আপনার বেজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট কি নিরাপদ?
বেইজমেন্ট সংশ্লিষ্ট বাই ল’ প্রণয়ন বিলম্বিত হওয়ায় অধিবাসীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন
নভেম্বর ৮, ২০১৪: এটি ছিলো গত বছরের এক শীতল শরতের রাত। জস স্কায়েফার (২৫) তার ডাউনটাউনের বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং একটি সিগারেট জ্বালান। আর এই সিগারেট জ্বালানোর কারণেই তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
তার প্রতিবেশিরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরুর আগে স্কায়েফার একটি অ্যালার্মের মৃদু ধ্বনি শুনতে পান।
তিনি দৌড়ে বেইজমেন্টে নেমে যান এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরক্ষণেই প্রচ- উত্তাপের কারণে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। কলেজ অ্যান্ড ডাফেরিনে তার অ্যাপার্টমেন্টের দরজা আগুনে জ্বলছিলো আর তার বান্ধবী আলিশা ল্যামার্স (২৪) ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলো।
তিনি বেডরুমের খোলা জানালার কাছে ছুটে যান এবং মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু জানালার স্টিলের বারগুলোর কারণে তার বান্ধবী ভেতরে আটকা পড়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘আমি চিৎকার করে তাকে বেরিয়ে আসতে বলছিলাম। আমি পাগলের মত চিৎকার করছিলাম।’’
স্টার নিউজকে স্কায়েফার বলেন, তিনি একসময় জানালার স্টিলের বারগুলো ধরে টানতে শুরু করেন। চেষ্টা করেন সেগুলোকে ইটের ভেতর থেকে খুলে ফেলার।
সে ছিলো খুবই কাছে, কিন্তু তাকে উদ্ধার করা কোনওভাবেই সম্ভব ছিলো না।
একসময় জানালা দিয়ে ঘন ধোঁয়া বেরুতে শুরু করে। স্কায়েফার বলেন, ল্যামার্স আর কোন সাড়া দিচ্ছিলো না এবং তিনি একটি গলির মধ্যে ঢলে পড়েন।
ল্যামার্সের বাড়িওলা কস্টানটিন লাইসেঙ্কো এবং তার কোম্পানি কানাডা করপোরেশনকে অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আইন লংঘনের ১০টি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে অন্ততপক্ষে দুটি বহির্গমন পথ না থাকা, অগ্নি সতর্কীকরণ ব্যবস্থা সচল অবস্থায় রাখতে ব্যর্থতা এবং বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবস্থা না রাখার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগগুলো এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ১০টি অভিযোগই প্রমাণিত হলে কানাডা করপোরেশনকে সর্বোচ্চ ১০লাখ ডলারের জরিমানা করা হতে পারে।
লাইসেঙ্কোর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে দেয়া বার্তার কোনও জবাব এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ঐ রাতে যে ট্রাজেডির সূত্রপাত হয় তা অন্টারিওতে বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট বেচাকেনার বিধিবিধানে যে জোড়াতালি চলছে তাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
জিটিএ জুড়ে হাজার হাজার মানুষ অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করে আসছে।
জিটিএতে আবাসন সুবিধার অভাব সহজ করতে সরকার ২০১২ সালের জানুয়ারিতে সমগ্র প্রদেশে বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে বৈধতা দেয় এবং মিউনিসিপ্যালিটিগুলোকে এ বিষয়ে নিজস্ব বিধিবিধান তৈরি করে নেয়ার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু, প্রায় তিন বছর পরও বেশ কিছু মিউনিসিপ্যালিটি যাদের মধ্যে ভগান, ব্রাম্পটন এবং রিচমন্ড হিলও রয়েছে, এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বেশিরভাগ মিউনিসিপ্যালিটি কিছু বাই’ল প্রণয়নের প্রস্তাবনা গ্রহণ করে রেখেছে কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কমিউনিটির সঙ্গে পরামর্শ ইত্যাদি কারণে ওইসব প্রস্তাবিত বাই’ল কার্যকর করতে অন্ততপক্ষে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এমনকি যেসব নগর কর্তৃপক্ষ তাদের আইন সংশোধন করেছে সেসব নগরীতেও হাজার হাজার বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে যেগুলো এখন পর্যন্ত কোনও ধরণের নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়নি।
টরন্টো সেকেন্ডারি সুইটগুলোকে প্রথম নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে ১৯৫০-এর দশকে কিন্তু জিটিএর অন্যান্য নগর কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালে এ বিষয়টি দেখভাল করতে বাধ্য না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন নজর দেয়নি।
মিসিসাগা প্রথম বাই’ল প্রণয়ন করে চলতি বছর জানুয়ারিতে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি সেকেন্ড-ইউনিট লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এবং ৩০টি আবেদন অপেক্ষমান অবস্থায় রয়েছে।
ভগান নগরজুড়ে সেকেন্ডারি সুইটস-এর সমীক্ষা শেষ করেছে এবং এ বিষয়ে আগামী বছরের শুরুতে খসড়া নীতি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করার পরিকল্পনা করছে।
ব্রাম্পটনে ৩০ হাজার অবৈধ বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে এবং গত এপ্রিলে সেখানে এক সমাবেশে এসব অ্যাপার্টমেন্টকে পারমিট দেয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নগর সংস্থার কর্মীরা নগর কাউন্সিলের কাছে রিপোর্ট পেশ করার জন্য পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
সেকেন্ডারি সুইটগুলোকে বৈধ করার জন্য রিচমন্ড হিল কর্তৃপক্ষের একটি নতুন পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় বাই’ল বাস্তবায়নের জন্য নগর কর্তৃপক্ষ এখন সাধারণ জনগণ ও অন্যান্য পক্ষের কাছ থেকে তাদের বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির নগর ও আবাসন বিষয়ক সমালোচক এরনি হার্ডম্যান বলেন, সরকার মিউনিসিপ্যালিটির ওপর সব দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘প্রাদেশিক সরকার খুবই এলোমেলো অবস্থায় এটি চালু করে। সরকার নগর কর্মকর্তাদের জন্য কোনও গাইডলাইন বা মান নির্ধারণ করে দেয়নি। কিংবা সরকার বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টগুলোর পরিদর্শনের জন্য কোনও সমন্বিত উদ্যোগ বা প্রচারণার বিষয়েও উৎসাহিত করেনি।
তিনি বলেন,‘‘এই আইনের আগে যেটা ছিলো সেটার কোনও পরিবর্তন ঘটেনি কেবল বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে বৈধতা দেয়া ছাড়া। প্রদেশগুলোর উচিৎ ছিলো গবেষণা করা, আওতা নির্ধারণ করা এবং এজন্য কী দরকার সেটা বলা।’’
ভগানের একজন পাদ্রী (সরহরংঃবৎ)এবং জর্জিনা কাউন্সিলের প্রার্থী রেভারেন্ড জিম কিনান, যিনি পাঁচ বছর ধরে বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টকে বৈধ করার কথা বলে আসছেন, এরনি হার্ডম্যানের কথার সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার অনেক আড়ম্বরের সঙ্গে ওই আইন করেছে কিন্তু তারপর অত্যন্ত গাছাড়াভাবে কাজ করেছে।’’
কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে বিতর্কিত পরামর্শ করা এবং বাই’ল সংশোধনের জন্য মিউনিসিপ্যালিটিগুলোকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথচ বেইজমেন্টের বাসিন্দারা অনিয়ন্ত্রিত এবং অনেক সময় অনিরাপদ পরিবেশের মধ্যে পড়ে আছেন।
গত বছর ল্যামার্স ও স্কায়েফার যখন বেইজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন তখন তাদের ধারণা ছিলো না এটি বৈধ কিনা এমনকি তারা এ বিষয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন বোধ করেননি। স্কায়েফার বলেন, তারা সাধ্যের মধ্যে ভাড়া বাসা পাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এটি ছিলো প্রথম তাদের কাছে ভাড়া দিতে সম্মতি দেয়া একটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং তারা ৯০০ ডলারে নির্দ্বিধায় বাসাটি ভাড়া নেন।
তিনি বলেন, ‘‘অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়ার লোক সবসময়ই রয়েছে। সেজন্য লোকেরা অবৈধ অ্যাপার্টমেন্ট বানিয়েই যাবে কারণ তারা জানে এগুলো তারা ভাড়া দেয়ার মত লোক পাবে। এটি একটি নৃশংস ব্যবস্থা।’’
স্কায়েফার এখন তার বাবার সঙ্গে ওয়াটারলুতে বসবাস করেন। কিন্তু সেই রাতের অগ্নিকা- ও তার সঙ্গীনীর মৃত্যুর ঘটনায় তিনি এখনও দুঃস্বপ্নে ভোগেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলাম। আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়। নিজে না ভুগলে এটা কাউকে বোঝানো যায় না।’’
সেই রাতের প্রতিটি ঘটনা তিনি মনে করতে পারেন। ল্যামার্সকে নিয়ে শুতে যাবার এক ঘণ্টারও কম সময় পরেই জ্বলন্ত অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে বের করে আনা হয়। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে তোলার প্যরামেডিকদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। চার দিন পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
কর্তৃপক্ষ টরস্টারকে বলেছেন, আগুনের কারণ এখনও অজানাই রয়ে গেছে। -টরস্টার নিউজ সার্ভিস