‘উচ্চতর মেধাসম্পন্ন’ অভিবাসীদের জন্য কানাডার দরোজা আরও খুলে দেয়া হবে
২০১৫ সালের নির্বাচনী বছর সামনে রেখে রক্ষণশীল সরকার অভিবাসনের স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে
নভেম্বর ৮, ২০১৪: নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস আলেক্সান্ডার গত ৩১ অক্টোবর বলেন, কানাডা আগামী বছরে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৮৫ হাজার নতুন অভিবাসীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে স্বাগত জানানোর লক্ষ্যস্থির করেছে। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসী গ্রহণের পরিকল্পনার দিক থেকে এই সংখ্যা ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসে’ সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০১০ সালে কানাডা সর্বশেষ ২ লাখ ৮০ হাজার অভিবাসীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে সেদেশে যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালে যে ২ লাখ ৮৫ হাজার নতুন অভিবাসীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে কানাডায় আসতে দেয়া হবে তাদের একটি বড় অংশ, প্রায় ৬৫ শতাংশই হবে অর্থনৈতিক অভিবাসী এবং তাদের পোষ্য। এটি ২০১৩ সালের জন্য পরিকল্পিত ৬২ শতাংশের চেয়ে বেশি। মন্ত্রী ক্রিস আলেক্সান্ডারের মতে সরকারের নির্ধারিত এই লক্ষ্য হলো সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন যে, কানাডার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অভিবাসন খুবই জরুরী।
আলেক্সন্ডার বলেন, ‘‘আমরা আগে কখনও দেখা যায়নি এমন ধরণের উচ্চতর মেধাসম্পন্ন অর্থনৈতিক অভিবাসীদের বাছাই করে নেবো। অর্থনৈতিক অভিবাসীদের আনুপাতিক হার বাড়ানোর এই লক্ষ্য কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত ছিলো। অনেক প্রদেশে অর্থনৈতিক অভিবাসী গ্রহণের আনুপাতিক হার প্রায় ৭০ শতাংশ এবং এটি কানাডারও আকাঙ্খা।’’
অভিবাসনের স্তর বাড়ানোর এই পদক্ষেপ এমন সময়ে এলো যখন সরকার দক্ষ কর্মীদের মনোনয়নের জন্য এক্সপ্রেস এন্ট্রি নামে একটি ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। ওই দক্ষ কর্মীরা হবে কানাডায় অভিবাসীদের ¯্রােতের বৃহত্তম অংশ। সরকারের বার্ষিক অভিবাসন পরিকল্পনায় যেমনটা উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে ২০১৫ সালের জন্য অভিবাসীর সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৮৫ হাজার হবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মি. আলেক্সান্ডার আবাসিক প্রযতœ কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এই কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার অভিবাসী কানাডায় আসে। সরকার আবাসিক পর্যায়ে সেবাদানকারীদের জন্য তাদের নিয়োগকর্তার সঙ্গে প্রথম বছরের অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা তুলে দেবে। ক্রিস আলেক্সান্ডার বলেন, তিনি এমন সব লোকদের সঙ্গে কথা বলেছেন যারা তাকে জানিয়েছেন যে, আবাসিক সেবা দানকারীরা প্রায়শ অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন। তারা বলেছেন যে, তাদের বর্তমান আবাসিক অবস্থা ‘আধুনিক কালের কৃতদাসের মত’।
‘‘আমরা এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে যাচ্ছি। এই পরিবর্তনের ফলে সেবাদানকারীরা আমাদের সবার জন্য যে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে সেটাই পরিস্ফূট হবে’’ বললেন আলেক্সান্ডার।
সরকার বলছে, আবাসিক পর্যায়ে সেবাদানকারী অভিবাসীদের পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টিও দ্রুততর করা হবে। এদের ক্ষেত্রে আবেদনের জট এতই বড় যে, অনেক সময় আবেদনকারীর পরিবারের লোকদের নিয়ে আসতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এর ফলে অনেক পরিবার বিশেষ করে দেশে সন্তানদের রেখে আসা মায়েদের ওপর মারাত্মক চাপের সৃষ্টি হয়।
কেয়ার গিভারস অ্যাকশন নেটওয়ার্কের মুখপাত্র পিউরা ভেলাস্কো জানান, সরকারের ওই ঘোষণায় তার মধ্যে মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। সেবাদানকারীদেরকে কানাডায় পৌঁছার পরই পারমানেন্ট রেসিডেন্টের মর্যাদা দেয়ার দাবিতে অন্য অনেক অ্যাক্টিভিস্টের মত ভেলাস্কোও আন্দোলন করেছেন। কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত হতাশই হয়েছেন তিনি। মিজ ভেলাস্কো বলেন, ‘‘সেবাদানকারীদেরকে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট করা হলে তারা তাদের অধিকারের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখতে পারবেন, অন্যথায় তাদের সঙ্গে নিয়োগদাতাদের ক্ষমতার একটি ভারসাম্যহীনতা থেকেই যাবে।’’ – গ্লেব এন্ড মেইল