প্রতি ১০ জন কানাডীয় নারীর মধ্যে তিনজন ধর্ষণের শিকার হন

ফেব্রুয়ারী ৭, ২০১৫ : এক নতুন জরীপে দেখা গেছে যে, কানাডায় প্রতি ১০ জন নারীর অন্তত তিনজন ধর্ষণের শিকার হনÑ কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি ‘‘কমিয়ে দেখানো’’ হিসাব।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক এলিজাবেথ শিহাই যিনি যৌন হামলার আইন বিষয়ে পড়ান, তিনি বলেন, ‘‘এধরণের জরিপে যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের প্রকৃত সংখ্যার কাছাকাছিও যেতে পারে বলে আমি মনে করি না।

ফোরাম সার্চ নামের একটি প্রতিষ্ঠান টেলিফোনে নেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ওই জরিপ চালায়। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন বলেছেন যে তিনি যৌন হামলা বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

শিহাই এটিকে ‘‘এখানে যা ঘটছে তার থেকে কমিয়ে দেখানো’’ জরিপ বলে অভিহিত করেন এবং স্টেটিস্টিকস কানাডার ১৯৯৩ সালের একটি জরিপের তথ্য স্মরণ করিয়ে দেন যাতে আভাস দেয়া হয়েছিলো যে, কানাডার অর্ধেক সংখ্যক নারীই তাদের ১৬ বছর বয়স হওয়ার পর অন্তত একবার শারীরিকভাবে হামলা বা যৌন সহিংসতার শিকার হন।

এধরণের জরিপের পদ্ধতিগত সম্ভাব্য সমস্যার কথা উল্লেখ করে শিহাই বলেন, নারীরা হয়তো জরিপের প্রশ্নটাই বুঝতে পারেন না। তিনি বলেন, জরিপে হয়তো প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনি কি যৌন হামলা বা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন?’’ ‘‘এটি কোনও ভালো প্রশ্ন নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার অনেক ধরণের স্তর থাকে…একজন নারীর নিজের মনেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা থাকতে পারে যে, তার ওপর যেটা ঘটেছে সেটি কী ধর্ষণ ছিলো নাকি ছিলো না অথবা সেটি কি যৌন হামলা?”

শিহাই এমন প্রশ্নও তোলেন যে, নারীরা কি জরিপের প্রশ্নে জবাব দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

ফোরাম সার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট লোরনি বোজিনফ নিশ্চিত করেছেন যে, যেসব নারীকে প্রশ্ন করা হয়েছে তাদেরকে একথা বলা হয়নি যে, তাদের এই ফোনালাপ গোপন থাকবে।

টরন্টোর যৌন হামলা বিষয়ক সিভিল লইয়ার এরিন এলিস বলেন, জিয়ান ঘোসেমির ওপর যৌন হামলার অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে সম্প্রতি ফলাও প্রচারের ফলে বিল কসবি এবং লিবারেল দলের এমপিরা আরও বেশি সংখ্যক নারীকে সত্য ঘটনা প্রকাশের জন্য উৎসাহিত করতে পারেনÑ তবে কতদিন তা অব্যহত থাকবে তা নিশ্চিত নয়।

ওই মহিলা আইনজীবী বলেন, ‘‘আপনি যদি এই মুহূর্তে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে তারা হয়তো তাদের বিকল্পগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে এবং এখনই এগিয়ে আসবে যখন অন্যরাও এগিয়ে আসছে।’’ তিনি বলেন, “এধরণের সান্ত¡না যখন থেমে যায় তখনও কি তারা মনে করবে যে তাদের প্রতি সমর্থন রয়েছে?”

জরিপে আভাস দেয়া হয় যে, প্রতি ১০ জন ধর্ষিতা নারীর মধ্যে মাত্র একজন এ বিষয়ে পুলিশে রিপোর্ট করেছেন।

শিহাই বলেন, ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাটিও স্পষ্টতই সমস্যাজনক। সেখানে ডেন্টিস্ট্রির ছাত্ররা তাদের সহপাঠী ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য লিখেছে।

তিনি বলেন, “আমার কাছে এটিই হলো প্রকৃত ব্যারোমিটার যে কানাডায় আমরা কোথায় আছিÑ ওইসব তরুণ যারা উচ্চশিক্ষিত, পেশাদারি স্কুলের চতুর্থ বর্ষে রয়েছে, তারা নারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, অথচ তাদের নারী সহকর্মীদের বিষয়ে এমন সব অবিশ্বাস্যরকম অপমানজনক মন্তব্য লিখতেও স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে।” “এটি আপনাকে দেখিয়ে দেয় যে, পুরুষদের মধ্যে এসব ধারণা কতটা ব্যাপক।” জরিপে ১৬৫৮ জন কানাডীয়র সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে যাদের মধ্যে ৭৯৫ জন নারী। জরিপের ফলাফল কমবেশি ২ শতাংশ সঠিক বলে বিবেচনা করা হয়। টরস্টার নিউজ সার্ভিস।