কানাডীয়রা বর্ণবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে
মে ১০, ২০১৫
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : নতুন এক জরিপে জানা গেছে, প্রতি দশজন কানাডীয়র মধ্যে চারজনই মনে করেন, কানাডায় আসা অভিবাসীদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ নন এমন অভিবাসীর সংখ্যা “খুব বেশি”।
ইকোস রিসার্চ ২ হাজারের বেশি কানাডীয়কে প্রশ্ন করেছিলো : কানাডায় আসা অভিবাসীদের মধ্যে দৃশ্যমান সংখ্যালঘুর সংখ্যা খুব কম না খুব বেশি না কি সঠিক অনুপাতে রয়েছে? ৪১ শতাংশ কানাডীয় বলেছে, “খুব বেশি”। খবর মেট্রো’র।
এ বিষয়ে গ্রেটার টরন্টো অঞ্চলের তিনজন কানাডীয়র, যারা অভিবাসী এবং দৃশ্যমান সংখ্যালঘু, বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো।
নব ভাটিয়া (Nav Bhatia) প্রায়শ বলেন থাকেন যে, পৃথিবীতে যদি কোনও স্বর্গ থেকে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে কানাডা, যা সবাইকে একাত্ম করে নেয়।
কিন্তু ওই জরিপের ফলাফল তাকে বিস্মিত করেছে : ওই ৪১ শতাংশ কানাডীয়র কিছুসংখ্যক যদি কোনওদিন স্বর্গে যান তাহলে কী ঘটবে?
“তারা হয়তো সেখানে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ও অভিবাসীদেরও দেখতে পাবে। তাদের কী এটা নিয়েও সমস্যা হবে? তিনি প্রশ্ন রাখেন।
মি. ভাটিয়া র্যাপটর দলের বিরাট ভক্ত হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং তিনি ওই টিমের আনুষ্ঠানিক দক্ষিণ এশিয়া কমিউনিটির দূত। প্রায়শ তাকে র্যাপটরের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায়।
তিনি মিসিসগায় হিউন্দাইয়ের একজন সফল ডিলার। তিনি বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত এবং সম্প্রতি তিনি পরিবর্তনশীল বর্ণবাদী ধারণা সম্পর্কে টরন্টো টেডএক্স-এ (ঞঊউী) বক্তব্য দিয়েছেন।
ভাটিয়া ওই ৪১ শতাংশ লোকের দষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে চান তার দিকে লক্ষ্য করার কথা বলে। তিনি বলেন, “আমি কোন অভিবাসীর পক্ষে যতটা সম্ভব ততটাই দৃশ্যমান। আর আমি ১৫৯ জন কানাডীয়কে নিয়োগ দিয়েছি যাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক দৃশ্যমান সংখ্যালঘুও রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সফল কর্মজীবী, তারা কানাডাকে পরের স্তরে নিয়ে যাচ্ছে।”
সমীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে টরন্টো সিটি কাউন্সিলর ক্রিসটাইন ওং-ট্যাম বলেন, “আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হলো, এটি সঠিক হতে পারে না, এটি অবশ্যই একটি ভুল।” ওং-ট্যাম-এর জন্য এটি বিশ্বাস করা কঠিন কারণ তার বাবা-মা ১৯৭০-এর দশকে হংকং থেকে অভিবাসী হিসাবে কানাডায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। একটি বহুসংস্কৃতির, নানাত্ববাদী দেশে বসবাসের প্রতিশ্রুতির কারণেই তারা শিশু ওং-ট্রামকে সঙ্গে নিয়ে কানাডায় এসেছিলেন। সমীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, “ঠিক এই মুহূর্তে অটোয়ার বাইরে যে আলোচনা হচ্ছে তার সুরটা খেয়াল করলে বলতে হয়, এটি হয়তো খুব বেশি বিস্ময়কর না-ও হতে পারে।
তিনি বলেন, অভিবাসন ও বহুসংস্কৃতিবাদ সম্পর্কে রাজনীতিকরা যেভাবে কথা বলেন সেটি অন্য সবার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। টরন্টোবাসীর জন্য এই জরিপের ফলাফল বুঝতে পারা দেশের অন্যান্য অংশের লোকেদের চেয়ে হয়তো কঠিন। “আমার বিশ্বাস, টরন্টোবাসী হিসাবে আমি এখানকার অভিবাসন প্রক্রিয়া সুরের যে বৈচিত্র্য তৈরি করে সেটা আমি জানি। আমার মনে হয়, আমাদেরকে এদেশে স্বাগত জানান হয়। আমার গায়ের রং সাদা নয় এবং আমার মা এক ধরণের আঞ্চলিক সুরে কথা বলেন শুধু এজন্য কানাডীয়দের মনোভাব পাল্টে যাবে এমনটা ভাবতেই আমি ঘৃণা বোধ করি।”
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গুইডা ম্যান-এর মতে, নাগরিকত্বের অনুষ্ঠানে নেকাব পরার মত বিষয়ে অটোয়া থেকে যেসব কথা বলা হয় সেগুলো অভিবাসন সম্পর্কে বর্ণবাদী মনোভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
মিজ. গাইডা ম্যান বলেন, “এত বেশি সংখ্যক মানুষের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের অন্যতম কারণ হলো আমাদের সরকারের, রক্ষণশীল সরকারের এবং নির্দিষ্ট করে স্টিফেন হারপারের বক্তৃতাবাজী।”
ইকোস-এর সমীক্ষা পরিচালনাকারী ফ্রাঙ্ক গ্রাভেস দেখেছেন যে, রক্ষণশীল দলের প্রতি সমর্থন এবং খুব বেশি সংখ্যক অভিবাসীই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
তবে ম্যান বলেন, মানুষের এই দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য নিছক জনমত জরিপের অতিরিক্ত কিছু করা দরকার। তিনি বলেন, “সমাজে বর্ণবাদ অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু কথা হলো, আমরা কীভাবে তার মোবিলা করবো?”
তিনি বলেন, খোলামেলা প্রশ্নের ভিত্তিতে অধিকতর গবেষণা কার্যক্রম চালাতে হবে।
এক নজরে :
ইকোস গবেষণা জরিপ চালানো হয় গত মার্চের প্রারম্ভে।
সার্বিকভাবে ৪১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, “অনেক বেশি” অভিবাসী দৃশ্যমান সংখ্যালঘু।
এদের মধ্যে ৫১ শতাংশ রক্ষণশীল দলের, ৩৫ শতাংশ এনডিপির এবং ৩২ শতাংশ লিবারেল দলের সমর্থক।
বয়স্ক এবং স্বল্পশিক্ষিত লোকেরাই সাধারণভাবে ওই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
৬৪ শতাংশ লোক বলেছে নেকাব হলো বিরক্তিকর এবং নাগরিকত্ব দানের অনুষ্ঠানে নারীদের নেকাব পরার অনুমতি দেয়া উচিৎ নয়।