ণাঢ্য চাকরী জীবনে তিনি অনেক পুরষ্কার ও সম্মান লাভ করেন।
চাকরী থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিতে নামবেন। চিন্তাটা হয়তো আগে থেকেই ছিল। কিন্তু চাকরীটা ছিল পুলিশ বিভাগের। ফলে মুখ ফুটে কিছু বলেননি তখন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও তাকে চেয়েছিল তাদের দলে ভিড়াতে। কিন্তু ব্লেয়ার সিদ্ধান্ত নেন লিবারেল দলের হয়ে লড়বেন স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে। নমিনেশনও পেয়ে যান।
স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ বিল ব্লেয়ারের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি এনডিপি’র ডেন হ্যারিস। ফোরাম রিসার্স এর জরীপে দেখা যায় গতবারের এমপি নির্বাচনে জয়ী ডেন হ্যারিসের তুলনায় বিল ব্লেয়ার এগিয়ে আছেন। ব্লেয়ারে জনপ্রিয়তা ৪২%, অন্যদিকে ডেন হ্যারিসের জনপ্রিয়তা ৩৪%।
বিল ব্লেয়ারের কাছে প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের কিছু প্রশ্ন ছিল নির্বাচনে জিতলে তিনি তার রাইডিং এর জনগণের জন্য কি করবেন এবং আরো কিছু বিতর্কিত আইন সম্পর্কে যেগুলো এখন ইমিগ্রেন্ট ও নতুন নাগরিকদের কাছে প্রধান ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে।

প্রশ্ন : আপনার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি আপনার বার্তা কি?
উত্তর : আমি লিবারেল পার্টির হয়ে এমপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। কারন এই দলটির রয়েছে কানাডার ডাইভারসিটি নির্মানে দীর্ঘ ইতিহাস। এটি লিবারেল পার্টির ঐতিহ্য। আর এই ডাইভারসিফাইড টরন্টোতে পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসাবে আমার সুযোগ হয়েছে প্রতিটি কমিউনিটির লোকদের সঙ্গে কাজ করার। আমার বিশ্বাস, এই ডাইভারসিটির কারনে টরন্টো পৃথিবীর সেরা নিরাপদ শহরগুলোর একটি। আমি স্কারবরোর এই সাউথ ওয়েস্ট এলাকাকে বেছে নিয়েছি কারন এখানে রয়েছে সবচেয়ে ডাইভারসিফাইড পপুলেশন। এখানকার প্রায় অর্ধেক লোকই প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্ট।
আমি মনে করি এই প্রথম প্রজন্মের সদস্যদের জন্য পার্লামেন্টে একজন শক্তিশালী প্রতিনিধি প্রয়োজন।
টরন্টোর মিউনিসিপাল গভারমেন্ট থেকে শুরু করে প্রভিন্সিয়াল ফেডারেল সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি এই স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট এলাকার জনগণের জন্য হয়ে কাজ করতে চাই। তাদের সেবা করতে চাই। এখানকার বিভিন্ন কমিউনিটির লোকদের সঙ্গেও আমার রয়েছে যথেষ্ট যোগাযোগ। ক্যাথলিক, মুসলিম, সাউথ এশিয়ান কমিউনিটি সবার সঙ্গেই রয়েছে আমার ভাল সম্পর্ক। আমার নমিনেশ পাওয়ার ব্যাপারে এই এলাকার বাংলাদেশী কমিউনিটি আমাকে অত্যন্ত শক্তিশালী সমর্থন দিয়েছে। এ জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন : টরন্টোতে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিন্ম আয়ের পরিবার বাস করে এবং এদের অনেকেরই বাস আপনার নির্বাচনী এলাকায়। আর এদের অনেকেই কানাডায় নতুন আসা প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্ট। তারা তাদের প্রফেশনাল জব পাচ্ছেন না। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এই সমস্যা সমাধানে আপনার পদক্ষেপ কি হবে?

উত্তর : আমি জানি এখানে অন্যান্য কমিউনিটির মত বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও অনেক প্রফেশনাল ইমিগ্রেন্ট আছেন যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যান্য প্রফেশনের। তাদের রয়েছে এক্সিলেন্ট এডুকেশন এক্সিলেন্ট ক্রিডেন্সিয়াল। তারা এদেশে এসেছেন উন্নত জীবনের আশায়, এ জন্য তারা কাজ খুঁজছেন। কাঁজ করে তারা এদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন এবং নিজেদের পরিবারকেও সাপোর্ট দিতে পারবেন। কিন্তুএ দেশে এসে তাদেরকে কখনো কখনো সংগ্রাম করতে হচ্ছে কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং তাদের সাথে করে নিয়ে আসা সির্টিফিকেট এর মূল্যায়ন পেতে। তাই আমি মনে করি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে এদের সার্টিফিকেট মূল্যায়নে সহযোগিতা করা। কারণ এরা এদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কানাডার অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারবেন।

প্রশ্ন : টরন্টোতে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কাছে নতুন ইমিগ্রেন্টরা চাকুরীর জন্য আবেদন করলে “কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স” আছে কি না এ কথা জিজ্ঞেস করা হয়। বিষয়টি নতুন ইমিগ্রেন্টদের জন্য বিব্রতকর। অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনও মনে করে এ ধরণের প্রশ্ন করা এক ধরণের বৈষম্যমূলক আচরন। এ বিষয়ে আপনার মত কি এবং আপনি নির্বাচিত হলে এর বিরুদ্ধে কি কোন পদক্ষেপ নিবেন?

উত্তর : বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত। আমি মনে করি, কেউ যদি নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদেরকে কাজের সুযোগই না দেয় তবে তারা কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স পাবে কোথা থেকে? তাদেরকে কাজের সুযোগ দিতে হবে। আর এই সুযোগ দেওয়ার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমি জানি অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এ বিষয়টিকে সসম্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আমার মতে হিউম্যান রাইটস কমিশনের আইনেও এ ব্যাপারে প্রটেকশনের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হন। নুতন ইমিগ্রেন্টদের সামনে বাধা তৈরী না করে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা কানাডার অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।

প্রশ্ন : কানাডায় শিশু দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশী টরন্টোতে। প্রায় দেড় লক্ষ শিশু রয়েছে যারা স্বল্প আয়ের পরিবারে বাস করে এখানে। আর এসকল পরিবারের একটি অংশ আপনার নির্বাচনী এলাকাতেও বাস করেন। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এ বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হবে?

উত্তর : কানাডায় শিশু দারিদ্রতার হার কমাতে হলে ফ্যামিলি ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হবে। যে সকল পরিবারের সাহায্য দরকার তাদেরকে সাহায্য করতে হবে। যারা মিলিওনার তাদেরকেতো সাহায্য করার প্রয়োজন নেই। নির্বাচিত হলে আমরা ফ্যামিলি ইনভেস্টমেন্ট বাড়াবো যাতে শুধু টরন্টোর দরিদ্র শিশু নয় কানাডার সকল দরিদ্র শিশুই এ থেকে উপকৃত হতে পারে।

প্রশ্ন : বিতর্কিত সন্ত্রাস বিরোধী বিল সি-৫১ এখন আইনে পরিনত হয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন এই আইন সন্ত্রাস দমনে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখবে না, বরং কানাডিয়ানদের নাগরিক অধিকারকে খর্ব করবে। আপনার অভিমত কি এই বিলটির বিষয়ে? আপনাদের পার্টিওতো এ বিলের পক্ষে সন্মতি দিয়েছে।

উত্তর : বিষয়টি নিয়ে আমি অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। কথা বলেছি বাংলাদেশী মুসলমান কমিউনিটির সঙ্গেও। অন্যান্য মুসলমান কমিউনিটির সঙ্গেও কথা হয়েছে। হ্যা, লিবারেল পার্টিও এই বিলে সমর্থন দিয়েছে।
বিষয়টিকে ক্লিয়ার করতে দিন আমাকে। আপনারা জানেন একটি দেশের সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব থাকে। একটি হলো তার জনগনের নিরাপত্তা বিধান করা এবং অপরটি তাদের অধিকার ও স্বাধীনতাকেও রক্ষা করা। সরকারকে এ দুটি দায়িত্বই সমানভাবে পালন করতে হয়। একটি দায়িত্ব পালন করে অপরটি অবহেলা করা যাবে তা কখনো হয় না। লিবারেল পার্টি এই নীতিতে বিশ্বাস করে। এ ব্যাপারে কোন কম্প্রমাইজ করা চলবে না। জনগনের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা এই উভয় ক্ষেত্রেই চেক এন্ড ব্যালেন্স বজায় রাখতে হবে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবেও আমাকে এই দায়িত্বই পালন করতে হয়েছে। একদিকে জনগনের নিরাপত্তা বিধান করতে হয়েছে অন্যদিকে তাদের অধিকার ও স্বাধীনতাকেও সন্মান প্রদর্শন করতে হয়েছে। কিন্তু বিল সি-৫১ এ এই চেক এন্ড ব্যালেন্স এর ঘাটতি রয়েছে যা আমরা ক্ষমতায় গেলে সংশোধন করবো।
আমরা দেখেছি, সন্ত্রাস দমন করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল শুধু নিরাপত্তার উপরই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে এবং অপর আরেকটি রাজনৈতিক দল শুধু অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়টিকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে, নিরাপত্তার কথা বলছে না। কিন্তু একমাত্র লিবারেল দলই নিরাপত্তার পাশাপাশি অধিকার ও স্বাধীনতাকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রশ্ন : বিল সি-২৪ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? এই বিল পাশ হওয়ার পর দ্বৈত নাগরিকেরা কানাডায় নিজেদেরকে অরক্ষিত মনে করছেন। সমালোচকরা বলছেন এই বিলের মাধ্যমে দুই শ্রেণীর নাগরিক তৈরী করা হয়েছে কানাডায়। দ্বৈত নাগরিকত্ব যাদের আছে তাদের অবস্থান এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত অবস্থা।
উত্তর : আমার জীবনে আমি এরকম আপত্তিকর বা অবমাননাকর আইন আর দেখিনি। আমি বিশ্বাস করি একজন কানাডিয়ান সবসময়ই কানাডিয়ান। দ্বৈত নাগরিক বা এখানে জন্ম নেয়া নাগরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সকলেরই সমান অধিকার এদেশে। এ দেশে ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ বলে কোন বিষয় নেই। আমার নিজের ঘরেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ আমার পুত্রবধু সেও ইমিগ্রেন্ট এবং অতি সম্প্রতি নাগরিত্ব লাভ করেছে। তার কাছেও এই বিল সি-২৪ আইনটি আপত্তিকর মনে হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে আমরা এ আইন বাতিল করে দিব।

ডেন হ্যারিস


ডেন হ্যারিসের জন্ম ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসে। ইস্ট টরন্টোতেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। সেনেকা কলেজ থেকে তিনি ডিপ্লোমা করেন কম্পিউটার প্রোগ্রমিং এন্ড এনালাইসিসের উপর। ইনফরমেশন টেকনলজী ছিল তার পেশা। এনডিপি’র নমিনেশন নিয়ে ২০১১ সালে লিবারেল পার্টির এমপি মিশ্যেল সিমসনকে হারিয়ে ডেন হ্যারিস স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে নির্বাচিত হন পার্লামেন্ট সদস্য হিসাবে। ডেন হ্যারিস মূলত ২০০০ সাল থেকেই চেষ্টা করে আসছিলেন এমপি পদে জয়ী হওয়ার জন্য। স্কারবরোর এই আসনটি দীর্ঘদিন লিবারেল পার্টির কব্জায় ছিল। এবার তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বি লিবারেল পার্টির বিল ব্লেয়ার।
প্রশ্ন : আপনার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি আপনার বার্তা কি?
উত্তর : কানাডাকে যারা গড়ে তুলেছে তারা এই নতুন কানাডিয়ান। তাই আমরা মনে করি নতুন এই কানাডিয়ানদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়াটা জরুরী এবং এই দেশটিতে তাদেরকে স্বাগতম জানাতে হবে। তাই আমরা ক্ষমতায় গেলে কনজারভেটিভ পার্টি কর্তৃক পাশ করানো গভীরভাগে ত্রুটিপূর্ণ বিল সি-২৪ বাতিল করবো। আমরা আরো মনে করি নাগরিকদের মধ্যে শ্রেণীবৈষম্য তৈরী করা কানাডার মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
কনজারভেটিভ পার্টি যে অহেতুক ইমিগ্রেন্ট ভীতিতে ভুগছে এই বিল সেটিই প্রমাণ করে। নতুন কানাডিয়ানদের সম্পর্কে তাদের পশ্চাদমুখী মনোভাবও প্রকাশ পেয়েছে এর মাধ্যমে।
ক্ষমতায় গেলে আমরা ফ্যামিলি রিউনিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরো জোরদার করবো যাতে নতুন কানাডিয়ানরা তাদের আত্মীয়পরিজনদের সঙ্গে আরো কমসময়ের মধ্যে পুনরায় একত্রিত হতে পারেন।
প্রশ্ন : টরন্টোতে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিন্ম আয়ের পরিবার বাস করে এবং এদের অনেকেরই বাস আপনার নির্বাচনী এলাকায়। তারা তাদের প্রফেশনাল জব পাচ্ছেন না। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এই সমস্যা সমাধানে আপনার পদক্ষেপ কি হবে?
উত্তর : এনডিপি দীর্ঘদিন ধরেই ইমিগ্রেন্ট বা নতুন কানাডিয়ানদের ক্রিডেন্সিয়াল বা সার্টিফিকেট যা তারা দেশ থেকে নিয়ে আসে সেগুলোকে মূল্যায়ন করার জন্য একটি অভিন্ন স্বীকৃতি প্রক্রিয়া গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আসছে। ক্ষমতায় গেলে আমরা ৩০ মিলিয়ন ডরারের ফরেন ক্রিডেন্সিয়াল রিকগনিশন প্রগ্রামকে পুনরুদ্ধার করবো। আমরা আরো অধিকসংখ্যক পরামর্শদাতা ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করবো নতুন ইমিগ্রেন্টদের জন্য যাতে তারা খুব সহজে কানাডার জব মার্কেটে প্রবেশ করতে পারেন।
প্রশ্ন : কানাডায় শিশু দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশী টরন্টোতে। আর এসকল পরিবারের একটি অংশ আপনার নির্বাচনী এলাকাতেও বাস করে। আপনি যদি নির্বাচিত হন তবে এ বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হবে?
উত্তর : শিশু দারিদ্্র দূর করার জন্য কানাডার পার্লামেন্ট ১৯৮৯ সালে তৎকালিন এনডিপি নেতা এড ব্রডবেন্ট এর একটি প্রস্তাব সর্বসন্মতিক্রমে গ্রহন করেছিলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, পরবর্তীতে লিবারেল এবং কনজারভেটিভ পার্টি এ ব্যাপারে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারনেই পরবর্তীতে এনডিপির এমপি রাধিকা সিটসাবাইসান শিশু দারিদ্র দূর করার লক্ষ্যে পার্লামেন্টে এম-৫৩৪ নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। এনডিপি বিশ্বাস করে কানাডার মতো এমন একটি সমৃদ্ধিশালী দেশে শিশু দারিদ্রতা থাকার কোন কোন যৌক্তিক কারণ নেই। সে কারণেই শিশু দারিদ্রতা দূরীকরণে আমাদের রয়েছে একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা যার মধ্যে রয়েছে মিনিমাম ওয়েজ (ফেডারেল) ঘন্টায় ১৫ ডলার করা এবং স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য এফর্ডএবল চাইল্ড কেয়ার সৃষ্টি করা যেখানে দিনে ১৫ ডলার দিয়ে বাচ্চা রাখা যাবে।

ডেন হ্যারিস

প্রশ্ন : বিতর্কিত সন্ত্রাস বিরোধী বিল সি-৫১ এখন আইনে পরিনত হয়েছে। আপনার অভিমত কি এই বিলটির বিষয়ে?

উত্তর : এটি প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের একটি বিপজ্জনক স্পাই বিল। আর এটি সমর্থন করেছে লিবারেল পার্টিও। স্টিফেন হারপার এবং জস্টিন ট্রুডো মনে করছেন কানাডিয়ানদের যে কোন একটি অপশন বেছে নিতে হবে। হয় স্বাধীনতা অথবা নিরাপত্তা। কিন্তু এটি হয় না। আমরা মনে করি কানাডিয়ানদের দুটিই থাকতে হবে। তাদের নিরাপত্তাও থাকতে হবে পাশাপাশি স্বাধীনতাও থাকতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে তাদের স্বাধীনতা হরন করতে হবে এর কোন যৌক্তিকতা নেই। বিল সি-৫১ শুধু একটি কঠোর আইনই নয়, এটি একটি বিপরীতমূখী নীতিও। এই বিল পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাকে এমন ক্ষমতা দিয়েছে যে তারা এখন অনেক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী, আদিবাসী, পরিবেশবাদী এদের আন্দোলনকেও পর্যবেক্ষণ ও হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
পরিশেষে বলবো, আমরা বিজয়ী হলে কানাডার অর্থনীতিকে আবারো ছন্দে ফিরিয়ে আনবো যাতে করে বর্তমান চাকুরী প্রার্থীরা চাকুরী খুুঁজে পান। আমাদের দেশটি গড়ে তুলেছে কয়েক জেনারেশনের ইমিগ্রেন্ট মিলে। কানাডায় আমরা এমন একটি কেন্দ্রিয় সরকার চাই যারা সকল কানাডিয়ানদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবে এবং সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বাস করার জন্য একটি ভাল জায়গা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।