কানাডায় শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বাংলাদেশীর আয় দারিদ্রসীমার নিচে
“ইমিগ্রেন্টদের আয় নির্ভর করে তাদের দক্ষতার ওপর, গ্রাত্রবর্ণ নয়”
মে ১০, ২০১৫
কুইকজিয়া লিন তার দুই সন্তান নিয়ে থাকেন টরন্টোতে একটি এক বেডরূমের বাসা ভাড়া নিয়ে। অভাবের কারণে তাকে নির্ভর করতে হয় ফুড ব্যাংকের উপর-সিবিসি
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক: কানাডায় শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বাংলাদেশীর আয় দারিদ্রসীমার নিচে। এদের আয়ের সবটুকুই ব্যয় হয়ে যায় থাকা ও খাওয়ার পিছনে। সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না। সম্প্রতি কানাডা সরকারের এক অভ্যন্তরীন জরীপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরীপে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় নতুন ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছেন যারা চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে এসেছেন। স্বল্প আয়ের এই ইমিগ্রেন্টদের কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছেন সরকারী ভাতা গ্রহণ করতে। খবর টরস্টার নিউজ সার্ভিসের।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডায় নতুন আসা ইমিগ্রেন্টদের আয়ের প্রকৃত অবস্থাটা কি তা যাচাই করার জন্য ২০১১ সালের ন্যাশনাল হাউজহোল্ড সার্ভের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখে সিটিজেশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন কানাডা। ৫২ দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের আয়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করে যা দেখা গেছে তা হলো, যে সকল ইমিগ্রেন্টের আয় স্বল্প তারা কানাডায় এসেছেন সাম্প্রতিক সময়ে, তাদের ইংরেজী বা ফরাসী ভাষায় জ্ঞান কম, তারা বয়সে কম, শিক্ষায়ও তাদের রয়েছে ঘাটতি এবং তারা এমনসব দেশ থেকে কানাডায় এসেছেন যে সব দেশে উদ্বাস্তু তৈরী হয় নানান সহিংসতা ও সংকটের কারনে।
সিটিজেশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন কানাডার বিশ্লেষনে দেখা যায় চীন, হাইতি, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, তুরষ্ক, কলম্বিয়া, ইরান, মরোক্কো, আফগানিস্তান, তাইওয়ান, আলজিরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক এবং বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদের শতকরা প্রায় ২০ জন দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। জনপ্রতি যাদের বাৎসরিক আয় ১৮,৭৫৯ ডলারের নিচে (টরন্টোতে) তারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন বলে বিবেচনা হয়।
অন্যদিকে যারা নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, ইতালী, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল, সার্বিয়া ও ভারত থেকে এসেছেন তাদের আয় ভাল। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা কানাডায় জন্ম নেয়া শ্বেতাঙ্গদের চেয়েও ভাল আয় করছেন।
কানাডায় যে সকল ইমিগ্রেন্ট কর্মরত এবং ইংরেজী বা ফরাসী ভাষায় যাদের ভাল দখল রয়েছে, আয়ের ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য লাভের সম্ভাবনা বেশী বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন নীতির বিশ্লেষক এটরনি রিচার্ড কুরল্যান্ড। তিনি বলেন, ইমিগ্রেন্টদের আয়ের বিষয়টি মূলত দক্ষতার উপর নির্ভর করে, গাত্র বর্ণ নয়। তিনি আরো জানান, কানাডা সরকার টেক্স এর তথ্য ব্যবহার করে ইমিগ্রেশনের জাতীয় পলিসি নির্ধারন করছে। এতে করে দেখা গেছে কানাডায় উদ্বাস্তু বা রিফিউজি আসার হার কমে গেছে যাদের মধ্যে সরকারী ভাতার উপর নির্ভরশীলতা লক্ষ্য করা যায়।
তবে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, চীন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে সরকারী ভাতা গ্রহণের হার যথাক্রমে ২%, ৫% ও ৫%। এটি সরকারী ভাতা গ্রহণের গড় হিসাবে (১০%) থেকে কম। তাইওয়ান থেকে যারা কানাডায় এসেছেন তাদের প্রায় অর্ধেকই এসেছেন বিজনেস ক্যাটাগরীতে। এই ক্যাটাগরীতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছেন শতকরা ২৯ ভাগ ইমিগ্রেন্ট। টরন্টো ইউনিভারসিটির অধ্যাপক (ইমিগ্রেশন স্টাডিজ) জেফরী রিটজ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এই ভাবে – সরকারী ভাতা গ্রহণে নতুন ইমিগ্রেন্টরা পিছিয়ে আছেন কারণ, বিষয়টি সম্পর্কে তারা ভাল করে জানেন না এবং তারা যে সকল দেশে থেকে এসেছেন সে সকল দেশে সরকারী সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতাকে ভাল চোখে
দেখা হয় না। তবে কানাডায় নির্দিষ্ট একটা সময় পার করার পর নতুন এই ইমিগ্রেন্টরা সরকারী সাহায্য গ্রহণের বিষয়টিকে ক্রমে সহজভাবে নিতে থাকেন।
অবশ্য ইমিগ্রেন্টদের আয়ের এই সরকারী তথ্যর ব্যাপারে সন্দিহান সমালোকগণ। তাদের মতে, জরীপ কাজে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য যে ফরম ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে কিছু কিছু অপশনাল তথ্য জরীপে অংশগ্রহনকারীরা দিতে বাধ্য নন। ফলে সম্পূর্ণ তথ্য সরকারী জরীপ থেকে বেরিয়ে আসে তা ভাবার কোন কারণ নেই।
অন্টারিও কাউন্সিল ফর এজেন্সিস সর্ভিং ইমিগ্রেন্টস এর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড ডগলাস বলেন, ভাষাজ্ঞান ও দক্ষতা ছাড়াও এথনিসিটি, বর্ণ ও ধর্ম ইমিগ্রেন্টদের চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।