আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম আমাদের অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলেছে
অক্টোবর ৯, ২০১৫
॥ খুরশিদ আলম ॥
কানাডায় আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুন অভিবাসীরা সাফল্যের প্রতিযোগিতায় ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের সমবয়সী কানাডিয়ানদেরকে। এমনকি বয়সে বড় কানাডিয়ানদেরকেও হার মানাচ্ছে তারা সাফল্যের দৌড়ে! দ্বিতীয় প্রজন্মের এই তরুন অভিবাসীদের মধ্যে আছে বাংলাদেশীরাও।
আমরা যারা প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী, তাদের মধ্যে অনেকেরই মনে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে এই ভেবে যে, কানাডায় এসে আমরা কিছুই করতে পারিনি। ডাক্তারগণ ডাক্তারী পেশায় নেই, ইঞ্জিনিয়ারগণ ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় নেই, কৃষিবিজ্ঞানীগণ কৃষি পেশায় নেই। এরকম আরো বহু পেশাজীবী অভিবাসীগণ তাদের নিজ নিজ পেশায় নেই। হাতে গোনা দুই চারজন ছাড়া বাকী সবাইকে পেশা বদল করে নিন্ম আয়ের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হয়েছে। ফলে এদের অনেকেই রয়েছেন তীব্র মানসিক চাপ ও যন্ত্রনার মধ্যে। সেই সাথে শারীরিক চাপও রয়েছে। যারা এই শারীরিক ও মানসিক চাপকে সামাল দিতে পারছেন না তারা বুড়িয়ে যাচ্ছেন দ্রুত। শরীর ও মনে বাসা বাধছে নানান রোগ।
তবে এত হতাশার মাঝেও আশার আলো দেখাচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম। আমরা যারা নানান কারণ ও নানান স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছি তাদের প্রায় সকলেরই একটি আশার ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। আর সে আশাটি হলো, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে”।
বাংলাদেশ থেকে যারা অভিবাসী হয়ে কানাডায় এসেছেন তাদের সন্তানেরা দেশে দুধভাতের অভাবে ছিল তা বলা যাবে না। তবে অভাব ছিল নিরাপত্তার, অভাব ছিল ভাল পরিবেশের। শিক্ষা জীবন শেষ করে ভাল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবে তারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না। ‘দুধেভাতে’ কথাটি একটি প্রতীকি শব্দ। মূল কথাটি হলো, সন্তানেরা যাতে সুখে শান্তিতে থাকে সন্তানের সুখ কে না চায়? আর সেই চাওয়ার আশা থেকেইতো অধিকাংশ বাংলাদেশীর প্রবাসের জীবন বেছে নেওয়া। যেমন বেছে নিয়েছেন অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরাও।
দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী ছেলে-মেয়েরা কানাডায় সাফল্যের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এ কথাও সত্যি যে তারা শুরু থেকেই পুষ্প বিছানো পথে হাঁটেনি। স্কুল-কলেজে বুলিং (Bullying) এর মোকাবেলা করা, চাকরী ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হওয়া, ঘরে ও বাইরে দুই সংস্কৃতির মোকাবেলা করাসহ আরো কিছু বাধা তাদেরকে অতিক্রম করতে হয়েছে। আর এই সব বাধা অতিক্রম করে তারা আজ সফল প্রজন্ম হয়ে দাড়িয়েছে, মনের দুঃখ গোছাচ্ছে বাবা-মায়ের।
পেশা জীবনে সাফল্য অর্জন করেছে এমন একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এক বাঙ্গালী তরুনের। নাম তার রায়হান কাজীম খন্দকার। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছিল কানাডায়। বাবা অধ্যাপক ডক্টর কে.এ. কাজীম। ছিলেন খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভারসিটির ডিন। মা রীনা গুলশান বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করা। কিন্তু মাঝ বয়সে কানাডায় এসে সব বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে যা হয় তাদের ক্ষেত্রেও তাই হলো। অর্থাৎ কঠিন জীবন সংগ্রাম শুরু হয়ে গেল। এই দম্পত্তিরও প্রবাস জীবন বেছে নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিল সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
তাঁদের সেই স্বপ্ন বিফলে যায়নি। কানাডায় আসার পর ১৫ বছরের মাথায় রায়হান এখন ৬ ফিগার ডলারের বেতনে চাকরী করছে আমেরিকার টেক্সাসে এক্সিকিউটিভ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে। কানাডাতেও সে ভাল বেতনেই চাকরী করতো অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল গভার্নমেন্টের অধীনে। কিন্তু আমেরিকায় আরো ভাল অফার পাওয়াতে সেখানেই চলে যায় সে। রায়হানের মা রীনা গুলশান আমাদের প্রবাসী কন্ঠ ম্যাগাজিনের নিয়মিত কলাম লেখক।
একাডেমিক এচিভমেন্টসহ চাকরী ক্ষেত্রে এরকম সাফল্যের আরো বহু নজীর রয়েছে কানাডায় আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুনদের মধ্যে। আরেক বাঙ্গালী তরুনের নাম এখানে উল্লেখ করা যায় যে ইংরেজীতে প্রথম উপন্যাস লিখেই কানাডায় আলোচনার ঝড় তুলে। টরন্টো স্টার, গ্লোব এন্ড মেইলসহ কানাডার মেইনস্ট্রিমের খ্যাতিমান পত্রিকাগুলোতে তার উপর ছাপা হয় বিভিন্ন প্রতিবেদন। এই তরুনের নাম গালিব ইসলাম।
গালিব ইসলামের জন্ম বাংলাদেশে। ১৯৮১ সালে। এরপরে বাবার হাত ধরে সে পাড়ি জমায় নাইজেরিয়াতে। বাবা সেখানে কাজ করতেন। পরে ’৮৮ সালে গালিবের পরিবার ইমিগ্র্যান্ট হয়ে কানাডায় আসেন। অনেক লেখকের মতো গালিবও শৈশবে স্বপ্ন দেখতো লেখক হওয়ার। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে গালিব টরন্টো ইউনির্ভাসিটিতে এম এ ভর্তি হয় ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিং’ বিভাগে ২০০৪ সালে। গালিবে ভাষ্য, “আমি শুধু একজন লেখকই হতে চাইনি-আমি ভেতর থেকে একটি উপন্যাস লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম। এবং মার্গারেট এটউডকে ভাবতাম আমার ‘মেন্টর’ হিসেবে।” গালিবের লেখা সেই উপন্যাসটির নাম-‘ফায়ার ইন দ্য আননেমবল কান্ট্রি’। এ উপন্যাস সম্পর্কে মার্গারেট এটউডের মন্তব্য, ‘ আমি পান্ডুলিপি দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। তার ভাবনায় মৌলিকতা আছে এবং সে যে একজন প্রতিভাবান লেখক, এই উপন্যাসে তার সুষ্পষ্ট স্বাক্ষর রেখেছে সে।
প্রবাসের এই দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুনদের সাফল্যগাঁথার কথা উঠে এসেছে একটি গবেষণা পত্রেও যেটি বছর দুই আগে প্রকাশিত হয়েছিল স্যোসাল সাইন্স রিসার্স জার্নালে। টরন্টো ইউনিভারসিটির অধ্যাপক জেফরী জি. রিটজ্ ও অধ্যাপক নাওকো হকিংস এবং মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল ইউনিভারসিটির অধ্যাপক হিদার জ্যাং তাদের ঐ গবেষনা পত্রে উল্লেখ করেছেন, কানাডায় মেইনস্ট্রিম জনগোষ্ঠির মধ্যে যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩৯ তাদের বাৎসরিক আয় ৫০ হাজার ডলার। অন্যদিকে চীনা বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুনদের বাৎসরিক আয় ৬৩ হাজার ডলার।
কানাডায় দক্ষিন এশীয় অন্যান্য এথনিক গ্রুপের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সাফল্যও কমবেশী একইরকম। অধ্যাপক তিনজন তাদের গবেষণা পত্রে আরো উল্লেখ করেন যে, চীন এবং দক্ষিণ এশীয় তরুন ছেলে মেয়েদের মধ্যে গ্রাজুয়েশন লাভ করার হারও মেইনস্ট্রিম ছেলে মেয়েদের তুলনায় বেশী।
কেন এমনটি হচ্ছে? আমরা তো জানি কানাডা একটি উন্নত দেশ। এখানকার ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া করার জন্য যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে বহুকাল ধরেই। আমাদের আরো বিশ্বাস, শ্বেতাঙ্গরা সব ক্ষেত্রেই সেরা। কিন্তু সেই সেরাদেরকেও হার মানাচ্ছে অভিবাসী অশ্বেতাঙ্গরা! বিশেষ করে চীন ও দক্ষিণ এশীয় ছেলে-মেয়েরা!
এই চিত্রটি কেবল কানাডার ক্ষেত্রেই যে সত্যি তা নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াতেও দেখা গেছে এই একই চিত্র। ঐ দুটি দেশেও প্রচুর সংখ্যক প্রথম প্রজন্মের চীনা ও দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী বাস করেন। তাদের ছেলে-মেয়েরাও কানাডার অভিবাসী ছেলে-মেয়েদের মত লেখাপড়া ও চাকরীর ক্ষেত্রে মেইনস্ট্রিম ছেলে-মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে আছে। উপরে উল্লেখিত ঐ তিন অধ্যাপকের পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। তাদের গবেষনায় দেখা যায়, উল্লেখিত তিনটি দেশেই এশিয়ান ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা ক্ষেত্রে মেইনস্ট্রিম ছেলে-মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে আছে। অর্থনৈতিক সাফল্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ঐ তিনটি দেশে এশিয়ান ছেলে-মেয়েরা মেইনস্ট্রিম ছেলে-মেয়েদের চেয়ে এগিয়ে আছে।
তাদের গবেষণায় আরো দেখা যায় চাইনীজ ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেইনস্ট্রিম জনগোষ্ঠির তুলনায় চাইনীজ ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার হার ১৫% বেশী। কানাডায় এই হার ২০% এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১৭%।
কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতে মেইনস্ট্রিম জনগোষ্ঠির তুলনায় অন্যান্য এথনিক গ্রুপের ছেলে-মেয়েরা বেশী মাত্রায় ম্যানেজারিয়াল ও প্রফেশনাল জব দখল করে আছে। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে চাইনীজ ও দক্ষিণ এশীয় ছেলে-মেয়েরা বেশী এগিয়ে থাকায় তাদের পেশাগত সাফল্যও বেশী। আবার ঐ তিনটি দেশে যে সকল চাইনীজ ও দক্ষিণ এশীয় ছেলে-মেয়েরা ম্যানেজারিয়াল ও প্রফেশনাল জব করছে তাদের সংখ্যা সমবয়সী মেইনস্ট্রিম ছেলে-মেয়েদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় আফ্রো-ক্যারিবিয়ান কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার হার মেইনস্ট্রিম ছেলে-মেয়েদের সমানই প্রায়। তবে তারা দক্ষ বৃত্তি বা জীবিকার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু এই আফ্রো-ক্যারিবিয়ান তরুনেরা তাদের পূর্বপরুষদের তুলনায় ভাল করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
চীন ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের ছেলে-মেয়েরা কেন সাফল্যের দৌড়ে মেইনস্ট্রিম ছেলে-মেয়েদের তুলনায় এগিয়ে আছে সেই রহস্য লুকিয়ে আছে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের মধ্যেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আছে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রী লংকা, মালদ্বীভস্, নেপাল, ও ভূটান। টরন্টো ইউনিভারসিটির অধ্যাপক জেফরী জি. রিটজ বলেন, “চীন ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে গত দুই বা তিন দশকের মধ্যে আগত অভিবাসীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের ছেলে-মেয়েদের সাফল্যের পিছনে সম্ভবত এটি একটি কারণ হতে পারে। প্রবাসে আসার পর প্রথম প্রজন্মের এই অভিবাসীদেরকে অর্থনৈতিক চাপসহ আরো নানারকমের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু তা সত্বেও এই অভিবাসীরা শিক্ষার কদর ও প্রয়োজনীতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বুঝিয়ে দেন তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে। আর এই কারনেই হয়তো তাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত হয় এবং কর্মক্ষেত্রেও তারা সাফল্য লাভ করে।”
অন্য এক হিসাবে দেখা যায় কানাডায় উচ্চশিক্ষিতের হার অনেক বেশী। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের চেয়েও। কানাডার নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ পোস্ট সেকেন্ডারী স্কুলে ভর্তি হন। আর এদের মধ্যে অভিবাসীদের সংখ্যা বেশী! স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসেব (২০০৯) অনুযায়ী দেখা যায়, ষাটের দশকে আসা অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেয়ার হার কানাডায় জন্ম নেয়া ছেলে-মেয়েদের চেয়ে শতকরা ৬ ভাগ বেশী ছিল। আশির দশকে এসে দেখা গেছে এই হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সময়কার শতকরা ৩২ ভাগ অভিবাসী ছেলে-মেয়ে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতো এবং কানাডায় জন্ম নেয়া ছেলে-মেয়েদের তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল শতকরা ২০ ভাগেরও বেশী। উল্লেখ্য যে, আশির দশকে কানাডায় এশিয় অভিবাসীদের আগমন অনেক বৃদ্ধি পায়। এশিয় অভিবাসীদের কানাডায় আসার যতগুলো কারণ আছে তার মধ্যে তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা একটি অন্যতম কারণ। ২০০৬ সালে কানাডার আদম শুমারীর হিসেবে দেখা গেছে অভিবাসী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শতকরা ৩৬ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী।
সাধারণভাবে দেখা যায়, বাবা-মা উচ্চ শিক্ষিত হলে তাদের ছেলে-মেয়েরাও উচ্চ শিক্ষিত হয়। ব্যতিক্রম যে ঘটেনা তা নয়। ব্যতিক্রমের দু একটি ঘটনা বাদ দিলে দেখা যায় অভিবাসী ছেলে-মেয়েরা অভিবাসী বাবা-মায়ের খুব নজরদারীতে থাকে। কারণ বাবা-মা নতুন একটি দেশে এসে নতুন একটি সংস্কৃতির মধ্যে ছেলে-মেয়েদেরকে সহসাই স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেন না। ফলে অভিবাসী ছেলে-মেয়েদের শৈশব কাটে মোটামুটি নজরদারির মধ্যে। এ কারনে বখে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে অভিবাসী ছেলে-মেয়েদের বেলায়। তাছাড়া নতুন একটি দেশে এসে অভিবাসীদের ছেলে-মেয়েরা দেখে তাদের বাবা-মায়েরা কিরকম অক্লান্ত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এবং এই পরিশ্রম যে তাদেরই জন্য তাদের বাবা-মা করে যাচ্ছেন এই বিষয়টিও তারা উপলব্দি করে। অভিবাসী শিশুদের অনেকেই আবার দেখে তাদের বাবা-মা অক্লান্ত পরিশ্রম করেও স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পায় না। এসব কিছু মিলিয়ে অভিবাসী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এক ধরণের জেদ বা অঙ্গীকার জন্ম নেয়। সেটি আর কিছুই নয়, জীবনে উন্নতি করতে হবে। বাবা মায়ের কষ্ট লাঘব করতে হবে।
প্রবাসে অভিবাসী ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় ভাল করা এবং কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করার পিছনে এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আর তা দেখে অভিভূত এবং আনন্দিত হন অভিবাসী বাবা-মায়েরা।
ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত গড়ে তোলা ছাড়াও আমরা আমাদের নিজেদের পেশায় উন্নতি ও সাফল্য লাভের যে স্বপ্ন নিয়ে একদিন বিদেশে এসেছিলাম সে স্বপ্ন আমাদের অধিকাংশ অভিবাসীর ক্ষেত্রে সফল হয়নি। সেই স্বপ্ন আমাদের অধরাই থেকে গেছে। কিন্তু আমাদের সন্তানেরা আমাদের সেই অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলতে শুরু করেছে। নিজেদেরকে সফল প্রজন্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। এটাইতো আমাদের অনেক বড় পাওয়া।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কন্ঠ