‘জেহাদ করুন জেহাদীবাদের বিরুদ্ধে’

জানুয়ারী ১, ২০১৫:

মিসিসগা, অন্টারিওÑ পাশ্চাত্য জোটের বিমান হামলা ইরাকে আইএসআইএস-এর তৎপরতা চালানোর সক্ষমতাকে ‘চরমভাবে সীমিত’ করেছে। বহুসংস্কৃতিবাদ বিষয়ক মন্ত্রী জেসন কেনি সপ্তাহান্তের এক সমাবেশে ধর্মীয় সমাজের নেতাদেরকে একথা বলেন। ওই সমাবেশে সন্ত্রাসবাদী গ্রুপগুলোর মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, কানাডা ও মিত্রদের যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণের ফলে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড আল-শাম-এর পক্ষে তাদের ভারী অস্ত্র যেমন ট্যাংক ও কামান ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তারা আর আগের মত প্রকাশ্যে অগ্রসর হতে পারবে না।’’

এই সামরিক অভিযান, যার মধ্যে ইরাকী ও কুর্দী নিরাপত্তা বাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দানও অন্তর্ভুক্ত, দিয়ে আইএসআইএসকে থামানো যাবে না বলে স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এর ফলে অন্তত ইরাকে দাইস-এর (আইএসআইএস-এর আরবী নাম) বিকাশ থামানো গেছে। আর এর ফলে কত প্রাণ যে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে তা আমরা কখনওই জানতে পারবো না।’’ কানাডার প্রগতিশীল মুসলিম সংগঠনগুলোর কোয়ালিশনের আয়োজনে আইএসআইএস-এর মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কিত আলোচনায় মন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন। সমাবেশে ইয়াজিদি, খ্রিষ্টান, শিয়া, আহমদিয়া, ইহুদি, সুন্নী, কুর্দী ও অন্যান্য গ্রুপের ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ও গ্রন্থকার কামরান বোখারী বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের যা করতে হবে তা হলো জেহাদীবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ চালিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, যারা আইন ভঙ্গ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। ‘‘কিন্তু তারা আদর্শকে পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে না। সেখানেই কানাডার মুসলিম কমিউনিটির দায়িত্ব রয়েছে।’’

তিনি বলেন, মূল ধারার মুসলমানদেরকে তাদের মধ্যকার চরমপন্থীদেরকে উদারপন্থায় নিয়ে আসতে হবে। ‘‘শেষ পর্যন্ত আমাদের যা করতে হবে তা হলো জেহাদীবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ চালিয়ে যাওয়া। এটাই আমাদের পথ বা মহাসড়ক। আমরা কীভাবে তাদের কাছে পৌঁছবো সেটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’’

কানাডার আহমদিয়া মুসলিম জামাতের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাল খান মালিক মুসলিম পন্ডিতদের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে বলেন, তার ভাষায় পন্ডিতেরা জেহাদের অর্থ অবিশ্বাসীদের হত্যা করা এমনটাই ধরে নেন। ‘‘কিন্তু এটি ইসলামের একটি সর্বৈব ভুল ধারণা।’’

কানাডায় এধরণের অসহিষ্ণুতার প্রচারণার চালাতে না দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘‘ইসলামে আগ্রাসী জেহাদের কোন স্থান নেই। এই ভ্রান্ত বিশ্বাসই তরুণদের চরমপন্থী হয়ে ওঠার কারণ।’’

ডম. জেসন কেনি এই সমস্যার মোকাবিলায় কানাডার গ্রহীত উদ্যোগের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, এই উদ্যোগের বিভিন্ন নীতিগত দিক রয়েছে যার মধ্যে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং বিচক্ষণ সামরিক অভিযান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে আমরা অনেকভাবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি।’’

তিনি ইরাকের মসুল শহরের একজন খ্রিষ্টান নেতার সঙ্গে আলাপচারিতার কথা উল্লেখ করেন। গত আগস্টে আইএসআইএস শহরটি দখল করে নেয় এবং খ্রিস্টানদেরকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে অথবা শহর ছেড়ে যাবার শর্ত দেয়। খ্রিস্টান সম্প্রদায় শহর ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এর পরও আইএসআইএস দুর্বল, বয়ঃবৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধী খ্রিস্টানদের পিছু ধাওয়া করে যারা পালাতে পারেনি।

মি. কেনি বলেন, ‘‘তিনি (ইরাকী খ্রিস্টান নেতা) বলেন, দাইস-এর লোকেরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঢুকেছে এবং শয্যায় শায়িত লোকদের হুমকি দিয়েছে যে, হয় ধর্মান্তরিত হবে না হলে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং ঘটনার শেষটা আর বলতে পারিননি।’’ মি. কেনি আরও বলেন, ‘‘সুতরাং আমরা যখন এই ব্যাপারগুলোর মোকাবিলার বিষয়ে কথা বলবো তখন যেন এই সহিংসতার প্রকৃতি ভুলে না যাই। এটি যা তাই যেন বলি। এটি একধরণের অশুভ তৎপরতা।’’

ন্যাশনাল পোস্ট