কানাডিয়ান ডলারের মূল্যহ্রাসের কারনে চলতি বছর কানাডায় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য আরো বৃদ্ধি পাবে

ভোক্তাদেরকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে

জুন ৯, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ: কানাডিয়ান ডলারের অব্যাহত মূল্যহ্রাসের কারনে গত বছর অধিকাংশ খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। সাধারণ ক্রেতাদের কাছে এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি ছিল একটি আলোচ্য বিষয়। কিন্তু নতুন বছরে এসেও কোন শুভলক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কানাডার বৃহৎ গ্রোসারী স্টোরসমূহের নির্বাহীগণ হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলছেন, শীঘ্রই মূল্যবৃদ্ধির এই যাঁতাকল থেকে ক্রেতারা মুক্তি পাচ্ছেন না। বাজার দরের গবেষকগণও বলে আসছেন, ক্রেতাদেরকে অধিক মূল্যেই খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে যেতে হবে আগামী মাসগুলোতে।

এদিকে টরন্টোতে বাংলাদেশী গ্রোসারীর মালিকগণও শাক-সব্জী ও ফলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চিন্তিত। কারণ এর প্রভাব এসে পড়েছে তাদের উপরও। তারা বলেন, সাম্প্রতিক কালের এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রোসারীর মালিকগণ। কারণ, ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেলে তার প্রথম শিকার হন গ্রোসারীর মালিকগণ।

গুয়েল্ফ ইউনিভারসিটির ফুড ইনস্টিটিউট এর তথ্য মতে দেখা যায় গত বছর কানাডিয়ান ক্রেতারা পরিবারপ্রতি গড়ে ৩২৫ ডলার বেশী ব্যয় করেছে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে। ২০১৬ সালে তার সাথে আরো যোগ হবে ৩৪৫ ডলার। অর্থাৎ আরো মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে এবং পরিবারপ্রতি খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ের জন্য বাড়তি খরচ হবে ৬৭০ ডলার। সূত্র: কানাডিয়ান প্রেস।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় কানাডায় যে সকল শাক-সব্জি ও ফল পাওয়া যায় গ্রোসারী স্টোরগুলোতে তার শতকরা প্রায় ৮১ ভাগই অন্য দেশ থেকে আমদানী করা। ফলে কানাডিয়ান ডলারের মান কমে যাওয়ায় তার সাথে পাল্লা দিয়ে এই শাক-সব্জি ও ফলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে । চলতি সালে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে পারে শতকরা ৪ থেকে ৪.৫ ভাগ।

বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোর সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যে পণ্যগুলো রিসেন্টলি এসেছে সেই পণ্যগুলোরও মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ২০%।

গুয়েল্ফ ইউনিভারসিটির অধ্যাপক সিভেয়ান সার্লিবোয়া বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এর অর্থ হলো কানাডিয়ার পরিবারগুলোকে আরো বেশী অর্থ ব্যয় করতে হবে এই শাক-সব্জী ও ফল ক্রয়ের জন্য এবং এ ক্ষেত্রে বিকল্প তেমন নেই।

কানাডায় শুধু যে শাক-সব্জী ও ফলের মূল্যই বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়। এই মূল্যবৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে মাছ মাংশের বাজারেও। গত বছর মাংসের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছিল শতকরা ৫ ভাগ। চলতি বছর তা আরো বৃদ্ধি পাবে। আনুমানিক ৪.৫%। মাছ এবং সী ফুড এর মূল্য বৃদ্ধি পাবে শতকরা ৩ ভাগ এবং ডেইরী প্রডাক্ট ও ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পাবে শতকরা ২ ভাগ। শস্যদানার মূল্যও বৃদ্ধি পাবে শতকরা ২ ভাগ।

বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সেখানেও মাছ ও মাংশের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জানান, ডলারের মান কমে যাওয়ায় কানাডার বাজার থেকে আমেরিকায় মাংশের রফতানী বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কানাডায় মাংশের ঘাটতি দেখা দিয়েছে কিছুটা যে কারণে মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে কিছুটা। আর মাছও যেহেতু আমদানী করতে হয় সে কারণে তার মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে কিছুটা।

লাভল কোম্পানী লি: এর প্রেসিডেন্ট গ্যালেন ওয়েস্টন সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক কনফারেন্স কলে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির ভবিষ্যতবানী করা কঠিন।

মেট্রো ইনকর্পোরেটের প্রেসিডেন্ট এরিখ লা ফ্লেস বিনিয়োগকারীদের প্রতি সংকেত দিয়ে বলেন, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবটা অবসম্ভাবীরূপে গিয়ে পড়বে ভোক্তাদের উপর।

এদিকে কানাডায় শাক-সব্জী ও ফলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে মুদ্রাষ্ফীতিও ঘটছে। স্ট্যাটিসটিসক কানাডার তথ্যে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ১.৬% এ।

স্ট্যাটিসটিসক কানাডার তথ্যে আরো দেখা যায় গত ডিসেম্বর মাসে ফলের মূল্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.২%। একই সময়ে শাক-সব্জীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৩%। বিভিন্ন আইটেমের মধ্যে ফুল কপি ও লেটুসের মূল্যবৃদ্ধি ছিল চোখে পড়ার মত।

কানাডিয়ানরা যে শুধু শাক-সব্জী ও ফলের জন্য অধিক অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন তা নয়। স্ট্যাটিসটিসক কানাডার রিপোর্টে বলা হয়, হোম এন্ড মর্টগেজ ইন্সুরেন্স, অটোমোবাইলস এন্ড ইলেক্ট্রিসিটি প্রভৃতি খাতেও গত এক বছর আগে যা ব্যয় করতেন তা থেকে যথেষ্ট পরিমানে বেশী অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে এখন।

ন্যাশনাল ব্যাংক এর সিনিয়র ইকনমিস্ট ম্যাথিও আরসেনাউ’র মতে কানাডার ডলারের মান পড়ে যাওয়ার কারনে ভোক্তাদেরকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

তবে বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোর মালিকরা জানান, কানাডিয়ান ডলারের মান কমে যাওয়ায় বাজারে যে সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে তার পুরো চাপটা আমরা কাস্টমারদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমরা আমাদের প্রফিট কম রেখে মূল্য বৃদ্ধির চাপটি গ্রাহকদের সঙ্গে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি দোকানের অপচয় ও বিভিন্ন খরচ কমিয়ে ও প্রফিট কম রেখে জিনিষপত্রের মূল্য ধরা ছোঁয়ার মধ্যে রাখতে যাতে করে কাস্টমার ধরে রাখা যায়।

সাম্প্রতিককালের এই মূল্যবৃদ্ধি কানাডার কোন একটি নির্দিষ্ট প্রভিন্স বা এলকাজুড়ে হয়নি। স্ট্যাটিসটিসক কানাডার তথ্য মতে দেখা যায়, এটি কানাডার সব এলাকাতেই ঘটেছে।

মূল্য বৃদ্ধির মোকাবেলায় ভোক্তাদের করনীয় :

ডলারের মান পড়ে যাওয়া বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অথবা অন্য যে কোন কারণে একটি দেশে সাময়িকভাবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। কখনো কখনো এই অবস্থা বিরাজ করতে পারে দীর্ঘসময় ধরে। কানাডার বর্তমান এই অবস্থা দীর্ঘসময় ধরেই বিরাজ করছে এবং এই অবস্থা আরো অনেকদিন ধরে চলতে পারে এমন ভবিষ্যতবাণীই করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় ভোক্তাদের কি করণীয়?

বাজারে মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা এককভাবে ভোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটির সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে অনেক বিষয় এবং অনেক মহল। তবে ভোক্তারা যা করতে পারেন তা হলো- মূল্য বর্ধিত হয়েছে এমন সব পণ্যের বিকল্প খুঁজে বের করা।

উল্লেখ্য যে, চলতি বছরকে জাতি সংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব দ্যা পলসেস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। পলসেস হলো বিভিন্ন প্রকার ডাল,কলাই, ছোলা, মটরশুটি ইত্যাদি। আর এগুলো প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত হয় কানাডায়। ডলারের মূল্য কমে গেলেও এ পন্যগুলোর মূল্য বাড়েনি। মূল্য বাড়েনি আরো বেশ কিছু স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যেরও।

উইনিপেগের বাসিন্দা হোম ইকনমিস্ট গেটি স্টুয়ার্ড এর পরামর্শ হলো, যারা আমদানীকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অস্বস্তিতে আছেন তারা বিকল্প হিসাবে এই ডালজাত পণ্য ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিনের রেসিপিতে। তিনি বলেন, এই ডালজাত পণ্য ব্যবহারের পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। এগুলো সাশ্রয়ী মূল্যের, পুষ্টিকর, প্রোটিনের জন্য খুব ভাল উৎস এবং পরিবেশবান্ধবও।

স্টুয়ার্ড বলেন, ভোক্তারা খাদ্য অপচয় রোধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। দেখা গেছে খাদ্য অপচয়ের কারণে যে ক্ষতি হয় সেটি বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির চেয়েও অনেক বেশী প্রভাব বিস্তার করে।

গত বছর স্ট্যাটিসটিকস কানাডা ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য উপাত্ত ঘেটে কানাডার ফুড এন্ড বেভারেজ এডভোকেসী গ্রুপ ‘প্রভিশন কোয়ালিশন’ একটি প্রতিবেদন তৈরী করে। ঐ প্রতিবেদনে দেখা যায়- কানাডার পরিবারগুলো গড়ে প্রতিবছর ১৫০০ ডলারের খাদ্য অপচয় করে থাকে। স্টুয়ার্ড বলেন, আমরা খাদ্য অপচয় করে থাকি কারণ আমরা ক্রয়কৃত খাবার ঠিকমত বা সময়মত ব্যবহার করি না। ফ্রিজে পড়ে থেকে তা অনেকসময় নষ্ট হয়। আমরা অনেক সময় ভুলেও যাই যে ফ্রিজে নির্দিষ্ট একটি খাবার রয়েছে। আমরা অনেকে বেঁচে যাওয়া খাবার খাই না। অনেক সময় ফ্রিজে রাখা খাবারের বেস্ট বিফোর ডেট পার হয়ে যায় ঠিকমত নজর রাখা হয় না বলে। পরে সেটি ফেলে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা যদি একটু সচেতন হই  বা একটু যদি যত্মবান হই তবে আমাদের দৈনন্দিন বাজার খরচ অনেকটাই কমে আসতে পারে।

হোম ইকনমিস্ট গেটি স্টুয়ার্ড এর আরো কিছু পরামর্শ হলো :

শীতের সময় স্ট্রবেরী না কিনে অন্য ফল কিনুন যেমন পিয়ার্স, কমলা বা আঙ্গুর। শীতে স্ট্রবেরীর মূল্য বেশী থাকে এবং কোয়ালিটি বা গুণমানও থাকে নিন্ম পর্যায়ে।

ফ্রোজেন শাক-সব্জী ক্রয় করা যেতে পারে যখন বছরের কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন একটি নির্দিষ্ট পণ্যের বাজার দর চড়া থাকে।

রেসিপিতে নতুন নতুন শাক-সব্জি ব্যবহার করে দেখুন। কানাডায় আমরা অনেক শাক-সব্জী ব্যবহার করি না সেগুলো সম্পর্কে কিছু জানি না বলে। বছরের যে সময়টাতে ঐ পণ্যগুলোর মূল্য কম থাকে তখন সেগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন। – সূত্র : দ্যা কানাডিয়ান প্রেস।

প্রফিট মার্জিন কমিয়ে পণ্যের মূল্য কাস্টমারদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি : রিয়াজ আহমেদ

রিয়াজ আহমেদ

ইউএস ডলারের তুলনায় কানাডিয়ান ডলারের মান কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। আর এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোতেও যেমনটা পড়েছে অন্যান্য এথনিক এবং মেইনস্ট্রিম গ্রোসারীগুলোতেও। জানালেন তাজমহল ফুডস এর মালিক পক্ষ রিয়াজ আহমেদ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বেশীরভাগ খাদ্যদ্রব্য আসে বাইরে থেকে। যে দেশগুলো থেকে আসে তার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও সাউথ আমেরিকা। বাংলাদেশ থেকেও আসে কিছু কিছু পণ্য। আর আমদানীকৃত এই সব পণ্যেরই মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে কারণ এগুলো ইউএস ডলারে ক্রয় করতে হয়। যেহেতু ইউএস ডলারের তুলনায় কানাডিয়ান ডলারের মান অনেক কমে গেছে তাই এর সরাসরি প্রভাবটা পড়েছে আমদানীকৃত এই শাক-সব্জী ও ফলের উপর। তবে চাউলের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেনি। মূলত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে যে পণ্যগুলো ডেইলি বেসিসে কনজুম করা হয় সে পণ্যগুলোর। যেমন শাক-সব্জী, ফল ইত্যাদি। বাংলাদেশ থেকে যে পণ্যগুলো রিসেন্টলি এসেছে সেই পণ্যগুলোরও মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ২০%।

সাম্প্রতিক কালের এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রোসারীর মালিকগণ। ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেলে তার প্রথম শিকার হন গ্রোসারীর মালিকগণ। ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেলে তাদেরকে মোটিভেট করা কঠিন। কারণ তাদের আয় বৃদ্ধি পায়নি কিন্তু ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে জিনিষপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। এর সাথে আরো যোগ হয়েছে হাইড্রোর মূল্যবৃদ্ধি। প্রপারটি টেক্স, ইন্সুরেন্স এবং অন্যান্য সেবারও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ১০ থেকে ১৫ পারসেন্ট। আর এটি হয়ে দাড়িয়েছে মরার উপর খাড়ার ঘা এর মতো।

আর আমরা গ্রোসারীর মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বেশী কারণ আমাদের কাস্টমার বা গ্রাহক সবাই ইমিগ্রেন্ট। এই ইমিগ্রেন্ট সম্প্রদায়ের লোকদের আয় বাড়েনি, উল্টো তাদের ক্রম ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাদের অনেকেই দিনে দিনে ক্রেডিট নির্ভর হয়ে পড়ছেন।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে আমাদেরকে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়েছে। যেমন আগে যেখানে ৫ জন কর্মী দিয়ে কাজ চালানো হতো, এখন সেখানে ২ জন দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর যেখানে এক কার্টুন মালের আমদানী মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২/৩ ডলার সেখানে আমরা দোকানে সেটির মূল্য বাড়াইনি। তবে যেখানে আমদানী মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সেখানে আমরা বাধ্য হয়েছি রিটেইল প্রাইজ কিছুটা বৃদ্ধি করতে। এভাবে আমাদের প্রফিট মার্জিন কমিয়ে পণ্যের মূল্য কাস্টমারদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি যতদুর সম্ভব। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি দোকানের খরচ কমিয়ে ও প্রফিট কম রেখে জিনিষপত্রের মূল্য ধরা ছোঁয়ার মধ্যে রাখতে যাতে করে কাস্টমার ধরে রাখা যায়। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে। ফলে আমাদের প্রফিট মার্জিন কমে গেছে। আমার ধারণা এভাবে চলতে থাকলে এ বছর অনেক স্মল বিজনেজ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এভাবে সারভাইভ করা সম্ভব নয়।

Abdul Kader Himuমোহাম্মদ আব্দুল কাদের হিমু

মূল্যবৃদ্ধির পুরো চাপটা কনজুমারদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না : মোহাম্মদ আব্দুল কাদের  হিমু

আব্দুল কাদের  হিমু

মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব মোটামুটি পুরোটাই পড়েছে বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলোর উপর। কারণ প্রায় সবকিছুইতো এখানে আমাদানী করতে হয়। আর আমাদানী করতে হয় ইউ এস ডলারের মাধ্যমে। আর যেহেতু ইউএস ডলারের তুলনায় কানাডিয়ান ডলারের মান অনেক কমে গেছে তাই এর প্রভাবটা স্বাভাবিকভাবেই পড়েছে আমাদের উপর। তবে আমরা মূল্যবৃদ্ধির পুরো চাপটা কনজুমারদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না, আমাদের প্রফিট কমিয়ে দিয়ে এই চাপটা ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছি। কনজুমারদের দিকটি বিবেচনা করেই আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ কথাগুলো বলেন সরকার ফুডস এর পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল কাদের (হিমু)।

তিনি আরো বলেন, আমরা সরাসরি আমেরিকা বা সাউথ আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানী করিনা। স্থানীয় বিভিন্ন আদানীকারকদের মাধ্যমে আমরা এগুলো পেয়ে থাকি। তবে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমরা সরাসরি আমদানী করে থাকি।

শাক-সব্জী ও ফলের পাশাপাশি মাংসের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে কানাডায় যদিও এটি আমদানী করতে হয় না। কারণটা হলো, কানাডিয়ান ডলারের মান কমে যাওয়ায় আমেরিকায় মাংসের রফতানী বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। অর্থাৎ আমেরিকানরা কানাডা থেকে সস্তায় মাংস কিনতে পারছে এখন। যার ফলে কানাডার স্থানীয় মার্কেটে মাংসের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং এই ঘাটতির কারণে স্থানীয় বাজারে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মাংস ছাড়া অন্যান্য কিছু প্রোডাক্টেরও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে আমেরিকায় বেশী মাত্রায় রফতানী হওয়াতে। তবে আমরা শাক-সব্জী ও ফলের মতো মাংসের মূল্যও কমিয়ে রাখার চেষ্টা করছি কনজুমারদের দিকটি বিবেচনা করে। স্থানীয় বাজারে মাংসের মূল্য যদি ২০% বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তবে  আমরা সেক্ষেত্রে ১০% কমে তা বিক্রি করার চেষ্টা করছি আমাদের প্রফিট কম রেখে। কারণ আমাদেরকেও বেঁচে থাকতে হবে আবার  গ্রাহকও ধরে রাখতে হবে। দুই দিকই ব্যালেন্স করে চলতে হচ্ছে আমাদেরকে।

তবে কাস্টমারদের অনেকেই মূল্যবৃদ্ধির এই বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন। আবার অনেকে হয়তো জানেনও না বাজারে এখন কি অবস্থা চলছে বা কি কারনে জিনিষপত্রে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যারা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তাদেরকে আমরা বাস্তব অবস্থাটা ব্যাখ্যা করি। তাদেরকে এটাও বলি যে, কানাডিয়ান ডলারের মান কমে যাওয়ায় বাজারে যে সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে তার পুরো চাপটা আমরা কাস্টমারদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমরা আমাদের প্রফিট কম রেখে মূল্য বৃদ্ধির চাপটি শেয়ার করার চেষ্টা করছি। আর যারা বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করেন না। কারণ তারা জানেন যে এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকেও মূল্যবৃদ্ধি করতে হচ্ছে। আমাদের কোন বিকল্প নেই।

তবে এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিক্রি কিছুটা কমেছে। কারণ কনজুমারদের আয় তো বাড়েনি। সে কারণে অনেকে হয়তো আগে যেখানে কোন একটি আইটেম ৪ পাউন্ড কিনতেন এখন সেখানে হয়তো ২ বা ৩ পাউন্ড কিনছেন। এরকম অনেক আইটেমের ক্ষেত্রেই কনজুমারদের এই আচরণ লক্ষ করা গেছে।

মূল্যবৃদ্ধি মোকাবেলায় আমরা যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছি তার মধ্যে আছে অপচয় কামানোর চেষ্টা করা এবং লেবার কস্ট কমানো।