অন্টারিওর স্কুলসমূহের জন্য আধুনিক যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচি প্রস্তুত
সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলসমূহে পড়ানো হবে : পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক থেমে নেই
মার্চ ১৫, ২০১৫:
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর স্কুলসমূহের জন্য আধুনিক যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচী প্রস্তুত। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তা স্কুলসমূহে পড়ানো হবে। শিক্ষামন্ত্রী লিজ সেন্ডালস গত ২৩ ফেব্রুয়ারী টরন্টোতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন। তিনি বলেন, সরকার এবার পিছু হটবে না, যেমনটি হটেছিল গত ২০১২ সালে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রবল বিরোধীতার মুখে। তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ এর বিরোধীতা করতে পারে, কিন্তু নতুন এই পাঠ্যসূচী আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্যই করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এই যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচী গত প্রায় ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম আপডেট বা আধুনিকিকরণ করা হলো।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিকিকরণ করা এই পাঠ্যসূচিতে পুরানো কিছু বিষয়ও রেখেছি। যেমন, শিশুদেরকে জানানো যে তারা যে কোন অযাচিত বা অকাম্য শারীরিক ছোঁয়া বা স্পর্ষকে না বলার অধিকার রাখে। তবে সাম্প্রতিকসব গবেষণা বা পাবলিক হেলথ ডাটা থেকে যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি যে কোন কোন ছেলে-মেয়ের মধ্যে পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধি (যৌনারম্ভ) স্বাভাবিক সময়ের আগেই শুরু হয়ে যায় তাই নতুন এই পাঠ্যসূচিতে তাদেরকে
শিক্ষাদানের জন্য কিছু কিছু বিষয় আগাম যোগ করা হয়েছে । তরুনদের যৌন জীবনে টেকনলজির ভূমিকা নিয়েও নতুন এই পাঠ্যসূচিতে আলোচনা করা হয়েছে।
নতুন যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে যা যা পড়ানো হবে:
গ্রেড ওয়ানের ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে কি করে মুখের এবং কন্ঠস্বরের অভিব্যাক্তি হৃদয়ঙ্গম করা যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ কোনটার কি নাম তা।
গ্রেড টু এর ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে মানব শরীরের ক্রমবিকাশের ধাপসমূহ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক পরিবর্তনসমূহ কি কি তা।
গ্রেড থ্রি এর ছাত্র-ছাত্রীরা সম-লিঙ্গ সম্পর্ক বা রিলেশনশীপ সম্পর্কে অবহিত হবে। অন্টারিওর প্রিমিয়ার ক্যাথলিন ওয়েনির (যিনি নিজেও একজন লেজবিয়ান) ভাষায়- এতে করে শিশুরা জানবে এবং বুঝতে পারবে যে দুই মা অথবা দুই বাবার সংসার অন্যান্য সংসারের মতোই আরেকটি সংসার এবং এটি নিরাপদ।
অনলাইন বুলিং বা হুমকী-ভয় ভীতিপ্রদর্শন এবং এর বিপদ কি হতে পারে সে সম্পর্কে শিক্ষাদান করা হবে গ্রেড ফোর এর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। অনলাইনে যৌনতাপূর্ণ ছবি পোস্ট করা বা শেয়ার করার বিপদ সম্পর্কেও তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে।
গ্রেড ফাইভ এর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বংশ বৃদ্ধিতে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে জ্ঞানদান করা হবে। জ্ঞানদান করা হবে মেয়েদের পিরিয়ড সম্পর্কে।
গ্রেড সিক্স এর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শেখানো হবে লিঙ্গ অভিব্যক্তি ও হস্তমৈথুন কি।
গ্রেড সেভেন ও এইট এর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শিক্ষাদান করা হবে। এনাল সেক্স ও ওরাল সেক্স, গর্ভাবস্থা এবং যৌনবাহিত রোগ সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে এই দুই গ্রেডের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে।
গ্রেড নাইনের ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানো হবে কি করে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে অনিচ্ছাকৃত গর্ভবতী হওয়া থেকে এবং বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগ থেকে বাঁচা যায়। যৌন স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য নিজেদের জ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে সেগুলো শিক্ষাদানের পাশাপাশি কনসেপ্ট অব কনসেন্ট বিষয়েও শিক্ষাদান করা হবে। কনসেপ্ট অব কনসেন্ট হলো যৌন মিলনে সম্মতি প্রদান। কেউ যদি (বিশেষত মেয়ে বা মহিলা) যৌন মিলনের ব্যাপারে মুখে না বলে তবে তা না বলেই ধরে নিতে হবে। আবার মুখে না বলেনি কিন্তু তার শরীর সায় দিচ্ছে না, সেক্ষেত্রেও ধরে নিতে হবে যৌন মিলনের ব্যাপারে তার সম্মতি নেই। এটিকে না হিসেই ধরে নিতে হবে। মাদকাগ্রস্থ বা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ যৌনমিলনে সম্মতি দিতে পারে না। অর্থাৎ তারা হা বললেও তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না।
গ্রেড টেন এ যৌনতা সম্পর্কে কিছু ভ্রান্তধারণা এবং এই ধারণা কি ভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করে সে বিষয়ে সচেতন করে তোলার জন্য শিক্ষা দান করা হবে।
গ্রেড এলিভেনে এসে ছেলে-মেয়েদের যৌণ স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া।
গ্রেড টুয়েলভ এ যৌন নির্যাতন, হয়রানী বা জুলুম বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ কি কি হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হবে। হেলদি রিলেশনশীপ বা সুস্থ সম্পর্ক কিভাবে গড়ে তোলা যায় বা বিকশিত করা যায় সে সম্পর্কেও জ্ঞানদান করা হবে।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচির ব্যাপারে আগে থেকেই চলে আসা বিতর্ক থেমে যায়নি। বরং অন্টারিও পার্লামেন্টের সামনে এমনকি অভ্যন্তরেও বিতর্ক তুঙ্গে উঠে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী কুইন্স পার্কের সামনে সোসিয়্যালি কনজারভেটিভ ক্যাম্পেইন লাইফ কোয়ালিশন যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করে। তারা বলে, এই শিক্ষাকার্যক্রম অন্টারিওর হাজার হাজার ছাত্রী-ছাত্রীকে বিপদগ্রস্ত করে তুলবে। তারা যৌন নিপীড়নকারীদের লালসার শিকার হবে।
কুইন্স পার্কের অভ্যন্তরে রক্ষণশীল দলের এমপিপি মন্টে ম্যাক্নঘটন প্রিমিয়ার ক্যাথেলিন ওয়েনিকে দোষারোপ করে বলেন, বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে অভিবাকদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ ছিল।
অন্টারিওর নতুন যৌন-শিক্ষা পাঠ্যসূচি বাবা-মায়েদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে
প্রদীপ রড্রিগেজ – ১৯ জানুয়ারি : অন্টারিওর লিবারেল সরকার ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রদেশের সকল স্কুলে মানোন্নীত যৌন-শিক্ষা কারিকুলাম চালু করতে যাচ্ছে। এটি এমন একটি বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে তা সারা প্রদেশে বাবা-মায়েদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে এবং এরই মধ্যে প্রস্তাবিত পাঠ্যক্রমের বিরুদ্ধে জনগণের বিরোধিতাকে ধামাচাপা দিতে অনলাইনে প্রচারণা শুরু করা হয়েছে। গত জানুয়ারীতে পিএএফই (প্যারেন্টস অ্যাজ ফার্স্ট এডুকেটরস) এবং উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েদের কোয়ালিশন (সিপিসি) উল্লেখিত বিষয়ে আলোচনা এবং তাদের বিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য মিসিসগায় একটি সমাবেশের আয়োজন করে যাতে অনেক বাবা-মা যোগ দেন। পিএএফইর মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, বাবা-মায়েদের মধ্যে এমন ভীতি কাজ করছে যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় না নিয়েই প্রিমিয়ার ক্যাথলিন ওয়েইনি নতুন পাঠ্যক্রম চালু করতে পারেন। তিনি বলেন, ২০১০ সালে শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ওয়েইনি এই যৌনশিক্ষা পাঠ্যক্রম
স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন কারণ ব্যাপকভিত্তিক প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন প্রিমিয়ার ডালটন ম্যাকগুইন্টি নতি স্বীকার করেছিলেন। বর্তমানে ওয়েইনি নিজেই প্রিমিয়ার হওয়ায় তাদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে যে, এবার আর তাদের প্রতিবাদে তিনি কর্ণপাত করবেন না। ওই পাট্যক্রমের বিরোধিতা করে পাফে (চঅঋঊ) ২৭,০০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। মুখপাত্র বলেন, “শিশুদেরকে জন্মনিয়ন্ত্রণের মূল্য বা হস্তমৈথুন খুব ভালো এমন শিক্ষা দেয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সাধারণ ধারণা এমন যে, এতে করে ছোট ছোট শিশুদেরকে অতিরিক্ত শিক্ষা দেয়া হয় আর সেই শিক্ষাটা বাবা-মার পক্ষ থেকে দেয়াই ভালো।” অবশ্য বিদ্যমান যৌনশিক্ষা পাঠ্যক্রমের সমালোচকরা জোর দিয়ে বলেন, এটি বর্তমান সময়ে যৌনতা বিষয়ক বাস্তবতা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি দেখা সহজতর হওয়া এবং সমলিঙ্গের দম্পতিদের স্বীকৃতিদানের মত বিষয়গুলির প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় প্রগতিশীল যৌন-শিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রমের প্রতি উদারভাবে সমর্থন দিলেও বিরাট সংখ্যক রক্ষণশীল বাবা-মা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর বাবা-মায়েরা প্রধানত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে এর বিরোধিতা করছেন। উদাহরণ স্বরুপ, অনেক বাবা-মা এমন ধর্মীয় বিশ্বাস লালন করেন যা কানাডীয় মূল্যবোধের সঙ্গ সাংঘর্ষিক। হাজার হাজার বাবা-মা রয়েছেন যারা বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপের সদস্য এবং যাদের মধ্যে এলজিবিটি (খএইঞ) সমকামিতা, গে, উভকামিতা এবং ট্রান্সজেন্ডার ইত্যাদির খুব সামান্যই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বা যারা একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। এসব বাবা-মা স্বীকার করেন যে, তাদের বিশ্বাস এলজিবিটি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও হস্তমৈথুনের মত পাপকাজকে গ্রহণযোগ্য করা বা মেনে নেয়া অসম্ভব অথবা কঠিন করে দিয়েছে। সুতরাং শ্রেণীকক্ষে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার অর্থ হলো তাদের সন্তানদেরকে কার্যত তাদের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বার্তার মুখোমুখি করে দেয়া।
শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য যারা একটি সমসাময়িক কালের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যৌনশিক্ষা প্রাঠ্যক্রমের পক্ষে রয়েছেন তাদের বিশ্বাস শিক্ষার্থীদেরকে বৈচিত্র্য ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়ার জন্য আরও অনেক দূর যেতে হবে। এর পাশাপাশি শিশুদেরকে নিরাপদ যৌনতা, যৌন আনন্দ, সম্মতি ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি প্রিমিয়ার ওয়েইনি বলেছেন যে, কর্মক্ষেত্র এবং যৌন হয়রানি বিষয়ে গণমাধ্যমে যেসব খবরাখবর প্রকাশ পায় তাতে একটি আধুনিক যৌনশিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রমের নিশ্চিতভাবে প্রয়োজন রয়েছে। ক্যান-ইন্ডিয়া বাবা-মা এবং তাদের টিনএজ শিশুদের মতামত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজকের দিনে শিশুরা যে কোনও উৎস থেকে যৌনতা বিষয়ে তথ্য পেতে পারে। তারা যেন যথাযথ খাত থেকে তথ্য পায় সেটি গুরুত্বপূর্ণ এবং যেসব বাবা-মা এর বিরোধিতা করছেন তাদেরকে বুঝতে হবে যে, আমাদের সন্তানেরা আমাদের চেয়ে বেশি জানে। সুতরাং অনেক অভিবাসীর সন্তানদেরকে শেষ পর্যন্ত গর্ভপাত ঘটাতে হচ্ছে কারণ তাদেরকে সঠিক শিক্ষা দেয়া হয়নি। শিশুরা প্রায়শ যৌনতা বিষয়ে জানে কিন্তু তাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে। যৌনশিক্ষা বিষয়ক একটি ভালো পাঠ্যক্রম তাদেরকে নিরাপদ রাখবে কারণ তাদের সঠিক জ্ঞান থাকবে।
আঞ্জু রাজন- বাবা-মা
আমরা স্কুলে যে দরণের যৌনশিক্ষা পেয়েছি তা ছিলো অত্যন্ত মৌলিক। তাতে রজঃস্র্রাব, কনডমের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা ছিলো। কিন্তু ১৪ বছর বয়সের মধ্যে সবাই এগুলো সম্পর্কে জেনে ফেলে কারণ সবাই এসব বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলে। তারা এগুলি টেলিভিশনে দেখে, ইন্টারনেটে খুঁজে দেখে। কিন্তু কোথাও গে’দের নিয়ে কোন আলোচনা হয় না এবং এর ফলে ব্যাপক বৈষম্য থেকে যায়। এমনকি যদি যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করা না-ও হয় তবু প্রত্যেকেই ইন্টারনেট থেকে তথ্য পেয়ে যাবে।
দিব্যা রাজন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
আমার নয় বছরের একটি ছেলে এবং ১৪ বছরের একটি মেয়ে আছে। শিশুরা সর্বত্রই যৌনতা সম্পর্কে জানতে পারে। আমরা বাবা-মায়েরা কতদিন এটি অস্বীকার করে থাকতে পারবো? শিশুদের যৌনশিক্ষা লাভের সঠিক জায়গা হলো বিদ্যালয়। আমরা তাদেরকে সবরকমের যন্ত্রপাতি দিচ্ছি, যে কোনও ধরণের তথাকথিত নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে জানা তাদের জন্য খুবই সহজ যদি তারা জানতে চায়। আমাদেরকে শিশুদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাদেরকে যথাযথ যৌনশিক্ষা দিতে হবে।
গুধীর বাগবি- বাবা-মা
আমরা চতুর্থ গ্রেড থেকেই কিছু কিছু যৌনশিক্ষা পেয়ে এসেছি, এতে মেয়েদের মাসিক এবং পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সম্পর্কে বলা হতো। আমাদেরকে প্রজনন সম্পর্কেও শিক্ষা দেয়া হয়েছে তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ছিলো না। আমরা বরং এসব বিষয়ে স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে বেশি জানতে পেরেছি যারা এসব বিষয়ে কথা বলতো। তারা এসব বিষয় জানতে ইন্টারনেট থেকে অথবা বাবা-মায়েদের কাছ থেকে। আমি যখন গ্রেড ৪-এ পড়ি তখন ক্লাসে আমিই ছিলাম একমাত্র মেয়ে যে মাসিক সম্পর্কে কিছু জানতাম না। অন্য প্রত্যেকেই তাদের বাবা-মা অথবা বন্ধুদের কাছ থেকে এ সম্পর্কে জানতো।
সোনিকা
আমার ১৬ বছরের একটি মেয়ে এবং নয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। আমার মনে হয় শিশুদেরকে শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া এবং শিশুদের প্রতি অনাচারের বিষয়ে তাদের সচেতন করে তোলা জরুরী। আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু নতুন যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রম যদ্দূর পর্যন্ত যেতে চায় আমি নিশ্চিত নই যে শিশুদের অতোটা তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। জীবনের এই শুরুর সময়েই তাদের এতসব বিষয়ে জানার আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি? আমি তাদের সচেতন করার বিষয়ে কিছু বলতে চাই না, তবে আমার উদ্বেগের বিষয় হলো তাদের কৌতুহল সম্পর্কে অবগত করানো। কারণ এটি এমন একটি বয়স যখন তাদের লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাদের মাথার মধ্যে যৌনতার বীজ বপন করা মারাত্মক হতে পারে যদি এসব বীজ গজিয়ে ওঠে।
বৈদিহী- মা
আমার মনে হয় শিশুদের গে এবং লেসবিয়ানদের সম্পর্কে জানা উচিৎ এবং এতে খারাপ কিছু নেই। তাদেরকে বৈষম্যের শিকারে পরিণত করা ঠিক নয় কারণ এগুলো এমন বিষয় নয় যে তারা পছন্দ করছে। এলজিবিটির সদস্যদের লক্ষ্যে পরিণত করাটা ভুল। শিশুরা যত তাড়াতাড়ি সহিষ্ণুতা এবং এসব বিষয় সম্পর্কে জানবে ততই তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে শিখবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আমাদের জন্য এখন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো কঠিন।
পারমিত- বাবা-মা
যেসব বাবা-মা নতুন যৌনশিক্ষা পাঠ্যক্রমের বিরোধিতা করছেন তারা প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতির মধ্যেই বসবাস করছেন। বিদ্যালয়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া উচিৎ। তাদের এসব বিষয়ে জানা উচিৎ কারণ বিদ্যালয়ে প্রত্যেকেই এসব বিষয়ে কথা বলে। আর বন্ধু বা ইন্টারনেট থেকে ভুল ধারণা বা তথ্য পাওয়া খুব সহজ। বিদ্যালয়ে এটি করা হবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে। -ক্যানইন্ডিয়া.কম