নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
বিল সি-২৪ ও বিল সি-৫১ প্রভাব ফেলবে নির্বাচনী ফলাফলে
অক্টোবর ৯, ২০১৫
খুরশিদ আলম : আগামী ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কানাডার ৪২তম জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসার পর প্রথম দিকে পরিচালিত বিভিন্ন জরীপে দেখা গিয়েছিল জনপ্রিয়তার বিচারে অনেকদূর এগিয়ে রয়েছে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। দ্বিতীয় স্থানে ছিল লিবারেল পার্টি। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থান তৃতীয় স্থানে। কিন্তু ভোটের দিন যতই এগুচ্ছে নির্বাচনী জরীপের ফলাফল ততই টায় টায় হয়ে উঠছে। আজ দেখা যাচ্ছে জরীপে এগিয়ে আছে এক দল, কাল আবার দেখা যাচ্ছে এগিয়ে আছে অন্য এক দল। ফলে ষ্পষ্টতই অনুমান করা যাচ্ছে যে এবারের নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ।
অবশ্য আনডিসাইডেড বা দোলায়মান ভোটারদের বিষয়ে কোন ভবিষ্যতবাণী এখনো করা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা জরীপের উপর ভিত্তি করে সুস্পষ্টভাবে আগাম বলা যাবে না। সকলেই দেখেছেন অন্টারিও প্রভিন্সের গত নির্বাচনে নির্বাচনপূর্ব কোন জরীপ ফলাফলই সঠিক হয়নি। অন্টারিও লিবারেল পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তা কেউই ধারণা করেনি তখন। কিন্তু তাই ঘটেছিল। আলবার্টা প্রভিন্সেও একই ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়। নিউ ড্যামোক্রেটিক পার্টির প্রভিন্সিয়াল নেতা রিচেল এ্যান নাটলি সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছেন গত মে মাসে। নির্বাচনের আগে পরিচালিত সকল জরীপের ভবিষ্যতবাণীকে মিথ্যা প্রমানিত করে জনগণ তাদের পছন্দের দল নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে জরীপ সংস্থাগুলোর ভবিষ্যত বাণী:
আগামী ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরীপ সংস্থাগুলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে ভবিষ্যত বাণীগুলো করছে তা দেখে অনেকেই বলছেন, নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কে জিতবে সেটা বলা কঠিন। পরিস্থিতি এখন এমন দাড়িয়েছে যে, বিভিন্ন দলের ভাগ্য পরীক্ষার জন্য বড়জোর টস খেলা যেতে পারে। এর বেশী কিছু নয়।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক মাস আগে কানাডার সিটিভি নিউজ ও গ্লোব এন্ড মেইল এর পক্ষে ন্যানোস রিসার্স নামের একটি জরীপ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরীপে দেখা গিয়েছিল জনপ্রিয়তার দিক থেকে লিবারেল পার্টির অবস্থান ছিল প্রথম, দ্বিতীয় স্থানে ছিল কনজারভেটিভ পার্টি এবং তৃতীয় স্থানে এনডিপি। শতকরা হিসেবে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা ৩০.৯%, কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা ৩০.৮% এবং এনডিপি’র জনপ্রিয়তা ২৯.৯%। ন্যানোস রিসার্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা লিবারেল ও এনডিপির প্রতি সমর্থকদের মনোভাবের আরো পরিবর্তন হয়তো লক্ষ্য করবো নির্বাচনের আগে। হয়তো দেখা যেতে পারে, লিবারেল সমর্থকদের ঝোঁক এনডিপির প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা এনডিপি’র সমর্থকদের ঝোঁক লিবারেল পার্টির প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি তাই হয় তবে এই দুই দলের যে কোন একটি দল নেতৃত্বে চলে যাবে।
ন্যানোস রিসার্সের জরীপে আরো দেখা যায়, আটলান্টিক কানাডায় লিবারেল দলের সমর্থন ছিল ৪৪%। অন্টারিওতে ৪১%। প্রেইরী প্রভিন্সগুলোতে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ছিল ৫৫%। কুইবেকে এনডিপি’র সমর্থন ছিল ৫০%। ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ৩০%, লিবারেল পার্টির সমর্থন ২৯% এবং এনডিপি’র সমর্থন ছিল ৩১%।
কিন্তু জরীপের এই ফলাফল পরবর্তী দিন বা সপ্তাহগুলোতে এক থাকেনি। দ্রুতই পরিবর্তন ঘটতে থাকে। একেক দলের নেতা একেক রকম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে আর জরীপ ফলাফলও তার সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন হতে থাকে।
এই প্রতিবেদনটি যখন লেখা হয় (অক্টেবর ০১) তখনকার সর্বশেষ জাতীয় জরীপ ফলাফল ছিল নিন্মরূপ:
কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ২৯.৬%
লিবারেল পার্টির সমর্থন ৩৮.৪%
এনডিপি’র সমর্থন ২৬.০%
উপরের জরীপ রিপোর্টটি ন্যানোস রিসার্সের এর তৈরী। প্রায় কাছাকাছি ফলাফল আমরা দেখতে পাই ইপসস রিড এর জাতীয় জরীপ রিপোর্টেও। তাদের জরীপ ফলাফল ছিল নিন্মরূপ:
কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ৩৫.০%
লিবারেল পার্টির সমর্থন ৩৪.০%
এনডিপি’র সমর্থন ২৭.০%
ফোরাম রিসার্স এর জাতীয় জরীপ রিপোর্টও প্রায় একই ফলাফল দেখাচ্ছে। তাদের জরীপ ফলাফল ছিল নিন্মরূপ:
কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ৩৪.০%
লিবারেল পার্টির সমর্থন ৩৩.০%
এনডিপি’র সমর্থন ২৫.০%
ন্যানোস রিসার্সের এর তৈরী প্রভিন্সওয়ারী জরীপ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে কুইবেক প্রভিন্সে এনডিপি‘র অবস্থান প্রথম স্থানে। তবে অন্টারিওতে এনডিপি’র অবস্থান তৃতীয় স্থানে। এই প্রভিন্সে লিবারেল ও কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা প্রায় সমান সমান।
আবার ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে এনডিপি এগিয়ে আছে জনপ্রিয়তার দৌড়ে। কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থান দ্বিতীয় এবং লিবারেল পার্টির অবস্থান তৃতীয়।
প্রেইরি অঞ্চলে কনজারভেটিভ পার্টি ভাল অবস্থানে আছে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে। আর আটলান্টিক কানাডায় লিবারেল এগিয়ে আছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে।
এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ার পর শুরুর দিকে এনডিপি এগিয়ে থাকলেও ক্রমান্বয়ে এই দলটি পিছিয়ে পড়ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে এই দলটি যে সকল প্রভিন্সে ভাল করার কথা সে সকল প্রভিন্সে পিছিয়ে পড়ছে। এই তথ্য জানিয়েছে ন্যানোস রিসার্স।
তবে হাতে আরো কয়েকদিন সময় আছে। জরীপ ফলাফল এর মধ্যে আরো উলটপালট হতে পারে। সমর্থকরা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারেন। তাছাড়া, আনডিসাইডেড বা দোলায়মান ভোটারদের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাদের সিদ্ধান্তের উপরও অনেকটাই নির্ভর করছে নির্বাচনে কে হারবে আর কে জিতবে।
জরীপ প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা:
কানাডায় যে কোন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জরীপ সংস্থাগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে। নির্বাচনে কোন দল জিততে পারে বা কোন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কতটুকু সেসব নিয়ে ভবিষ্যতবাণী করতে থাকে তারা কখানো কখনো নিজেদের উদ্যোগেই আবার কখনো কখনো কোন মিডিয়ার পক্ষ হয়ে। দেখা গেছে এদের ভবিষ্যতবাণী কখনো কখনো অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। আবার অনেক সময় মিলে না। ভবিষ্যৎবাণীর ধারে কাছে দিয়েও যায় না নির্বাচনী ফলাফল। ফলে প্রায়ই প্রশ্ন উঠে এই সকল জরীপকারী সংস্থার জরীপের গ্রহণযোগ্যতা ও তাদের দক্ষতা নিয়ে। নির্বাচনের আগে এই জাতীয় জরীপ পরিচালনা করা উচিৎ কি না সে নিয়েও প্রশ্ন করতে শুনা যায় কোন কোন মহল থেকে। নির্বাচনী জরীপ সংস্থার পিছনে কোন কোন মহলের প্রভাব থাকে কি না সে নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
আজকের যুগটা হলো কর্পোরেটওয়ালাদের যুগ। যে কোন দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা পর্দার নেপথ্যে থেকে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রিত করেন তাদের নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য। নির্বাচনের আগে বা অন্য কোন জাতীয় ইস্যু নিয়ে তারা জনমত প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সময় লবিস্ট গ্রুপ নিয়োগ করেন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। কানাডায় অবশ্য লবিস্ট গ্রুপের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু আইন কানুন রয়েছে। কিন্তু তারপরও কর্পোরেটওয়ালাদের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এবারের নির্বাচনে আলোচিত ইস্যু এবং প্রতিশ্রুতিসমূহ:
কানাডার নির্বাচনে বরাবরই অর্থনীতি প্রধান ইস্যু হিসেবে কাজ করে। তবে এবার অন্যান্য যে ইস্যুগুলো বেশ জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে সেগুলো হলো বিল সি-৫১, বিল সি-২৪ এবং ইমিগ্রেশন। অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি এ সকল ইস্যুকে সামনে রেখে প্রধান তিন দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে এবার। স্থানাভাবের কারণে সব প্রতিশ্রুতি এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রধান প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলোর কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এখানে।
কনজারভেটিভ পার্টি
– ২০১৯ সালের মধ্যে স্মল বিজনেজ টেক্স রেট ১১% থেকে কমিয়ে ৯% এ করা হবে। অন্যদিকে কর্পোরেট টেক্স ২২% থেকে কমিয়ে ১৫% এ করা হবে।
– চলতি অর্থবছরে ব্যালেন্স বাজেট পেশ করা হবে।
– ওল্ড এজ সিকিউরিটি বেনিফিট পাওয়ার বয়স ৬৫ থেকে বড়িয়ে ৬৭ করা হবে।
– নিন্ম ও মধ্য আয়ের পরিবারের জন্য এডুকেশন সেভিংস প্লানে সরকারী অনুদান বৃদ্ধি করা হবে।
– ইরাক ও সিরিয়া থেকে আরো ১০ হাজার উদ্বাস্তু গ্রহণ করা হবে।
– কোন কানাডিয়ান দেশের বাইরে কোন জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিতে গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে কোন কোন দেশে অধিকাংশ কানাডিয়ানের জন্য যাতায়ত নিষিদ্ধ করা হবে। তবে সাংবাদিক বা মানবিক কর্র্মীদের জন্য নয়।
– ন্যাশনাল চাইল্ড কেয়ার প্রোগ্রাম, গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট প্রগ্রামকে আরো জোরদার করা ইত্যাদি।
নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি
– আগামী চারবছরে ১.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে সিনিয়র সিটিজেনদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য যে প্রকল্পে ৪১ হাজার সিনিয়র সিটিজেনের হোম কেয়ার সুবিধা বৃদ্ধিসহ আরো ৫ হাজার নার্সিং বেড সৃষ্টি করা হবে।
– যুবকদের জন্য প্রতি বছর ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে ৪০ হাজারেরও বেশী জব, পেইড ইন্টার্নশীপ, কো-অপ প্লেসমেন্ট সৃষ্টির জন্য। চার বছর ধরে চলবে এই প্রকল্প।
– কানাডা কর্তৃক ইরাক এবং সিরিয়ায় বিমান হামলায় অংশ নেয়া বন্ধ করা হবে। চলতি বছরের মধ্যে ১০ হাজার সিরিয়ান উদ্বাস্তুকে কানাডায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।
– প্রথম বছরেই ব্যালেন্স বাজেট পেশ করা হবে।
– দরিদ্র সিনিয়র সিটিজেনদের গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট বৃদ্ধি করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড যোগার করা হবে। ওল্ড এজ সিকিউরিটি বেনিফিটের বয়স ৬৭ থেকে কমিয়ে আগের অবস্থায় আনা হবে। অর্থাৎ ৬৫ বছর করা হবে।
– আগামী ৮ বছরে দশ লাখ চাইল্ড কেয়ার স্পেস সৃষ্টি করা হবে। স্বল্প আয়ের অভিবাকদের দিনে ১৫ ডলারের বেশী দিতে হবে না চাইল্ড কেয়ারের জন্য।
– বিল সি-২৪ ও বিল সি-৫১ বাতিল করা হবে।
লিবারেল পার্টি
– আগামী ৪ বছরে যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে যাতে করে ১ লক্ষ ২৫ হাজার যুবক কাজ খুঁজে পায়।
– এম্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম ১.৮৮ ডলার থেকে কমিয়ে ১.৬৫ ডলার করা হবে প্রতি ১০০ ডলার আয়ের উপর।
– এম্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্স এর কম্পাশেনেট কেয়ার বেনিফিট সবার জন্য সজলভ্য করা হবে যাতে তারা পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তার সেবাযতœ করতে পারেন।
– বিল সি-২৪ বাতিল করা।
– মিডল ক্লাস ইনকাম টেক্স কমানো, ইনকাম-স্পীøটিং ফর ফ্যামিলি প্রগ্রাম বাদ দেয়া।
– টেক্স ফ্রি মাসিক কানাডা চাইল্ড বেনিফিট।
– ২০১৬ সালে ব্যালেন্স বাজেট।
– ওল্ড এজ সিকিউরিটি বেনিফিট পাওয়ার বয়স কমিয়ে আগের স্থানে নিয়ে আসা ইত্যাদি।
বিল সি-৫১ এবং বিল সি-২৪সহ অন্যান্য ইমিগ্রেশন ইস্যু জোরালো হওয়াতে কানাডার প্রধান তিন দলের পক্ষ থেকে নির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের প্রতি নানারকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতায় গেলে কোন দল ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে কি করবে তার লম্বা ফিরিস্তি দিচ্ছে। আর এর উদ্দেশ্য হলো, এথনিক গ্রুপের ভোট দখল করা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে কনজারভেটিভ পার্টি বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের প্রতি লক্ষ্য রেখে যে সকল প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ তার প্রধান দিকগুলো হলো- ইমিগ্রেন্টদের সেটেলমেন্ট সাপোর্টের জন্য প্রভিন্স ও মিউনিসিপালিটির সঙ্গে সহযোগিতা করা, ফরেইন ওয়ার্কারদেরকে পার্মানেন্ট স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রক্রিয়া পরীক্ষা করে সহজতর উপায় বের করা, ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টকে পর্যাপ্ত লোকবল ট্রেনিং ও রিসোর্স দেয়া যাতে করে তারা তাদের কার্যক্রম আরো উন্নত ও দ্রুতভাবে সমাধা করতে পারে, ফরেইন ক্রিডেন্সিয়ালকে স্বীকৃতি দানের যে পরীক্ষা ব্যবস্থা তাকে আরো ন্যায্য করা, শরনার্থী দাবী যাচাই প্রক্রিয়া আরো নির্বিঘœ করা ইত্যাদি।
একই ইস্যুতে লিবারেল পার্টির প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে বিল সি-২৪ বাতিল করা যেটি দ্বৈত নাগরিকদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনত করেছে, টেম্পরারী ফরেইন ওয়ার্কার প্রোগ্রামকে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা, সিরিয়ান রিফুজিদের সংখ্যা ২৫০০০এ উন্নীত করা, ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন প্রোগ্রামে ফান্ড আরো বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
আর নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশনকে প্রধান অগ্রাধিকার দেয়া, এপ্লিকেশন ফি ও ল্যান্ডিং ফি বাদ দেয়া, ইমিগ্রেন্টদের ক্রিডেন্সিয়ালকে স্বীকৃতি দান করার জন্য প্রভিন্সগুলোর সাথে কাজ করা, যারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য কানাডায় আসতে চান তাদের ভিসা ব্যবস্থা সহজতর করা, ফ্যামিলি ক্লাসের মধ্যে পড়ে না এমন কাউকে স্পন্সর করার জন্য একবার করে সুযোগ দেয়া ইত্যাদি।
এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন পার্টির নির্বাচনী শ্লোগান :
কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা – “Proven leadership for a strong Canada.” & “Safer Canada/Stronger Economy”
নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি – “Ready for Change.”
লিবারেল পার্টি অব কানাডা – “Real Change.”
বর্তমানে কানাডার পার্লামেন্টে (হাউস অব কমন্স অব কানাডা) ৩৩৮টি আসন রয়েছে। সংখ্যাগড়িষ্ঠতা পেতে হলে একটি দলকে ১৭০টি আসন পেতে হবে।
গত জাতীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি আসন পেয়েছিল ১৬৬। এনডিপি পেয়েছিল ১০৩ টি আসন। আর লিবারেল পার্টি পেয়েছিল ৩৪ টি আসন। ঐ সময় মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০৮টি। পরে তা বৃদ্ধি করে ৩৩৮টি করা হয়।
এবারের জাতীয় নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে সে নিয়ে প্রবাসী বাঙ্গালীদের যেমন আগ্রহ রয়েছে তেমনি রয়েছে স্বার্থও। একই স্বার্থ রয়েছে অন্যান্য এথনিক গ্রুপেরও যাদের রয়েছে দ্বৈত নাগরিকত্ব। আর সে কারণেই এবারের পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন বলেই মনে হচ্ছে।
লক্ষনীয় ব্যাপার যে, গত কয়েক বছরে কনজারভেটিভ পার্টি ইমিগ্রেশন বিষয়ে কঠোর রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছে। আর তারই ফলশ্রুতি বিল সি-২৪ এবং বিল সি-৫১ যার সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে জঙ্গীবাদের বিষয়টি। এ বিল দুটি সম্প্রতি আইনে পরিনত হওয়ায় অন্যান্য এথনিক গ্রুপের মতো বাংলাদেশীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কারণ বিল সি-২৪ আইনে পরিনত হওয়া তারা এখন কানাডার দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনত হয়েছে। কানাডার সরকার ইচ্ছে করলে এই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকদেরকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভূমি বা পিতৃভূমিতে ফেরৎ পাঠিয়ে দিতে পারবে।
অন্যদিকে বিল সি-৫১ এ বলা হয়েছে, কেউ যদি অন্যকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উৎসাহ প্রদান করেন বা এই বিষয়ে প্রচারণা চালান তবে তিনি নতুন এই আইনে দোষী বলে গণ্য হবেন। প্ররোচিত বা উৎসাহিত হয়ে কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাক বা না চালাক, প্ররোচনাকারী দোষী বলে বিবেচিত হবেন। এ জন্য তাকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাভোগ করতে হতে পারে।
এখানে উদ্বেগের বিষয়টি হলো, এই আইন স্বাধীন মতপ্রকাশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যারা সন্ত্রাসী কর্যক্রমের ব্যাপারে উৎসাহ যোগাবে বা কাউকে প্ররোচিত করবে তাদেরকে সাধারণভাবে টার্গেট করা হয়েছে এই আইনে। কিন্তু এই আইনের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্পর্কে এখানে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি বা সুস্পষ্টভাবেও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে। আইনটি পাশ হওয়ার আগে যে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এর বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে আছেন কানাডার সাবেক ৪ প্রধানমন্ত্রী জন ক্রেশ্চিয়েন, পল মার্টিন, জো ক্লার্ক এবং জন টার্নার। সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন জাজও ছিলেন বিরোধিতাকারীদের মধ্যে।
এরকম আরো কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। তবে তাদের মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে এ কারণে যে, বিরোধী দল দুটোই এই বিল সি-২৪ বাতিলের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য দিয়ে আসছে। আর বিল সি-৫১ বাতিল না করলেও সংশোধন করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে লিবারেল পার্টি। এনডিপি অবশ্য বলেছে তারা নির্বাচিত হলে বিল সি-৫১ও বাতিল করে দিবে।
এবারের নির্বাচনে এথনিক ভোটারদের প্রভাব
সুদীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন এসেছেন কানাডায় নতুন জীবন শুরু করার জন্য। এদের কেউ এসেছেন বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ইমিগ্রেন্ট হয়ে, কেউ উদ্বাস্তু হয়ে। দিনে দিনে এদের সংখ্যা এখন এমন এক পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে এরা এখন একটি বড় ধরণের ভূমিকা পালন করে আসছেন সাম্প্রতিক দশকগুলোতে। সাংবাদিক পল বারবার আইপলিটিস.কম এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেছেন, “ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পাই এই এথনিক ভোটারদের সুবিধা অতীতে প্রধানত গ্রহণ করেছে লিবারেল পার্টি। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টিও এথনিক অধ্যুষিত রাইডিংগুলো থেকে বেশ কিছু আসন দখল করেছে।”
পল বারবার আরো লিখেন, “একসময় ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানরা প্রকাশ্যেই রাজনীতিতে ইমিগ্রেন্টদেরকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। বিষয়টি এখন অনেকেই ভুলে গেছেন। ১৯২৪ সালে উইনিপেগের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বলেছিলেন, আমরা বিদেশ থেকে আসা সব ভাল নাগরিকদেরকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তারা যদি খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাস না করেন এবং আমাদের গড়া আইনকে সম্মান না দেখান তবে তারা যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চালে যাওয়াই উচিৎ।”
ইমিগ্রেন্ট বিরোধী এরকম উক্তি বা বক্তব্য অথবা সোজা কথায় বর্ণবাদী অচরণের প্রমান কানাডার ইতিহাসে ভুড়ি ভুড়ি রয়েছে। মাত্রায় কম হলেও সেই বর্ণবাদী আচরণ এখনো করা হচ্ছে বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের প্রতি। টরন্টোর গত সিটি নির্বাচনেরও এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। এথনিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা বিশেষ করে মুসলমান পরিচয়ের প্রার্থীদের ব্যানার তছনছ করার ঘটনা ঘটেছে। কানাডার জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ পরিচিত মুখ এনডিপি’র সাবেক এমপি অলিভিয়া চাও’কে নানা ভাবে বিব্রত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী মন্তব্য করে।
তবে এর পরও এথনিক ভোট ব্যাংক যে কানাডায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তার একটি প্রমান আমরা দেখেছি দুই দশক আগের কুইবেক রেফারেন্ডমে। সেদিনের নির্বাচনে কুইবেকের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরাজয় ঘটলে ঐ রাতেই কুইবেকের তৎকালীন প্রিমিয়ার জ্যাকুস পারিজাও ক্ষোভে দুঃখে বলে উঠেছিলেন “অর্থ ও এথনিক ভোটারদের কারণেই আমরা হেরেছি”।
এ কথা বলার জন্য পরের দিন পারিজাওকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু এখানে সত্যতা হলো এই যে, এথনিক ভোটের গুরুত্বকে কোন দলই আর অবজ্ঞা করতে পারে না এখন। সাথে সাথে এটিও সত্যি যে, আগের দিনের মতো এথনিক ভোটের উপর কোন দল বিশেষের একক প্রভাব নেই।
উল্লেখ্য যে, গত ২০১১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৪২ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন পার্লামেন্টে যাদের জন্ম কানাডার বাইরে। সেই সময় পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা ছিল ৩০৮ টি। তবে বিভিন্ন রাইডিং এ বিদেশে জন্ম নেয়া ভিজিবল মাইনরিটি বা দৃশ্যমান সংখ্যালঘু (শ্বেতাঙ্গ বা আদিবাসী নন) সম্প্রদায় থেকে মোট জয়ী হয়েছিলেন ৩০ জন। শতকরা হিসেবে এটি ৯.৪%। কিন্তু কানাডায় লোকসংখ্যা দিক থেকে ভিজিবল মাইনরিটির সংখ্যা ১৫%। আর পৃথিবীর অঞ্চল ভেদে হিসেব করলে দেখা যায় বিদেশে জন্ম নেয়া কানাডিয়ান এমপিদের মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন ইউরোপীয়, ১১ জন এশিয়, ১১ জন আমেরিকান এবং ৫ আফ্রিকান। (তথ্য সূত্র : নিউ কানাডিয়ান মিডিয়া)।
সুতরাং এ কথা বলাই যায় যে, কানাডার এথনিক গ্রুপের সদস্যরা এ দেশের রাজনীতিতে এখন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ক্যালগারীর মেয়র নাহিদ নেনসী নির্বাচিত হয়েছেন এথনিক গ্রুপের সদস্য থেকেই।
নিউ কানাডিয়ান মিডিয়াতে মাইকেল এ্যাডামস এবং এন্ড্রু গ্রিফিত যৌথভাবে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন যেখানে তারা উল্লেখ করেছেন যে, “কানাডায় একটি ব্যাতিক্রমধর্মী ঘটনা হলো, এখানে বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশে জন্ম নেয়া লোকদেরকে দলে ভিড়িয়েছেন এবং এমপি পদে লড়ার সুযোগ দিয়েছেন যাদের অনেকেই পরবর্তীতে এমপি নির্বাচিত হয়েছেনও। কিন্ত পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখা গেছে রক্ষণশীল দলগুলো ইমিগ্রেন্ট বিরোধী হয়।”
কথাটি একদিকে সত্যি। কিন্তু এ কথাও তো সত্যি যে, কানাডার এই
কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বেই ইমগ্রেন্টবান্ধব নয় এমন আইন পাশ হয়েছে যে আইনে দ্বৈত নাগরিকদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করা যাবে। এর বিরুদ্ধে কোন আপিলের সুযোগও রাখা হয়নি। অথচ যে অপরাধসমূহের দোহাই দিয়ে এই আইন করা হয়েছে সেই অরাধসমূহের বিচার করার জন্য দেশটির প্রচলিত আইনই যথেষ্ট ছিল। কানাডার আইন বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, দেশ থেকে বহিস্কারের আইনটি মধ্যযুগীয় প্রথা যা আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে একেবারেই বেমানান এবং মানবাধিকার পরিপন্থী। এটি সংবিধানও লংঘন করেছে।
বিষয়টি এথনিক গ্রুপ বিশেষ করে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তাদের মধ্যে যথেষ্ট ভীতি, ক্ষোভ এবং হতাশার সৃষ্টি করেছে। ফলে এই গ্রুপটির মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি প্রচন্ড রকমের অবিশ্বাসও তৈরী হয়েছে। বাঙ্গালী কমিউনিটির লোকদের সঙ্গে কথা বলেও এই প্রতিবেদক একই বার্তা পেয়েছেন। এমনকি টরন্টোর সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান বিল ব্লেয়ার যিনি সারাজীবনই আইন আর অপরাধী নিয়ে কাজ করেছেন তিনিও সম্প্রতি প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমার জীবনে আমি এরকম আপত্তিকর বা অবমাননাকর আইন আর দেখিনি।” তিনি আরো বলেন, “আমি বিশ্বাস করি একজন কানাডিয়ান সবসময়ই কানাডিয়ান। দ্বৈত নাগরিক বা এখানে জন্ম নেয়া মূলধারার নাগরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সকলেরই সমান অধিকার।” বিল ব্লেয়ার স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে এমপি পদে লড়ছেন।
সুতরাং একদল বুদ্ধিজীবী কনজারভেটিভ পার্টিকে যতই ইমিগ্রেন্টবান্ধব বলে প্রচার চালিয়ে যাক না কেন, বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। ফলে পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন গতবারের মতো এথনিক গ্রুপের (বিশেষ করে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে) ভোট এবার কনজারভেটিভ পার্টির বক্সে নাও পরতে পারে।
অন্যদিকে লিবারেল পার্টি সুদীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের কাছে বিপুলভাবে জনপ্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিককালে তাতে অন্যান্য দলেরও ভাগ পড়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এবার কনজারভেটিভ পার্টি কর্তৃক সন্ত্রাসবিরোধী বিল সি-৫১ পাসের ব্যাপারে লিবারেল পার্টিও সম্মতি দিয়েছে। এটি অনেকের কাছে বিস্ময়ের বিষয় ছিল। আধুনিক কানাডার অবিসংবাদিত নেতা পিয়ের ট্রুডোর ছেলে লিবারেল পার্টির বর্তমান নেতা জাস্টিন ট্রুডো এমন একটি বিলের পক্ষে ভোট দিবেন তা অনেকের কাছেই স্বাভাবিক মনে হয়নি। তাছাড়া লিবারেল দলের তিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীও এই বিলের বিরোধিতা করেছিলেন। অরো দেখা গেছে সি-৫১ বিলটি পাশ হওয়ার আগেই বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের পাশাপাশি কানাডার মূলধারাতেও এর বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে এটি। টরন্টোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ফলে আসন্ন নির্বাচনে লিবারেল পার্টির প্রতি কানাডার বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের সদস্যদের একটি ক্ষোভ কাজ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ ক্ষেত্রে এনডিপি অবশ্য অন্য প্রধান দুই দলের চেয়ে এগিয়ে আছে। কারণ এই দলটি শুরু থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী বিল সি-৫১ এবং তথাকথিত নগরিকত্ব শক্তিশালীকরণ বিল সি-২৪ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ক্ষমতায় গেলে তারা এ দুটি বিলই বাতিল করে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।
লক্ষ্যনীয় যে, এবার নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ ও নিকাব ইস্যু নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। আর এই দুটো ইস্যুর মধ্যেই রাজনীতির ছোঁয়া লাগিয়ে বিতর্ককে আরো বহুগুন উস্কে দিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। বিল সি-৫১ এবং বিল সি-২৪ মূলত মুসলমান সম্প্রদায়কে টার্গেট করেই করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অন্যদিকে নিকাব নিয়ে সরকারী দল কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেও প্রধান দুই বিরোধী দল বলছে নিকাব পরা নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই।
উল্লেখ্য যে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফেডারেল আপিল কোর্ট নিকাবের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিলকে আমলে না নিয়ে ফেডারেল কোর্টের আগের রায়কেই বহাল রেখে বলেন, সরকার কর্তৃক নিকাব নিষিদ্ধ করার আইন বেআইনী।
নেকাবের বিরুদ্ধে সরকারী দলের সমালোচনা করে লিবারেলন পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। কেউ যখন সংখ্যালঘুদের কোন অধিকারকে নিয়ন্ত্রিত বা সীমিত করতে চাইবে তখন তার পিছনে জোড়ালো কারণ বা যৌক্তিকতা থাকতে হবে।
এনডিপি নেতা টম মুলকেয়ারও নিকাবের বিরুদ্ধে নন। তার ভাষ্য হলো, নাগরিকত্ব লাভের সময় পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নিকাব উন্মোচন করার পক্ষে তিনি। তবে শপথগ্রহন অনুষ্ঠানের সময় নিকাব উন্মোচন করার কোন প্রয়োজনীয়তা তিনি দেখেন না।
উপরে উল্লেখিত সরকারের এইসব পদক্ষেপের কারণে কানাডার মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সরকার বিরোধী একটি মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে আরো আগে থেকেই। সমালোচকরা বলছেন সরকার ইচ্ছে করেই ইসলামোফোবিয়া তৈরী করে মূলধারার কানাডিয়ানদের ভোট বাগাতে চাচ্ছে। আর এই ইসলামোফোবিয়া তৈরীতে সন্ত্রাসবাদ, নিকাব ইত্যাদি ইস্যুকে কাজে লাগাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ইসলামী স্কলারগণ বারবারই বলে আসছেন সন্ত্রাসবাদ ইসলামের অংশ নয়। ইসলাম সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। অন্যদিকে নিকাবও ইসলামী ড্রেস নয়। কোন কোন মহিলা এটি পড়ে থাকেন সেটি সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপার।
অথচ এগুলো নিয়ে কানাডার সাধারণ মুসলমান যারা জঙ্গীবাদে বিশ্বাসী নয় তাদের বিপদে ফেলছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি নিছকই ভোটের রাজনীতির কারণে। এরকম ধারণাই পোষণ করেন কানাডার সাধারণ মুসলমানগণ। আর এ ধারণা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলমান ভোটারগণ এবার আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ইসলাম সম্পর্কে কানাডিয়ানদের ভুল ভাঙ্গানোর জন্য।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় গত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩০% মুসলমান ভোটার। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কয়েকটি মুসলিম সংগঠন এবার বিভিন্ন মসজিদে এবং অন্যান্য মসুলিম সমাবেশে গিয়ে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন মুসলমানদের মধ্যে যাতে তারা ভোট কেন্দ্রে যান এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের বার্তা পার্লামেন্টে পৌঁছে দেন। এরা মুসলমানদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও এই প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কানাডার ন্যাশনাল হাউসহোল্ড সার্ভের (২০১১) হিসেব অনুযায়ী দেখা যায় এ দেশে মুসলমানদের সংখ্যা ১০,৫৩,৯৪৫ । কানাডার মোট জনসংখ্যার ৩.২% হলো মুসলমান। লোকসংখ্যার বিচারে খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসরীদের পরই মুসলমানদের অবস্থান। আসন্ন নির্বাচনে এদের একটা প্রভাব থাকবে নিশ্চই। সেই সাথে থাকবে অন্যান্য এথনিক গ্রুপের সদস্যদের প্রভাব।
জরীপে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে। এও দেখা যাচ্ছে যে, এক দলের জনপ্রিয়তা অন্য দলের চেয়ে খুব বেশী ব্যবধানে নয়। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এই সব জরীপের উপর শতভাগ আস্থা রাখার কোন কারণ নেই। শেষ মূহুর্তে যে জনমত পাল্টে যায় সেই অভিজ্ঞতা সকলেরই কমবেশী আছে।
এখন বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের সদস্যরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের পছন্দের পার্টি নির্বাচনে জয়ী হয় কি না তা দেখার জন্য।
নির্বাচনে লিবারেল পার্টি জয়ী হবে : এ. ওয়াহেদ
মোহাম্মদ এ. ওয়াহেদ, প্রেসিডেন্ট, মারহাবা সুপারমার্কেট ও রেডরোজ সুপারমার্কেট:
আমি মনে করি এবারের জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টি জয়ী হবে। তবে একটু শঙ্কা রয়েছে। তারা জয়ী নাও হতে পারে। আর জয়ী হলে সেটি হবে রিজনএবল। তবে এবারের নির্বাচনে কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে আমার মনে হয় না।
বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক ও স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে কনজারভেটিভ পার্টির সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলে জানান জনাব ওয়াহেদ। এই পার্টি সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা আমাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে ফেলেছে। এটা আমাদের উপর জুলুম এবং একই সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। আমরাতো বৈধ পথেই এ দেশে এসেছি। ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করার পর তারা বলেছিল এ দেশে আমরা সব সুযোগসুবিধা অন্যান্য কানিডিয়ানদের মতো সমানভাবে পাবো। মর্যাদাও থাকবে সমান। এক বছর আগেও যারা কানাডায় এসেছেন ইমিগ্রেশন নিয়ে, তাদেরকেও বলা হয়নি যে তারা এ দেশে এসে দ্বিতীয় শ্রেণীর নগরিক হয়ে যাবে। জনাব ওয়াহেদ বলেন, এতদিন তো সবই ঠিকই ছিল। তা হলে এখন কেন হঠাৎ করে বিল সি-২৪ নামে এই নতুন আইন করা হলো? এই আইনের মাধ্যমে সরকার আমাদেরকে একেবারে চুড়মার করে দিয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি মনে করি কনজারভেটিভ পার্টি পছন্দ করার মতো একটি দল নয় ইমিগ্রেন্টদের পক্ষে।
জনাব ওয়াহেদ আরো বলেন, কানাডার মাটিতে একটি দুটি বিচ্ছিন জঙ্গী ঘটনা নিয়ে এ জাতীয় আইন কারার কোন যৌক্তিকতা নেই। অপরাধীর অপরাধ বিচার করার জন্য এদেশে প্রয়োজনীয় আইন আগে থেকেই ছিল। নতুন করে এই আইনের কি প্রয়োজন যে আইনে নাগরিকদেরকে বহিস্কার করা যাবে?
আসন্ন নির্বাচনে বাঙ্গালীদের সমর্থন কোন দলের প্রতি বেশী এই প্রশ্নের জবাবে জনাব ওয়াহেদ বলেন, লিবারেল পার্টির প্রতিই। শুধু বাঙ্গালীরাই নয় অন্যান্য এথনিক গ্রুপের সদস্যদেরও সমর্থন লিবারেল পার্টির প্রতিই বেশী বলে আমার কাছে মনে হয়। কিছু কিছু বাঙ্গালী অবশ্য দোটানায় আছেন তাদের সমর্থন নিয়ে। তবে আমার বিশ্বাস সব বাঙ্গালীই শেষ পর্যন্ত লিবারেলকেই ভোট দিবেন। আর সত্য বলতে কি, অন্টারিওতে তো লিবারেল জিতেই বসে আছে। এখন শুধু ভোটের দিনের অপেক্ষায় আছি আমরা।
বিচেস ইস্ট ইয়র্ক থেকে কে নির্বাচিত হতে পারেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্ভবত এনডিপি’র ম্যাথিও ক্যালওয়ে।
আর স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট যেখানে আপান বাস করেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিবারেল পার্টির প্রার্থী বিল ব্লেয়ার পাশ করবেন বলে আমি মনে করি।
কনজারভেটিভ পার্টির জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশী : ব্যারিস্টার কামরুল
প্রশ্ন : আসন্ন ফেডারেল নির্বাচন সম্পর্কে আপনার ভবিষ্যত বাণী কি? অর্থাৎ কোন দল জয়ী হবে বলে মনে করছেন?
উত্তর : ভবিষ্যত বাণী বলতে যা বুঝায় সরাসরি তা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখে যা বুঝা যাচ্ছে তাতে ধারণা করা যায় কনজারভেটিভ পার্টির জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশী।
প্রশ্ন : কেন মনে করছেন এই দলটি নির্বাচিত হবে?
উত্তর : কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি জনগণের সমর্থণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটা একটা ট্রেন্ড। গত নির্বাচনে তারা ১৬৬টি আসন পেয়েছিল যা তার আগের নির্বাচন থেকে ২৩ টি বেশী।
কনজারভেটিভ পার্টির বিভিন্ন প্রগ্রাম আছে যেমন, স্যোসাল সিকিউরিটি, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন, হেলথ কেয়ার, এডুকেশন । তাছাড়া জব সিকিউরিটি এবং কানাডিয়ানদের জন্য নতুন চাকরী সৃষ্টি করা।
লিবারেল বা এনডিপি’র প্লান সাধারণ ভোটারদের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন : যে দলটি নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আপনি মনে করছেন তারা কি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে?
উত্তর : একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দলই পাবে না। কোয়ালিশন সরকার হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। লিবারেল এবং এনডিপি দুই দলই বলেছে যে তারা কোন অবস্থাতেই কনজারভেটিভকে সাপোর্ট করবে না। এটা বুঝা যাবে নভেম্বর মাসে। যদি এই ধরনের কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তবে গভর্ণর জেনারেলের ভূমিকা রয়েছে। যা অল্প কথায় বলা মুশকিল।
প্রশ্ন : আপনার কেন মনে হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হবে? অথবা কেন মনে করছেন তারাই পুননির্বাচিত হবে?
উত্তর : দক্ষ নেতৃত্ব খুবই জরুরী। এই জন্য কনজারভেটিভ পার্টির নেতা স্টিফেন হারপারের বিকল্প নেই বলে মনে হচ্ছে। সুতরাং কনজারভেটিভ পার্টির পরাজিত হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
প্রশ্ন : বেশীরভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক বা সমর্থন কোন দিকে বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে? কারণটা কি?
উত্তর : বাঙ্গালীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্যাটাগরী রয়েছে। কানাডার রাজনীতিতে বাঙ্গালীদের সম্পৃক্ততা খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাঙ্গালীরা লিবারেল পার্টির কেম্পেইন করছে এবং তার বেশীর ভাগই না বুঝে। লিবারেল পার্টির স্ববিরোধী বক্তব্য আছে। সিটিজেনশীপ আইনে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে লিবারেল সমর্থন দিয়েছে। গাঁজা সেবন করা আইনসিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে লিবারেল। বিল সি-৫১ এ লিবারেল নেতা জাস্টিন ট্রুডো সরাসরি সমর্থন দিয়েছে। বিল সি-৫১ এর একটি সরাসরি ইমপ্লিকেশন রয়েছে যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা এবং গণতন্ত্রকে আঘাত করে। এটি খুবই কৌতুহলোদ্দীপক যে, যে সমস্ত বিল এ লিবারেল সমর্থন দিয়েছে সে সমস্ত বিল তারা নাকি ক্ষমতায় গেলে বাতিল করে দিবে। আমি জানি না এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে।
এনডিপি’র ১৩.৩% টেক্স ইনক্রিস সরাসরি প্রভাব ফেলবে এমপ্লয়ারদের উপর। এই ধরণের প্লান এর কারণে অন্তত আড়াই লক্ষ চাকরী বিলীন হয়ে যাবে সারা কানাডায়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্লান হলো অর্থনীতিকে রক্ষা করা, কম টেক্স কাটা, ব্যালেন্স বাজেট পেশ করা এবং নতুন চাকরী সৃষ্টি করা। প্রধানমন্ত্রী শিশুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গাঁজা বৈধ না করার পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু জাস্টিন ট্রুডো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এটাকে বৈধ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। তাই আমার কাছে মনে হয় বাঙ্গালীদের অনেকেই লিবারেল পার্টির বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি তা না জেনেই এই পার্টিকে সমর্থন করে।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ কে জয়ী হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? কেন মনে করছেন?
উত্তর : এনডিপি’র প্রাথী ম্যাথিও ক্যালওয়ের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। লিবারেল এর প্রার্থী ন্যাথিনিয়ালের নূন্যতম কোন সংযোগ নেই এই এলাকায়। তিনি একেবারেই অপরিচিত।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ কে জয় হবে বলে মনে করছেন? কেন করছেন?
উত্তর : এটা একমাত্র রাইডিং যেখানে বড় ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ দুজনেরই সম্ভাবনা বেশী। লিবারেল এর বিল ব্লেয়ার অথবা এনডিপি’র ডেন হ্যারিস। বিল ব্লেয়ার যেহেতু পুলিশের সাবেক চিফ, সে জন্যই হয়তো বাঙ্গালীদের একটা বড় অংশ তাকে সমর্থন করছে। বাঙ্গালীর ভোট এই এলাকায় অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। আর কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী যেহেতু সাউথ এশিয়ান অরিজিন তাই সে অনেক ভোট পাবে। মোটকথা এই রাইডিং এ লাড়াই হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
লিবারেল পার্টিই জয়ী হবে : প্রণবেশ
প্রশ্ন : আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে আপনার ভবিষ্যত বাণী কি? অর্থাৎ কোন দল জয়ী হবে বলে মনে করছেন?
উত্তর : আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টিই জয়ী হবে বলে আমি মনে করছি।
প্রশ্ন : কেন মনে করছেন এই দলটি নির্বাচিত হবে?
উত্তর : সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার সরকার পরিচালনায় একটি আমূল পরিবর্তন আশা করছে।
প্রশ্ন : যে দলটি নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আপনি মনে করছেন তারা কি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে?
উত্তর : বিজয়ী দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার সম্ভাবনাই বেশী।
প্রশ্ন : আপনার কেন মনে হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হবে? অথবা কেন মনে করছেন তারাই পুনঃনির্বাচিত হবে?
উত্তর : বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সরকার পরিচালনার সময়কাল ১০ বছর। এই দীর্ঘ সময় কালের মধ্যে সরকার পরিচালনায় কঠোর রক্ষণশীল মনোভাব ও পররাষ্ট্র নীতিতে আনুগত্যপরায়ন আচরণ গ্রহণ করায় অধিকাংশ ভোটার ক্ষুব্দ। তাই তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে সরকার পরিচালনায় একটি আমূল পরিবর্তন চাচ্ছে এবং কানাডিয়ান স্বকীয়তা সমুন্নত রাখার সমর্থনে রায় প্রদানের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
প্রশ্ন : বেশীরভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক বা সমর্থন কোন দিকে বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে? কারণটা কি?
উত্তর : প্রবাসী বাঙ্গালীদের সমর্থন বর্তমান সরকার বিরোধী দুই দলের মধ্যে ৬০ (লিবারেল) ও ৪০ (এনডিপি) অনুপাতে ভাগাভাগি হয়ে আছে।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ কে জয়ী হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? কেন মনে করছেন?
উত্তর : বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে এনডিপি’র প্রার্থী ম্যাথিও ক্যালওয়ে জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে আছেন বলে মনে হয়। জনসংযোগেও তিনি অনেকটা এগিয়ে আছেন।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ কে জয় হবে বলে মনে করছেন? কেন করছেন?
উত্তর : স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ লিবারেল পার্টির প্রার্থী বিল ব্লেয়ারের জয়ী হবার সম্ভাবনাই বেশী। অত্র এলাকার লিবারেল পার্টির কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটার এবং বিল ব্লেয়ারের ব্যক্তিগত ইমেজের কারণেই এমনটি হবে বলে আমি মনে করি।
কানাডিয়ানরা লিবারেলকেই নির্বাচিত করবেন : আমীন মিয়া
মোহাম্মদ আমিন মিয়া, কর্ণধার- আমিন মর্টগেজ এন্ড টেক্স সলিউশন
আমীন মর্টগেজ এন্ড টেক্স সলিউশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আমীন মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কানাডার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোন দল জয়ী হবে। জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি লিবারেল পার্টি জয়ী হবে। কারণ, এই দলটি নিম্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতৃত্ব দিচ্ছে। কানাডার বর্তমান অর্থনৈতিক দূরাবস্থার পরিবর্তন আনার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে দলটি। অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনার জন্য কানাডিয়ানরা এই দলটিকে নির্বাচিত করবেন।
প্রশ্ন : নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দল পাবে কি না?
উত্তর: আমার মনে হয় না কেউ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে এ ব্যাপারে।
প্রশ্ন : বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কি পুনঃনির্বাচিত হবে? অথবা কেন মনে করছেন তারা পরাজিত হবে?
উত্তর : ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পরাজিত হবে তার মূল কারণ, তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে কানাডার অর্থনীতি অনেক দূর্বল হয়েছে। নতুন চাকরীর সংস্থান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে দলটি। দিন দিন নতুন করে বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রশ্ন : বেশীর ভাগ বাঙ্গালীর ঝোঁক বা সমর্থন কোন দলের প্রতি বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর : আমার ধারণা বেশীর ভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীর সমর্থন পাবে লিবারেল পার্টি। লিবারেল পার্টি মনে করে প্রবাসীরা কানাডার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে এবং প্রবাসীদের সে ভাবেই মূল্যায়ন করছে লিবারেল পার্টি।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে কে পাশ করবে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর : ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং সম্পর্কে আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। আমার ধারণা, নেথেনিয়াল স্মিথ জয়ী হতে পারে। এটি মূলত লিবারেল পার্টিরই এলাকা যদিও গত নির্বাচনে এনডিপি জয়ী হয়েছে এই রাইডিং থেকে।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে কে পাশ করবে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর : আমি নিজে এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। অকেগুলো ফেডারেল নির্বাচনে এ রাইডিং থেকে কাজ করেছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এ রাইডিং থেকে লিবারেল পার্টির মনোনিত প্রার্থী বিল ব্লেয়ার নির্বাচিত হবেন। উনি খুবই হাই প্রোফাইল প্রার্থী। টরন্টোর প্রাক্তন পুলিশ প্রধান হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। আসলে এ আসনে বিল ব্লেয়ারের সাথে তুলনা করার মত দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বি নেই।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ পাবে এমন লক্ষণ দেখছি না : ব্যারিস্টার জয়ন্ত
প্রশ্ন : আসন্ন ফেডারেল নির্বাচন সম্পর্কে আপনার ভবিষ্যত বাণী কি?
উত্তর : কোন দল এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে বলে এখন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক লক্ষণ আমি দেখতে পাইনি।
প্রশ্ন : বর্তমান ক্ষমতাসীন দল পুনঃনির্বাচিত হবে বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর : বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনপূর্ব কিছু সিদ্ধান্ত হয়তো বা দলকে বিপর্যয়ের দিকে নিতে পারে বলে ধারণা হলেও একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে লবিস্ট গ্রুপ কিন্তু একটি বড় বিষয় নির্বাচনের জন্য। সেই দৃষ্টিকোন থেকে তাদের অবস্থান বরঞ্চ একটু শক্ত অবস্থানেই যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।
প্রশ্ন : যে দলটি নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আপনি মনে করছেন তারা কি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে?
উত্তর : আগেই বলেছি এবার কোন দলের পক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর যদি পায় তবে সেক্ষেত্রে আমি বলবো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিই কিছুটা এগিয়ে আছে।
প্রশ্ন : আপনার কেন মনে হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হবে? অথবা কেন মনে করছেন তারাই পুনঃনির্বাচিত হবে?
উত্তর : লিবারেল দলের বর্তমান জনপ্রিয়তা এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রাক নির্বাচনী সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে ব্যালেন্সিং করলে আমার মনে হয় ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রশ্ন : বেশীরভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক বা সমর্থন কোন দিকে বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে? কারণটা কি?
উত্তর : বরাবরই প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক লিবারেল পার্টির দিকে। কারণটা খুব স্বাভাবিক। কোন দলের মেনিফেস্টো যাচাইয়ের মত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও জ্ঞান প্রধানত নতুন ইমিগ্রেন্টদের থাকে না। দ্বিতীয়ত – আবেগগত কারণেও বলা যেতে পারে যে লিবারেল দলের প্রতি প্রবাসীদের সমর্থন তুলনামূলক একটু বেশী।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ কে জয়ী হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? কেন মনে করছেন?
উত্তর : লিবারেল দলের পাল্লা ভারী বলে মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ কে জয় হবে বলে মনে করছেন? কেন করছেন?
উত্তর : লিবারেল দলের প্রার্থী বিল ব্লেয়ারের একটি জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এই রাইডিং এর ভোটারগণ যদি নতুন কাউকে নির্বাচনে আগ্রহী না হন তবে এনডিপি’র প্রার্থী হ্যারিসের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এনডিপি জয়ী হবে বলে আমার ধারণা : ব্যারিস্টার তোফাজ্জ
প্রশ্ন : আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে আপনার ভবিষ্যত বাণী কি? অর্থাৎ কোন দল জয়ী হবে বলে মনে করছেন?
উত্তর : কানাডার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এনডিপি জয়ী হবে বলে আমার ধারণা।
প্রশ্ন : কেন মনে করছেন এই দলটি নির্বাচিত হবে?
উত্তর : এনডিপি গত জাতীয় নির্বাচনে সার্বিকভাবে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিল। এছাড়াও শতাধিক রাইডিং এ দলটির অবস্থান ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তাই আমি মনে করছি এবার হয়তো দেখা যাবে এনডিপি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও অপর বিরোধী দল লিবারেল পার্টিকে পিছনে ফেলে জয়ী হবে।
প্রশ্ন : যে দলটি নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আপনি মনে করছেন তারা কি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে?
উত্তর : হ্যা, আমি মনে করছি এনডিপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।
প্রশ্ন : আপনার কেন মনে হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে পরাজিত হবে? অথবা কেন মনে করছেন তারাই পুননির্বাচিত হবে?
উত্তর : বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আসন্ন নির্বাচনে পরাজিত হবে এই কারণে যে তারা অতিমাত্রায় রক্ষণশীল এবং ইমিগ্রেশন, এমপ্লয়মেন্ট ও ফরেইন পলিসির ক্ষেত্রেও অতিমাত্রায় রক্ষণশীল আচরণ করে আসছে। তারা ইমিগ্রেন্টদের জন্য নতুন চাকরী সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং স্কিল্ড ক্যাটাগরীতে যারা কানাডায় এসেছেন ইমিগ্রেন্ট হয়ে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রশ্ন : বেশীরভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক বা সমর্থন কোন দিকে বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে? কারণটা কি?
উত্তর : প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঝোঁক বা সমর্থন লিবারেল পার্টির দিকেই বলে আমার কাছে মনে হয়। কারণ এই দলের উদার নীতি ও আদর্শ বাঙ্গালীদের বিশ্বাস ও নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়াও বাঙ্গালীরা মনে করেন লিবারেল পার্টি একটি ইমিগ্রেন্টবান্ধব দল।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং এ কে জয়ী হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন? কেন মনে করছেন?
উত্তর : বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং থেকে এনডিপি প্রার্থী ম্যাথিউ ক্যালওয়ে জয়ী হবেন বলে আমি মনে করছি। কারণ, ম্যাথিউ এমপি থাকা অবস্থায় এলাকাবাসীর জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তার ব্যবহারও বন্ধুসুলভ।
প্রশ্ন : বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ কে জয় হবে বলে মনে করছেন? কেন করছেন? উত্তর : স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং থেকে লিবারেল পার্টির প্রার্থী বিল ব্লেয়ার জয়ী হবেন বলে আমি মনে করছি। সাবেক পুলিশ প্রধান হওয়াতে তিনি একজন হেভী ওয়েট প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন এই রাইডিং এ। এই রাইডিং এর শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটির ভোট ছাড়াও সাউথ এশিয়ান কমিউনিটির ভোটও পাবেন বিল ব্লেয়ার লিবারেল পার্টির প্রার্থী হওয়াতে। তবে এনডিপি’র প্রার্থী ডেন হ্যারিসেরও ভাল সমর্থণ রয়েছে এই রাইডিং এ।