এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি ও চাকুরীদাতা মূল কোম্পানীগুলোর মধ্যে যোগসাজস

প্রতিনিয়ত শোষণের শিকার হচ্ছেন অস্থায়ী কর্মীরা

জুন ৯, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : এঞ্জেল রেইয়েজ একজন ইমিগ্রেন্ট। বয়স ৬১। কাজ করেন টরন্টোর একটি গার্বেজ রিসাইক্লিং প্লান্টে। প্রতিদিন ভোর ৩টায় শুরু হয় তার কাজ। সপ্তাহে ৫ দিন চলে এই ভাবে। এই রুটিন চলছে গত ৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে। ইউনিভারসিটি শেষ করা এই এল সালভাডরিয়ান ইমিগ্রেন্ট রিসাইক্লিং প্লান্টের এই কাজ পেয়েছিলেন একটি জব এজেন্সির মাধ্যমে।

*  পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে এখনো তিনি অস্থায়ী কর্মী।

* পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে এখনো তিনি অন্টারিও’র নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতনেই কাজ করছেন। একবারও বেতন বৃদ্ধি হয়নি।

* পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে এখনো তিনি তার সহকর্মীদের (যারা স্থায়ী) চেয়ে কম বেতনে কাজ করেন একই কাজ করে।

* পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে এখনো তিনি কোন জব বেনিফিট পান না।

* পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে এখনো তার নিয়োগকর্তা প্রয়োজন বোধ করছেন না তাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার।

যদি নরকের কোন অস্তিত্ব থাকে তবে এই কর্মস্থলটিই হচ্ছে সেই নরক। বলেছেন এঞ্জেল রেইয়েজ। খবর টরস্টার নিউজ সার্ভিসের।

তিন সন্তানের জনক এঞ্জেল কানাডায় এসেছেন ১৯৯৩ সালে। এল সালভাডরে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি অপহরণের শিকার হয়েছিলেন এবং তাকে জেলও খাটতে হয়েছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস –  কানাডার মত একটি দেশে এসে এঞ্জেল রেইয়েজ আজ নিজেই দয়ামায়াহীন শোষণের শিকার হচ্ছেন দীর্ঘ সময় ধরে। টরস্টার নিউজ সার্ভিসের খবরে আরো বলা হয়, অন্টারিও’র দীর্ঘ দিনের পুরানো গুণে ধরা এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এ্যাক্ট (যেটি বর্তমানে রিভিও করা হচ্ছে) এ বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই যে একজন নিয়োগকর্তা কতদিন ধরে একজন অস্থায়ী কর্মীকে অস্থায়ীভাবেই রাখতে পারবেন। অর্থাৎ চাইলে একজন নিয়োগকর্তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য একজন অস্থায়ী কর্মীকে অস্থায়ী হিসেবেই রাখতে পারেন। বর্তমান আইনে নিয়োগকর্তা বাধ্য নন একজন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী কর্মীর সমান বেতন দিতে যদিও তারা একই পরিমান বা একই মাত্রার কাজ করে থাকেন। এমনকি সমমানের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলেও। অন্টারিওতে নিয়োগকর্তাদের এতই ক্ষমতা বা এতই তাদের সৌভাগ্য যে তারা ইচ্ছে করলে তাদের গোটা প্লান্টের সব কর্মীদেরকেই অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।

এরকম একটি নিয়োগকর্তা বান্ধব আইন যদি থাকে কোন দেশে বা সেই দেশের কোন প্রভিন্সে তবে নিয়োগকর্তারা কেন স্বেচ্ছাচারী হবেন না?  টরন্টোর একটি শ্রমিক অধিকার সংগঠন “ওয়ার্কার্স একশন সেন্টার” এর প্রধান ডিনা লেড বলেন, নিয়োগকর্তারা যদি দেখেন কোন কর্মীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিলে তাকে কোন বেনিফিট দিতে হবে না, যদি দেখেন অস্থায়ী কর্মীকে কোন পেনশন দিতে হবে না, যদি দেখেন অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিলে কম বেতনে কাজ করানো যাবে তবে কেন তারা মহানুভবতা দেখাতে যাবেন?

ডিনা লেড এর মতে অস্থায়ী কর্মীদের ব্যাপারে কারো কোন সম্মানবোধ নেই, নেই মর্যাদাবোধ। কেউ কোন গুরুত্ব দেন না এই অস্থায়ী কর্মীরা কারা এবং কর্মস্থলে তাদের অবদান কি। অস্থায়ী কর্মীরা একেবারেই যেন অদৃশ্য কোন কিছু।

টরন্টোতে অস্থায়ী কর্মীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে অস্থায়ী কর্মীদের সংখ্যা স্থায়ী কর্মীদের সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এই অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বরাবরই স্থায়ী কর্মীদের চেয়ে অনেক কম থেকে যাচ্ছে।

গত প্রায় এক দশকে টরন্টোতে অস্থায়ী কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩%। স্ট্যাটিসটিক্স  কানাডার হিসেবে দেখা যায় ২০০৪ সালে টরন্টোতে অস্থায়ী কর্মী ছিল ২৫৬,০০০ জন। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা এসে দাড়ায় ৩৪০,০০০ জনে। ম্যানুফেকচারিং,

ট্রান্সপোর্টেশন ও হেলথ সেক্টরে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশী। অন্যদিকে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা টরন্টোতে বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১২%।

অস্থায়ী কর্মীরা যে শুধু জব এজেন্সি বা এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমেই কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তা কিন্তু নয়। সরাসরি কোম্পানীর মালিকেরাও অস্থায়ী কর্মীদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে শর্ত ঐ একই থাকে। অর্থাৎ কোন বেনিফিট, পেনশন বা স্থায়ী কর্মীদের সমান বেতন ইত্যাদি কোনটাই দেওয়া হবে না।

অন্টারিওতে অস্থায়ী কর্মীরা একদিকে যখন শোষণের শিকার হচ্ছেন তখন অন্যদিকে এ বিষয়ে আইনগুলো শ্রমিকবান্ধব নয় বলে এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলোর সংখ্যাও বেড়ে উঠছে বেশ উল্লেখযোগ্য হারে। তাদের বাৎসরিক আয়ও অভাবনীয়। গত ২০১২ সালে অন্টারিও’র এম্পপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলো আয় করে ৫.৭ বিলিয়ন ডলার! এই আয়ের কতটা অংশ বৈধ?

অন্টারিও’র বর্তমান আইনে হয়তো এটি বৈধ। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা একটু খতিয়ে দেখলে বুঝা যাবে এই বৈধতার আড়ালে কি পরিমান অবৈধ কাজ করা হচ্ছে। অন্টারিও এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এ্যাক্ট অনুযায়ী এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলো বাধ্য নয় এ তথ্য প্রকাশ করতে যে, তারা প্রতিটি কর্মী বাবদ নিয়োগদাতা মূল প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে কি পরিমান অর্থ নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মূল প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি কর্মীর বেতন বাবদ যে অর্থ নেওয়া হচ্ছে, তার অর্ধেকের চেয়েও কম বেতন দেওয়া হচ্ছে ঐ কর্মীদেরকে।

৬৬ বছর বয়সী টরন্টোর অধিবাসী  শকম্যান ডি জিলভা জানান তিনি এই এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র পজিশনেও কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমি একবার খুবই আশ্চর্য ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলাম এই জেনে যে, মূল কোম্পানী থেকে আমার নামে যে বেতন নেওয়া হচ্ছে তার অর্ধেকের চেয়েও কম বেতন দেওয়া হচ্ছে আমাকে!

কোন কোন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি অবশ্য নিয়োগদাতা মূল কোম্পনীকে সাহায্য করে তাদের চাহিদা মোতাবেক উচু পদের স্পেশালাইজড ওয়ার্কার খুঁজে দিতে। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মূল নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে সস্তায় ও ঝামেলামুক্ত কর্মী যোগান দিতে। এতে করে কম বেতন দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও দিতে হবে না বা দিতে হলেও নামমাত্র দিতে হবে। এ কথা জানান  টরন্টোর শ্রমিক অধিকার সংগঠন “ওয়ার্কার্স একশন সেন্টার” এর প্রধান ডিনা লেড।

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার এক হিসেবে দেখা যায় এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে টরন্টোতে মধ্য পর্যায়ের আয় করেন এমন একজন অস্থায়ী কর্মীর বেতন ঘন্টায় ১৫ ডলারের মত। অন্যদিকে সমান অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নিয়ে একজন স্থায়ী কর্মী বেতন পাচ্ছেন ঘন্টায় ২২.৫০ ডলার। এই হিসেবে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর মধ্যে বেতন বৈষম্য দাড়ায় ৩৩%। নন-ইউনিজানইজড কর্মপরিবেশে বেতনের এই বৈষম্য আরো বেশী।

অন্টারিও অবশ্য আইনের মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু উন্নয়ন ঘটিয়েছে অস্থায়ী কর্মীদের পক্ষে। যেমন, পাবলিক হলিডে’র বেতন পাবার অধিকার এবং এক সপ্তাহের টার্মিনেশন নোটিশ পাবার অধিকার।

কিন্তু এ অধিকার পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে কি তফাৎ? অন্য কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশের সঙ্গে বিষয়টি তুলনা করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ঐ দেশগুলো অস্থায়ী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কানাডার তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে আছে। উদাহরণ হিসেবে যুক্ত রাজ্যের কথাই বলা যায়। সেখানে অস্থায়ী কর্মীরা স্থায়ী কর্মীদের সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রাখেন যদি তারা একই পদে কাজ করেন। অবশ্য অস্থায়ী কর্মীকে তিন মাস প্রবেশন পিরিয়ড পার করতে হয়। কিন্তু কানাডার পরিস্থিতি? এই প্রতিবেদনের শুরুতে এল সালভাডর থেকে আসা যে ব্যক্তিটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি পাঁচ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করার পরও সমান বেতন তো দূরের কথা অস্থায়ী অবস্থা থেকে স্থায়ী অবস্থায়ই যেতে পারেননি।

ইটালীতে অবশ্য তিন বছর লেগে যায় একজন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী হতে। তবে তিন বছর পার হলে ঐ অস্থায়ী কর্মী স্বয়ংক্রিয়ভাবেই স্থায়ী হয়ে যায়ন। অর্থাৎ এমপ্লয়ার বাধ্য থাকেন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করে নিতে।

অস্ট্রেলিয়ায় একজন অস্থায়ী কর্মীকে তার বেতনের উপর ১৫ থেকে ২৫% প্রিমিয়াম দিতে বাধ্য নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। কারণ, অস্থায়ী কর্মীরা কোন রকম বেনিফিট পান না। যদিও পান তা একেবারেই কদাচিৎ।

২০১৩ সালে টরন্টোর ‘ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার্ক এন্ড হেলথ’ এক জরীপ চালায় স্বল্প বেতনের স্থানীয় অস্থায়ী কর্মীদের উপর যারা বিভিন্ন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ঐ জরীপে বিভিন্ন নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদেরও মতামত নেয়া হয়। জরীপের ফলাফলে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি গুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ও অস্থায়ী কর্মীদের বিষয়ে অসাবধানতার কারণে কর্মস্থলে অস্থায়ী কর্মীদের নিরাপত্তা স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় বিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী।

অস্থায়ী কর্মীদের অনেকেই ‘ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার্ক এন্ড হেলথ’ পরিচালিত জরীপের প্রধান গবেষক এ্যলেন ম্যাকিচেন’কে জানান, তারা তাদের কর্মস্থলের মন্দ কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে অভিযোগ তুলতেও ভয় পান। কারণ, কর্মস্থলে তাদের অবস্থান অস্থায়ী বিধায় সবসময়ে তা নড়বড়ে। কোনা বিষয়ে অভিযোগ তুললে তারা চাকরী হারাতে পারেন যে কোন মুহূর্তে।

অস্থায়ী কর্মীদের আরো বিপদ হলো, ‘ওয়ার্কপ্লেস সেফটি এন্ড ইন্সুরেন্স এ্যাক্ট’ এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিকেই অস্থায়ী কর্মীদের একমাত্র নিয়োগদাতা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে মূল নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ যেখানে অস্থায়ী কর্মীরা শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে কাজ করেন সেই প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে সবসময় যে কোন দায়-দায়িত্ব থেকে নিজেদেরকে মুুক্ত রাখার সুযোগ পায় যদি কর্মস্থলে কোন দূর্ঘটনা ঘটে এবং সেই দুর্ঘটনায় কোন অস্থায়ী কর্মী আহত হন।

“ওয়ার্কার্স একশন সেন্টার” এর প্রধান ডিনা লেড বলেন, এই অস্থায়ী কর্মীদের ভাল-মন্দ দেখার কেউ নেই। তিনি আরো বলেন, “অস্থায়ী কর্মীদের জন্য এখানে রয়েছে একটি ‘নিখুঁত’ কর্মপরিবেশ যেখানে তারা তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটাবে, নিরাপত্তাহীনাতায় ভুগবে এবং কম বেতন পাবে।”

‘এসোসিয়েশন অব কানাডিয়ান সার্চ, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড স্টাফিং সার্ভিসেস’ (যে সংস্থাটি এক হাজারেরও বেশী এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রতিনিধিত্ব করে) এর গভর্নমেন্ট রিলেশন্স ডিরেক্টর মেরী মেকিনেন্স অবশ্য বলেন ভিন্ন কথা। তার মতে এই সংস্থার সদস্যরা ইন্ডস্ট্রিতে সেরা সম্মানজনক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেব বিবেচিত। তারা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কোড অব ইথিকস মেনে চলে। তিনি আরো বলেন, সরকার অস্থায়ী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা সমর্থন করে সংস্থাটি। তবে তিনি একথাও জানান যে সরকার অস্থায়ী ও স্থায়ী কর্মীদের বেতন সমতার পদক্ষেপ নিলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

মেরী মেকিনেন্স দাবী করেন তার সংস্থার সিংহভাগ সদস্যই অস্থায়ী কর্মীদেরকে উচ্চ বেতনের কাজে নিয়োজিত করেছে। এই অস্থায়ী কর্মীরা তাদের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা অনুসারে বেতন পেয়ে থাকেন।

এই প্রতিবেদনের শুরুতে যে অস্থায়ী কর্মীটির দুরাবস্থার কথা বলা হয়েছে (রিসাইক্লিং প্লান্টে কর্মরত এঞ্জেল রেইয়েজ) তার প্রসঙ্গটি মেরী মেকিনেন্স সামনে উত্থাপন করা হলে তিনি বলেন, এই ঘটনাটি ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত সিংহভাগ অস্থায়ী কর্মীদের প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি দাবী করেন যদি অতি অল্প সংখ্যক অস্থায়ী কর্মীর অবস্থাও হতো এঞ্জেল রেইয়েজ এর মতো তবে আমাদের মাধ্যমে বর্তমানে কর্মরত প্রায় ৩ লক্ষ অস্থায়ী কর্মী কাজ ছেড়ে দিতেন।

কিন্তু শকম্যান ডি জিলভা যিনি শ্রীলংকা থেকে কানাডায় এসেছেন ১৯৮৯ সালে তিনি বলেন, আমি এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির দ্বারস্থ হয়েছিলাম তখনই যখন স্থায়ী কোন কাজ পাচ্ছিলাম না। আমার ধারনা ছিল এই অস্থায়ী কাজ এক সময় স্থীয় হবে। কিন্তু তা কখনো হয়নি।

৬৬ বছর বয়সী টরন্টোর এই অধিবাসীর কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যিনি এই এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র পজিশনে কাজ করেছেন এবং একবার খুবই আশ্চর্য ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এই জেনে যে, মূল কোম্পানী থেকে তার নামে যে বেতন নেওয়া হতো তার অর্ধেকের চেয়েও কম বেতন দেওয়া হতো তাকে।

উল্লেখ্য যে, অস্থায়ী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও এঞ্জেল

রেইয়েজ এর মতো অনেকেই এখনো নানান দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এই এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে।

প্রস্তাবিত সমাধান:

টরন্টোর শ্রমিক অধিকার সংগঠন “ওয়ার্কার্স একশন সেন্টার” সম্প্রতি কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে অস্থায়ী কর্মীদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য। প্রস্তাবগুলো হলো :

–   সমমানের বা সমদায়িত্বে কর্মরত অস্থায়ী কর্মীদেরকে স্থায়ী কর্মীদের সমান বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি দিতে হবে।

–   অস্থায়ী কর্মীকে জানাতে হবে এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলো মূল কোম্পানী থেকে তার জন্য কত বেতন সংগ্রহ করছে।

–   অস্থায়ী কর্মীকে ৬ মাসের বেশী অস্থায়ী ভাবে রাখা যাবে না। ৬ মাস পার হলে তাকে স্থায়ী করে নিতে হবে।

–   প্রথম ৬ মাসের মধ্যে কোন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করে নিতে হলে মূল কোম্পানীর পক্ষ থেকে এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিকে একটা নির্দিষ্ট অংকের ফি দেওয়ার যে বিধান রয়েছে সেটি বাতিল করতে হবে। –   একটি কোম্পানী এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে শতকরা ২০ জনের বেশী (স্থায়ী কর্মীদের তুলনায়) অস্থায়ী কর্মীকে নিয়োগ দিতে পারবে না।